নামাযের কিছু জরুরী মাসয়া’লাঃ
১. জামাতে পরে গেলে দৌড়ে বা
তাড়াহুড়া করে যাবেন না, এটা হারাম। আস্তে ধীরে যাবেন, রুকু ছুটে গেলে যাবে। প্রথমে
অবশ্যই আল্লাহু আকবর বলে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে বুকে হাত বেঁধে সোজা হয়ে দাঁড়াবেন। এর
পরে ইমাম যদি রুকু বা সিজদা বা যেই পজিশানেই থাকুক আল্লাহু আকবার বলে সেটাতে যাবেন।
অনেক দাঁড়িয়ে থাকে ইমাম উঠা পর্যন্ত, তার আগে নামায শুরু করেনা। আবার অনেকে দাড়িয়ে
থাকে ইমাম রুকুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, তার আগে নামায শুরু করেনা। এইগুলো সম্পূর্ণ মূর্খ
মানুষের কাজ, যা আসলে নবীর সাথে নাফরমানি করা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইমাম যেই অবস্থায় থাকে সেইখানেই যোগ দেওয়ার কথা। সাবধান মূর্খ
লোকদের কথা শুনে বা তাদের অনুকরণ করতে গিয়ে নবীর বিরোধীতা করবেন না।
২. ইমামের ২ রাকাতে কিন্তু
আপনার ১ রাকাত হলেও আপনি আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন, ইমামের ৪ রাকাত বা শেষ বৈঠকে কিন্তু
আপনার শেষ বৈঠক না, তবুও আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ দুইটাই পড়বেন, কিন্তু দুয়া মাসুরা বা
অন্য কোনো দুয়া পড়বেন না। চুপ করে বসে থেকে সময়টা নষ্ট না করে তাশাহুদ, দুরুদ পড়ে সওয়াব
অর্জন করবেন। একশ্রেণীর হুজুর বলে তাশাহুদ, দুরুদ পড়া যাবেনা, এদের কথার কোনো দলীল
নেই। দলীল বিহীন কথার দিকে নযর দেবেন না।
৩. হাই আসলে যথাসম্ভব আটকানোর
চেষ্টা করবেন। আটকাতে না পারলে অবশ্যই একহাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেবেন। কারণ হাত দিয়ে না
ঢেকে হাই তুললে মুখ দিয়ে শয়তান ঢুকে পড়ে, কারণ হাই আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। মসজিদে অনেককেই
দেখা যায় ইয়া বড় হাই তুলে কিন্তু মুখ ঢাকেনা, এতে একেতো শয়তান তার মুখ দিয়ে প্রবেশ
করে, আর দেখতেও কি বিশ্রী দেখা যায়। আর এটা একপ্রকার অভদ্রতার কাজ।
৪. নামায পড়ে বের হওয়ার সময়
অনেককেই দেখা যায় – যারা চলে যাচ্ছে তাদের চোখের দিকে সরাসরি বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
কি আজীব! অথচ, ফরয হচ্ছে আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হয়ে চোখ সেজদার জায়গার দিকে অবনত করে
রাখা। এমনকি বলা হয়েছে এইদিক সেইদিক তাকানো শয়তানের নামায থেকে ছিনতাই করে নেওয়া। কারণ,
নামাযে যতটুকু সময় অমনোযোগী থাকবে ঐ সময়টুকুর জন্য তার আমলনামায় কোনো সওয়াব লেখা হবেনা।
আর যে আকাশের দিকে বা উপরের দিকে তাকায়, এটা আল্লাহর প্রতি এক প্রকার বেয়াদবী, এইজন্য
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “নামাযে যেই ব্যক্তি আকাশের দিকে
তাকায়, সে কি ভয় করেনা যে তার চোখ ছিনিয়ে নেয়া হবে।”
৫. অনেক মুসলিম নারী মনে করে,
শুধু মাথায় একটা রুমাল/ঘোমটা দিলেই নামায হয়ে যাবে। এইদিকে তার হাতের কাপড় হচ্ছে হাফ
স্লিভ, বা শরীরের অন্য অংশ বেড়িয়ে যাচ্ছে...
আবার অনেক মুসলিম পুরুষ মেয়েদের
ব্লাউজের সাইজ ও টাইট শার্ট, গেঞ্জি পড়ে নামায পড়ে, রুকু সেজদা করতে গেলে পিঠ বা সতর
বেড়িয়ে পড়ে!
সাবধান! নামাযে সতর ঢেকে রাখা
ফরয। ফরয তরক করলে নামায ভেঙ্গে যায়।
৬. কাবা বা মসজিদের ছবিওলা
বা খুব বেশি ডিজাইন ওয়ালা জায়নামাযে নামায পড়বেন না। কাবা ও মসজিদকে পায়ের নিচে রাখা
এতে অপমান করা হচ্ছে (নাউযুবিল্লাহ), এই কাজটা সম্পূর্ণ হারাম। আর বেশি ডিজাইল, কালাওরফুল
বা নক্সা যা নযর কেড়ে নেয় নামাযের সময় এমন কাপড়ে নামায পড়া মাকরুহ। মসজিদ বা কাবা অথবা
ডিজাইন ছাড়া সাদা বা এক কালারের জায়নামাযে নামায পড়ার চেষ্টা করবেন।
৭. এক ওযুতে একাধিক ওয়াক্তের
নামায পড়া যাবে, কোন সমস্যা নাই।
৮. নারীরা ঘরে নিজেরা নিজেরা
জামাত করতে পারবে। এতে তাদের মধ্যে যেই নারী ইমাম হবে ও যারা মুক্তাদী সবাই এক কাতারে
দাঁড়াবে, পুরুষদের মতো ইমাম এক কাতার সামনে দাড়াবেনা। তাকবীরগুলোতো জোরে বলতেই হবে,
আর জেহেরী যেই সালাত অর্থাৎ যেই
সালাতের প্রথম ২ রাকাতে কেরাত জোরে পড়া হয়, যদি ইমামের কোনো গায়ের মাহরাম পুরুষ না
শুনে তাহলে সে জোরে কেরাত পড়বে। আর গায়ের মাহরাম পুরুষ থাকলে এমন স্বরে পড়বে যাতে না
শুনে অথবা চুপে চুপে পড়বেন।
***এই সবগুলো মাসআ’লা সহীহ
হাদীস থেকে নেওয়া। এখানে দেওয়া মাসয়া’লাগুলোর বেশিরভাগ হাদীসই বুখারী ও মুসলিমের সালাত
অধ্যায়ে পেয়ে যাবেন ইন শা’ আল্লাহ। অনেকে আছে জীবনে কোনোদিন হাদীসের কেতাব খুলেনা,
কিন্তু কোনো একদিন এডমিন যদি হাদীস নাম্বার না দেয় রাজ্যের কথা শুনিয়ে দেয়। দলীল চাইবেন,
কিন্তু চাওয়ারও একটা ধরণ আছে। আর আপনারা চেষ্টা করবেন নিজেরাও মাঝে মাঝে সহীহ হাদীস
ও বড় বড় আলেমদের কিতাব পড়ার জন্য। আপনার জান্নাত-জাহান্নাম আপনার আমলের উপর নির্ভর
করে, তাই আপনার আমল শুদ্ধ হচ্ছে না ভুল হচ্ছে, এটা এডমিন থেকে আপনার নিজের খেয়াল করা
বেশি জরুরী।
বারাকাল্লাহু ফীকুম।