>>> কুরআনুল কারীম সম্পর্কে যে বেশি জানে সে তত বেশি জ্ঞানীঃ সুরা তাহরীমের শানে নূযুল
> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুবারকময় জীবন থেকে নেওয়া কিছু অংশ।
৬৬ নাম্বার সুরা, সুরা আত-তাহরীমের শুরুর দিকে আয়াতগুলো যদি পড়েন – এই আয়াতগুলোর শানে নূযুল জানা না থাকলে অর্থ বোধগম্য হবেনা। এইখানে আসলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পবিত্র বিবিগণের সাথে দাম্পত্য জীবনের সাথে জড়িত দুইটি ঘটনা নিয়ে ওয়াহী করা হয়েছিলো। এর একটি ঘটনা সহীহ বুখারীর “তাফসির” অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে এইভাবেঃ
সহিহ বুখারী, খন্ড ৬, অধ্যায় ৬০, হাদিস ৪৩৪।
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল(সাঃ) যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর একজন স্ত্রী, এর কাছে মধু পান করতেন এবং সেখানে কিছুক্ষণ থাকতেন। তাই আমি (আয়েশাহ) ও হাফসা একমত হলাম যে, আমাদের যার ঘরেই আল্লাহর রসূল (সাঃ) আসবেন, সে তাঁকে বলবে, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। (আমরা তাই করলাম) এবং তিনি বললেন, না, বরং আমি যয়নাব বিনতে জাহশ এর ঘরে মধু পান করেছি। তবে আমি কসম করলাম, আর কখনো মধু পান করব না। তুমি এ বিষয়টি আর কাউকে জানাবে না।
নোটঃ মাগাফীর একটা মিষ্টি কিন্তু দুর্গন্ধযুক্ত গাছের রস (রেসিন), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হালাল হলেও কখনো দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেতেন না, এটা তাঁর রীতি ছিলো। যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর ঘরে মধু পান করা ও কিছু সময় কাটানো এটা তাঁর অপর দুই সতীন আয়িশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ) স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন নি। সতীনের প্রতি নারীদের স্বাভাবিক বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাব থেকে তারা দুইজন এই যুক্তি করেন, পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যদি যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর কাছ থেক মধু পান করেন তাহলে তাঁরা এই কথা বলবেন যে আপনি কি মাগফীর খেয়েছন? সে অনুযায়ী, আয়িশাহ ও হাফসাহ দুইজনের কাছেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এইরকম কথা শুনে মনে করেছিলেন, সত্যিই বুঝি এই মধু খেলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাই তিনি কসম করে বললেন, এই মধু আর খাবেন না (এটাই ছিলো আয়িশাহ ও হাফসার উদ্দেশ্য, যাতে করে তিনি যয়নবের ঘরে ঐ সময়টা আর না কাটান), আর যেহেতু তাঁর রীতি ছিলো দুর্গন্ধযুক্ত খাবার না খাওয়া, তাই তিনি তাদেরকে এই কথাটা অন্য কাউকে বলতে না বলেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ সুরা তাহরীমের এই আয়াতগুলো নাযিল করেনঃ
আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম। বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম।
১. হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।
২. আল্লাহ তোমাদের জন্যে কসম থেকে অব্যহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মালিক। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৩. যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন, তখন স্ত্রী বললেনঃ কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেনঃ যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন।
আয়াতগুলো থেকে শিক্ষাঃ যদিও এটা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আয়াত কিন্তু কুরআনে নাযিল করার পেছনে উদ্দেশ্য রয়েছে। এই ঘটনা থেকে, বোঝা যায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে থেকে কোনো কিছু হালাল বা হারাম করতে পারেন না, যেইটা আল্লাহ তাআ’লা ওয়াহী মারফত হালাল বা হারাম না করেন। এইজন্য আল্লাহ বলেনঃ
“হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন?”
