একভাই প্রশ্ন
করেছেন,
সৌদি আরবের সাথে
একই দিনে রোজা এবং ঈদ পালন সম্পরকে একটি পোষ্ট দিন। আমি আহলে হাদিসের মধ্যে ২টি দল
দেখতে পাচ্ছি তাদের কেউ এর পক্ষে এবং বিপক্ষে।
উত্তরঃ বাংলাদেশে
যারা সৌদি আরবের সাথে রোযা ও ঈদ করে, এরা আহলে হাদীস নয়। এরা
মূলত কিছু জাহেল ও চরমপন্থী বক্তার অনুসারী, এদের সাথে
বর্তমান যুগের কোন আলেম নেই। এরা মুসলিম জামাতে অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টিকারী।
এদের থেকে সাবধান। চাঁদ দেখে রোযা রাখা এবং চাঁদ দেখে ঈদ করা নিয়ে বিংশ শতাব্দীর
শ্রেষ্ঠ দুইজন আলেমের ফাতওয়ার অনুবাদ দেওয়া হলো।
_________________________________
আল্লামাহ বিন বাজ
রাহিমাহুল্লাহর ফাতওয়াঃ
নিজ দেশের লোকদের
সাথে রোযা রাখবে, না চাঁদ দেখা যে কোনো দেশের সাথে?
প্রশ্নঃ যদি কোনো
ইসলামি রাষ্ট্রে চাঁদ দেখা যায়, আর আমি যে দেশে বসবাস করি, সেখানে শাবান ও রমজান মাস ত্রিশ দিনে পুরো করা হয়, তাহলে আমি কী করব? রমজান প্রসঙ্গে মানুষের
মতপার্থক্যের কারণ কী?
উত্তরঃ
আলহামদুলিল্লাহ, আপনার জন্য রোযা আপনার দেশের লোকদের সাথে থাকাই
আবশ্যক। তারা যদি রোযা রাখে তাদের সাথে রোযা রাখবেন; আর
তারা যদি রোযা না রাখে তবে আপনিও তাদের সাথে রোযা রাখবেন না। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ، وَالفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ، وَالأَضْحَى يَوْمَ تُضَحُّونَ»
‘‘তোমরা
যেদিন রোযা রাখবে সেইদিনই রোযা, যেদিন ইফতার করবে সেদিনই ইফতার,
আর তোমরা যেদিন কোরবানি করবে সেদিনই কোরবানি।’’ সুনানে
তিরমিযীঃ ৬৯৭।
.
দ্বিতীয়তঃ ইখতিলাফ
ভাল জিনিস নয়, তাই আপনার দেশের সাথে থাকাই আপনার জন্য জরুরী ও সঙ্গত।
আপনার দেশের মুসলিমগণ যখন রোযা করবেন না, আপনি তাদের সাথে
রোযা না করবেন। আর যখন তারা রোযা রাখবে আপনি তাদের সাথে রোযা রাখবেন।
আর মত পার্থক্যের
কারণ হচ্ছে, কেউ চাঁদ দেখে, কেউ চাঁদ দেখে
না। অতপর যারা চাঁদ দেখে, অন্যরা তাদের উপর ভরসা করে,
তাদেরকে বিশ্বাস এবং তাদের দেখা অনুযায়ী আমল করে। আবার কখনো
তাদের বিশ্বাস কিংবা তাদের দেখা অনুযায়ী আমল করা হয় না, ফলে ইখতিলাফ সংঘটিত হয়। কোন দেশ চাঁদ দেখে এবং চাঁদ দেখার ফয়সালা
দেয়, ফলে দেশবাসী রোযা রাখে অথবা ইফতার করে। আর অন্য দেশ
এই দেখার উপর ভরসা কিংবা বিশ্বাস করে না- ভৌগলিক কিংবা রাজনৈতিক ইত্যাদি কারণে।
সকল মুসলিমের জন্য
আবশ্যিক হল চাঁদ দেখেই রোযা রাখবে, আবার চাঁদ দেখেই রোযা
ভাঙ্গবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া
সাল্লামের হাদীস ব্যাপকঃ
«إِذَا رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ فَصُومُوا، وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَصُومُوا ثَلَاثِينَ يَوْمًا»
‘‘যখন
তোমরা চাঁদ দেখবে রোযা রাখবে, আবার যখন চাঁদ দেখবে ইফতার করবে। আর
আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন হয়, তবে সংখ্যা ত্রিশ দিন পূরণ
করবে।’’ সহীহ মুসলিমঃ ১০৮১।
.
