প্রশ্নঃ আমার খেলা দেখতে
খুব ভালো লাগে। টিভিতে ক্রিকেট, ফুটবল খেলা দেখা কি জায়েজ???
কিছুদিন আগে এশিয়া কাপ নামে
ভয়ংকর এক পাপের মেলা শেষ হতে না হতেই আবার নাকি নামধারী মুসলিম (!) দেশের মুসলমানেরা
(!) ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে অসভ্যতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়েছে...
এনিয়ে আমাদের পুরোনো লেখাগুলো
শেয়ার করা হলো, যাতে করে মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া যায়। আমরাতো শুধু মাত্র মানুষকে উপদেশ
দিতে পারি...
মানা না মানা এটা সবার নিজ
নিজ এখতিয়ারের বিষয়।
বারাকাল্লাহ ফীকুম।
admin : আনসারুস সুন্নাহ
১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৩৫ হিজরী।
_____________________________
সিরিয়াতে বিড়াল খাওয়া জায়েজ...!!
আল্লাহু মুস্তাআ’ন।
মুসলিমদের ইতিহাসে “শাম” নামে
পরিচিত, হাদীসে যেই দেশের মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে, সেই সিরিয়াতে দীর্ঘদিন ধরে শিয়া
আলাভী কাফেররা সুন্নী নারী পুরুষ ও শিশুদের নির্বিচারে গণহত্যা করে যাচ্ছে, নারীদের
ধর্ষণসহ অবর্ণনীয় নির্যাতন করছে, শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া, আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে...এটা
২-১টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, হাজার হাজার, এখন লক্ষের উপরেও হয়তোবা চলে গেছে...ইন্না লিল্লাহি
ওয়া ইলাইহি রাজিউন।
মুসলিম ও কাফের বিশ্ব এটা শুধু
চেয়েই দেখছে, নির্যাতিতদের পাশে কেউই দাড়াচ্ছেনা। অন্যদিকে মুনাফেক শিয়া চক্রের আরেক
দোসর ইরান ও হিজবুল্লাহ গ্রুপ তাদের দোসর বাশার আল-আসাদকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা
করে যাচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নীদেরকে সিরিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য।
আন্তর্জাতিক ত্রান তহবিল ও
সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আহত ও দুঃস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করতে
বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। চরম দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন দেশটির স্থানীয় ওলামারা অনেক আগেই ফতোয়া
দিয়েছেন, এমন অবস্থায় জীবন বাঁচানোর জন্য বিড়াল খাওয়া জায়েজ।
গতকাল থেকে দেখলাম ক্রিকেট
খেলা দেখা নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের মাঝে তর্ক বিতর্ক চলছে...”দেশের অনেকেই ক্রিকেট খেলা
নিয়ে ব্যথিত”...
অথচ, তাদের এই ব্যথা দেখতে
পাওয়া যায়না যখন সিরিয়ার একজন ভাইকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়, পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা
হয় শুধুমাত্র শিয়া মুর্তাদ বাশারকে ইলাহ বলে না মেনে নেওয়ায়, বোনদেরকে ৫ তালা ছাদ থেকে
ফেল দেওয়া হয় (এইগুলোর ভিডিও ইউটিউবে আছে), একদিনে ১০০০ এর বেশি শিশুসহ কয়েক হাজার
নারী পুরুষকে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় (গত বছরের শেষের দিকে), মুসলিম
বোনদেরকে পরিবারের সামনে গণধর্ষণ করা হয়...
অথচ ঈমানদার নারী ও পুরুষের
একজন আরেকজনের আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সহমর্মিতার
ক্ষেত্রে মুসলমানদের উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহের মতো। তার একটি অঙ্গ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে
তখন অন্য সকল অঙ্গও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
মুসলিমঃ ৬৯৫৮, মুসনাদে আহমদ।
“মুসলমানেরা সকলে মিলে একটা
দেহের মতো, যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহের কষ্ট হয়, মাথায় ব্যথা হলেও গোটা দেহটার
কষ্ট হয়”।
সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৮৬/৬৭।
আজকে কোথায় সেই ভালোবাসা ও
দরদ...
অথচ এই নামধারী অনেক মুসলিম
নারীদের দরদ দেখা যায় সিনেমার নায়ক নায়িকার বানোয়াট কাহিনি নিয়ে, মিথ্যা জেনা ব্যভিচারে
সিরিয়ালের চরিত্র নিয়ে চোখের পানি ফেলার মাঝে!!
