"হাদীসে জিব্রাঈল" কি?
একদিন জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম সাদা ধবধবে
পোশাক পড়ে মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসেন, আগন্তুক হিসেবে। এ সময় তিনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ৪টি বিষয়ে প্রশ্ন করেনঃ ইসলাম, ইমান, ইহসান কি এবং কিয়ামত কখন হবে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন আর সাহাবারা
অবাক হয়ে শুনতে থাকেন। জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম চলে যাওয়ার পরে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে বলেন তিনি ছিলেন জিব্রাঈল, তিনি এসে প্রশ্ন করেন আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উত্তর দেন - এর রহস্য হচ্ছে এর মাধ্যমে সাহাবারাও প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে যাবেন।
ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাদীসটিকে "হাদীসে জিব্রাঈল" বলা হয়। এছাড়া
এই হাদীসে ইসলামের এতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একসাথে বর্ণিত হওয়ায় মুহাদ্দিসগণ
এটিকে “উম্মুল আসার” বা (নবীর সাথে সম্পর্কিত) নবী+সাহাবীদের সমস্ত হাদীস সমূহের
জননীও বলা হয়। এজন্য ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর সহীহ মুসলিমের এক নাম্বার
হাদীস হিসেবে এই হাদীসকে সংকলন করেছেন। আর ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর সহীহ
বুখারীর ঈমান অধ্যায়ে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। সম্পূর্ণ হাদীসটি হচ্ছেঃ
::: ইসলাম, ইমান, ইহসান ও
কিয়ামত :::
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্নিত, তিনি বলেনঃ
একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের মজলিসে হাজির হলেন।
তার পরনের পোশাক ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুল ছিল কুচকুচে কালো। তার মধ্যে সফরের
কোন আলামত দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতেও পারছিল না। তিনি এসেই
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বসলেন এবং নিজের দুই হাটু
তাঁর দুই হাটুর সাথে মিলিয়ে এবং তাঁর দুই হাত নিজের দুই উরুর উপর রেখে বললেনঃ
"হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে
বলুন।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “ইসলাম হচ্ছে তুমি সাক্ষ্য দেবে যে,
আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমজান মাসের সাওম পালন করবে
এবং হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে।”
আগন্তক বললেনঃ "আপনি ঠিক বলেছেন।"
(উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন) তাঁর এ আচরণে
আমরা বিস্মিত হলাম, তিনি নবীর কাছে প্রশ্ন করছেন আবার তাঁর জবাব তিনি নিজেই সত্যায়ন করছেন।
আগন্তুক ব্যক্তিটি আবার বললেনঃ "আমাকে
ইমান সম্পর্কে বলুন।"
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
"ইমান হল আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর আসমানী
কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভালমন্দের প্রতি তোমার বিশ্বাস স্থাপন
করা।"
আগন্তক বললেন, "আপনি সত্যই বলেছেন।"
আগন্তক ব্যক্তিটি আবার বললেনঃ "আমাকে
ইহসান সম্পর্কে বলুন।"
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
"তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত কর যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাকে
নাও দেখতে পাও তবে মনে কর যে তিনি তোমাকে দেখছেন।"
আগন্তক আবার বললেনঃ "আমাকে কিয়ামত
সম্পর্কে অবহিত করুন।"
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
"এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারীর চাইতে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি জানেন না।"
আগন্তক বললেনঃ "তাহলে আমাকে এর আলামত
সম্পর্কে বলুন।"
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
"ক্রীতদাসীরা তাদের মনিবকে প্রসব করবে এবং তুমি খালি পা ও নগ্নদেহ গরীব মেষ
রাখালদেরকে সুউচ্চ দালান কোঠা নির্মাণ করতে দেখবে এবং তা নিয়ে গর্ব করতে
দেখবে।"
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ "অতপর
আগন্তক চলে গেলেন এবং আমি অবাক হয়ে অনেকক্ষণ সেখানে কাটালাম।"
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাকে বললেনঃ "হে উমর! তুমি কি জান, প্রশ্নকারী কে"?
আমি বললামঃ "আল্লাহ ও তাঁর রাসুল-ই অধিক
জানেন।"
তিনি বললেনঃ "তিনি ছিলেন জিবরাঈল, তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার
জন্য তিনি এসেছিলেন।"
বুখারীঃ হা/৪৮, মুসলিমঃ হা/১, মিশকাতঃ ইমান
অধ্যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
১. আমরা “হাদীসে জিব্রাঈল” ও “উম্মুল আসার”
কি সেটা জানলাম।এই হাদীসে দেওয়া ইসলাম ও ঈমানের সংজ্ঞা থেকে এগুলোর রুকন বা খুঁটি
কয়টা জানতে পারলাম।
২. ইসলাম কি ও ইসলামের কয়টা রুকন বা পিলার সেটা জানতে পারলাম। ইসলামের ৫টা
রুকন (শাহাদাতাইন বা দুইটি স্বাক্ষী দেওয়া, সালাত, যাকাত, সাওম, হাজ্জ) ভালো করে
পড়ুন ও মনে রাখার চেষ্টা করুন।
৩. ঈমান কি ও ঈমানের কয়টা রুকন বা পিলার সেটা
জানতে পারলাম। ঈমানের ৬টা রুকন (আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর আসমানী
কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভালমন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা) ভালো
করে পড়ুন ও মনে রাখার চেষ্টা করুন।
৪. ইহসান কি (এমনভাবে ইবাদত করা যেন আমি
আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি, অথবা অন্তত এই ধারণা রেখে ইবাদত করা যে নিশ্চয়ই আল্লাহ
আমাকে দেখছেন) সেটা জানতে পারলাম।
৫. কেয়ামতের কিছু আলামত জানতে পারলাম।
৬. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম কখনো কখনো মানুষের বেশে ওয়াহী করতেন, সেটাও
জানতে পারলাম।
৭. ক্রীতদাসীরা তাদের মনিবকে প্রসব করবে – এই
কথার বিভিন্ন ব্যখ্যা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ওলামাদের মতে এর অর্থ হচ্ছে – ইসলাম বিভিন্ন
দিকে ছড়িয়ে পড়বে, এর ফলে অনেক কাফের মুসলিমদের দাসী হবে, যারা মুসলিমদের সন্তান
জন্ম দেবে। এইভাবে ঐ দাসীর যে সন্তানগুলো হবে এইগুলো একদিকে যেমন তাদের জন্ম দেওয়া
সন্তান অন্যদিকে তাদের মনিবের পর্যায়েও পড়ে। কারণ তারা তাদের মনিবের সন্তান।