সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

'মুখারী' হাদীস

হাদীস গ্রন্থ সমূহের মধ্যে সহীহুল বুখারী বা সংক্ষেপে 'বুখারী' সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এর মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়, "আসমানের নিচে এবং আল্লাহর কিতাব (অর্থাত কোরানের) পরে মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বেশি নির্ভর্যোগ্য কিতাব।"
বুখারীর বিপরীতে অন্য একটি হাদীস গ্রন্থ মুসলিমদের মাঝে বহুল প্রচলিত। আর তা হচ্ছে - 'মুখারী' হাদীস। এই গ্রথের হাদীসগুলো কোনো হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়না, খালি কিছু মূর্খ মুসলমানের মুখে মুখে প্রচলিত, আর পাওয়া যাবে ফাযায়েলে আমল, নূরানী নামায শিক্ষা, সকাল সন্ধ্যার ওযীফা, নিয়ামুল কুরান ইত্যাদি নামে প্রচলিত কিছু বেদাতী মুল্লাদের লেখা বই পুস্তকে।
উদাহরণ হিসেবে নিচে কয়েকটি মুখারী হাদীস পেশ করা হলো -
১) "কেউ যদি ৭০ হাজার বার কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে বা পড়ে মৃত ব্যক্তির জন্য উতসর্গ করে তাহলে সে বা অই মৃত ব্যক্তি জান্নাতে যাবে।"
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা বলেন, এটি সহীহ বা জয়ীফ কোনো সনদেই বর্ণিত নেই।
মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যা ২৪/৩২৩, প্রচলিত জাল হাদীস ১৬২।
২) "ইসলামের প্রথম দিকে সাহাবীরা হাতের নিচে মূর্তি নিয়ে নামায পড়তো, আর এই জন্য রাসুল সা. রুকুর আগে ও পরে রউফুল ইয়াদাইন করতেন।"
সাহাবীদের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়া এই কথাটি জাল, কোনো হাদীস গ্রন্থে নেই।
৩) "সাদ্দাদ দুনিয়াতে জান্নাত বানিয়েছলো।"
জাল হাদীস, কোনো প্রমান নেই।
৪) "ঊম্মতেত মতবিরোধ রহমত।"
৫) "এক ওয়াক্ত নামায কাজা করলে ৮০ হোকবা বছর আগুনে পুড়তে হবে।"
৬) "চিল্লায় গিয়ে ১ টাকা দান করলে অত কোটি টাকার নেকী পাওয়া যাবে।"
৭) "হে নবী (মুহাম্মাদ সা.) আপনাকে সৃষ্টি না করলে আসমান জমীনের কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না।"
ইমাম সাগানী, আল্লামা পাটনী, মোল্লা আলী কারী, শায়খ আজলুনী, আল্লামা কাউকজী, ইমাম শওকানী, মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনে সিদ্দীক আল গুমারী, শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহ্লবী প্রমুখ হাদীস বিশারদ এটিকে জাল হাদীস, ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত ও মিথ্যুকদের বানানো কথা বলেছেন।
রেফারেন্স দেখুন - রিসালাতুল মাওযুআত ৯, তাযকিরাতুল মাওজুআত ৮৬, আল মাসুন ১৫০, কাশফুল খাফা ২/১৬৪, আল জুউলুউল মারসু ৬৬, আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুআ ২/৪১০, আল বুশীরী মাদেহুর রাসুলিল আযম ৭৫, ফাতওয়ায়ে আযিযীয়া ২/১২৩, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১/৭৭, প্রচলিত জাল হাদীস ১৮৬-১৮৭।
সর্বশেষ, যারা মুখারী হাদীস মানুষের মাঝে প্রচার করে বেড়াবে তাদের শাস্তি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ বলেছেন, "যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার উপর মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা খুজে নেয়।"

বুখারী ১/২১।