বিসমিল্লাহ। ওয়ালহা'মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ'লা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বা'দ।
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“তোমরা
কুরআন মাজীদ পাঠ কর। কেননা কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আসবে”।
মুসলিম
৮০৪, আহমাদ ২১৬৪২।
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে
ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজীদ) এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তার জন্য একটি নেকী লেখা হবে। আর একটি
নেকী দশটি নেকীর সমান হয়। আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ, বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ”।
*অর্থাৎ তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত আলিফ-লাম-মীম, যার নেকীর সংখ্যা হবে ত্রিশ।
সুনানে
আত-তিরমিযী ২৯১০, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ।
প্রতিদিনের
কুরআন তেলাওয়াত...
১. প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে আয়াতুল কুরসী ১
বার (সুরা বাক্বারাহঃ ২৫৫)।
মৃত্যুর
পরে জান্নাত + জিন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে হেফাজত করবে।
২. রাতে ঘুমানোর আগে সুরা বাক্বারার শেষ ২
আয়াত (২৮৫+২৮৬) ১ বার।
তাহাজ্জুদ পড়ার সমান সওয়াব
পাওয়া যাবে + যেকোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ হবে।
৩. প্রতিদিন (দিনে বা রাতে যেকোনো এক সময়)
সুরা মুলক ১ বার।
কবরের
আজাব থেকে নিরাপত্তা দেবে + কেয়ামতের দিন সুপারিশ করে বান্দাকে জান্নাতে নিয়ে
যাবে।
৪. সুরা ইখলাস কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।
৩
বার পড়লে একবার কুরআন খতমের সমান সওয়াব। ১০ বার পড়লে জান্নাতে একটা ঘর বানানো হবে।
নিচে
এ সম্পর্কিত হাদীস ও বিস্তারিত দেওয়া হলোঃ
১. প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে আয়াতুল কুরসী ১
বার।
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি
প্রত্যেক ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠ করে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার
জন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোন বাধা থাকে না”।
সুনানে
আন-নাসায়ীঃ ১০০, ইবনে সুন্নীঃ ১২১, শায়খ আলবানীর মতে সহীহ, সিলসিলা আস-সহীহাহঃ
২/৬৯৭।
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
জিনদের থেকে রক্ষা করা হবে আর, যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে তাকে সকাল পর্যন্ত রক্ষা করা হবে”।
সহীহ
তারগীব ওয়াত-তারতীবঃ হা/৬৬২।
“আয়াতুল
কুরসী শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায়
নিযু্ক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে”।
সহীহ
বুখারীঃ ২৩২১।
بسم الله الرحمن الرحيم
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ
سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا
الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ
وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ
الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
আয়াতুল
কুরসীঃ আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহু মা
ফিস্-সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইন্দাহু ইল্লা বি-ইয্নিহি। ইয়া‘লামু মা বায়না আয়দীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইয়িম্-মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা-শা’-আ; ওয়াসি‘আ কুরসি-ইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ; ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুম, ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
সুরা
বাক্বারাহঃ ২৫৫।
অর্থঃ
আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন
তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছু
তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই
তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন। তাঁর
কুরসী সমগ্র আসমান ও যমীন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই
শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।
২. সুরা বাক্বারার শেষ ২ আয়াতঃ
প্রতিদিন রাতের বেলা ঘুমানোর আগে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত (২৮৫+২৮৬,
আমানার-রাসুলু...থেকে শেষ পর্যন্ত) তেলাওয়াত করার অনেক ফযীলতের কথা সহীহ হাদীসে
বর্ণিত হয়েছে। শেষ আয়াতে অত্যন্ত জরুরি কয়েকটি দুয়া রয়েছে। এসব দুয়া কবুল হওয়ার
ওয়াদাও করা হয়েছে।
প্রিয় নবীজী (সাঃ) একদিন বললেন, “এই মাত্র আকাশের একটি
দরজা খোলা হয়েছে। এর আগে কখনও এ দরজাটি খোলা হয়নি, এ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা
অবতরণ করছেন। এর আগে তিনি কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। এ ফেরেশতা রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) কে সালাম করে বলেন,
সুসংবাদ গ্রহণ করুন আপাদমস্তক দুটি নূরের, যা আপনার আগে কোন নবীকে
দেয়া হয়নিঃ
১. ফাতেহাতুন কিতাব অর্থাৎ সুরা ফাতেহা এবং
২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত।
উভয় আয়াতে দোয়া আছে। আল্লাহর উসিলা করে, আপনি এসব দোয়ার যে অংশই
পাঠ করবেন আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই রহমত দান করবেন অর্থাত কবুল করা হবে”।
সহীহ মুসলিম।
***রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করলে
তাহাজ্জুদের সমান সওয়াব পাওয়ার আশা করা যেতে পারেঃ
রাসুলুলাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ঠ হবে”।
বুখারি ৫০১০, মুসলিম ৮০৭।
বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ “রিয়াদুস সালেহীন” এর লেখক ও সহীহ
মুসলিমের ভাষ্যকার, ইমাম আন-নববী (রহঃ) বলেন, “এর অর্থ কেউ বলেছেনঃ
কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য যথেষ্ঠ হবে। কেউ বলেছেনঃ শয়তানের ক্ষতি
থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ হবে। কেউ বলেছেনঃ বালা-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে।
তবে সবগুলো অর্থ সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শারহুন নববী আ’লা সহিহ মুসলিমঃ ৬/৩৪০, হাদীস ৮০৭।
সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার, আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদীস, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী
(রহঃ) এই অভিমত সমর্থন করে বলেন, উপরের সবগুলো অর্থ নেওয়া সঠিক। আল্লাহ ভালো জানেন।
প্রথম অর্থটি (তাহাজ্জুদের সমান সওয়াব পাওয়া) আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউ’দ (রাঃ) থেকে একটি মারফু হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
ফাতহুল বারী ৮/৬৭৩, হাদীস ৫০১০।
এ কারণেই আলী (রাঃ) বলেন, “আমার মতে যার সামান্যও
বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে এ দুটি আয়াত পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যাবে না”।
মানাকিবুস সাহাবা। ইমাম নববী এটাকে সহীহ বলেছেন, আল-আযকার।
আবু মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সুরা বাকারার
শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করবে, তার জন্য এ দুটি আয়াত যথেষ্ট হবে। (অর্থাৎ সারারাত সে জিন ও মানুষের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে এবং প্রতিটি অপ্রিয় বিষয় থেকে তাকে হেফাজত করা হবে)।
(সহীহ বুখারি, মুসলিম)
بسم
الله الرحمن الرحيم
آمَنَ
الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ
بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ
مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ
الْمَصِيرُ
لَا
يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا
اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا
وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ
قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا
وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ
الْكَافِرِينَ
২৮৫. রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর
পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে
আল্লাহর প্রতি, তাঁর
ফেরেশতাদের প্রতি,
তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর
পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা।
তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
২৮৬. আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন
করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা
ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো
না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের
উপর অর্পণ করেছ, হে
আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের
নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই
আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর। (আমিন)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবাইকে
পবিত্র কোরআনুল কারীমের এই বরকতময় সম্মানিত আয়াত পাঠ করার এবং আমল করার তাওফিক
দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের সব মুসিবত, বিপদ-আপদ, রোগ-শোক অতিক্রম করে শান্তিময় ও সুখের জীবনলাভে ধন্য
করুন। আমিন!
সুরা
বাকারাহঃ ২৮৫-২৮৬।
৩. প্রতিদিন (দিনে বা রাতে যেকোনো এক সময়)
সুরা মুলক মুলক তেলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতঃ
***অনেকে মনে করে, এটা রাতেই পড়তে হবে, এটা ঠিক না। কেউ রাতে
পড়লে ভালো। তবে সুবিধামতো সময়ে দিনে রাতে যেকোনো সময়েই পড়া যাবে।
“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আলিফ লাম মীম তানজিলুল কিতাব (সুরা
আস-সাজদা) ও তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক) তেলাওয়াত না করে কোনদিন
ঘুমাতেন না”।
সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯২, মুসনাদে আহমাদ ১৪২৯। শায়খ
আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ, সহীহ তিরমিযী ৩/৬।
