ওযু সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনাঃ
ওযুর ফরয হচ্ছে ৬টি –
১. কুলি করা, নাকে পানি দেয়া ও নাক ঝাড়াসহ সমস্ত
মুখমন্ডল ভালোভাবে ধৌত করা।
২. কনুইসহ দুইহাত ধৌত করা।
৩. ভেজা হাতে কানসহ মাথা মাসাহ করা।
৪. টাখনুসহ দুই পা ধৌত করা।
৫. যে তারতীব বা ধারা্বাহিক নিয়ম বর্ণনা করা হলো (মুখ, হাত, পা, মাথা মাসাহ…) – এইভাবে করা, আগে বা পরে না করা।
৬. এগুলো পরপর করা অর্থাৎ একটা কাজের পরে অন্য আরেকটা কাজ
করতে এমন বিরতি না দেয়া যে আগের ধৌত করা অংগ শুকিয়ে যায়।
ফতওয়াহঃ আল্লামাহ শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বাজ (রহঃ)।
যেমনটা আল্লাহ বলেছেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নামাযের জন্য প্রস্তুত হও,
তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও দুইহাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং তোমাদের
মাথা মাসাহ করা ও দুইপা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর”। সু(সুরা
আল-মায়িদাঃ ৬
এই আয়াতের বর্ণিত কাজগুলো ছাড়া বাকি সবগুলো কাজ সুন্নত।
ওযু করার সুন্নতী পদ্ধতিঃ
১. প্রথমে পবিত্রতা অর্জনের জন্য অন্তরে নিয়ত করে নিতে হবে।
এর জন্য কোনো দুয়া পড়তে হবেনা বা মুখে কোনো কিছু বলতে হবেনা। নিয়ত অর্থ হচ্ছে কোন
কাজ করতে ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা। “আমি পবিত্রতা অর্জন করার
জন্য ওযু করছি” - অন্তরে শুধুমাত্র এই ধারণা বা ইচ্ছা
থাকলেই নিয়ত করা হয়ে যাবে। প্রত্যেক কাজের শুরুতে নিয়ত করা “ফরয”। (সহীহ বুখারীঃ ১)
নিয়ত করার জন্য নাওয়াইতু...এইরকম মুখে উচ্চারণ করে কোনো দুয়া
পড়া বেদাত, সুতরাং সেটা করা যাবেনা।
২. অতঃপর “বিসমিল্লাহ” বলে
ওযু করা শুরু করতে হবে।
আবু দাউদঃ১০১, তিরমিযীঃ ২৫।
ওযু বা গোসলের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা সুন্নত, ফরয নয়। সবসময় চেষ্টা করতে হবে বলার জন্য, তবে
শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলেও ওযু/গোসল হয়ে যাবে। আর বাথরুমে ওযু করলেও
বিসমিল্লাহ বলবে।
উল্লেখ্য, শুধু “বিসমিল্লাহ”
বলাই সুন্নত, বিসমিল্লাহ-হির রাহমানীর
রাহীম – পুরোটা নয়।
৩. ডান হাতে পানি নিয়ে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত
করতে হবে। এসময় হাতের আংগুলগুলো খিলাল করতে হবে।
আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৪০১, নাসায়ী মিশকাতঃ ৪০৫।
এসময় হাতে আংটি থাকলে রাসুলুলাহ (সাঃ) সেটা নাড়িয়ে ধৌত করতেন।
ফিকহুস সুন্নাহঃ ১/৬১।
উল্লেখ্য, হাত কব্জি পর্যন্ত না ধোয়া পর্যন্ত
ওযুর পানিতে হাত দেয়া যাবেনা। কারণ ঘুমের সময় তার হাত কোথায় ছিলো কেউ জানেনা। অথবা,
হাতে কোনো নাপাকী থাকলে ওযুর পানিও নাপাক হয়ে যাবে। এইজন্য,
কব্জি পর্যন্ত হাত না ধোয়া পর্যন্ত ওযুর পানিতে হাত দেয়া
নিষিদ্ধ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ নিদ্রা থেকে
