তাবলীগী ভাইদের ফাযায়েলে আমাল সম্পর্কে সৌদি আরবের উলামাদের
ফাতওয়া:
“ফাযায়েলে
আমাল” বই এর আসল নাম “তাবলীগ ই নিসাব” লিখেছেন মুহাম্মাদ
যাকারিয়া আল-কান্দলভী যেখানে তিনি নৈতিক উৎকর্ষ সম্পন্ন কাজের জন্য কিছু অনুচ্ছেদ সমষ্টিবদ্ধ করেছেন। লেখক এ জন্যই বইটি লিখেছেন যেন তাবলীগ ই জামাতের লোকেরা বইটি থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারে। এই বইটি তাদের
কাছে অনেক
গুরুত্বপূর্ণ, তারা বইটি তাদের সমাবেশে, স্কুলে এবং মসজিদে পড়ে থাকে। এটা উর্দুতে লিখা, যার ফলে আরব দেশগুলোতে
বইটি ব্যাপকতা লাভ করেনি,
কিন্তু বইটি ব্যাপকভাবে পরিচিত সেই দেশগুলোতে যেখানে তাবলীগ ই জামাত এর
পরিচিতি আছে, যেমন
ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান।
শায়খ হাম্মুদ আত-তুওাইজিরি “কওয়াল আল- বালিগ” এ বলেছেন- তাবলীগীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই
হচ্ছে “তাবলীগ ই নিসাব” ( ফাযায়েল এ আমাল নামেও
পরিচিত), যেই বইটি তাদের একজন নেতা
লিখেছেন যার নাম মুহাম্মাদ যাকারিয়া আল-কান্দলভী। তারা এই বইটাকে এতটাই গুরুত্ব
দেয় যেমনটা আহলুস সুন্নাহ “সহিহাইন”
এবং অন্যান্য হাদিসের বইকে গুরুত্ব দেয়। তাবলীগীরা এই বইটিকে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই হিসেবে ভারতীয় এবং অন্যান্য অনারব মানুষের নিকট তুলে
দিয়েছে, যারা এই দলটিকে সমর্থন
দেয়। এই বইটিতে পরিপূর্ণভাবে রয়েছে শিরক, বিদয়াত, কিচ্ছা-কাহিনী এবং জাল ও দুর্বল হাদিস। আসলে এই বইটি
হচ্ছে এমন একটি বই যা মন্দ,
পথহারা এবং ফিতনাহ এর সমষ্টি।
(ঊক্তি এখানেই শেষ)
শায়খ সামসুদ্দিন আল-আফগানী তার বই “ জুহুদ উলামা আল
হানাফিয়্যা ফি ইবতাল আকাঈদ আল কুবুরিয়্যা(২/৭৭৬)”বলেন- দেওবন্দি প্রখ্যাত আলেমদের অনেক বই রয়েছে যা
দেওবন্দিরা অনেক শ্রদ্ধা করে, কিন্তু বইগুলোতে কবর পূজারিদের কিচ্ছা এবং সূফীদের অন্ধভক্তির
কাহিনী বিদ্যমান। যেমন-
তিনি কয়েকটি বই এর নাম উল্লেখ করেন, যার মধ্যে তাবলীগ ই নিসাব
(নিসাব-আত-তাবলীগ এবং মানহাজ-আত-তাবলীগ) উল্লেখযোগ্য। এই সকল দেওবন্দিরা এই
বইগুলোকে অস্বীকারও করেনা আর না করে সতর্ক, এবং তারা বইগুলো মুদ্রণ ও বিক্রিতে বাধও সাধেনা। ভারত ও
পাকিস্তানের বাজার তাদের
এই সকল বই এ সয়লাব।
(ঊক্তি এখানেই শেষ)
নিম্নোক্তটি “ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ (খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৯৭”) হতে বর্ণিতঃ
প্রশ্নঃ আমি একজন ব্রিটেনে বসবাসকারী মুসলিম এবং আমি আমার