***এই সুরাটি নিয়মিত প্রতিদিন তেলাওয়াত করলে কবরের আজাব থেকে
সুরক্ষা করবেঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতিদিন
রাতের বেলা তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে
কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় এই
সুরাটিকে আমরা “আল-মা’আনিয়াহ” বা সুরক্ষাকারী বলতাম। যে রাতের বেলা এই সুরাটি পড়বে সে
খুব ভালো একটা কাজ করলো”।
সুনানে আন-নাসায়ী ৬/১৭৯। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহ আত-তারগীব ওয়াল
তারহীব ১৪৭৫।
***এই সুরা প্রত্যেকদিন রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন
শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে ইন শা’ আল্লাহঃ
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “কুরআনে এমন একটা সুরা আছে
যার মধ্যে ৩০টা আয়াত রয়েছে যেটা একজন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা
করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক)”।
সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯১, সুনানে আবু দাউদ ১৪০০, মুসনাদের আহমাদ, ইবনে মাজাহ ৩৭৮৬।
ইমাম তিরমিযী বলেছেন হাদীসটি হাসান, ইবনে তাইমিয়্যা বলেছেন সহীহ
মাজমু ২২/২২৭, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ, সহীহ তিরমিযী ৩/৬, সহীহ ইবনে মাজাহ ৩০৫৩।
বিঃদ্রঃ এইখানে তেলাওয়াত মানে শুধু তোতা পাখির মতো রিডিং পড়ে
যাওয়া না।
এই প্রসংগে সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের আলেমদের ফতোয়া
হচ্ছে,
“এই হাদীসগুলোর আলোকে বলা যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির
জন্য সুরা মুলক বিশ্বাস করবে ও তেলাওয়াত করবে, এই সুরাতে যে শিক্ষা দেওয়া
আছে তা গ্রহণ করবে এবং যে হুকুম আহকাম দেওয়া আছে সেইগুলো মেনে চলবে কেয়ামতের দিন
তার জন্য এই সুরাটি শাফায়াত করবে”।
ফতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ ৪/৩৩৩, ৩৩৫।
৪. সুরা ইখলাস এর ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ইখলাস সম্পর্কে বলেছেনঃ
“নিঃসন্দেহে
এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”।
মুসলিম
৮১২, তিরমিযী ২৮৯৯, ইবনু মাজাহ ৩৭৮৭, আহমাদ ৯২৫১।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, “তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ
কুরআন পড়তে পারনা”? প্রস্তাবটি
সাহাবাদের জন্য কঠিন মনে হল। তাই তাঁরা বলে উঠলেন, “হে আল্লাহর রসুল! এই কাজ আমাদের মধ্যে কে
করতে পারবে”? (অর্থাৎ কেউ পারবে না।)
তিনি বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস স্বামাদ” (সুরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”। (অর্থাৎ এই সুরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান নেকী পাওয়া
যাবে)।
সহীহুল
বুখারী ৫০১৫, নাসায়ী ৯৯৫, আবু দাউদ ১৪৬১, আহমাদ ১০৬৬৯।
এক
সাহাবী এসে বলল, “হে
আল্লাহর রসূল! আমি এই (সূরা) ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদকে ভালবাসি”। তিনি বললেন, “এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে”।
বুখারীর
৭৭৪নং হাদীসের পরবর্তী অধ্যায়, তিরমিযী ২৯০১, আহমাদ ১২০২৪
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে
ব্যক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে”।
সহীহ
আল-জামি আস-সগীর ৬৪৭২।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করতে শুনলেন।
তিনি বললেন “এটা তার অধিকার”। সাহাবারা জিজ্ঞাস করলেন, তার অধিকার কি? তিনি উত্তর
দিলেন, “তার অধিকার হচ্ছে জান্নাত”।
মুসনাদে
আহমাদঃ ৭৬৬৯।
***দিনে
রাতে যতবার ইচ্ছা, বেশি বেশি করে সুরা ইখলাস পড়া যাবে।
যেইগুলো
ঠিক নাঃ
১. ৩৩ আয়াতের আমল – এর কোনো দলীল নেই,
মানুষের বানানো ইবাদত। এটা মোটেই আমল করা যাবেনা। এখানে মানুষ নিজের মনমতো কুরআনের
বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩৩টা আয়াত নিয়ে একটা ওযীফা বানিয়ে নিয়েছে। মানুষের বানানো এটা
বেদাত। এছাড়া এভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে অংশ অংশ নিয়ে পড়া এটা নিয়মের বাইরে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই আমল আমাদেরকে করতে বলেন নি, তাই এটা করা যাবেনা।
২. সুরা ইয়াসীন ১ বার পড়লে ১০ বার কুরআন
খতমের সওয়াব পাওয়া যায় এটা ঠিক না। সুরা ইয়াসীন হচ্ছে কুরআনের অন্তর এই হাদীসও
সহীহ না।
এই
কথাগুলো বিশ্বাস করা যাবেনা, কারণ এই হাদীসগুলো জাল অথবা জয়ীফ।
৩. সুরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত পড়লে ঐদিন ৭০
হাজার ফেরেশতা দোয়া করবে ও শহীদ হিসবে মৃত্যু বরণ করবে এটা ঠিকনা। এই সম্পর্কিত
তিরমিযীতে যে হাদীসে সেটা জয়ীফ।
৪. সুরা আর-রাহমানের আলাদা কোনো ফযীলত নেই।
২+৩+৪=
এইগুলো কুরআনের সুরা বা আয়াত। কেউ ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় এইগুলো তেলাওয়াত করতে পারবেন।
কুরআনের প্রত্যেকটা হরফের যে ১০টা নেকী, সেটা পাবেন। কিন্তু এই সম্পর্কিত ফযীলতের
যেই কথাগুলো সেগুলো ঠিকনা, তাই সেইগুলো আশা করে পড়বেন না। এমনিতে পড়তে ভালো লাগে
বা কুরআন তেলাওয়াতের অংশ হিসেবে পড়তে পারেন।