জাগ্রত হলে সে যেন তার হাত তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত পানিতে না ঢোকায়। কেননা
তোমাদের কারো জানা নেই যে, তার হাত রাতে কোথায় পৌঁছেছিল।
(নাসাঈ)
৪. ডান হাতে এক আজলা পরিমান পানি নিয়ে অর্ধেক পানি দিয়ে কুলি
করবে আর বাকি অর্ধেক পানি নাকে দিয়ে নাক পরিষ্কার করবে ও বাম হাতে নাক ঝাড়বে।
এসময় ভালো করে কুলি করে মুখের সব অংশে এবং নাকের উপরের অংশ
পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে।
অধিকাংশ মানুষ আগে কুলি করে পরে নাকে পানি দেয় – এটা ঠিকনা। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ডান হাতে পানি নিয়ে অর্ধেক পানি দিয়ে
কুলি করতেন বাকি অর্ধেক পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করতেন, অর্থাৎ
কুলি করা ও নাক ধোয়া একই সাথে করতেন।
আবু দাউদঃ ২৩৬৬, তিরমিযীঃ ৭৮৮।
৫. কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতি পর্যন্ত ও থুতনীর নিচ
পর্যন্ত সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে।
বুখারী ও মুসলিম।
পুরুষদের মধ্যে যাদের দাড়ি ঘন তাদের ভেজা হাতে দাড়ি খিলাল
করলেই হবে। আর যাদের দাড়ি হালকা বা মুখের সাদা চামড়া দেখা গেলে পানি পৌছানো
ওয়াজিব। আর নারী বা যদের দাড়ি নেই তারা এক অঞ্জলি পানি থুতনীর নিচে দিবে, সেটাও মুখের অন্তর্ভুক্ত, তবে গলা ধৌত করবে
না।
৬. প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত কনুইসহ ধৌত করবে। হাতের
আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে অন্তত কনুই পর্যন্ত ধোয়া ওয়াজিব, তবে সতর্কতাবশত একটু বেশি অংশ ধৌত করা ভালো।
৭. মাথা মাসাহ করা
মাথা মাসাহ করা সঠিক নিয়মঃ
ইমানের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো “সালাত”
বা নামায। অথচ, আমাদের ব্যক্তিগত
উদাসীনতা, স্বল্পশিক্ষিত হুজুর আর “নূরানী নামায শিক্ষা” নামক বইয়ের ভুল শিক্ষার
কারণে সালাতে আমাদের মাঝে কত ভুল বিদ্যমান। মাথা মাসাহ করা নিয়ে আমাদের মাঝে যে
ভুল গুলো প্রচলিত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্রথম কথা হলো, মাথা মাসাহ করতে হবে
একবার, তিনবার না।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ওযুর অংগসমূহ কখনো একবার, কখনো দুইবার আবার কখনও তিনবারও ধৌত করতেন। কিন্তু মাথা মাসাহ করতেন
একবার। (দেখুন মিশকাত, হাঃ ৩৯৩-৩৯৪)
দ্বিতীয়ত, মাথা মাসাহ করার সময় ঘাড় মাসাহ করা
বেদাত। ইমাম আন-নববী (রহঃ) বলেন, “এ ব্যপারে হাদীস জাল ও
এটা করা সুন্নত নয় বেদাত।
নায়লুল আওতার ১/১৬৩ পৃষ্ঠা, মাজমু ফাতওয়া
১/৫৬, যাদুল মায়াদ ১/১৮৭।
রাসুল (সাঃ) কখনোই ঘাড় মাসাহ করতেন না, তাই ঘাড় মাসাহ করা রাসুল (সাঃ) তরীকার বিরোধী যা নিঃসন্দেহে
পরিত্যাজ্য।
তৃতীয় ভুলঃ নূরানী নামায শিক্ষা বা মকসুদুল মুমিনীন এই সমস্ত
বইয়ে একটা কথা লেখা থাকে, মাথার চার ভাগের এক ভাগ বা তিন ভাগের এক
ভাগ মাসাহ করা ফরয। এই কথার কোনো ভিত্তি নেই, বরং রাসুল
