ইস্তিঞ্জা ও ঢিলা কুলুখের সুন্নতী তরীকা
আমার এই লেখাতে নারী ও পুরুষের সবার জন্যেই পেশাব ও পায়খানার পরে
পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি কি, সেটা বর্ণনা করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, নারী
ও পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি আলাদা। তাই অনেকে প্রশ্ন করেন,
নারীদের পবিত্রতার পদ্ধতি কি?
আসলে নারী ও পুরুষের, উভয়ের পবিত্রতা অর্জনের
পদ্ধতি একই। সুতরাং, নিচে বর্ণিত
এই নিয়ম অনুযায়ী নারী ও পুরুষ, সবাই পবিত্রতা অর্জন করতে পারবেন।
পেশাব-পায়খানার পরে নাপাকী
দুইভাবে দূর করা যেতে পারেঃ
(১) পানি দ্বারা এবং
(২) ঢিলা-কুলুখ
অথবা টিস্যু দ্বারা।
পানি
দ্বারা নাপাকী দূর করলে তার পূর্বে ঢিলা বা কুলুখ নেওয়ার প্রয়োজন
নেই। এটা নারী ও পুরষ, উভয়ের জন্য। আমাদের দেশের অনেকে মনে করেন, পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের জন্যে শুধুমাত্র পানি যথেষ্ঠ না, প্রথমে ঢিলা কুলুখ
নিয়ে এরপরে পানি দিয়ে ধুইতে হবে। আসলে এটা একটা ভুল ধারণা। ঢিলা-কুলুখের
নিয়ম নারী-পুরুষ সবার জন্যই এক। বরং, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর
সময়ে ‘কুবা’ মসজিদের কিছু মুসল্লী ঢিলা-কুলুখ না নিয়ে সরাসরি
পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করতো। আর আল্লাহ তাআ’লা এই কাজটিকে পছন্দ করেছিলেন, এজন্য তাদের প্রশংসা করে কুরআনে
আয়াতও নাযিল করা হয়েছিলো। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেখানে এমন কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র
রাখতে পছন্দ করে।” সুরা তাওবাঃ ১০৮। এই আয়াতটি কুবাবাসী লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিল করা হয়েছে। কারণ, তারা শুধুমাত্র পানি দ্বারা ইসতেঞ্জা করতো।” তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ, হাদীস সহীহ।
পবিত্রতা
অর্জনের জন্য পেশাব করার পরে তাড়াহুড়া করে উঠে না পড়ে, একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে, যাতে করে নিশ্চিত
হওয়া যায় যে, পেশাব আর বের হবেনা। তারপর
পানি অথবা ঢিলা-কুলুখ, অথবা টিস্যু দিয়ে নাপাকী পরিষ্কার করতে হবে। শুধু পানি দিয়ে নাপাকী দূর করা উত্তম, সেইক্ষেত্রে আর ঢিলা-কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবেনা। তবে নাপাকী দূর হয়েছে, এটা নিশ্চিত
হলে পানি ব্যবহার না করে শুধু টিস্যু বা ঢিলা কুলুখ
ব্যবহার করলেও পবিত্রতা অর্জন হবে। কিন্তু, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবেনা বা শয়তানের ওসওয়াসাকে
অন্তরে স্থান দেওয়া যাবেনা। আপনি এটা নিয়ে দুঃশিচন্তা করে আপনার জীবন অতিষ্ট করে তুলবেন
না আবার পেশাব থেকে বেঁচে থাকতে অসতর্কও হবেন না। আপনার যতটুকু সাধ্য আছে সে অনুযায়ী চেষ্টা করবেন
নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু রোগের কারণে সেটা সম্ভব না হলে, আল্লাহ কাউকে
তার সাধ্যের বাইরে কোনো বোঝা চাপিয়ে দেন না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুলুখ ও পানি একত্রে ব্যবহার করেছেন, এ মর্মে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি কখনো
কেবল পানি ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৩৪২, ৩৬০ ‘টয়লেটের শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ। কখনো তিনি বেজোড় সংখ্যক কুলুখ ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারীঃ ১৫৫, ‘ওযু’ অধ্যায় ‘কুলুখ’ ব্যবহার অনুচ্ছেদ ২০। ওযু শেষে তিনি হালকা পানির ছিটা লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিতেন। আহমাদ, আবু দাঊদ, মিশকাতঃ ৩৬১। এটি ছিল সন্দেহ দূর করার জন্য। এর চেয়ে বেশী
কিছু করা বাড়াবাড়ি মাত্র। উল্লেখ্য, ঢিলা ব্যবহার করার পর পানি নেওয়ার
যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। ইরওয়াউল গালীলঃ ৪২; সিলসিলা যঈফাহঃ ১০৩১।
____________________________________
ইসলাম
আমাদেরকে নির্লজ্জ, বেহায়া
হতে শিক্ষা দেয়না
আমি
যখন ছোটো ছিলাম তখন নামায পড়া আমার কাছে খুব কঠিন একটা কাজ মনে হতো। কারণ আমার উস্তাদেরা
শিক্ষা দিতো, ছেলেদের পেশাব করার পরে লজ্জাস্থানে ঢিলা-কুলুখ ধরে ৪০ কদম হাটতে হবে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)! বিষয়টা শুনে ঘৃণায় আমার গা কেমন জানি রি রি করে
উঠতো। আবার তারা বলতো এটা করা ওয়াজিব, না করলে পবিত্রতা অর্জন হবেনা, আর পবিত্রতা ছাড়া
নামাযও হবেনা। তাই ১০ বছর বয়সে আমার উপরে নামায ফরয হওয়ার আগে থেকেই আমার দুঃশ্চিন্তা
হতো, কিভাবে আমি এই (জঘন্য) অভ্যাসটা গড়ে তুলবো।
আমাদের দেশের প্রচলিত মসজিদগুলোর বাথরুমের পাশ দিয়ে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকতে
হয়, না জানি কখন আপনি সভ্যতা বিরোধী এই নির্লজ্জ কাজের সম্মুখে পড়ে যান। অথচ, যে করছে সে দিব্যি
এগুলো নেকীর কাজ মনে করে করে যাচ্ছে, কোনো বিকার নেই (লা হা’উলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)! যাই
হোক, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই জঘন্য
কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে একবারও করেন নি, এমনকি কোনো সাহাবী, তাবেয়ী ও
তাবে তাবেয়ীদের কেউই করেন নি। এটা স্রেফ জাহেল (মূর্খ) মুসলমানের ফতোয়া।
আমাদের দেশের
বিশাল একটা জনগোষ্ঠী দ্বীনের নামে এই নিকৃষ্ট বেদাতের সাথে জড়িত। আপনারা নিজে জানুন, শেয়ার করে অন্যদেরকে এই নোংরা বিদাতী
স্বভাব থেকে সতর্ক করুন।
এইরকম যত্ত নিকৃষ্ট শিরক ও বেদাত আমাদের দেশে প্রচলিত
আছে, সেইগুলোর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বন্ধু,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের প্রচার প্রসারের জন্য কাজ করার তোওফিক দান করুন, আমিন।
____________________________________
লজ্জাস্থান
ধরে রাস্তায় হাটাহাটি করা বেদাত
আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যে, ইবাদতের নামে যেই কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম নিজে করেন নি, তাঁর সাহাবীদেরকে করতে বলেননি
অথবা, কোনো সাহাবী, তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ী করেননি,
সেই কাজটা হলো বেদাত (দ্বীনের মাঝে নতুন আবিষ্কার)। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম ইস্তিঞ্জার
পরে ৪০ কদম হাটেন নি, তাঁর সাহাবীদের এমনটা করতে বলেন নি, কোনো একজন সাহাবী এমনটা করেননি।
এমনকি যেসমস্ত সাহাবীদের অসুস্থতার কারণে পেশাব ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তো, তারাও এইরকম বেহায়াপনা কাজ করেন নি।
সুতরাং, কেউ যদি বলে যেঃ পেশাবের পরে ৪০
কদম হাটতে হবে, হাঁটা ফরয/ওয়াজিব, তাহলে, এটা একটা বেদাত। ধর্মের নামে নতুন কোন কথা বা কাজ, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম করেন নি সেটাই হচ্ছে বেদাত।
পেশাবের পরে লজ্জাস্থান ধরে ৪০ কদম হাঁটাহাঁটি করা দেখতে এতোটাই দৃষ্টিকটু, লজ্জা শরমের মাথা না
খেয়ে কেউই এই নিকৃষ্ট বেদাতী কাজটা করতে পারবেনা। তারপরেও বেদাত করতে করতে যাদের ঘাড় ত্যাড়া হয়ে
গেছ, তাদেরকে অনুরোধ করবো, দয়া করে বলবেন কুরআনের কোন
আয়াতে, অথবা কোন হাদীসে অথবা কোন সাহাবী এই
বেহায়াপনার কাজটা করেছেন, তাঁর দলীল-প্রমান দিন। যদি দলীল দিতে পারেন তাহলে, ইন শা’আল্লাহ, আমরা এই বেহায়াপনাকে মেনে নেবো। আর যদি দলিল দিতে না পারেন, তাহলে দ্বীনি ভাই হিসেবে
অনুরোধ, এইসমস্ত বেহায়াপনা ও নোংরামি কাজ বাদ দিন।
____________________________________
পেশাব করার পর মনে হয় কয়েক ফোঁটা বের হয়েছে?