আর একটা ব্যপার, রাসুল (সাঃ) কিন্তু উপরে ঘটনার সময় মধুকে নিজের জন্য হারাম করেন নি, শুধু এতোটুকু বলেছিলেন নেক্সট টাইম আর খাবোনা। তাও শুধু নিজের জন্য, এমন না তিনি উম্মতকে খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু রাসুলের জীবন মুমিনদের জন্য আদর্শ, আর এমন সম্ভাবনা আছে তাঁকে অনুসরণ করতে গিয়ে যদিও মধু হালাল কিন্তু তিনি খাননি বলে পরবর্তীতে অনেকে নাও খেতে পারে, এটাকে পুণ্যের কাজ মনে করে। কিন্তু এরজন্য কোনো নেকী নেই, তাই দ্বীন যাতে করে সেইরকম সুরক্ষিত থাকে যেইভাবে আল্লাহ চান, তাই এই ছোট একটা বিষয়েও আল্লাহ তাআ’আল তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাবে কয়েকটা আয়াত নাযিল করে বিষয়টা স্পষ্ট করে দেন।
আশা করি এই আলোচনা থেকে বিষয়টা স্পষ্ট কেনো রাসুলের ব্যক্তিগত জীবনের ছোট একটা ঘটনা নিয়ে কুরআনে আয়াত নাযিল করা হয়েছিলো।
আর যেই দুইজন স্ত্রী এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে তাদের দাম্পত্য জীবনে পরবর্তীতে কিছু জটিলতা নিয়ে আল্লাহ তাআ’লা তাদের প্রতি কিছুটা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।
“তোমাদের দুইজনের (রাসুলুল্লাহর দুইজন স্ত্রী) অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, এখন যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রাখ আল্লাহ, জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সাহায্যকারী। তারউপর ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।” (সুরা তাহরীমঃ ৪)
এই আয়াত নিয়ে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে সহীহ বুখারীর “যুলম ও কিসাস” অধ্যায়েঃ সহিহ বুখারী, খন্ড ৩, অধ্যায় ৪৩, হাদিস ৬৪৮।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ) এর সহধর্মিণীদের মধ্যে ঐ দু’সহধর্মিণী সম্পর্কে উমর (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করতে সব সময় আগ্রহী ছিলাম, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তোমাদের দুইজনের (রাসুলুল্লাহর দুইজন স্ত্রী) অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, এখন যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রাখ আল্লাহ, জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সাহায্যকারী। তারউপর ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।” (সুরা তাহরীমঃ ৪)
একবার আমি তাঁর (উমর রাঃ এর) সঙ্গে হজ্জে রওয়ানা করলাম। তিনি রাস্তা থেকে সরে গেলেন। আমিও একট পানির পাত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে গতি পরিবর্তন করলাম। তিনি প্রকৃতির ডকে সাড়া দিয়ে ফিরে এলেন। আমি পানির পাত্র থেকে তাঁর দু’হাতে পানি ঢাললাম, তিনি উযূ করলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞসা করলাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে দু’সহধর্মিনী কারা ছিলেন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “যদি তেমরা দু’জন তাওবা কর (তবে সেটাই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর) কেননা তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে।” তিনি বললেন, হে ইবন আব্বাস! এটা তোমার জন্য তাজ্জবের বিষয় যে, তুমি তা জানো না। তারা দু’জন হলেন ‘আয়িশা ও হাফসা (রাঃ) (অতঃপর উমর (রাঃ) পুরো ঘটনা বলতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী মদীনার অদূরে বনূ উমাইয়া ইবন যায়দের মহল্লায় বসবাস করতাম। আমরা দু’জন পালাক্রমে নবী (সাঃ) এর নিকট হাযির হতাম। একদিন তিনি যেতেন, আরেকটিদন আমি যেতাম, আমি যেদিন যেতাম সে দিনের খবর (ওয়াহী) ইত্যাদি বিষয় তাঁকে অবহিত করতাম। আর তিনি যে দিন যেতেন, তিনিও অনুরুপ করতেন। আর আমরা কুরায়শ গোত্রের লোকেরা মহিলাদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। কিন্তু আমরা যখন মদীনায় আনসারদের কাছে আসলাম তখন তাদেরকে এমন পেলাম, যাদের নারীরা তাদের উপর কর্তৃত্ব করে থাকে। ধীরে ধীরে আমাদের মহিলারাও আনসারী মহিলাদের রীতিনীতি গ্রহণ করতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীকে ধমক দিলাম। সে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিউত্তর করল। তার এই প্রতিউত্তর আমার পছন্দ হলো না। তখন সে আমাকে বলল, আমার প্রতিউত্তর তুমি অসন্তুষ্ট হও কেন? আল্লাহর কসম! নবী (সাঃ) এর সহধর্মিণীরাওতো তাঁর কথার প্রতিউত্তর করে থাকেন এবং তাঁর কোন কোন সহধর্মিণী রাত পর্যন্ত পুরো দিন তাঁর কাছ থেকে আলাদা থাকেন। একথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। বললাম, যিনি এরূপ করেছেন তিনি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তারপর আমি জামা কাপড় পরে (আমার মেয়ে) হাফসা (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললাম, হে হাফসা! তোমাদের কেউ কেউ নাকি রাত পর্যন্ত পুরো দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে অসন্তুষ্ট রাখে? