“মানুষের কৃতকর্মের কারণ স্থলে
ও জলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ
তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।”
সুরা
আর-রুমঃ ৪১।
*শিক্ষা সফরে
বাস দুর্ঘটনায় ৭টি নিষ্পাপ শিশু নিহত!!
ইন্না
লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article744528.bdnews
স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষা সফর/পিকনিক/স্টাডি ট্যুর ইত্যাদি নামে অসভ্য সংস্কৃতির প্রাদুর্ভাব...
পড়াশোনার
মাঝে একটু বিরতি অথবা হালাল বিনোদন কেনা পছন্দ করেন? তাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
স্থাপনা অথবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানগুলোতে বেড়িয়ে আসা প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে
দীর্ঘদিনের রেওয়াজ হিসেবেই চলে আসছে...
কিন্তু
বর্তমানে স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষা সফর/পিকনিক/স্টাডি ট্যুর নামে আসলে কি হচ্ছে?
কুরআন
ও সুন্নাহর আলোকে তার কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো...
প্রথমেই
যে কথাটা চলে আসে সেটা হলো নারী-পুরুষের ফ্রী মিক্সিং...
অথচ, নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশার সুযোগ আছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য কাজ
করা বা পড়াশোনাই জায়েজ নাহ! সাধারণত নারী-পুরুষের মাঝে মানসিক যে একটা দূরত্ব থাকে, তা এই
সমস্ত প্রোগ্রামগুলোর দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশের কারণে বাতাসের মতো উড়ে যায়। এতে সহজেই নারী-পুরুষেরা ঘনিষ্ঠ হতে পারে,
কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পায়...
বিশেষ
এই দিনগুলোতে নারীরা অশ্লীল ও চিত্তাকর্ষক পোশাক ও সাজ-সজ্জা করে নিজেদেরকে পুরুষদের
সামনে মোহনীয় করে তোলার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। আসলে পরিবেশটাই এমন, অনেক বিচক্ষণ দ্বীনদার নারী
ও পুরুষেরা দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে যান, আল্লাহর কথা, দ্বীনের কথা ভুলে ইচ্ছায়/অনিচ্ছায় পরিবেশের সাথে
মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
আর
ফাসেক/বেদ্বীন
পুরুষদের জন্য এটাতো সুবর্ণ সুযোগ...নারীদেরকে ধোঁকায় ফেলে
বা তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার চূড়ান্ত সর্বনাশ করার জন্য...
এছাড়া
অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সফর করে কয়েকদিন হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এইভাবে দিন-রাত ছাত্রী-শিক্ষিকাদেরকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয় সহকর্মী পুরুষ শিক্ষক ও
ছাত্রদের সাথে...
এভাবে
যে কতো জেনা-ব্যভিচার,
ধর্ষণ, যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে তা সচেতন মহলের
সকলেরই জানা।
নারীদের
জন্য মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকী সফর করা হারামঃ
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান এনেছে তার জন্য মাহরাম পুরুষ
সাথী ব্যতীত একদিন এক রাতের দূরত্বের সফর করা জায়েয নয়।
বুখারী
ও মুসলিম, রিয়াদুস
সালেহীনঃ ৯৮৯।
নারীদের
জন্যেতো পিকনিকতো দূরের কথা,
একাকী হজ্জের সফরেও যাওয়া বৈধ নয়!!
নবী
করীম (সাঃ)
বলেছেনঃ কোন মাহরাম পুরুষ সাথী ব্যতীত কোন ব্যক্তি কখনো কোন মহিলার
সাথে একান্তে সাক্ষাত করবে না। আর
কোন মহিলা নিজের সাথে মাহরাম পুরুষ সাথী ব্যতীত সফর করবে না। এক ব্যক্তি বললঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার স্ত্রী তো হজ্জে যাচ্ছে,
আর ওদিকে অমুক অমুক জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য আমার নাম লেখা হয়ে
গেছে? তিনি বললেনঃ যাও, তুমি তোমার
স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর।
বুখারী
ও মুসলিম, রিয়াদুস
সালেহীনঃ ৯৯০
* একদিন একরাতের
অর্থ অনেকে আবার ভুল বুঝবেন না! এই একদিন একরাতের দূরত্ব তখনকার
সময়ে উটের যাত্রা দিয়ে বোঝায়, যা হয়তোবা বর্তমানে ২-৩ ঘন্টা বাস/ট্রেন জার্নিতেই পার হওয়া যায়।
আরেকটি
গুরুতর বিষয় হচ্ছে গান-বাজনা। হিন্দী অসভ্য সংস্কৃতির প্রভাবে যাত্রাপথে
গানের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দাম অশ্লীল নৃত্য এতোটাই নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ে যে এর কারণে
অতীতে অনেক বাসই এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হয়েছে। গান বাজনা নিয়ে এই লেখাটা পড়ুনঃ
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/03/blog-post_8.html
তাই
এইসমস্ত দ্বীনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যায়নরত মুসলিম ভাই ও বোনদেরকে আমি সতর্ক
করছি...