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায রাহিমাহুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি ফতোয়াঃ
প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি পেশাব
শেষ করে পেশাবের স্থান ধৌত করে নেয়। কিন্তু যখনই সে নড়াচড়া করে ও দাঁড়ায়, তখন অনুভব
হয় যে, কয়েক ফোঁটা পেশাব বের হয়েছে। এ জন্য সে দীর্ঘ সময় পেশাবের স্থানে বসে থাকে, আর
বলে কি করব? সে কি তার এ অনুভূতি ও ধারণা ত্যাগ করে ওযু পূর্ণ
করে নেবে? নাকি,
পরিপূর্ণ পেশাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? আশা করি উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ
আপনাদের কল্যাণ করুন।
উত্তরঃ আল-হামদুলিল্লাহ। এ বিষয়টি ওয়াসওয়াসা (শয়তানের কুমন্ত্রনা) ও
সন্দেহ থেকে সৃষ্টি হয়। আর এগুলো তৈরী হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। তবে কারো কারো ব্যাপারে
প্রকৃত পক্ষেই (অসুস্থতার কারণে)
পেশাবের পরে দুয়েক ফোঁটা বের হয়।
কারো যদি সত্যিই এমন হয়, তাহলে সে
তাড়াহুড়ো করবে না, বরং পেশাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, অতঃপর পানি দ্বারা পেশাবের
স্থান ধৌত করবে। এরপর যদি কোন কিছুর আশঙ্কা থাকে, তাহলে লজ্জাস্থানের আশপাশে লুঙ্গি
বা পায়জামায় পানি ছিটিয়ে দেবে। অতঃপর অযু শেষ করার পর যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সেই দিকে
সে কোন ভ্রুক্ষেপ
করবে না। ওয়াসওয়াসা ত্যাগ করার জন্য এ পদ্ধতি তার জন্য সহায়ক হবে।
আর যদি শুধুই সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা
হয়, যার কোন বাস্তবতা নেই, তবে তার প্রতি মোটেই ভ্রক্ষেপ করবে না। মুমিনদের জন্য এ
সমস্ত জিনিসে দৃষ্টি না দেওয়া
উচিত। কারণ, এগুলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা। শয়তান চায় মানব জাতির সালাত-ইবাদত নষ্ট করতে।
অতএব, তার ষড়যন্ত্র ও ওয়াসওয়াসা থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। আল্লাহকে আঁকড়ে থাকা
এবং তার উপর ভরসা করা। আর এসব যা কিছু সৃষ্টি হয়, তা শয়তানের পক্ষ থেকে মনে করা, যাতে
ওযু এবং
তার পরবর্তী সালাতে এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ সৃষ্টি না হয়। আর নিশ্চিতভাবে কিছু বের
হলে, পুনরায় পবিত্র হবে ও অযূ করবে।
আর ধারণার কোনই গ্রহণ যোগ্যতা
নেই। যদিও ৯৯% ভাগ ধারণা হয়, তার প্রতিও কোন ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। এগুলো শয়তানের
প্ররোচনা। যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় বিশ্বাস না হবে, সে তার অযূ, সালাত ও অন্যান্য কাজ করে
যাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ হে আল্লাহর রাসূল, কোন ব্যক্তির ধারণা হয় যে, তার
সালাতে কিছু বের হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেন : (لَا يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا) সালাত ত্যাগ করবে না, যতক্ষণ না সে আওয়াজ শোনে,
অথবা গন্ধ পায়। এখানে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আওয়াজ বা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত, কেবল
ধারণার উপর নির্ভর করে সালাত ত্যাগ করবে না। তদ্রূপ মানুষ যখন অযূ থেকে ফারেগ হয়, অতঃপর
কোন কিছু অনুভূত হলে, সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, এবং তার প্রতি ফিরে যাবে না। বরং,
সে তার পবিত্রতা, সালাত ও আমল করে যাবে, যতক্ষণ না ১০০% ভাগ ধারণা হয় যে, কিছু বের
হয়েছে। কারণ, কিছু বের না হওয়াই নিয়ম। আরো স্মরণ রাখবে যে, শয়তানের ওয়াসওয়াসা, তার
প্ররোচনা ও তার সৃষ্ট সন্দেহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুমিনকে ক্লান্ত করা ও তাকে কল্যাণকর
এসব কাজ থেকে বিরত রাখা। আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাচ্ছি।
সূত্রঃ ফাতওয়া নূর আ’লা আদ-দারবঃ ২/৫৭৭।
____________________________________
পেশাব করার পরে যার সত্যি সত্যিই পেশাব বের হয় সে কি করবে
এই লেখাটা শায়খ মতিউর রাহমান মাদানী হা’ফিজাহুল্লাহর একটি প্রশ্নোত্তর থেকে নেওয়া। এবং তার সাথে আমি কিছুটা সম্পাদনা ও ব্যখ্যা যোগ করেছি।
(১) পেশাব শেষে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি
