দুয়া ও মোনাজাত কিভাবে করবেন ১
বিসমিল্লাহ। ওয়ালহা'মদুলিল্লাহ।
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ'লা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বা'দ।
***ঈমানদার নারী বা পুরুষ যদি
বিশ্বাস ও আন্তরিকতার সাথে দুয়া করে তাহলে আল্লাহ তাআ’লা তাদের প্রত্যেকটা দুয়াই কবুল
করে নেন। দুয়া কবুল হতে দেরী হলেও বা দুয়া কবুল কিভাবে হয়েছে এটা বুঝতে না পারলেও দুয়া
কবুল হয়েছে এই বিষয়ের প্রতি বিন্দুমাত্র সন্দেহ রাখা যাবেনা। মনে রাখতে হবে এটা আল্লাহর
পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষা যে, মৃত্য পর্যন্ত বান্দা ধৈর্য ধরে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও নেক
ধারণ পোষন করে কিনা।
আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ
“তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা
আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব”।
সুরা গাফিরঃ ৬০।
“তোমরা কাকুতি-মিনতি সহকারে
ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক, নিশ্চয় তিনি সীমালংঘন কারীদেরকে পছন্দ করেন না”।
সুরা আ’রাফঃ ৫৫।
“তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা
আমার কাছে দুয়া কর আমি তোমাদের দুয়া কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে মুখ ফিরিয়ে
নেয়, তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে”।
সুরা আল-মুমিনঃ ৬০।
“আর তিনিই হচ্ছেন (উপাস্য),
যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তার বিপদ-আপদ দূর করে দেন”।
সুরা নামলঃ ৬২।
"আর আমার বান্দারা যখন
আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তাদেরকে বলোঃ আমিতো তাদের কাছেই রয়েছি। যখন কোন
প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দেই"।
সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৮৬।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“দুআ-ই হল ইবাদত”।
আবু দাউদ, তিরমিজী ও ইবনু মাজা
৩৮২৮।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
“সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল দুআ”।
হাকেম, সহীহ জামিহ ১১২২।
“আল্লাহর কাছে দুআর চেয়ে উত্তম
কোনো ইবাদত নেই”।
তিরমিজী ৩৩৭০ আলবানী, সহীহুল
জামি’ ৫৩৯২।
***কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ
কখনোই বৃথা যায় নাঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কোন ব্যক্তির দো‘আ গৃহীত হয়; যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে;
বলে, ‘আমার প্রভুর নিকট দো‘আ তো করলাম, কিন্তু তিনি আমার দো‘আ কবূল করলেন না।”
সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায়
আছে,
“বান্দার দো‘আ ততক্ষণ পর্যন্ত
কবূল করা হয়, যতক্ষণ সে গুনাহর জন্য বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার জন্য দো‘আ না করে, আর যতক্ষণ
না সে তাড়াহুড়ো করে।” জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তাড়াহুড়ো মানে কি?’ তিনি
বললেন, “দো‘আকারী বলে, ‘দো‘আ করলাম, আবার দো‘আ করলাম, অথচ দেখলাম না যে, তিনি আমার
দো‘আ কবূল করছেন।’ কাজেই সে তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বসে পড়ে ও দো‘আ করা ত্যাগ করে
দেয়।”
সহীহুল বুখারী ৬৩৪০, মুসলিম
২৭২৯।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“পৃথিবীর বুকে যেকোনো মুসলিম
ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দো‘আ করে (তা ব্যর্থ যায় না); হয় আল্লাহ তা তাকে দেন অথবা অনুরূপ
কোন মন্দ তার উপর থেকে অপসারণ করেন; যতক্ষণ পর্যন্ত সে (দোআ’কারী) গুনাহ বা আত্মীয়তা
ছিন্ন করার দোআ’ না করবে।”
একটি লোক বলল, ‘তাহলে তো আমরা
অধিক মাত্রায় দো‘আ করব।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ সর্বাধিক অনুগ্রহশীল”।
তিরমিযী ৩৫৭৩, আহমাদ ২২২৭৯,
ইমাম তিরমিযী ও শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ।
***দুয়া ৩ ভাবে কবুল হতে পারেঃ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুআ
করে, যে দুআতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে
আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুআ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দুআ সে করেছে
হুবহু সেভাবে তাই কবুল করেন অথবা তার দুআর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা
এ দুআর মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন,
আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুআ করতে থাকবো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেনঃ তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন”।
বুখারীঃ আল-আদাবুল মুফরাদ
৭১০ ও আহমদ।