শনিবার, ৮ মার্চ, ২০১৪

পীর বা মাজারের উদ্দেশ্যে গরু, ছাগল মানত করা শেরেকী


পীর বা মাজারের উদ্দেশ্যে গরু, ছাগল মানত করা শিরকঃ
অনেকে বিপদে পড়লে, বিশেষ কোনো ইচ্ছা পূরণের জন্য, রোগ মুক্তির জন্য, মা-বোনেরা ছেলে-মেয়ে হওয়ার জন্য ইত্যাদি কারণে কোনো পীর বা মাজারের উদ্দেশ্যে গরু, ছাগল বা অন্য পশু মানত করেন। অনেকে আবার এইভাবে উপকার পেয়ে এইগুলোর প্রতি আরো বেশি ঝুঁকে পড়েন, ইসলামের কথা আর শুনতে বা বুঝতে চান না, ঐ পীর বা মাজার নিয়েই পড়ে থাকেন। এরপর প্রতি বছর মাযারে যাবেন, টাকা-পয়সা গরু-ছাগল দিয়ে আসবেন, ওরস করবেন, মাজারে চাদর চড়াবেন ইত্যাদি। চলুন পীর বা মাজারের নামে পশু মানত করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে তা জেনে নিই।
আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি -
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে পশু জবাই করে তার উপরে আল্লাহর অভিশাপ,
(২) যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপরে আল্লাহর অভিশাপ,
(৩) যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপরে আল্লাহর অভিশাপ, এবং
(৪) যে জমিনের চিহ্ন বা সীমানা পরিবর্তন করে তার উপরে আল্লাহর অভিশাপ
সহীহ মুসলিম।
সুতরাং, যে ব্যক্তি কোন মাযার বা পীরের উদ্দেশ্যে কোন পশু মানত করে তার উপরে আল্লাহর লানত বা অভিশম্পাত বর্ষিত হবে। মূলত এটা একটা শিরক।
বিঃদ্রঃ এইরকম শিরকি মানত করে কোন ব্যক্তির সত্যিই উপকার হতে পারে বা ইচ্ছা পূরণ হতে পারে। কারণ, আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন, সে কি আলাহর প্রতি ইমান রাখে, নাকি শিরকি কুফুরী করে দুনিয়াবী লাভের পেছনে ছুটে। দুনিয়ার কোন মানুষই যদি মাজারের গিয়ে, পীর ধরে কিছু না পেতো, তাহলে একজন মানুষও মাজারে টাকা দিতে যেতোনা, কেউই পীরের জন্যে খাসি মুরগি জবাই করতোনা। কিন্তু এই শিরকের মাধ্যমে আল্লাহ কারো কারো ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন, যাতে করে তিনি তাকে ও অন্যদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন তারা কি শিরক থেকে দূরে থাকে কিনা? বিষয়টার উদাহরণ হচ্ছে যেমন - যাদু করে মানুষের দুনিয়াবী ক্ষতি ঠিকই করা যায়। কিন্তু যাদু কুফুরী একটা কাজ, যে যাদু করে এবং যে করায় - দুইজনের ঈমান নষ্ট হয়ে কাফের হয়ে যায়। আরো যেমন, সুদের ব্যবসা করে সাময়িকভাবে লাভবান ঠিকই হওয়া যায়, কিন্তু সুদ একটা ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহ। ঠিক তেমনি, পীর বা মাযারের উদ্দেশ্য শিরকি মানত করে কেউ কেউ উপকার ঠিকই পেতে পারে, এইভাবে আল্লাহ খারাপ জিনিসের মাঝে সাময়িক উপকার রেখে তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন। মনে রাখা প্রয়োজন, পীর বা মাযারের উদ্দেশ্যে মানত করা শিরক, যার কারণে একজন মানুষের অনন্তকালের পরকালের জীবনে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।
তবে এই ধরণের শিরকি মানত করে কাজ হোক বা না হোক, ইসলাম এই কাজকে হারাম করেছে এবং শিরক বলে আখ্যায়িত করেছে, কারণ এধরণের মানতের ফলে ঐ ব্যক্তির বিশ্বাস, আস্থা ও ভক্তি আল্লাহর উপর থেকে ঐ মাজার বা পীরের উপর চলে যায়, যা বড় শিরক। একারণে আমরা দেখতে পাই, যারা জীবনে নামায-রোযা করেনা, হারাম ও পাপাচারে ডুবে থাকে, এরা যদি কোন বিপদে পড়ে তারা আল্লাহকে না ডেকে পীরকে ডাকে, পীরের নামে, মাযারের নামে মানত করে। তাদের অনেকে তাদের পীরদেরকে আল্লাহর মতো মানে। এছাড়া জিন্দা বা মূর্দা কোনো পীরের বা মাজারের কোনো ক্ষমতা নেই যে, কারো ইচ্ছা পূরণের বা বিপদ দূর করার। আসলে যারা কবরে আছে তারা নিজেরাই বড় বিপদের মাঝে আছে, তারা অন্যের কি উপকার করবে?

পীর ও মাযার কেন্দ্রীক অনেক শিরকী আকীদা পাকিস্থান, ভারত, বাংলাদেশের মতো অজ্ঞ-মূর্খ সমাজে খুব বেশি প্রচলিত। সাধারণ মানুষের ধর্মের প্রতি সরল বিশ্বাস ও আলেমদের প্রতি অন্ধ ভক্তিকে পূজি করে মাজারের খাদেম নামক একশ্রেণীর মানুষরূপী শয়তানের এ ধরণের শিরকের জমজমাট ব্যবসা খুলে বসে আছে। আল্লাহ এদের অনিষ্ট থেকে মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন, আমিন।