ফরয নামাযের পরে
সম্মিলিত মুনাজাত বেদাত
- আনসারুস সুন্নাহ
____________________________
আলহা'মদুলিল্লাহ্
!! আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নতকে ভালোবাসি আর সমস্ত প্রকার বিদআ'তকে অন্তর থেকে ঘৃণা করি।
আমাদের দেশের ইমাম
সাহেবেরা ফরয নামায শেষ হলেই দুই হাত তুলে বিভিন্ন দুয়া করেন, আর
মুক্তাদীরা সাথে সাথে আমিন আমিন বলেন - এই যে সম্মিলিত মুনাজাতের যে সিস্টেম
বানানো হয়েছে - এটা সুস্পষ্ট কুরান ও সুন্নত বহির্ভূত একটি আমল, অর্থাৎ বিদআ'ত। মক্কা মদীনাতে বা আরব বিশ্বের কোন
একটি মসজিদে এইরকম প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে সম্মিলিত দুয়া করার বিদআ'তী আমল করা হয়না, আলহা'মদুলিল্লাহ!
এইরকম দুয়া
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) করতেন না, তাঁর মৃত্যুর পর সাহাবীরা করতেন না,
তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীরা কেউই করতেন না। এমনকি
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ও করতেন না।
তাহলে আপনারা কেনো
করছেন?
আপনাদের হুজুর
মাওলানারা কি তাদের থেকে ইসলাম বেশি জানেন (নাউযুবিল্লাহ)!!!
____________________________
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
ফরয নামায শেষ করে যেই দুয়াগুলো পড়তেনঃ
১. নামায শেষে ৩
বার “আসতাগফিরুল্লাহা”
সহীহ মুসলিমঃ ১২২২।
২.
"আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া
যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম"
হে আল্লাহ্! তুমিই
শান্তি,
তোমার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় তুমি হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক।
সহীহ মুসলিমঃ ১২২২।
৩. লা ইলা-হা
ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল
হামদু ওয়া হুয়া আ'লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর (১ বার)।
[মুসলিম, ১২৪০]
৪. রাসূলুল্লাহ (
সা: ) মুআয বিন জাবাল (রাঃ) কে বলেছিলেনঃ ‘‘তুমি অবশ্যই
প্রত্যেক নামাযের পর এই দুয়া করবে, আল্লাহুম্মা আ' ইন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি
ইবাদাতিকা।
হে আল্লাহ! তোমার
স্মরণ,
কৃতজ্ঞতা এবং সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর "।
[সুনানু নাসায়ী ,আবু দাউদ ]
৫. আয়াতুল কুরসী
(সূরা বাক্বারা আয়াত-২৫৫) ১ বার পড়া।
[নাসাঈ]
৬. সুবহা-নাল্লা-হ
(৩৩ বার) , আলহাম্দুলিল্লা-হ (৩৩ বার), আল্লাহু-আকবার
(৩৩ বার) ।
এছাড়াও আরো
অন্যান্য দুয়া ও যিকির আছে – যার যার সামর্থ্য ও
পছন্দনীয় সেইগুলো করবেন ইন শা’ আল্লাহ।
কিন্তু রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) এর সুন্নতী আমল বাদ দিয়ে নিজের মনগড়া পদ্ধতিতে এইযে জামাতে হাত তুলে মুনাজাত
করার যে সিস্টেমে চালু করা হয়েছে, এটা কি জায়েজ হবে? চলুন কথা বাড়ীয়ে আমরা দেখি, আমাদের সম্মানিত আলেমরা
কি বলেছেন – এই সম্পর্কেঃ
____________________________
বিগত শতাব্দীর
শ্রেষ্ঠ আলেম ও সৌদি আরবের প্রধান মুফতি, আল-আল্লামাহ শায়খ আব্দুল
আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহঃ) কে এই ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। এর
উত্তরে শায়খ বিন বায (রাহঃ) বলেনঃ
“পাঁচ
ওয়াক্ত ফরয নামায ও নফল নামাযের পর জামাতে এক সাথে দু’আ করা
স্পষ্ট বিদ’আত। কারণ, এরূপ দু’আ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয নামায
ও নফল নামাযের পর জামাতে এক সাথে দু’আ করে সে যেন আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিরোধীতা করে।”
হাইয়াতু কেবারিল
ওলামা ১/২৪৪ পৃঃ
____________________________
বিগত শতাব্দীর
শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস আল্লামা শায়খ নাসিরউদ্দীন আল-আলবানী (রহঃ) বলেন, “দু’আয়ে কুনুতে
হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা বিদ’আত। নামাযের পরেও
এমন করা ঠিক নয়। এ সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে, এর সবগুলিই যঈফ।
এজন্য ইমাম
আযউদ্দীন বলেন, "নামযের পর হাত তুলে দু’আ করা মুর্খদের
কাজ।"
সিফাতু সালাতিন
নাবী (সাঃ) পৃঃ ১৪১।
____________________________
সৌদি আরবের আরেকজন
বিখ্যাত আলেমে দ্বীন ও মুফতি শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেন,
"নামাযেরর পর
জামাতে দু’আ করা বিদআ'ত। যার প্রমাণ রাসূল (সাঃ) ও
তাঁর সাহাবীগণ থেকে নেই। মুসল্লিদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ
ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে"।
ফাতাওয়া উসাইমিন, পৃঃ
১২০।
____________________________
এতো গেলো আরব দেশের
যুগশ্রেষ্ঠ আলেমদের বক্তব্য। এবার চলুন দেখি আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশের দেওবন্দী
হানাফী আলেমরা কি ফতওয়া দিয়েছেন।
তাফসীর “মারেফুল
কুরানের” লেখক – মুফতি
শফী সাহবে যিনি এই উপমহাদেশে হানাফীদের বড় একজন আলেম, তিনি
এই সম্মিলিত দুয়া সম্পর্কে বলেনঃ
মুফতী মুহাম্মাদ
শফী (রাহঃ) বলেনঃ “বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু
আবরী দু্’আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে)
ঐ মুখস্থ দু’আগুলি পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এ
দু’আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারে না। আর ইমামগণ
বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু’আর অর্থ
মোটেই বুঝে না। কিন্তু না জেনে না বুঝে আ-মীন, আ-মীন বলতে থাকে। এ সমস্ত
তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রুপ বা প্রকৃতি ,
তা এতে পাওয়া যায় না ।
মা’আরেফুল
কুরআন,
৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৭৭।
তিনি আরো বলেনঃ
রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হ’তে এবং
শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হ’তেও নামাযের পরে এই
ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সারকথা হ’ল, এই
প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের
পরিপন্থি।
আহকামে দু’আ, পৃঃ
১৩।
দেওবন্দ মাদ্রাসার
প্রতিষ্ঠাতা ও তাদের বড় আলেম আবুল কাশেম নানুতুবী (রহঃ) বলেনঃ ফরয নামাযের সালাম
ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্ট বিদ’আত।
এমদুদ্দীন, পৃঃ
৩৯৭।
মাওলানা আশরাফ আলী
থানভী (রহঃ) বলেনঃ ফরয নামাযের পর ইমাম সাহেব দু’আ করবেন
এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং
ইমাম গারবহিনী বলেন, এ দু’আকে
সুন্নাত অথবা মুস্তহাব মনে করা না জায়েজ।
ইস্তিবাবুদ দাওয়াহ
পৃঃ৮।
আল্লামা আব্দুল হাই
লাক্ষনৌভী (রহঃ) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেন এবং
মুক্তাদীগণ আ-মীন, আ-মীন বলেন, এ প্রথা
রাসূল (সাঃ) এর যুগে ছিল না। ফৎওয়া আব্দুল হাই, ১ম খন্ড,
পৃঃ ১০০।
এইবার সিদ্ধান্ত
আপনার আপনি কোন তরীকা মানবেন – কুরান, সুন্নত ও আলেম ওলামার তরীকা। আর সেটা হলো কুরান ও সহীহ হাদীস মোতাবেক আমল।
নাকি আপনার কাছে
আপনার আধা মৌলভী আর ভুয়া মুফতি মাওলানা টাইটেল ধারী হুজুরের কথাই বেশি দামী?
____________________________
বিঃদ্রঃ যাদের
হেদায়েত আল্লাহ লিখে রাখছেন, তারা সামনে থেকে এই বেদাতী দুয়ায় শরীক
হবেন না। যতটুকু সম্ভব সুন্নতী দুয়া, যিকির আযকার করবেন। আর
কখনো ইচ্ছা হলে ২-১ বার বা মাঝে মাঝে হাত তুলে একাকী দুয়া করতে পারেন। কিন্তু
জামাতে এইভাবে দুয়া করাতে কখনোই শরীক হবেন না, কারণ আল্লাহর
রাসুল (সাঃ) এর সুন্নতের বিপরীত হওয়ায় সেটা সম্পূর্ণ পরিত্যজ্য।
আল্লাহ আমাদের
জানার ও মানার তোওফিক দান করুন।
____________________________