আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
ইন্ডিয়ান মুশরেক আর ইয়াহুদী
খ্রীস্টানদের জেনা ব্যভিচারে নাটক, সিনেমা, পত্রিকা, বিজ্ঞাপন ও সংস্কৃতির অন্ধ ও বিকৃত
অনুকরণে আজকাল মানুষ “ভালোবাসা” বলতে নারী পুরুষের মাঝে অবৈধ সম্পর্কের কথাই বুঝে।
অথচ আমাদের দ্বীনে বড় একটা অংশ “ভালোবাসা” নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে
নিজের চাইতেও বেশি না ভালোবাসতে পারলে কারো ঈমানে পূর্ণতা আসেনা। এছাড়া ঈমানের সবচাইতে
শক্তিশালী একটা প্রকাশ হলো – কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআ’লার জন্য ভালোবাসা এবং কাউকে
শুধুমাত্র আল্লাহ তাআ’লার জন্যই ঘৃণা করা। হাদীসে এসেছে এই কাজটা অর্থাৎ কারো সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা, ঘৃণা ও শত্রুতা শুধুমাত্র আল্লাহর
জন্য, তাঁর দ্বীনের জন্য করতে না পারলে, কেউ কখনো ঈমানের “মিষ্টতা” বা “স্বাদ” অর্জন
করতে পারবেনা।
আল্লাহর প্রতি ঈমানদারদের ভালোবাসা ও নেককার ঈমানদারদের
প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা নিয়ে কুরআনের একটি আয়াত ও একটি সহীহ হাদীসঃ
মহান
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
“আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা
অন্যান্যকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন
আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা
ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী।”
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন,
তখন তিনি জিবরাঈলকে আলাইহিস সালামকে ডেকে বলেন, আল্লাহ অমুক
বান্দাকে ভালবাসেন, তাই তুমিও তাকে ভালবাসো। সুতরাং জিবরাঈল আলাইহিস
সালাম তাকে ভালবাসেন। তারপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আসমানে
এই ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, সুতরাং তোমরাও (ফেরেশতাগণ) তাকে
ভালবাসো। তখন তাকে আসমানবাসীরা ভালবাসে এবং যমীনবাসীদের মাঝেও তাকে মকবুল অর্থাৎ তাঁর
প্রতি সকলের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়।”
[সহীহ বুখারী].....
আর
ঈমানদারদের একজন আরেকজনের প্রতি যে দৃঢ় ভালোবাসা সেই সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“পারস্পরিক
ভালোবাসা এবং সহমর্মিতার ক্ষেত্রে মুসলমানদের উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহের মতো, তার একটি অঙ্গ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন অন্য সকল অঙ্গও অসুস্থ হয়ে
পড়ে।”
মুসলিমঃ
৬৯৫৮, মুসনাদে
আহমদ।
“মুসলমানেরা
সকলে মিলে একটা দেহের মতো, যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহের
কষ্ট হয়, মাথায় ব্যথা হলেও গোটা দেহটার কষ্ট হয়।”
সহীহ
মুসলিমঃ ২৫৮৬/৬৭।
বিঃদ্রঃ
আজকাল এই ভালোবাসার মাঝে মারাত্মক রকমের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। তাইতো ফিলিস্তিনে
একই পরিবারের ৪টা সন্তানকে হত্যা করা হয়, সিরিয়ার কাউকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়,
ইরাকের কারাগারে কোনো বোনকে দিনে ১৭বার গণধর্ষণ করা হয়, আফগানিস্থানে আমেরিকান
সৈন্য হত্যা করে লাশের উপরে পেশাব করে দেয়...আর নিরাপদে থাকা মুসলিম নর নারীরা
তাদের কথা বেমালুম ভুলে যায়, তাদের জন্য কোনোদিন দুয়া করেনা, তাদের জন্য সাহায্য
পাঠায় না, কিভাবে তাদের উপকার করা যায়, কিভাবে এইসব সমস্যা সমাধান করা যায় এটা
নিয়ে তারা চিন্তিত হয়না, তাদেরকে সাহায্য না করে অপচয় করে বেড়ায়, দামি বিলাসবহুল
জিনিস কিনে, কাফের দেশে আনন্দ ফূর্তি গিয়ে, খেলাধূলা অপচয়...আর নিজেরা একটু সুখে
থেকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা, বরং বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডের গোলামি
করতে করতেই তাদের দিন-রাত কেটে যায়, হারাম টাকার পাহাড় গড়তে গিয়ে নামায পড়ারই মতো
সময় পায়না, দিনের বড় একটা সময় চলে যায় হলিউড বলিউডের জেনাকারি, লম্পট অভিনেতা
অভিনেত্রীদের মতো ড্রেস আপ/গেট আপ নিয়েই...কত আর বলবো?
মাঝে
মাঝে আমাদের উদাসীনতা দেখে প্রশ্ন জাগে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ঈমানদারদেরকে যেই দেহের সাথে তুলনা করেছেন, আমরা কি আদৌ সেই ঈমানদারদের
ক্যাটাগরিতে পড়ি কিনা?
আল্লাহ
আমাদের সকলকে হেদায়েত করুন ও আমাদেরকে বোঝার ক্ষমতা দান করুন, আমিন।