প্রশ্নঃ
(৫৬) শাফায়াত কাকে বলে?
তা কত প্রকার ও কি কি?
শাইখ
মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
ফাতাওয়া
আরকানুল ইসলাম
উত্তরঃ
শাফায়াত শব্দটির আভিধানিক অর্থ মিলিয়ে নেয়া, নিজের সাথে একত্রিত করে
নেয়া। শরীয়তের পরিভাষায় কল্যাণ লাভ অথবা অকল্যাণ প্রতিহত করার আশায় অপরের জন্য
মধ্যস্ততা করাকে শাফায়াত বলে। শাফায়াত দু’প্রকার। যথাঃ-
প্রথমতঃ
শরীয়ত সম্মত শাফায়াত। কুরআন ও সুন্নাহয় এ প্রকার শাফায়াতের বর্ণনা এসেছে।
তাওহীদপন্থীগণ এ ধরণের শাফায়াতের হকদার হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
“কিয়ামতের
দিন কোন্ ব্যক্তি আপনার শাফায়াতের বেশী হকদার হবে? নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবু
হুরায়রা! তোমার হাদীছ শেখার আগ্রহ দেখে আমার ধারণা ছিল যে, তোমার পূর্বে এ বিষয় সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। যে ব্যক্তি অন্তর
থেকে ইখলাসের সাথে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, কিয়ামতের
দিন সে ব্যক্তি আমার শাফায়াতের সবচেয়ে বেশী হকদার হবে। এ প্রকার শাফায়াতের জন্য
৩টি শর্ত রয়েছে।
১-
শাফায়াতকারীর উপর আল্লাহর সন'ষ্টি থাকা।
২-
যার জন্য সুপারিশ করা হবে,
তার উপরও আল্লাহর সন'ষ্টি থাকা।
৩-
শাফায়াতকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফায়াত করার অনুমতি থাকা।
আল্লাহ
তাআ’লা এই
শর্তগুলো কুরআন মজীদে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
“আকাশে
অনেক ফেরেশতা রয়েছেন, যাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসু হয়না।
কিন্তু আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন এবং যাকে শাফায়াত করার অনুমতি দেন
তার কথা ভিন্ন।” (সূরা নাজ্মঃ ২৬) আল্লাহ বলেনঃ
“কে এমন
আছে যে, সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?”
(সূরা বাকারাঃ ২৫৫) আল্লাহ বলেনঃ
“দয়াময়
আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন
কোন উপকারে আসবে না।” (সূরা ত্বো-হাঃ ১০৯) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
“তারা
শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করবেন, যাদের প্রতি আল্লাহ
সন্তুষ্ট।” (সূরা আন্বীয়াঃ ২৮) সুতরাং শাফায়াত পাওয়ার
জন্য উপরোক্ত তিনটি শর্ত থাকা আবশ্যক। এই শাফায়ত আবার দু’প্রকারঃ
১)
সাধারণ শাফায়াতঃ সাধারণ শাফায়াতের অর্থ হল, সৎ বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা এবং যার
জন্য ইচ্ছা আল্লাহ শাফায়াত করার অনুমতি দিবেন। এই ধরণের শাফায়াত আল্লাহর অনুমতি পেয়ে
আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), অন্যান্য নবী-রাসূল,
সত্যবাদীগণ, শহীদগণ এবং নেককারগণ করবেন।
তাঁরা পাপী মুমিনদেরেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করে আনার ব্যাপারে সুপারিশ
করবেন।
২)
বিশেষ ও নির্দিষ্ট সুপারিশঃ এই ধরণের শাফায়াত নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)এর জন্য নির্দিষ্ট। এই শাফায়াতের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল হাশরের মাঠের
শাফায়াত। হাশরের মাঠে মানুষ যখন বিপদে পড়ে যাবে এবং অসহনীয় আযাবে গ্রেপ্তার হবে, তখন তারা একজন
সুপারিশকারী খুঁজে ফিরবে। যাতে করে তারা এই ভীষণ সংকট থেকে রেহাই পেতে পারে।
প্রথমে তারা আদম (আঃ)এর কাছে গমণ করবে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা
(আঃ)এর কাছে যাবে। তাঁরা কেউ সুপারিশ করতে সাহস করবেন না। অবশেষে তারা নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে আসবে। তিনি মানুষকে এই বিপদজনক অবস্থা
হতে মুক্ত করার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তাঁর দু’আ এবং শাফায়াত কবূল করবেন। এটিই হল সুমহান মর্যাদা, যা আল্লাহ তাকে দান করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
“আপনি
রাত্রির কিছু অংশ জাগ্রত থেকে আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকুন। এটা আপনার জন্য
অতিরিক্ত (নফল ইবাদত)।. আপনার পালনকর্তা অচিরেই আপনাকে সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত
করবেন।” (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৭৯)
নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সমস্ত সুপারিশ করবেন, তার মধ্যে
জান্নাতবাসীদের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করানোর সুপারিশ অন্যতম। জান্নাতবাসীগণ যখন
পুলসিরাত পার হবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে
একটি সেতুর উপরে আটকানো হবে। সেখানে তাদের পারস্পরিক জুলুম-নির্যাতনের প্রতিশোধ
নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। প্রতিশোধ নেয়া ও পারস্পরিক জুলুম-নির্যাতন হতে পবিত্র করার
পর জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)এর সুপারিশক্রমে বেহেশতের দরজা খোলা হবে।
দ্বিতীয়তঃ
শরীয়ত বিরোধী শাফায়াতঃ এধরণের শাফায়াত কোন কাজে আসবে না। মুশরেকরা আল্লাহর নিকটে
তাদের বাতিল মা’বূদদের
কাছ থেকে এধরণের শাফায়াতের আশা করে থাকে। অথচ এই শাফায়াত তাদের কোন কাজে আসবে না।
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
“কোন
সুপারিশকারীর সুপারিশ তাদের উপকারে আসবে না।” (সূরা
মুদ্দাস্সিরঃ ৪৮) কারণ আল্লাহ তাআ’লা মুশরিকদের শির্কের
উপরে সন্তুষ্ট নন। তাদের জন্য শাফায়াতের অনুমতি দেয়াও সম্ভব নয়। আল্লাহ যার উপর
সন্তুষ্ট হবেন, কেবল তার জন্যই সুপারিশ বৈধ। আল্লাহ তাঁর
বান্দাদের জন্য ফাসাদ ও কুফরী পছন্দ করেন না। মুশরিকরা কি যুক্তিতে মূর্তী পূজা
করত তা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেনঃ
“এরা
আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।” (সূরা ইউনুসঃ
১৮) সুতরাং মুশরিকরা তাদের বানোয়াট মূর্তিদের উপাসনা করার পিছনে যুক্তি ছিল যে,
মূর্তিরা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। এটা তাদের
মূর্খতার পরিচয়। কারণ তারা এমন জিনিষের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করে,
যা তাদেরকে আল্লাহ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেয়।