চাপ দিবে, যাতে করে পেশাব পড়া বন্ধ হয়।
(২) এর পরেও যদি পেশাব বের হতে থাকে, তাহলে টিস্যু বা ঢিলা-কুলুখ নিয়ে
পেশাব ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। (সাবধান! কোন হাটাহাটি নয়)। সে শুধু লজ্জাস্থান একটু ঝেড়ে পেশাব ফেলার চেষ্টা করবে, এবং এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। এটা নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করার
দরকার নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়াবাড়ি করে জীবনটাকে কষ্টকর করে তুলবেন না।
(৩) এর পরেও যদি মনে হয় পেশাব বের হচ্ছে,
এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। এই অবস্থায় সে পেশাব বের হচ্ছে কি না হচ্ছে, সেইদিকে মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবেনা। ওযু
করার পরে সে কাপড়ের উপর দিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ও তার আশেপাশে সামান্য পানির ছিটা দিবে, এতে পেশাব বের হলো কিনা,
এই ওয়াসওয়াসায় সে পড়বেনা। আর ওযু করার পরে বা নামাযে
পেশাব বের হয়েছে এমন সন্দেহ হলে, একবার ‘আ’উযুবিল্লাহিমিনাশ শাইত্বানির
রাযীম’ পড়বে। এরপরে এনিয়ে আর কোনো চিন্তা করবেনা, যদিওবা পেশাব বের হয়ে যায়! এই অবস্থায়
সে মাযুর বা অসুস্থ, তাই তার জন্যে ওযু ভাংবেনা। অসুস্থতার কারণে সে এক ওযু দিয়েই এক ওয়াক্তের সমস্ত
ফরয, সুন্নত, নফল নামায পড়তে পারবে।
(৪) আর কেউ যদি নিশ্চিত হয় যে, ওযু করার
পরে, নামাযে বা এমনিতে যে কোনো সময় পেশাব পড়ে, তাহলে সে চিকিতসা করাবে কারণ এটা
একটা রোগ। আর চিকিৎসা করেও উপকার না পেলে, সে লজ্জাস্থানে তুলা/কাপড় বা আন্ডারওয়ার
পড়বে যাতে করে পেশাব গায়ে বা কাপড়ে না লাগে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে প্রত্যেক নামাযের পূর্বে এটা পরিবর্তন করে নিবে। আর যদি এই পরিবর্তনকরার মাঝে কিছু পেশাব গায়ে বা কাপড়ে
লাগে, অথবা পরিবর্তন করার কোন সুযোগ না থাকে, তাহলে ঐ অবস্থাতেই সেই নামায পড়ে নিবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই নামায ত্যাগ করা
যাবেনা।
(৫) আর একটা মাসয়ালা হলো, এই রকম যাদের
পেশাব পড়া রোগ, সে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের আগে নতুন করে ওযু করে নিবে, কারণ তার
জন্য এক ওযুতে দুই ওয়াক্তের নামায হবেনা। একবার ওযু করে শুধু এক ওয়াক্তের ফরয, সুন্নত, নফল সবগুলো নামায পড়তে পারবে। কিন্তু নতুন ওয়াক্তের নামাযের জন্য নতুন করে
ওযু করে নিতে হবে।
সর্বশেষঃ উপরের লেখাগুলোতে আমি চেষ্টা করেছি এটা বুঝানোর জন্যে যে, এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে সাধ্য অনুযায়ী
চেষ্টা করতে হবে, নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু যেটা ক্ষমতার বাইরে
থাকবে,
বা যেটা করা খুব কষ্টকর হয়ে যাবে, সেই ব্যপারে আল্লাহ হচ্ছেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল। কারণ, আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন, “আর আল্লাহ বান্দাদের জন্য সহজ করতে
চান, তিনি
কঠিন করতে চান না।”
“আল্লাহ
সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা কারো উপর চাপিয়ে দেন না।”
লিখার দুর্বলতার কারণে হয়তোবা বোঝাতে পারলাম না। কারো যদি বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে আপনারা স্থানীয় কোন আলেমের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে
নিতে পারেন ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন, আমাদের দেহ ও মনকে পবিত্র
রাখুন, আমিন।
____________________________________
আমাদের দেশের প্রচলিত মসজিদগুলোর বাথরুমের পাশ দিয়ে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, না জানি কখন আপনি সভ্যতা বিরোধী এই নির্লজ্জ কাজের সম্মুখে পড়ে যান। অথচ, যে করছে সে দিব্যি এগুলো নেকীর কাজ মনে করে করে যাচ্ছে, কোনো বিকার নেই (লা হা’উলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)! যাই হোক, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই জঘন্য কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে একবারও করেন নি, এমনকি কোনো সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের কেউই করেন নি। এটা স্রেফ জাহেল (মূর্খ) মুসলমানের ফতোয়া।