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পথ অনুসরণ করতে চাই। যার ফলে
আমি চেষ্টা করি ধর্মীয় বই উর্দুতে পরতে চেষ্টা করি। আমি যখন শায়খুল হাদিস শায়খ
মুহাম্মাদ যাকারিয়া আল-কান্দলভী যিনি দেওবন্দি জামাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত, তার কিছু ধর্মীয় বই
পড়ছিলাম আমি একটি গল্প খুজে পাই তার বই “তাবলীগ ই নিসাবের ১১৩ পৃষ্ঠায়”, যেখানে লেখক একটি গল্প
উদ্ধৃত করেছেন আরেকটি বই রওনাকুল মাজালেছ থেকে। গল্পটি হচ্ছে: একজন ব্যবসায়ীর যে
মারা যায় এবং তার সম্পত্তি তার দুই ছেলের মাঝে ভাগ হয়। অনেক সম্পত্তির মধ্যে মৃত
ব্যক্তি নবীজি (সা.) এর একটি চুল রেখে যায়। ছোট ছেলেটি নবীজি (সা.) এর মাথার চুল
রেখে বাকি সম্পত্তি তার বড় ভাইকে দিয়ে দেয়। তারপর যা হল- যে সম্পত্তি নিয়েছিল
সে দ্রুত নিঃস্ব হয়ে যায়,
অপরদিকে যে নবী (সা.) এর চুল রেখেছিল সে ধনবান হয়ে যায়। ছোট ভাইটি যার
কাছে নবীজি (সা.) এর মাথার চুল ছিল তার মৃত্যুর পর একজন বুজুর্গ নবীজি (সা.) কে
স্বপ্নে দেখলেন, নবীজি
(সা.) বললেন “যার
যা প্রয়োজন সে যেন ঐ ছোট ভাইটির কবরের কাছে যায় এবং আল্লাহর কাছে চায় এবং
আল্লাহ ঐ লোকের মর্যাদার উছিলায় দোয়া কবুল করবেন”।
(তাবলীগ ই নিসাব থেকে উক্তি এখানেই শেষ)
আমি আরও একটি বই পড়েছি যার নাম ‘তারিখে মাসায়েখে জুথাত’ একই লেখক, শায়খ মুহাম্মাদ যাকারিয়া আল-কান্দলভী, পৃষ্ঠা নং- ২৩২, তিনি উল্লেখ করেছেন যে
শায়খ হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজির মাক্কি, যখন তার অন্তিমশয্যায় শায়িত তখন তিনি তার এক শোকার্ত
অনুগত দ্বারা সাক্ষাৎ লাভ করলেন। শায়খ বুঝলেন তার শারীরিক অসুস্থতার জন্য অনুগত বান্দা কি পরিমানে কষ্ট পাচ্ছে তাই তিনি ঐ লোককে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ “শোক করোনা, উপাসনারত সাধুরা মরেনা, বরং তারা এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হয়
মাত্র, এবং যখন সে কবরে থাকে তখন
সে মানুষের প্রয়োজন পূরন করে যেমনটা সে জীবিত অবস্থায় পূরণ করে থাকে।” (তারিখে মাসায়েখে জুথাত
থেকে উক্তি এখানেই শেষ)
আমি আপনার সুচিন্তিত মতামত জানতে চাই উপরোক্ত ঘটনাগুলো সম্পরকে
এবং নিচের বিষয়াবলী সম্পর্কেওঃ
১) লোকটি, লেখক এবং যে অনুবাদ করল সে কি তার বই এর গল্পের উপর বিশ্বাস করে
মুসলিম থাকতে পারে?
দয়া করে ব্যাখ্যা করবেন কুরআন এবং সহিহ সুন্নাহ হতে প্রমান
সহকারে।
২) যদি সে মুসলিম না থাকে, তাহলে কুরআন ও সুন্নাহ হতে প্রমান কি তার ইসলামের চৌহদ্দি
হতে বেরিয়ে যাওয়া সম্পর্কে?
