‘সেকুলারিজম’ বা ধর্ম নিরপেক্ষতা মতবাদ কি?
সেকুলারিজম বা ধর্ম
নিরপেক্ষতা মতবাদ অনুযায়ীঃ দ্বীন বা ধর্ম শুধুমাত্র মসজিদ
ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। মানুষের জীবনের
সমস্ত দিক ধর্ম দ্বারা পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হবেনা। যেমন শিক্ষা, রাজনীতি,
অর্থনীতি এইগুলোর কোনো কিছুই কোনো ধর্ম দিয়ে চলবেনা। এইগুলো চলবে মানুষের নিজস্ব
মতামতের ভিত্তিতে, কোনো ধর্মের হস্তক্ষেপ এখানে চলবেনা।
সেকুলারিজম এক প্রকার কুফুরী ও নাস্তিকতাঃ
আপনি মসজিদে বসে
নামায পড়েন, সেকুলাররা আপনাকে কিছুই বলবেনা, আপনি হজ্জ করেন, রোযা রাখেন কিছুই
বলবেনা। কিন্তু আপনি যদি বলেন অর্থনীতি ইসলাম অনুযায়ী চলতে হবে, সুদ-ঘুষ নিষিদ্ধ করতে হবে, মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি অশ্লীলতা বন্ধ করতে হবে, যাকাতের হুকুম
রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে চালু করতে হবে,
তারা বলবে এইগুলো ধর্মীয় বিষয়। ধর্মের কোনো আইন অর্থনীতি ও দেশ পরিচালনার মাঝে আনা যাবে না।
আপনি যদি বলেন,
গণতান্ত্রিক কুফুরী ব্যবস্থা, মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার পরিচালনা
করা কুফুরী, মুসলিমদের খলিফা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন, এটা
তারা মানেনা। কারণ তাদের দাবী হচ্ছে,
ধর্মকে রাজনীতির মাঝে আনা যাবেনা। যদিওবা তাদের কেউ কেউ নিজেকে মুসলিম বলে
দাবী করে, নির্বাচন আসলে সুনাম কুড়ানোর
জন্য হজ্জ ওমরা করে, পাঞ্জাবি-টুপি বা মাথায় ত্যানা পেঁচিয়ে পর্দানশীল সাজার অভিনয় করে, যাতে করে মানুষের কাছে ধার্মিক হিসেবে তাদের পরিচয় ফুটে উঠে। কিন্তু আপনি যদি আল্লাহর দেওয়া আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করার দাবী জানান, তাহলে তাদের ভাষায় আপনি হচ্ছেন “সাম্প্রদায়িক”, আর এটা তাদের কাছে চরম অপরাধ। কারণ, তারা মনে করে কোনো
ধর্মই (এমনকি ইসলাম) অন্য ধর্মের লোকদের ন্যায় সংগত অধিকার দেয় নি। সেইজন্য, ইসলাম দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে অমুসলিমরা তাদের অধিকার থেকে
বঞ্চিত হবে এবং তাদের মানবিক অধিকার ক্ষুন্ন হবে। তাই যারা
সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদের অনুসারী, তারা তাদের
বুঝ অনুযায়ী, ইংরেজ আমেরিকানদের আইনের অন্ধ অনুকরণ
করে
নিজে নিজে আইন বানিয়ে নেবে, যা তারা মনে করে সকলে ধর্মের (এমনকি ইসলামের) দেওয়া
বিধি-বিধান, কুরআন-হাদীসের আইনের চাইতেও উত্তম
(নাউযুবিল্লাহি মিং যালিক)।
যাই হোক, এইরকম
যারা কুরানুল কারীমের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশ মানেনা, এরা আসলে নাস্তিক। কারণ,
সত্যিকার অর্থে তারা কোনো ধর্মকেই পুরোপুরিভাবে মানেনা বা বিশ্বাস করে না। শুধুমাত্র একটা লেবেল রাখার জন্যে
লোক দেখানো ধর্মের কিছু অংশ মানার দাবী করে।
ধর্মনিরপেক্ষতা
মতবাদে বিশ্বাসীদের সম্পর্কে আলেমদের ফতোয়াঃ
(১) শায়খ
মুহাম্মাদ আমান আল-জামি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী কোন ব্যক্তির জবাই করা পশুর গোশত খাওয়া হারাম, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী কোনো
মেয়েকে বিয়ে করা কোনো মুসলিমের জন্য জায়েজ নয়, কারণ তারা হচ্ছে মুর্তাদ (ধর্মত্যাগী)।”
(২) শায়খ
সালিহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “যারা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী, তারা মুলহিদ (নাস্তিক), বরং ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী ব্যক্তিরা মুনাফেরকদের চাইতেও নিকৃষ্ট।”
দুঃখের বিষয় হচ্ছে,
আল্লাহর দুশমন ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের চমকপ্রদ কথা-বার্তা দ্বারা অনেক মুসলিম ভাই-বোনেরা বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন, ঈমান নিয়ে সন্দেহের
মাঝে পড়ছেন। রাজনীতি বা অন্য অনেক বিষয়ে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী
কি বক্তব্য রয়েছে, এই ব্যপারে তাদেরকে
সচেতন করার জন্যে দাওয়াত দিলে তারা বলে,
(১)
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিকনা। মানে সব ব্যপারে ধর্মের
বক্তব্য থাকবে, এটা তাদের কাছে
বাড়াবাড়ি বা কট্টর বলে মনে হয়।
(২)
সবকিছুতে ধর্মকে টেনে আনবেন না।
(৩)
রাজনীতি আলাদা, ধর্ম আলাদা। মানে রাজনীতিতে ধর্মের কোন আইন চলবেনা।
নাউযুবিল্লাহ,
সবগুলো কুফুরী, নাস্তিকদের কথা!
ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের
সংশয়ের জবাবঃ
অনেকে বলে, ভাই
কোরান হাদীস নিয়ে কথা বলুন, কিন্তু রাজনীতির বিষয়ে কোন কথা বলবেন না। আমরা তাদেরকে বলি, “দুঃখিত ভাই! আপনার সাথে আমরা একমত হতে পারলাম না। ইসলাম একটি পূর্ণাংগ ‘দ্বীন’ বা জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম আমাদেরকে কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, কিভাবে
ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন্ পরিচালনা করতে হবে অর্থাৎ কিভাবে
মানব জীবনের প্রত্যেকটা দিক পরিচালনা করতে হবে, সে শিক্ষা দেয়। এর পাশাপাশি, কিভাবে দেশ
চালাতে হবে, বিচার-ফয়সালা
কিভাবে করতে হবে, সেই দিক-নির্দেশনা ইসলাম আমাদেরকে দিয়েছে, আলহা’মদুলিল্লাহ। আর সেটাই
হচ্ছে ‘রাজনীতি’, দেশের রাজা বা
রাষ্ট্রপ্রধান যেই নীতি বা আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করবেন।
এখন, আপনি যদি
ইসলামের রাজনৈতিক, বিচারিক, রাষ্ট্রীয় ইত্যাদি দিকগুলোকে অস্বীকার করে বলেন, “রাজনীতি আলাদা আর ধর্ম
আলাদা” তাহলে আপনার মতো কুরআন অস্বীকারকারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তবে কি তোমরা
কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? যারা এমন করবে, দুনিয়ার জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর
কোন পথই নেই। আর কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে।” সুরা আল-বাকারাহঃ
৮৫।
যাই হোক এবার আসি
মূল বক্তব্যে, ইদানিং একটা কথা খুব বেশি শোনা যাচ্ছে, বিশেষ করে নামধারী মুসলিম
রাজনীতিক অথবা ছুপা নাস্তিক/মুনাফিকদের
মুখে, “ধর্ম যার যার,
রাষ্ট্র সবার।”
প্রথম কথা, এইরকম
কথা প্রথম কে চালু করেছিলো? নাস্তিক, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী কিংবা, কমিউনিস্টরা, যারা কার্ল মার্ক্স, লেলিন,
স্ট্যালিনের অনুসারী তারা।
কুরআন ও হাদীসে এর পক্ষে বা বিপক্ষে কি বলা আছে?
সুবাহা’নাল্লাহ! কুরআন না
বুঝে না পড়ার কারণে মানুষ কতোটা যে অজ্ঞের মতো কথা
বলতে পারে, এই উদাহরণটাই তার বাস্তব প্রমান। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে, সালাতে, বাড়ি
থেকে বের হওয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়ে, ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের গায়ে ফুঁ দিচ্ছে,
তারপরেও যা পড়ছে একটু পরেই তার বিরুদ্ধে বড় বড় লেকচার দেওয়া শুরু করছে। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “লাহু মা ফিস-সামা-ওয়াতি
ওয়ামা-ফিল আরদ।” আয়াতুল কুরসী (সুরা বাকারাহঃ ২৫৫)।
অর্থঃ আসমান ও
যমীনে যা কিছু আছে, সবই তাঁর (আল্লাহর)।
এখন দেশ কি আসমান ও
যমীনের বাইরে নাকি, যে তা আল্লাহর না হয়ে মানুষের হবে? এই আসমান, যমীন, সবকিছুর মালিক হচ্ছেন এক আল্লাহ। যেহেতু দেশের মালিক আল্লাহ, সুতরাং দেশও চলবে আল্লাহর আইন দিয়ে। উল্লেখ্য, রাজনীতি বলতে
আমাদের দেশে প্রচলিত আওয়ামীলীগ, বিনএনপি, বা জামায়েত
ইসলামীর গণতান্ত্রিক রাজনীতির নির্বাচন, হরতাল, মিছিল, অবরোধ, ভাংচুর বা
বিশৃংখলাকে বুঝাচ্ছি না। গণতান্ত্রিক “কুফুরী” রাজনীতিকে ইসলাম পাঁচ পয়সাও মূল্য দেয়না। রাজনীতি হলো,
কিভাবে দেশের রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচিত হবেন (আলেম ও মুসলিম নেতাদের শূরা বা
শলা-পরামর্শের ভিত্তিতে), কিভাবে রাষ্ট্রের অর্থনীতি চলবে (যাকাত ও দান-সাদাক,
জিযিয়া ভিত্তিক অর্থনীতি, যা সুদ ও অবৈধ ট্যাক্স থেকে মুক্ত), চোরের
শাস্তি কি হবে (আদালতে কাজীর কাছে প্রমানিত হলে হাত কাটা), খুনের শাস্তি কি হবে
(নিহতের পরিবার ক্ষমা না করলে কিসাস,
অর্থাৎ খুনের বদলে খুন) ইত্যাদি।
ধর্ম নিরপেক্ষতা মতবাদ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্যে এই বইটা পড়তে পারেন -
https://archive.org/download/DhormoniropekkhotabadByProf.Dr.MdAsadullahAlGhalib/Dhormoniropekkhotabad_by_prof._dr._md_asadullah_al-ghalib.pdf