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তবে তো সে বরবাদ এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। তোমার কি ভয় হয় না যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হবেন। এর ফলে তুমি বরবাদ হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করো না এবং তাঁর কোন কথার প্রতিউত্তর দিও না এবং তাঁর থেকে পৃথক থেকো না। তোমার কোন কিছুর দরকার হয়ে থাকলে আমাকে বলবে। আর তোমার সংগিনি (আয়িশাহ রাঃ) তোমার চাইতে অধিক সুন্দরী এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অধিক প্রিয় এ যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে। তিনি উদ্দেশশ্য করেছেন ‘আয়িশা (রাঃ) কে। সে সময় আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছিলো যে, গাসসানের লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়াগুলিকে প্রস্তুত করেছে। একদিন আমার সাথী তার পালার দিন নবী (সা)-এর কাছে গেলেন এবং ঈশার সময় এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করলেন এবং বললেন, তিনি (উমর রাঃ) কি ঘুমিয়েছেন ? তখন আমি ঘাবড়িয়ে তাঁর কাছে বেরিয়ে এলাম। তিনি বললেন, সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গেছে। আমি বললাম, সেটা কি? গাসসানের লোকেরা কি এসে গেছে? তিনি বললেনঃ না, বরং তার চাইতেও বড় ঘটনা ও বিরাট ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সব সহধর্মিণীদেরকে তালাক দিয়েছেন। উমর (রাঃ) বললেন, তাহলে তো হাফসার সর্বনাশ হয়েছে এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার আগে থেকেই ধারণা ছিল যে, এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। আমি কাপড় পড়ে বেরিয়ে এসে নবী (সাঃ) এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি (সাঃ) তাঁর কোঠায় প্রবেশ করে একাকী বসে থাকলেন। তখন আমি হাফসা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে দেখি সে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে আগেই সতর্ক করে দেইনি? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কি তোমাদেরকে তালাক দিয়েছেন? সে বলল, আমি জানিনা। তিনি তাঁর ঐ কোঠায় আছেন। আমি বের হয়ে মিম্বরের কাছে আসলাম, দেখি যে লোকজন মিম্বরের চারপাশ জুড়ে বসে আছেন এবং কেউ কাঁদছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসলাম। তারা আমার উদ্যোগ প্রবল হল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে কোঠায় ছিলেন, আমি কোঠার কাছে আসলাম। আমি তাঁর এক কালো গোলামকে বললাম, উমরের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর। সে প্রবেশ করে নবী (সাঃ) এর সাথে আলাপ করে বেরিয়ে এস বলল, আমি আপনার কথা তাঁর কাছে উল্লেখ করেছি, কিন্তু তিনি নীরব রইলেন। আমি ফিরে এলাম এবং মিম্বরের পাশে বসা লোকদের কাছে গিয়ে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর আমার আবার উদ্বেগ প্রবল হল। তাই আমি আবার এসে গোলামকে বললাম। সে এসে আগের মতোই বলল। আমি আবার মিম্বরের কাছে উপবিষ্ট লোকদের সাথে গিয়ে বসলাম। তারপর আমার উদ্বেগ আবার প্রবল হল আমি গোলামের কাছে এসে বললাম, (উমরের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর) এবারও সে আগের মতই বলল। তারপর যখন আমি ফিরে আসছিলাম, গোলাম আমাকে ডেকে বলল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। এখন আমি তাঁর নিকট প্রবেশ করে দেখি, তিন খেজুরের পাতায় তৈরী ছোবড়া ভর্তি একটা চামড়ার বালিশে হেলান নিয়ে খালি চাটাই এর উপর কাত হয়ে শুয়ে আছেন। তাঁর শরীর ও চাটাই এর মাঝখানে কোন ফরাশ ছিলো না। ফলে তাঁর শরীরের