অথচ এই নামধারী অনেক মুসলিম
পুরুষদের দরদ দেখা যায় হারাম খেলায় প্রিয় দল হেরে গেলে চোখের পানি ফেলার মাঝে, কষ্টে
বুক ফেটে কান্না আসার মাঝে, দুঃখে রাতে বিনিদ্র রাত কাটানোর মাধ্যমে, বেনামাযীদেরকে
খেলার জন্য টাকা পয়সা দান করা এমনকি ফরয নামায না পড়লেও খেলায় জেতার জন্য নফল নামায
মানত করার মাধ্যমে!!
এইগুলো নিয়ে কথা তুললে অনেকে
এসে নিজের মনমতো যা ইচ্ছা তাই বলে যায়...
তাদেরকে বলছি...
ভাই এইটা বাশেরকেল্লার মতো
মিথ্যা ও প্রতারণা করে কোনো দলের ভোট বাড়ানোর জন্য পেজ না, সেলেব্রিটির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর
জন্য পেজনা, বেদাতী দলের ইসলামের নামে বেদাত প্রচারের পেজনা...
আমাদের পেজে চেষ্টা করা হয়
সাধ্য অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল ইসলামের কথা প্রচার করার
জন্য। আপনার যদি ভালো না লাগে, আনলাইক বাটনের অপশন খোলা আছে...
কিন্তু পেজে আছেন বলেই ইসলামের
কথা শুনে প্রবৃত্তি পূজারীদের মতো উপদেশ না নিয়ে উলটা গালি দেওয়ার কোনো অধিকার আপনাকে
দেওয়া হয়নি।
যদিও আজ পর্যন্ত এক ওভার খেলা
দেখার দুর্ভাগ্য হয়নি, তারপরেও অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলি...
*এই খেলায় হাজার হাজার নারী
পুরুষ গেছে সরাসরি খেলা দেখতে...যাদের ৯৫%ই আসর, মাগরিব, এশা পড়েনি...অথচ নামায না
পড়লে ভালো খারাপতো দূরের কথা – মানুষের ঈমানই থাকেনা।
*হাজার হাজার নারী অন্যায়ভাবে
ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েছে। অথচ আল্লাহ তা’আলা কুরআন বলেছেনঃ
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ
“তোমরা ঘরে অবস্থান করবে।”
(সুরা আল-আহজাবঃ ৩৩।)
জরুরী প্রয়োজন ছাড়া নারীদের
বাড়ির বাইরে যাওয়া জায়েজ নাকি? আর ফাসেক/কাফের/মুশরেক লোকদের হারাম খেলা দেখতে যাওয়া
কি জরুরী কাজের মাঝে পড়ে??
*অশ্লীলতা...নারী পুরুষেরা
মারাত্মক অশ্লীলতার সমুদ্রে নিমজ্জিত...বেহিজাবী বেপর্দা নারী ও বেশরম পুরুষদের অশ্লীল
কার্যকলাপ জাহেলিয়াতের কুফফারদের সাথেই বেশি সামাজস্যপূর্ণ। এমনকি এদের যারা আদর্শ,
সেই খেলোয়াড় বা সেলেব্রিটিরা নিকৃষ্ট ও জঘন্য অশ্লীল কার্যকলাপে লিপ্ত...
*আরো অনেক হারাম মদ, জুয়া,
গান বাজনা, সময় ও টাকার অপচয়, এটা নিয়ে সৃষ্ট তর্ক বিতর্ক ফেতনা ফাসাদ, মারামারি, বিশৃংখলা,
কাজের ক্ষতি, এমনকি খুন খারাপি হত্যাও হয়। হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্য যার গোল্ডফিশের
মতো অতীত ভুলে যেতে চান তাদের স্মরণ করিয়ে দেইতে চাই – বাংলাদেশের মতোই আরেকটা তথাকথিত
মুসলিম দেশ মিশরে গতবছর মারাত্মক রকমের একটা ফেতনা (আরব বসন্তের) পরপরই ফুটবল খেলা
নিয়ে মারামারি করে শতাধিক নিহত হয়েছিলো...