(সাঃ) সমস্ত মাথাই মাসাহ করতেন। সুতরাং সমস্ত মাথা মাসাহ করাই ফরয।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যেভাবে মাথা মাসাহ করতেনঃ
তিনি (সাঃ) দুই হাতের ভেজা আংগুল দিয়ে মাথার সামনে হতে পেছনে
ও পুনরায় পেছন থেকে সামনে বুলিয়ে পুরো মাথা একবার মাসাহ করতেন। একই সাথে ভেজা
শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতর অংশ এবং বুড়ো আংগুল দিয়ে কানের বাইরের অংশ মাসাহ
করতেন।
মাথায় পাগড়ি/স্কার্ফ থাকলে পাগড়ির উপরে ভেজা হাত দিয়ে সমস্ত
মাথা মাসাহ করে নিতে হবে।
৮. প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাখনুসহ ভালোভাবে ধৌত করতে
হবে। বাম হাতের আংগুলগুলো দিয়ে পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে হবে। এসময় খেয়াল রাখতে
হবে, পুরো পা যেনো ভালোভাবে ধৌত করা হয়, অনেকের
পায়ের গিটের নিচে পুরো অংশ পানি দিয়ে ধৌত করা হয়না। এরকম করলে জাহান্নামে যেতে হবে,
কারণ এই কারণে ওযু হয়না।
শীতকালে বা সফরে ওযু থাকা অবস্থায় মোজা পড়লে মোজা খুলে পা ধৌত
করতে হবেনা, মোজার উপরে একবার মাসাহ করলেই হবে। আর চামড়া বা কাপড়
যেকোনো মোজাতেই মাসাহ করা যাবে (তিরমিযী)।
মাসাহ করার নিয়মঃ দুই হাতে ভেজা আঙ্গুল পায়ের পাতা হতে টাখনু
পর্যন্ত টেনে এনে একবার মাসাহ করতে হবে।
মুসলিম, মিশকাত ৫১৮।
ডান হাত দিয়ে ডান পা ও বাম হাত দিয়ে বাম পা মাসাহ করতে হবে।
ওযু এখানেই সমাপ্ত। ওযুর পরে সুন্নত হচ্ছেঃ
১. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওযু শেষে একটু পানি নিয়ে লজ্জাস্থান
বরাবর ও আশেপাশের কাপড়ে পানি ছিটিয়ে দিতেন।
আবু দাউদ, নাসায়ী, মিশকাত
৩৬১, সহীহঃ আলবানী।
কারণ, শয়তান মানুষকে ওয়াসওয়াসা দেয় যে, তোমার পেশাবের ফোঁটা বের হয়েছে। এই কাজ করলে এই ওয়াসওয়াসা দূর হবে।
২. ওযু শেষ করে কালিমা শাহাদাত একবার পড়তে হবে,
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَـهَ
إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ
وَرَسُوْلُهُ.
উচ্চারণঃ আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা
শারিকা-লাহু ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর
কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর
কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ
(সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন “যে ব্যক্তি
পূর্ণভাবে ওযু করবে এবং কালিমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার
জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে”।
মুসলিম ১/২০৯, মিশকাতঃ ২৮৯।
এসময় আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই, এ সম্পর্কিত হাদীস মুনকার বা যঈফ।
শায়খ আলবানী, ইরোয়াউল গালীল ১/১৩৫।
৩. এছাড়া আরো একটি দুয়া পড়া যায়, যেমন –
اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ
مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ.