পার্শ্বে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গেছে। আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং দাঁড়িয়েই আবার আরয করলাম আপনি কি আপনার সহধর্মিণীদেরকে তালাক দিয়েছেন? তখন তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন এবং বললেন, না। তারপর আমি (থমথমে ভাব কাটিয়ে) অনুকূলভাব সৃষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দেখুন, আমরা কুরায়েশ গোত্রের লোকেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। তারপর যখন আমরা এমন একটি সম্প্রদায়ের নিকট এলাম, যাদের উপর তাদের নারীরা কর্তৃত্ব করছে। তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা করলেন। এতে নবী (সা) মুচকি হাঁসলেন। তারপর আমি বললাম, আপনি হয়তো লক্ষ্য করছেন, আমি হাফসার ঘরে গিয়েছি এবং তাকে বলেছি, তোমাকে একথা যেন ধোঁকায় না ফেলে যে, তোমার প্রতিবেশীণী (সতীন আয়িশাহ রাঃ) তোমার চাইতে অধিক আকর্ষণীয় এবং নবী (সাঃ) এর অধিক প্রিয়। এ কথা দ্বারা তিনি আয়িশা (রাঃ) কে বুঝিয়েছেন। নবী (সাঃ) আবার মুচকি হাঁসলেন। তাঁকে একা দেখে আমি বসে পড়লাম। তারপর আমি তাঁর (সাঃ) ঘরের ভিতর এদিক সেদিক দৃষ্টি করলাম। কিন্তু তাঁর (সাঃ) ঘরে তিনটি কাঁচা চামড়া ব্যতীত দৃষ্টিপাত করার মত আর কিছুই দেখতে পেলাম না, তখন আমি আরয করলাম, আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ করুন, তিন যেন আপনার উম্মাত পার্থিব স্বচ্ছলতা দান করেন। কেননা পারস্য ও রোমের অধিবাসীদেরেকে স্বচ্ছলতা দান করা হয়েছে এবং তাদেরকে পার্থিব (অনেক প্রাচুর্য) দেওয়া হয়েছে, অথব তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। তিনি (সাঃ) তখন হেলান দিয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, হে ইবন খাত্তাব, তোমর কি এতে সন্দেহ রয়েছে যে, তারা তো এমন এক জাতি, যাদেরকে তাদের ভাল কাজের প্রতিদান দুনিয়ার জীবনেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমা করার দু’আ করুন। হাফসা (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ) এর কাছে এ কথা প্রকাশ করলেই নবী (সাঃ) সহধর্মিণীদের থেকে আলাদা হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি একমাস তাদের কাছে যাবো না। তাঁদের উপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ভীষণ রাগের কারণেই তা হয়েছিল। যেহেতু আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যখন ঊনত্রিশ রাত কেটে গেলো, তিন সর্বপ্রথম আয়িশা (রাঃ) এর কাছে এলেন। আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনি কসম করেছেন যে, একমাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না। আর এ পর্যন্ত আমরা ঊনত্রিশ রাত অতিবাহিত করেছি, যা আমি ঠিক ঠিক গণনা করে রেখেছি। তখন নবী (সাঃ) বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়। আর মূলত এ মাসটি ঊনত্রিশ দিনেরই ছিল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন ইখতিয়ারে আয়াত নাযিল হল, তখন তিনি তাঁর সহধর্মিণীদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমার কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই, তবে তোমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ না করে এর জওয়াবে তাড়াহুড়া করবে না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) এ কথা জানতেন যে, আমার পিতা মাতা তাঁর থেকে আলাদা হওয়ার পরামর্শ আমাকে কখনো দিবেন না। তারপর নবী (সাঃ) বললেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ “হে নবী, আপনার পত্নীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা কর, তবে আস, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় (তালাক) দেই। পক্ষান্তরে যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও পরকাল কামনা কর, তবে তোমাদের সৎকর্মপরায়ণদের জন্য আল্লাহ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সুরা আহজাবঃ ২৮,২৯)।. আমি বললাম, এ ব্যাপারে আমি আমার পিতামাতার কাছে কি পরামর্শ নিব? আমিতো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি এবং পরকালীন (সাফল্য) পেতে চাই। তারপর তিনি (সা) তাঁর অন্য সহধর্মিণীদেরকেও ইখতিয়ার দিলেন এবং প্রত্যেকে সে একই জবাব দিলেন, যা ‘আয়িশা (রাঃ) দিয়েছিলেন।