*বাংলাদেশ/ভারত/পাকিস্থান যেকারোরই
হারাম খেলাধূলা, নাটক সিনেমা, গান বাজনা, অশ্লীলতা বর্জন করুন...পাপ কাজ করেই মানুষ
আজ বিভিন্ন দিক থেকে আজাব গজবের সম্মুখীন।
আল্লামাহ, ইমাম ইবেন বাজ রাহিমাহুল্লাহকে
এক লোক প্রশ্ন করেছিলো, “শায়খ আমি রাত ১২-১টা পর্যন্ত ডিউটি করে গভীর রাতে ঘুমাতে যাই।
তাই ফজরে উঠিনা, সকাল ৭টার পরে উঠে ফযর পড়ি...”
শায়খ শুনে বললেন – ইত্তাকিল্লাহ
– তুমি আল্লাহকে ভয় করো – আজকে মুসলিমরা এইরকম পাপ কাজে লিপ্ত বলেই ফিলিস্তিনে মুসলিমদের
উপর গুলি করা হচ্ছে কিন্তু আল্লাহর সাহায্য আসছেনা...
ক্রিকেট নিয়ে উতসাহের দিক থেকে
অনেকের মাঝে ত্রুটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষজন এমনভাবে ক্রিকেট নিয়ে পোস্ট দেওয়া শুরু
করেছে যেন এই খেলা দেখা একেবারে পানি পানের মতোই হালাল! কিছু মানুষ ২-১ জন ক্রিকেটারের
ইসলাম পালনের বিষয়কে এমনভাবে তুলে ধরছে যেন তারা আমাদের জন্য আদর্শ। অথচ খোঁজ নিলে
দেখা যাবে তাদের অনেকেই বিদাতের সাথে জড়িত, আর তার উপরে এই খেলা খেলে জীবিকা অর্জন
করাই বা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
সবচাইতে বড় আফসোসের বিষয় অনেক
ভাই বিদাতের ব্যপারে অত্যন্ত কঠোর, খিলাফাহ নিয়ে ফেইসবুকে জিহাদ ঘোষণা করেছেন...কিন্তু
ক্রিকেট/ফুটবলের ব্যপারে আশ্চর্যজনকভাবে তাদের অবস্থান খুবই নাজুক!!
যাইহোক, খেলা দেখা নিয়ে সতর্কতা
স্বরূপ শায়খ মুজাম্মেল হক্কের একটা বিশ্লেষণধর্মী লেখা শেয়ার করা হলো।
__________________________
"মাইসের" কি বড় গুনাহ
নয়?
"শয়তান শুধুই চায় মদ ও
মাইছের দ্বারা তোমাদের মধ্যে দুষমনি আর হানাহানি সৃষ্টি করতে। এবং তোমাদেরকে আল্লাহর
স্মরণ ও উপাসনা থেকে বিরত রাখতে। তোমরা কি আদৌ তা পরিত্যাগ করবে’’?
সুরা আল-মায়েদাহঃ ৯১।
আল-কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ (রহঃ)
বলেনঃ
"মাইসের" হল ঐ সব
খেলা যা মানুষকে আল্লাহর স্মরন, আনুগত্য ও ইবাদাত থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর।
ফুটবল, ক্রিকেট, হকি খেলোয়াররা
কি খেলতে মাঠে নেমে নামাজ পড়তে পারেন? কোরআন কেতাব শেখার বা পড়ার সুযোগ করতে পারেন?
এভাবে ফরজ কাজ মিস করেন আর খেলায় জিতে সেজদায় লুটিয়ে পড়েন!!
এতে আল্লাহ খুশী না হয়ে ভীষণ
রেগে যান, তাতে কোন সন্দেহ নেই !
শারীরিক সুস্থতার জন্যে যতটুকু
দরকার ততটুকুর জন্যই অনুমতি দেয় ইসলাম, তার অধিক নয়। অথচ একজন খেলোয়াড়ের সারা জীবন
খেলাতেই কেটে যায়। যেন খেলার জন্যেই তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তার পদাঙ্ক অনুসরণে আরো
লক্ষ লক্ষ যুবক ‘স্টার’ হওয়ার উদ্দেশ্যে সকল সামর্থ ব্যয় করে যায়। এজন্য কে দায়ী থাকবে?
আল্লাহর নিকট যা অসন্তোষ মূলক
সে কাজ করা আর তাতে সহযোগীতা করা সমান অন্যায়। ফ্যান হয়ে উৎসাহ দেয়া আর খেলাকে ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে
সাহায্য করাও কি এর অন্তর্ভুক্ত নয়?
আসলে এসবই মাইসের, মাইসের কি
বড় গুনাহ নয়?
Collected from Shaikh Muzammel Al-hoque