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজ আ’লনী মিনাত তাওয়্যাবীনা
ওয়াজ আ’লনী মিনাল মুতা-ত্বাহহিরীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তওবাকারী ও
পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো।
তিরমিযী ১/৭৯।
৪. ওযুর পরে ২ রাকাত নামায পড়া। এই নামায নফল, তবে এর অনেক মর্যাদা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার দেখানো এই
পদ্ধতিতে ওযু করে মনের মধ্যে অন্য কোনো চিন্তা করা ছাড়া ২ রাকাত নামায পড়ে, ঐ ব্যক্তির আগের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারীঃ ১৫৯)
মুসলিম অন্য হাদীসে বর্ণনা করেছেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (মুসলিমঃ ২২৬)
উল্লেখ্যঃ এইখানে সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ও জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে যাবে এর জন্য শর্ত হলো নামাযে নামায ছাড়া অন্য কোনো কিছু চিন্তা করা যাবেনা।
তাই এই নামাযের পূর্ণ ফযীলত পেতে হলে সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ওযুর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
### ওযুর জায়গা নখ পরিমান শুকনো থাকলে ওযু হবেনা।
সহীহ তিরমিযী ৪১।
এইজন্য আস্তে ধীরে মনোযোগের সহিত সুন্দর করে ওযু করতে হবে।
তাড়াহুড়া করে অন্য চিন্তা মাথায় নিয়ে ওযু করা অনুচিত, কারণ এতে যদি ওযু না হয় তাহলে নামাযই কবুল হবেনা! তাই আমাদের উচিত ওযু
করার সময় খেয়াল রাখা।
১. ওযুর অংগগুলো একবার, দুই বার বা তিনবার ধৌত
করতে হবে। একবার করা ফরয, সর্বোচ্চ তিনবার করা উত্তম। তবে
মাথা মাসাহ বা পায়ে মোজা থাকলে পা মাসাহ একবারই করতে হবে। তিনবারের বেশি করা
বাড়াবাড়ি – হাদীসে এই কাজের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত ৩৯৫- ৩৯৭।
২. পানি অপচয় করা যাবেনা। টেপ ছেড়ে ওযু করা পানি অপচয়ের মধ্যে
পড়বে। উচিত হচ্ছে মগে বা কোনো পাত্রে পানি নিয়ে ওযু করা। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওযু
করতেন এক মুদ বা ৬২৫ গ্রাম পানি দিয়ে (প্রায় পৌনে এক লিটার).
বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত ৪৩৯।
৩. ওযু শেষে ভেজা অংগ গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলা জায়েজ
রয়েছে।
ইবনে মাজাহ ৪৬৫, ৪৬৮।
৪. এক ওযু দিয়ে পরের ওয়াক্তের নামায পড়া জায়েজ – তবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সবসময় নতুন করে ওযু করে নিতেন। মক্কা বিজয়ের দিন
তিনি একবার এক ওযু দিয়ে দুই ওয়াক্তের নামায পড়েছিলেন।
৫. কাপড়ের মোজার উপরে মাসাহ করা জায়েজ। তিরমিযীতে এর পক্ষে
সহীহ হাদীস রয়েছে। যারা বলে শুধু চামড়ার মোজার উপরে মাসাহ করা যাবে তারা ভুল বলেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামগণ (রাঃ) খুফ (চামড়ার
মোজা) ও জাওরাবের (সুতী বা পশমী মোটা মোজার) উপরে মাসাহ করতেন।
বুখারী, মুসলিম, আবু
দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত ৫৩-৫৪।
মুকীম বা গৃহে অবস্থান করলে একদিন একরাত (২৪ঘন্টা) সফরে
তিনিদিন ও তিনরাতে পর্যন্ত একবার মোজা পড়ে মাসাহ করে যাবে, এর পরে ওযু করলে মোজা খুলে ধৌত করতে হবে।
## এমন জুতা যা টাখনু ঢাকে সেটা যদি পাক থাকে আর ওযু করা
অবস্থায় পড়া হয়, তাহলে তার উপরেও মাসাহ করা জায়েজ।
আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত
৫২৩।
জুতার নিচে নাপাকী থাকলে তা মাটিতে ভালোভাবে ঘষে নিলে পাক হয়ে
