সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

‘কিতাবুত তাওহীদ’ প্রথম অধ্যায়ঃ তাওহীদ

দ্বীন ইসলামের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাওহীদ সম্পর্কে জানুন
__________________________
গ্রন্থঃ কিতাবুত তাওহীদ
প্রথম অধ্যায়ঃ তাওহীদ
লেখকঃ শায়খুল ইসলাম, ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহহাব (রহঃ)
__________________________
১. আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

আমি জিন এবং মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।
সুরা যারিয়াতঃ ৫৬

২. আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ (النحل: ৩৬)

আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি [তাঁদের মাধ্যমে মানুষদেরকে এই নির্দেশ দিয়েছি যে] তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, আর তাগুতকে (আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে উপাসনা করা হয় তাদেরকে) বর্জন করো।
সুরা আন-নাহলঃ ৩৬

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র এরশাদ করেছেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا (الإسراء: ২৩)

৩. তোমার রব (মালিক, পালনকর্তা) এই নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া তোমরা আর কারো ইবাদত করো না। আর মাতা-পিতার সাথে উত্তম আচরণ করো।
সুরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩

৪. সুরা নিসাতে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا (النساء: ৩৬)

তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। আর তাঁর সাথে কাউকে শরিক করো না।
সুরা নিসাঃ ৩৬

৫. সুরা আনআমে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন,

قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا (الأنعام: ১৫১)

হে মুহাম্মদ বলো! [হে আহলে কিতাব] তোমরা এসো তোমাদের রব তোমাদের জন্য যা হারাম করে দিয়েছেন তা তোমাদেরকে পড়ে শুনাই। আর তা হচ্ছে এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না।
সুরা আনআমঃ ১৫১

৬. ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন,

من أراد ان ينظر إلى وصية محمد صلى الله عليه وسلم التى عليها خاتمه فليقرأ قوله تعالى قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا….. وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا﴿১৫৩

যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোহরাঙ্কিত ওয়াসীয়ত দেখতে চায়, সে যেন আল্লাহ তাআলার এই বাণী পড়ে নেয়,
হে মুহাম্মদ বলো, তোমাদের রব তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তা পড়ে শুনাই। আর তা হলো, তোমরা তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না . . . . আর এটাই হচ্ছে আমার সরল, সোজা পথ

৭. সাহাবী মুআয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে একটি গাধার পিঠে বসে ছিলাম। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন,
হে মুআয! তুমি কি জানো, বান্দার উপর আল্লাহর কি হক রয়েছে? আর আল্লাহর উপর বান্দার কি হক আছে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে এই যে, তারা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হচ্ছে যারা তার সাথে কাউকে শরিক করবে না, তাহলে তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন না।
আমি (মুয়াজ রাঃ) বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি কি এ সুসংবাদ লোকদেরকে জানিয়ে দেব না? তিনি বললেন, তুমি তাদেরকে এ সুসংবাদ দিওনা, তাহলে তারা ইবাদত ছেড়ে দিয়ে [আল্লাহর উপর ভরসা করে] হাত গুটিয়ে বসে থাকবে।
সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম।
__________________________
এ অধ্যায় থেকে নিুোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১. জ্বিন ও মানব জাতি সৃষ্টির রহস্য।
২. ইবাদতই হচ্ছে তাওহীদ। কারণ এটা নিয়েই বিবাদ।
৩. যার তাওহীদ ঠিক নেই, তার ইবাদতও ঠিক নেই। এ কথার মধ্যে
ولا أنتم عابدون ما أعبد এর অর্থ নিহিত আছে।
৪. রাসূল পাঠানোর অন্তর্নিহিত হিকমত বা রহস্য।
৫. সকল উম্মতই রিসালতের আওতাধীন ছিল।
৬. সমস্ত নবী ও রাসুলদের দ্বীন এক ও অভিন্ন।
৭. মূল কথা হচ্ছে, তাগুতকে অস্বীকার করা ব্যতীত ইবাদতের মর্যাদা অর্জন করা যায় না।
৮. আল্লাহর ইবাদত ব্যতীত আর যারই ইবাদত করা হয়, সেই তাগুত হিসেবে গণ্য।
৯. সালাফে-সালেহীনের কাছে সূরা আনআমের উল্লেখিত তিনটি মুহকাম (সুস্পষ্ট) আয়াতের (১৫১, ১৫২, ১৫৩) বিরাট মর্যাদার কথা জানা যায়। এতে দশটি বিষয়ের কথা রয়েছে। এর প্রথমটিই হচ্ছেঃ শিরক নিষিদ্ধ করণ।
১০. সূরা ইসরাঈল্কে কতগুলো মুহকাম আয়াত রয়েছে। এবং তাতে আঠারোটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ বিষয়গুলোর সূচনা করেছেন তাঁর বাণী- لا تجعل مع الله إلها آخر فتقعد مذموما مخذولا এর মাধ্যমে, আর সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন তাঁর বাণী-
ولا تجعل مع الله إلها آخر فتلقى في جهنم ملوما مدحوراً
এর মাধ্যমে। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টির সুমহান মর্যাদাকে উপলব্ধি করার জন্য তাঁর বাণী,
ذلك مما أوحى إليك ربك من الحكمة এর মাধ্যমে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
১১. সূরা নিসার আল- হুকুকুল আশারা [বা দশটি হক] নামক আয়াতের কথা জানা গেলো। যার সূচনা হয়েছে আল্লাহ তাআলার বাণী,
واعبدوا الله ولا تشركوا به شيئا
এর মাধ্যমে। যার অর্থ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, আর তাঁর সাথে কাউকে শরিক করো না।
১২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্তিমকালের অসিয়তের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন।
১৩. আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার হক সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
১৪. বান্দা যখন আল্লাহর হক আদায় করবে, তখন আল্লাহ তাআলার উপর বান্দার হক সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
১৫. অধিকাংশ সাহাবিই এই বিষয়টি (মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ এর হাদীসটি) জানতেন না।
১৬. কোন বিশেষ স্বার্থে ইলম (জ্ঞান) গোপন রাখার বৈধতা।
১৭. আনন্দদায়ক বিষয়ে কোন মুসলিমকে খোশখবর দেয়া মুস্তাহব (উত্তম)।
১৮. আল্লাহর অপরিসীম রহমতের উপর ভরসা করে আমল বাদ দেয়ার ভয়।
১৯. অজানা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির الله ورسوله أعلم [অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভাল জানেন] বলা।
২০. কাউকে বাদ রেখে অন্য কাউকে জ্ঞান দানে বিশেষিত করার বৈধতা।
২১. একই গাধার পিঠে পিছনে আরোহণকারীর প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দয়া ও নম্রতা প্রদর্শন।
২২. একই পশুর পিঠে একাধিক ব্যক্তি আরোহণের বৈধতা।
২৩. মুআয বিন জাবাল (রাঃ) এর মর্যাদা।
২৪. আলোচিত বিষয়টির মর্যাদা ও মহত্ত্ব।
__________________________

প্রথম অধ্যায় এখানেই সমাপ্ত। আশা করি চলবে, ইন শা আল্লাহ।