শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৫

কিছু প্রশ্নের উত্তর, শাওয়াল ১৪৩৬

কিছু প্রশ্নের উত্তরঃ
১. হাতে তালি দেওয়া শরীয়ত সম্মত নয়।
সৌদি আরবের স্থায়ী কমিটির ফতোয়া অনুযায়ী, ইসলামী, বিদাতী অথবা হারাম যে কোন অনুষ্ঠানে হাতে তালি দেওয়া সঠিক নয়, এটা অত্যন্ত মাকরুহ বা অপছন্দনীয় একটা কাজ। কারণ,
ক. এটা জাহেলী যুগের লোকদের একটা কাজ। জাহেলী যুগে মুশরেকরা কাবা ঘরের তাওয়াফ করার সময় শিস দিতো এবং হাত তালি দিতো। আল্লাহ ক্বুরানে তাদের এই কাজের নিন্দা করেছেন।
খ. এছাড়া শরিয়াতে নারীদের জন্যে বলা হয়েছে যে, ইমাম সালাতে কোন ভুল করলে তাকে সতর্ক করার জন্যে হাত তালি দেওয়ার জন্যে। সুতরাং এটা নারীদের জন্য বিশেষ একটা উদ্দেশ্যে জায়েজ।
২. ৭৮৬ নম্বরের বিদাত।
৭৮৬ একটা নাম্বার ছাড়া আর কিছুইনা। ৭৮৬ বললে বিসমিল্লাহ... বলার সমান সওয়াব হয়না। বরং এটা একটা নিকৃষ্ট বিদআত ও মূর্খতা।
১ ও ২ নং প্রশ্নের উত্তর উর্দুভাষী একজন উস্তাদ, শায়খ আবু জায়েদ জামির এর টেপ থেকে নেওয়া। আপনারা Abu Zayed Zameer এই নামে সার্চ দিলে উর্দুতে তার অনেক অডিও ও ভিডিও লেকচার পাবেন। মা শা আল্লাহ, তিনি নির্ভরযোগ্য একজন দ্বাইয়ী।
৩. দিবস পালন করা শরীয়ত সম্মত নয়।
শায়খ ইবনে উসায়মিন (রহঃ) এর ফতোয়া হচ্ছে, জন্মদিন, ম্যারিজ ডে, লাভ ডে, এনিভার্সারি, মাদার ডে এই সবগুলো দিবস পালন করা জায়েজ নয়, কারণ এটা কাফেরদের সংস্কৃতির অনুকরণ করার অন্তর্ভুক্ত, যা ইসলাম হারাম করেছে। এটা হারাম এবং বিদাত এর কাছাকাছি। এই দিবসগুলো উদযাপন উপলক্ষ্যে পার্টিগুলোতে শরীক হওয়া জায়েজ নয়, এধরণের অনুষ্ঠানগুলোতে বিতরণ করা খাবারগু খাওয়াও জায়েজ নয়। [উৎসঃ ফতোয়া আরকানুল ইসলাম]
৪. সালাতের মাঝে হাই আসলে যথাসম্ভব আটকানোর চেষ্টা করতে হবে, কারণ সেটা শয়তানের পক্ষ থেকে। আটকানো সম্ভব না হলে হাই তোলার সময় এক হাত দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে, নয়তো শয়তান মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে।
৫. সালাতের মাঝে হাঁচি দিলে হাঁচিদাতা ব্যক্তি নিজে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারবেন। কিন্তু সালাতরত অবস্থায় কোন ব্যক্তি অন্য কারো হাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ অথবা সালামের জবাব দিতে পারবেনা, দিলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে।
৬. গায়ের নারী ও পুরুষের মাঝে কথা বলার কিছু নিয়ম রয়েছে। অপ্রয়োজনে বা প্রাইভেট (গোপনে) নারী-পুরুষ কথা কথা বলা বা বন্ধুত্ব করা জায়েজ নয়। শরিয়ত সম্মত জরুরী প্রয়োজনে (যেমন ডক্টরের কাছে ভিজিট করা, প্রয়োজনীয় কোন কিছু ক্রয় করা, মুফতির কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করার জনে) গায়ের মাহরাম পুরুষদের সাথে যদি কথা বলতেই হয়, তাহলে তারা স্বাভাবিক নম্র ভাষায় কথা বলবেন না, যাতে করে পুরষেরা তাদের কন্ঠ দ্বারা আকৃষ্ট না হয়। সুতরাং গায়ের মাহরামদের সাথে হাসি-ঠাট্টা করা, আড্ডাবাজি, গল্প, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা বা ফ্লার্ট করা এই সবগুলো হারাম।
৭. জুমুয়াহর খুতবার সময় যেকোন ধরণের কথা বলা নিষিদ্ধ। এসময় কাউকে সালাম দেওয়া যাবেনা, কেউ সালাম দিলে সালামের জবাব দেওয়াও যাবেনা। খতিব সাহেব এসময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম নিলে তার জন্য দুরুদও পড়া যাবেনা। সাধারণত দ্বিতীয় খুতবাতে মুসল্লিদের জন্য এবং সমস্ত মুসলমানদের জন্যে দুয়া করা হয়। এই দুয়ার সময় মুনাজাতের মতো করে খতিব সাহেব দুই হাত উপরের দিকে তুলে মুনাজাত করবেন, এটা করা সুন্নাহ। আর মুসল্লিরা মনে মনে আমিন বলে সেই দুয়াতে শরীক হবেন। কিন্তু তারা হাত তুলবেন না বা, আমিন জোরে বলবেন না। তা খুতবার আদবের পরিপন্থী। 
৮. মুসল্লিদেরকে সালাত পড়তে নিষেধ করার জন্যে মসজিদে লাল বাতি জ্বালিয়ে রাখা নতুন বিদআত।
৯. প্রয়োজনে চেয়ার বসে সালাত পড়া জায়েজ। তবে বালিশ বা উচু কোন কিছু রেখে তার উপর সিজদা করা নিষেধ। অসুস্থ বা অপারগ ব্যক্তি ইশারায় রুকু সিজদা করবেন।
১০. টাখনুর নিচে কাপড় পড়া হারাম, মারাত্মক কবীরাহ গুনাহ।
১১. জামাত শিবিরের মতো করে ছোট করে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি নামের ফ্যাশান অথবা কাফের নায়দকের মতো করে দাঁড়ি রাখাকে খেলনার মতো বানানো জায়েজ নয়।
১২. ঘরের নারীরা বেপর্দায় চলাচল করলে তার অভিভাবক পুরুষ গার্জিয়ান দায়ী থাকবে।
১৩. স্বামী বিছানায় ডাকলে স্ত্রী অস্বীকার করলে তার উপর আল্লাহ রাগন্বিত হন, এবং এটা মারাত্মক অবাধ্যতা।
১৪. ঘরে স্বামী বা স্ত্রী রেখে বাইরে জিনা-ব্যভিচার করলে স্বাক্ষীসহ যদি ধরা পড়ে অথবা নিজে অপরাধ স্বীকার করলে, তাকে মাটিতে পুঁতে পাথর মেরে মেরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এমন কিছু খবিস নারী পুরষদেরকে কোর্টে বিচার করে প্রকাশ্যে শাস্তি দিয়ে তার ভিডিও করে সমাজের লোকদের মাঝে প্রচার করে দিতে পারলে এমন খবিস নারী পুরুষেরা ভবিষয়তে কুকর্মে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কয়েকবার চিন্তা করবে।