উত্তর হচ্ছেঃ
উক্ত বইগুলো থেকে যে সকল ঘটনা ও উদাহরণ বিবৃত করা হল, সেগুল নব আবিষ্কৃত বিষয়
এবং কিচ্ছা কাহিনী যেগুলো ইসলামের কোন মূল উৎস যেমন কোরআন ও নবীজি(সা.) এর সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত নয়। শুধুমাত্র যে দ্বিধাগ্রস্ত, সত্য বিমুখ এবং যে সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছে সে ছাড়া কেউই এসকল
বলতে বা বিশ্বাস করতে পারেনা।
নবীজি( সা.) এর চুল পাওয়ার ঘটনা ও যে রাখে সে সম্পদশালী হওয়ার
ঘটনা এবং নবীজি (সা.) কে স্বপ্নে এই দেখতে পাওয়া যে তিনি বলছেন ঐ লোকটির কবরের
কাছে যেয়ে চাইতে- এই সকল কিছুই মিথ্যা ও বানোয়াট যার স্বপক্ষে কোন দলিল নেই।একটি
সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে যে,
নবীজি (সা.) বলেছেন-‘ শয়তান আমার রুপ ধারন করতে পারেনা।‘ এটা মানলাম।
কিন্তু তাহলে নবীজি (সা.) কি করে লোকদের বলতে পারেন যাও কবরের
কাছে এবং আল্লাহর কাছে চাও,
যদিও তিনি তার জীবদ্দশায় এ থেকে নিষেধ করে গেছেন ও সতর্ক করে গেছেন কঠিন
ভাষায় এবং তিনি নিষেধ করেছেন বাড়াবাড়ি করতে নবী ও সৎ লোকদেরকে নিয়ে তাদের মৃত্যুর পর এবং উছিলা হিসেবে আল্লাহর কাছে তুলে ধরতে কি নিষেধ করেননি? তিনি (সা.) ততক্ষন পর্যন্ত
মৃত্যু বরন করেন নি যতক্ষণ না আল্লাহ তার মনোনীত ধর্মকে পরিপূর্ণ করেছেন তার
সাহায্য দ্বারা। সুতরাং কোন কিছুই সংযোজন বা বিয়োজন করা যাবেনা যতটুকু
নবীজি (সা.) বলে গেছেন তা হতে। এটা বিশ্বাস করা যে কবরের পাশে
যেয়ে চাইলে তা পূর্ণ হয় এটা সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কৃত বিষয় যার কোন ভিত্তি ইসলামে
নেই, এবং এটা লোকটিকে বড় শিরকে
পতিত করবে যদি সে আল্লাহর কাছে না চেয়ে কবরের কাছে চেয়ে বসে, অথবা সে যদি বিশ্বাস করে
কবরের বাসিন্দাদের
ক্ষমতা রয়েছে ভাল বা মন্দ করার, কারন শুধুমাত্র আল্লাহই ভাল বা মন্দ করার অধিকার রাখেন, সকল প্রসংসার মালিক আল্লাহ
তায়ালা।
অনুরূপভাবে এই বিশ্বাস রাখা যে উপাসনাকারী সাধুরা মরেনা, শুধু এক স্থান হতে অন্য
স্থানে স্থানান্তর হয় মাত্র এবং মানুষের মনোবাসনা পূর্ণ করে যখন সে তার কবরে থাকে
এবং এমনকি পুনরায় জীবিত হয়েও মনোবাসনা পুরনে সক্ষম, এটা একটা মিথ্যা বিশ্বাস, এই বিশ্বাসটা হচ্ছে পথহারা
সূফীদের বিশ্বাস। এগুলোর কোন ভিত্তি নেই; বরং নির্দেশ করা হয়েছে কোরআন ও সহিহ হাদিসে যে প্রত্যেক
মানুষই
মারা যাবে। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন-
“নিশ্চয়ই
তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে”।
(সূরা-৩৯ আয-যুমার, আয়াত- ৩০)
“আপনার
পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি
চিরঞ্জীব হবে?”।
(সূরা-২১ আল-আম্বিয়া, আয়াত-৩৪)
“প্রত্যেককে
মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল
দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত
হবে”।
(সূরা-২১ আল-আম্বিয়া, আয়াত-৩৫)
সহিহ হাদিসেও নির্দেশ করা হয়েছে যখন মানুষ মারা যায় তার সকল
আমল বন্ধ
হয়ে যায়, শুধুমাত্র তিনটি ছাড়াঃ উপকারী বিদ্যা, পুণ্যবান সন্তান যে তার
মাতা পিতার জন্য দোয়া করে ও সাদকায়ে যারিয়া। মৃত কবরবাসির ভাল বা খারাপ কোন
কিছুই করার ক্ষমতা নেই,এবন
এটা বলাই সঙ্গত যে নিজেই এই অবস্থায় থেকে কি করে অন্যকে সাহায্য করতে পারে।
এইটা মানা যায়না যে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট সাহায্য
চাইবে কেননা আল্লাহ ছাড়া কোন বিষয়েই কারো কোন ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া; মৃতদের কাছে এমন সাহায্য
খোজা বড় শিরক।
যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করল সে বড় কুফরিতে পতিত হল এবং
ইসলামের চৌহদ্দি থেকে বের হয়ে গেল- কারন আল্লাহ নিষেধ করেছেন- প্রমানিত সত্য
আল্লাহর কিতাব এবং তার নবীজি (সা.) এর সুন্নাহ কে অস্বীকার করতে।
তাকে অবশ্যই অকপটে অনুতপ্ত হতে হবে, মন্দ কাজ গুলোতে ফিরে না
যাওয়ার চেষ্টা থাকতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে প্রথম যুগের নেককার আহলুস সুন্নাহ
ওয়াল জামাতের আকিদা যেন সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অরজন করতে পারে এবং জান্নাতে দাখিল
হতে পারে এবং যেন আল্লাহর শাস্তি হতে নিরাপদ হতে পারে।
(ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৯৭ হতে উক্তি শেষ)
এটা উদ্ধৃত হয়েছে আল- মাওযুয়াহ আল মুয়াসসারাহ ফিল আদিয়ান
ওয়াল মাযাহিব ওয়াল আহযাব আল মুয়াসিরাহ (১/৩২২): তাবলীগ জামাতের সমাবেশ যেগুলো
আরব দেশগুলোতে হয় সেখানে তারা রিয়াদুস সালেহিন এর উপর গুরুত্ব দেয়, কিন্তু অনারব দেশগুলোতে
তারা হায়াতুস সাহাবা এবং তাবলীগ ই নিসাব
পড়ে থাকে; শেষোক্ত বই গুলো কিচ্ছা কাহিনী এবং দুর্বল হাদিস রয়েছে।
(উক্তি এখানেই শেষ)
পরিশেষে বলা যায় আলেমগণ তাবলীগ ই নিসাব বইটি হতে সকলকে সাবধান
করে যাচ্ছেন, যার
অপর নাম ফাযায়েল আমাল। এই বইটা কোন মুসলিমের জন্য পড়া বৈধ নয়, বরং তাদের সহিহ সুন্নাহতে
মনোনিবেশ করা প্রয়োজন,
ঐ সকল লেখকের বই পড়া প্রয়োজন যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পথ অনুসরণ
করেছেন। যে সকল বইগুলোতে কিচ্ছা এবং মিথ্যা রয়েছে, সেগুলো মুসলিমদের অন্তরে বা মগজে স্থান হতে পারে না। এবং
আল্লাহই অধিক জানেন।