যদি
ইসলামিক শরীয়াহ মেনে কোনো কিছু করা হয় সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যেখানে আপনি আগে থেকেই জানেন দ্বীনকে
মূল্যায়ন করা হয়না,
দ্বীনের বিপরীত কাজকর্ম ব্যপভাবে সংঘটিত হচ্ছে, এইগুলো থেকে দূরে থাকবেন। এটা মনে করবেন না, আমি আমার মতো থাকবো তারা
যা খুশি করতে থাকুক। পাপের
মেলা বসে এমন জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে উপস্থিত থাকা (সংশোধন/বাঁধা বা দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া) জায়েজ নাহ। এমন হতে পারে এদের উপর আল্লাহর যে অভিশাপ/আজাব-গজন আপনার উপরেও আসতে পারে...
তাই
বিষয়টা একটু খেয়াল কৈরা...
একটা
জায়গায় যখন আল্লাহ আজাব নাযিল করেন তখন ঐ এলাকার পাপী/নেককার সকলকেই সেটা স্পর্শ
করে...
সর্বশেষ
লেখার শুরুতে কুরআনের আয়াত,
দুঃখজনক সংবাদ ও এই লেখার বিষয়বস্তুর সাথে মিল কোথায়?
“কঠিন শাস্তির
পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা
প্রত্যাবর্তন করে।”
সুরা
সাজদাহ, আয়াত ২১।
সমস্ত
ধরণের বিপদ আপদ বালা-মুসিবত আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা হয় বান্দার জন্য পরীক্ষা অথবা পাপ কাজের শাস্তি/সতর্কবার্তা যাতে করে তারা জাহান্নামের কঠোর শাস্তির আগে দুনিয়ার জীবনে
ছোট শাস্তি দ্বারা সংশোধন হয়...
বর্তমান
সমাজের অধিকাংশ মানুষ পাপ কাজে ঝুকে পড়েছে, দ্বীনের ব্যপারে উদাসীন আর
কবীরা গুনাহ (শিরকি, কুফর,
বেনামাযী, হত্যা, জেনা, ধর্ষণ, সুদ,
ঘুষ, গান বাজনা, অশ্লীলতা...) মানুষের কাছে এখন তুচ্ছ ব্যপার হয়ে
গেছে...
এমন
অবস্থায় অতীতের যুগের আদ,
সামুদ, লুত (আঃ)
এর জাতির মতো পুরো জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া, অথবা ইন্দোনেশিয়ায় সুনামিতে নিমিষের মধ্যে ২ লক্ষের মতো মানুষ, হাই্তিতে ভূমিকম্পে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়ে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি
হওয়ার মতো কঠোর শাস্তির আগে এইরকম ছোট-খাট বিপর্যয় দ্বারা
পুরো সমাজের মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে...
কিছুদিন
পূর্বে সাভারে রানা প্লাজায় সহস্রাধিক মানুষ নিহত হওয়া...পুরান ঢাকায় আগুন লেগে শতাধিক
মানুষ নিহত হওয়া...বছর দুই-এক আগে
ফুটবল খেলা নিয়ে ৫০ জনের শিশু নিহত হওয়া এইসবগুলো হচ্ছে পুরো সমাজের মানুষের জন্য আল্লাহর
পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা...যাতে করে এর চেয়েও বড় শাস্তি আসার
আগেই মানুষ নিজেদের আমলগুলো সংশোধন করে নেয়, পাপ কাজ থেকে
তোওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে...