শনিবার, ৮ মার্চ, ২০১৪

নেকাব ফরয হওয়ার বিরোধীদের যুক্তি ও তার খন্ডনঃ পর্ব ১



নেকাব ফরয হওয়ার বিরোধীদের যুক্তি ও তার খন্ডনঃ পর্ব ১
যেহেতু আমার জানা মতে দ্বীনের ব্যপারে নিবেদিত এমন বহু নিষ্ঠাবান ভাই ও বোন নেকাব নিয়ে বিভ্রান্তির মাঝে আছেন, তাই ইন শাআল্লাহ এই বিষয়টার উপরে নিয়মিত লেখা হবে যাতে করে সংশয় দূর হয় বি ইজনিল্লাহি তাআলা।
যারা নেকাব ফরয নয় বলে মনে করেন, তারা প্রায়শই একটা যুক্তি দেখানঃ ইহরামের সময় নেকাব পড়া হারাম। কোনো ফরয ইবাদত কখনো হারাম হতে পারেনা, নফল সুন্নত হতে পারে। সুতরাং, এ থেকে বুঝা যায় নেকাব পড়া ফরয নয়, নফল/সুন্নত।
প্রথম কথা হচ্ছেঃ ইনাদেরকে যদি কুরান, হাদীস, সাহাবা ও সমস্ত আলেমদের ফতোয়ার পাশাপাশি নেকাব ফরয হওয়ার পক্ষে কোনো যুক্তি দেখানো হয় তখন তারা ঘোর বিরোধীতা করে বলেন, শরীয়তে কোনো যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এইকথা আহলে সুন্নতের সকলেই স্বীকার করে শুধু যুক্তি শরীয়তের দলীল নয়। কিন্তু কুরান ও হাদীসে দলীলের পাশাপাশি যদি যুক্তি থাকে তাহলে ইখতিলাফ বা মতবিরোধের সময় সেটা একটা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। কিন্তু তারাই আবার ফরয না হওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বেশি যুক্তি দেখান।
যেমন উপরের যুক্তিটা।
যাই হোক, কেউ যদি বলে ইসলামে কোনো ফরয ইবাদত কক্ষনো কোনো অবস্থাতে হারাম হয়না ইনি আসলে হয় নওমুসলিম অথবা তিনি ইসলাম সম্পর্কে একেবারেই জানেন না!
এমন অনেক প্রমান দেওয়া যায়, সাধারণ অবস্থায় একটা কাজ ফরয, অন্য কোনো অবস্থাতে সেটার হুকুম পরিবর্তন হয়ে যায়, হারাম এমনকি শিরক বা কুফুরীও হতে পারে!
আমরা জানি নামায না পড়লে মানুষের ঈমানই থাকেনা। এই নামায কি কখনো হারাম হয়ে যেতে পারে? তাদের যুক্তি অনুযায়ী নাহ!
তাহলে তাদের কাছে নারীদের ঋতু চলাকালীন সময়ে নামায পড়ার হুকুম কি?
ঋতু অবস্থায় নামায পড়া জায়েজ না হারাম?
রোযা রাখার হুকুম কি?
আমরা জানি নামায পড়ার বড় একটা ফরয হচ্ছে ওয়াক্ত অনুযায়ীই আদায় করা, আগে বা পরে পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু সফরে থাকলে কিন্তু এক ওয়াক্ত আগে বা পরে পড়া যায়। এখানে কিন্তু একটা ফরয হুকুম রহিত হয়ে যাচ্ছে।
আদম (আঃ) এর যুগে ভাইবোনের মাঝে বিয়ে হতো, এখন যদি কেউ এই কাজ করে তার গলা কাটা হবে।
আদম (আঃ) কে জিন ও ফেরেশতারা সিজদা করেছিলো, ইউসুফ (আঃ) কে তার ভাই ও বাবা সিজদা করেছিলো। অথচ বর্তমানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা শিরক!
ইবাদত কখন কিভাবে করতে হবে সেটা আল্লাহ পাক নির্ধারণ করে দেন। এখানে কোনো যুক্তি তর্ক চলবেনা যখন হুকুম চলে আসবে তখন ইমানদারগণ এই কথা বলবেনা, এইটা কেনো বা এইটা এইরকম কেনো?
তাদের একটাই কথা সামিঅনা ওয়া আতাঅনা” – আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।
এতো গেলো যুক্তি খন্ডন পর্বঃ
তবে মজার ব্যপার হলোঃ তারা যেই যুক্তি নিয়ে আসছেন আসলে সেইটা কি কোনো যুক্তির মাঝে পড়ে?
ইহরাম অবস্থায় নারীদের জন্য আসলেই কি গায়ের মাহরাম পুরুষদেরকে চেহারা দেখানো জায়েজ আছে?
চলুন একটু দেখে নিই কুরান হাদীস কি বলে?
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইহরামে থাকা অবস্থায় নারীদের জন্য চেহারা ঢেকে রাখা (নেকাব পড়া) অথবা বোরখা পড়া নিষিদ্ধ।
তার মানে এইনা যে একজন নারী ইহরাম অবস্থায় তার নেকাব বা বোরখা খুলে একজন গায়ের মাহরাম পুরুষের সামনে তার চেহারা উন্মুক্ত রাখবেন। বরং তিনি নেকাব বা বোরখা ছাড়া অন্য কোনো কিছু দিয়ে পর্দা করবেন, যেমনটা আয়িশাহ (রাঃ) এর হাদীস থেকে বর্ণিত হয়েছে।
মা আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ইহরামে থাকা অবস্থায় ছিলাম। পথচারীগণ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত। তারা আমাদের নিকট আসলে আমরা মাথার উপর থেকে খিমার চেহারার উপর ফেলে দিতাম। তারা চলে গেলে সেটা উঠিয়ে নিতাম।
সুনানে আবু দাউদঃ ১৮৩৩, ফাতহুল বারী ৩/৪৭৪।
নারীদের জন্য ইহরামে থাকা অবস্থাতে বা অন্য সময়েও ওয়াজিব হচ্ছে গায়ের মাহরাম পুরুষের সামনে তাদের চেহারা ঢেকে রাখা, কারণ তাদের চেহারাই হচ্ছে পুরষদের জন্য আকর্ষণীয় এমন সৌন্দর্যের কেন্দ্র...
ফাতাওয়া আল-মারআহ আল-মুসলিমাহ, ১/৩৯৯।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মা আয়িশাহ (রাঃ) এর আমল থেকে স্পষ্টঃ ইহরাম অবস্থাতেও নারীরা গায়ের মাহরাম পুরুষদের সামনে চেহারা ঢেকে রাখবে।
এইখানে তারা আরেকটা বিভ্রান্তির মাঝে পড়েছেন।
কিছু মানুষ বুঝেছেন নেকাব পড়া ফরয শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বিবিগণের জন্য।
কি হাস্যকর কথা!
কোন হাদীসে এসেছে আবু দাউদে বর্ণিত মা আয়িশাহ (রাঃ) এর উপরের হাদীসটা শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বিবিগণের জন্য প্রযোজ্য, অন্য মুসলমান নারীদের জন্য প্রযোজ্য নাহ?
এটাইতো হচ্ছে কুরান হাদীসের অপব্যখ্যা।
অথচ সম্মানিত সাহাবীরা আমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন নেকাব পড়ার আদেশ সমস্ত মুসলমান নারীদের জন্যই প্রযোজ্য।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে নিচের এই আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলোঃ
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিন নারীদেরকে বলুনঃ তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।
সুরা আল-আহজাব, আয়াত ৫৯।
তখন ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি তার চেহারা ঢাকলেন, শুধুমাত্র এক চোখ ছাড়া। তার মানে এই আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে এই আয়াত দ্বারা ঢেকে রাখা দ্বারা চেহারাও ঢেকে রাখতে আদেশ করা হয়েছে। এই তাফসীর বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে।
তাফসীর ইবনে কাসীর।
এতো গেলো সরাসরি সাহাবীদের মুখের কথা থেকে প্রমানিত হলো মুমিন নারীদের জন্য নেকাব পড়া ফরয।

এবার প্রমান দেখাবো রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে শুধু তাঁর বিবিগণই না, অন্য মুসলমান নারীরাও নেকাব পড়তেন।