১৫. ধর্ষণের শাস্তি হচ্ছে হত্যা, এর আর কোন শাস্তি নেই। সমাজে ধর্ষণের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেপর্দা নারীরাতো নরপশুদের শিকার হবেই, এমনকি অনেক পর্দানশীল নারীও এর শিকার হচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা তাদের আশেপাশের পরিচিত পুরুষদের দ্বারাই ধর্ষণের শিকার হয়। দুলাভাই, দেবর, দূরসম্পর্কের আত্মীয়, চাচাতো ফুফাতো ভাই, দূরের চাচা, ফুফা, বাড়িতে অবস্থানরত গায়ের মাহরাম পুরুষ, প্রাইভেট টিচার বা ভাইয়া এদের সাথে ঘরের নারীদেরকে কখনো একা রাখবেন না, এমনকি নাবালিকা শিশুদেরকেও না কারণ তারাও এইগুলো শিকার হচ্ছে। ফ্রী মিক্সিং এ মেয়দেরকে এলাউ করবেন না। আর প্রেমের নামে নারীদের ইজ্জত এখন কচু পাতার পানির মতো নষ্ট হচ্ছে। দুইদিন প্রেম করে ৩ দিনের দিনেই নারী তার ভালোবাসার (শয়তানি ধোঁকা!) মানুষের কাছে কখনো ইচ্ছায়, অনেক সময় অনিচ্ছাতেই সতীত্ব হারাচ্ছে।