যদি সকলে চাঁদ দেখা
বিশ্বাস করে এবং মনে করে যে, বাস্তবিকই তা দেখা গেছে, তবে সে হিসেবে রোযা রাখা ও ইফতার করা ওয়াজিব। হ্যাঁ, যদি বাস্তবতার ব্যাপারে মত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়, আর কেউ কাউকে বিশ্বাস না করে, তখন আপনার জন্য
সঙ্গত হবে আপনার দেশের মুসলমানদের সাথে রোযা রাখা এবং তাদের সাথে ইফতার করা। কারণ,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
«الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ، وَالفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ، وَالأَضْحَى يَوْمَ تُضَحُّونَ»
‘‘তোমরা
যেদিন রোযা রাখবে সেদিনই রোযা, যেদিন ইফতার করবে সেদিনই ইফতার,
আর তোমরা যেদিন কোরবানি করবে সেদিনই কোরবানি।’’ তিরমিযীঃ
৬৯৭।
.
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে প্রমাণিত, কুরাইব তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, শাম (সিরিয়া) দেশের লোকেরা জুমুআর দিন রোযা রেখেছে। ইবনে আব্বাস বললেন,
আমরা চাঁদ দেখেছি শনিবার, আমরা যতক্ষণ
না চাঁদ দেখব রোযা রাখব না, অন্যথায় ত্রিশ দিন পূর্ণ
করব। তিনি শামবাসীদের চাঁদ দেখার উপর আমল করেন নি, যেহেতু
উভয় দেশের মাঝে দূরত্ব অনেক বেশী এবং উভয়ের উদয়স্থলও ভিন্ন। তাঁর দৃষ্টিতে এটা
ইজতেহাদের বিষয়। ইবনে আব্বাস এবং তার অনুসরণ করে যারা বলেছেন, নিজ দেশের সাথে রোযা এবং নিজ দেশের সাথে ইফতার করার জন্য, তাদের মতই আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
শায়খ আব্দুল আজীজ
বিন বায রাহিমাহুল্লাহ, সাবেক প্রধান মুফতি, সাউদী আরাবিয়া,
উৎসঃ মাযমু ফাতওয়া
ওয়া মাকালাত মুতানাওয়েয়াহ।
_________________________________
আল্লামাহ ইবনে
উসাইমিন রাহিমাহুল্লার ফাতওয়াঃ
প্রশ্নঃ মুসলিম
জাতির একতার লক্ষ্যে কেউ কেউ চাঁদ দেখার বিষয়টিকে মক্কার সাথে সংশ্লিষ্ট করতে
চায়। তারা বলে মক্কায় যখন রামাযান মাস শুরু হবে তখন বিশ্বের সবাই রোযা রাখবে। এ
ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ বিষয়টি
মহাকাশ গবেষণার দিক থেকে অসম্ভব। ইমাম ইবনু তায়মিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, "চন্দ্র উদয়ের স্থান বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বিদ্বানগণ
ঐকমত্য। আর এই বিভিন্নতার দাবী হচ্ছে প্রত্যেক এলাকায় ভিন্ন রকম বিধান হবে। একথার
স্বপক্ষে দলীল কুরআন হাদীছ ও সাধারণ যুক্তি।
আল্লাহ্ তা’আলা
বলেন,
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ “অতএব
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন ছিয়াম পালন করে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) যদি পৃথিবীর শেষ সীমান্তে লোকেরা এ মাসে উপস্থিত
না হয় অর্থাৎ চাঁদ না দেখে আর মক্কার লোকেরা চাঁদ দেখে, তবে
কিভাবে এই আয়াত তাদের ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবে যারা কিনা চাঁদই দেখেনি। আর নবী
সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ “তোমরা
চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ কর।” মক্কার
অধিবাসীগণ যদি চাঁদ দেখে তবে পাকিস্তান এবং তার পূর্ববর্তী এলাকার অধিবাসীদের
কিভাবে আমরা বাধ্য করতে পারি যে তারাও ছিয়াম পালন করবে? অথচ
আমরা জানি যে, তাদের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি। আর নবী
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিয়ামের বিষয়টি চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট করে
দিয়েছেন।
.
যুক্তিগত দলীল
হচ্ছে,
বিশুদ্ধ ক্বিয়াস যার বিরোধীতা করার অবকাশ নেই। আমরা ভাল ভাবে
অবগত যে, পশ্চিম এলাকার অধিবাসীদের আগেই পূর্ব এলাকার
অধিবাসীদের নিকট ফজর উদিত হয়। এখন পূর্ব এলাকায় ফজর উদিত হলে কি আমরা পশ্চিম
এলাকার লোকদের বাধ্য করব একই সাথে খানা-পিনা থেকে বিরত হতে? অথচ তাদের ওখানে এখনও রাতের অনেক অংশ বাকী আছে? উত্তরঃ কখনই না। সূর্য যখন পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের আকাশে অস্তমিত হয়,
তখন পশ্চিম এলাকার দিগনে- তো সূর্য দেখাই যাচ্ছে তাদেরকে কি আমরা
ইফতার করতে বাধ্য করব? উত্তরঃ অবশ্যই না। অতএব চন্দ্রও
সম্পূর্ণরূপে সূর্যের মতই। চন্দ্রের হিসাব মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর সূর্যের হিসাব
দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ্ বলেছেন,
“সিয়ামের
রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে; তারা তোমাদের জন্য আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ। তোমরা যে নিজেদের
খিয়ানত করছিলে, আল্লাহ্ তা পরিজ্ঞাত আছেন। এ জন্যে তিনি
তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের (ভার) লাঘব করে দিলেন; অতএব এক্ষণে তোমরা (রোযার রাত্রেও) তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হতে পার
এবং আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান কর। এবং প্রত্যুষে (রাতের)
কালো রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর;
অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ই‘তেকাফ
করার সময় (স্ত্রীদের) সাথে সহবাস করবে না; এটাই আল্লাহর সীমা,
অতএব তোমরা তার নিকটেও যাবে না। এভাবে আল্লাহ্ মানব মন্ডলীর
জন্যে তাঁর নিদর্শন সমূহ বিবৃত করেন, যেন তারা সংযত হয়।” সুরা
বাক্বারা- ১৮৭।
.
আল্লাহই বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
“অতএব
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন সিয়াম পালন করে।”
অতএব যুক্তি ও
দলীলের নিরীখে সিয়াম ও ইফতারের ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা বিধান হবে।
যার সম্পর্ক হবে বাহ্যিক আলামত বা চিহ্ন দ্বারা যা আল্লাহ্ তা’আলা
কুরআনে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সুন্নাতে নির্ধারণ করে
দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে চাঁদ প্রত্যক্ষ করা এবং সূর্য বা ফজর প্রত্যক্ষ করা।
উৎস গ্রন্থঃ ফাতাওয়া
আরকানুল ইসলাম, বিভাগঃ সিয়াম (রোযা), প্রশ্ন
নং-৩৯৩।
ফাতওয়া দিয়েছেনঃ
প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও ফকীহ, শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন
রাহিমাহুল্লাহ।
_________________________________