যাবে এবং ঐ জুতার উপরে মাসাহ করা চলবে।
আবু দাউদ, মিশকাত ৫০৩।
৬. শরীরে কোনো জখম বা ব্যান্ডেজ থাকলে ঐ অংশটুকুর উপরে ভেজা
হাতে একবার মাসাহ করলেই হবে, ধৌত করতে হবেনা।
সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ
১/১৬১।
৭. ওযুর শুরুতে প্রয়োজনীয় কথা বলতে ও সালাম দিতে বা নিতে
হাদীসে কোনো নিষেধ নেই।
৮. প্রত্যেক অংগ ধোঁয়ার সময় আলাদা আলাদ দুয়া – এইগুলো বেদাত। এইগুলো না রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পড়েছেন, না সাহাবার করেছেন না চার ইমাম থেকে কোনো বক্তব্য আছে। যাদুল মায়াদ
১/৮৮।
৯. শরীরের যেকোনো স্থান থেকে কম হোক আর বেশি হোক রক্ত বের হলে
ওযু নষ্ট হবেনা।
বুখারী, ২৯ পৃষ্ঠা।
১০. কাপড় চেঞ্জ করলে বা হাটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে ওযু ভেঙ্গে
যায়না।
১১. বমি হলে, নামাযের ভেতরে বা বাইরে উচ্চস্বরে
হাসলে, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলে বা বহন করলে ওযু ভেঙ্গে
যায়না।
আরো কিছু কারণ যেই কারণে ওযু ভংগ হয়নাঃ
ওযু সম্পর্কে মাসয়া'লাঃ
১) আয়নাতে নিজের চেহারা দেখলে ওযু ভাংবেনা।
২) হাটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে বা কাপড় চেঞ্জ করলে ওযু ভাংবেনা।
৩) বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালে ওযু ভাংবেনা।
৪) নারীরা মাথায় কাপড় না দিয়েও ওযু করতে পারবে, তবে পরপুরুষের সামনে হলে ঢেকে রাখতে হবে।
৫) টিভি দেখলে বা নারীরা পরপুরুষকে বা পরুপুরুষ নারীকে দেখলে
ওযু ভাংবেনা। তবে হারাম কোনো কিছু দেখলে বা দৃষ্টিপাত হয়ে থাকলে অবশ্যই গুনাহ হবে, কিন্তু এতে ওযু ভাংবেনা।
***উপরের একটাও ওযু ভংগের কারণ নয়।
ওযু নষ্টের কারণগুলো কি কি?
এ সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ওযু নষ্টের কারণ
হিসেবে দলীলের ভিত্তিতে যা প্রমাণিত হবে, আমরা সেটাই এখানে আলোচনা
করব। ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ
পেশাব-পায়খানাররাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়া। চাই তা পেশাব, পায়খানা, বীর্য, বায়ু
বা মযী বা অন্যকিছু হোক- বের হলেই তা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে
প্রশ্নের কোন অবকাশনেই। কিন্তু বীর্য যদি উত্তেজনার সাথে বের হয়, তবে সকলের জানা যে, তখন গোসল ওয়াজিবহবে।
কিন্তু মযী বের হলে অন্ডকোষসহ পুরুষাঙ্গ ধৌত করে শুধু ওযু করলেই চলবে।
দ্বিতীয়তঃ নিদ্রা যদি
এমন অধিক পরিমাণে হয়, যাতে ওযু ভঙ্গ হয়েছে কিনা অনুভুতি না থাকে,
তবে তা ওযু ভঙ্গেরকারণ। কিন্তু নিদ্রা অল্প পরিমাণে হলে ওযু ভঙ্গ
হবে না। কেননা এ অবস্থায় ওযু ভঙ্গ হলেসাধারণতঃ অনুভব করা যায়। চাই চিৎ হয়ে শুয়ে
নিদ্রা যাক বা হেলান ছাড়া বসে বা হেলান দিয়ে বসে নিদ্রাযাক। মোট কথা অন্তরের
অনুভুতি উপস্থিত থাকা। কিন্তু যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাতেকোন কিছু বুঝতে পারে না, তবে ওযু করা
ওয়াজিব। কারণ হচ্ছে, নিদ্রা মূলতঃ ওযু ভঙ্গেরকারণ নয়;
বরং এ সময় ওযু ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। অতএব অনুভুতি থাকাবস্থায়
যেহেতু ওযুভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই নিদ্রা এলেই ওযু
ভঙ্গ হবে না। নিদ্রা যে মূলতঃ ওযু ভঙ্গেরকারণ নয় তার দলীল হচ্ছে, অল্প নিদ্রাতে ওযু ভঙ্গ হয় না। নিদ্রা গেলেই যদি ওযু ভঙ্গহত, তবে নিদ্রা অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হওয়ার কথা। যেমনটি পেশাব অল্প
হোক বেশীহোক ওযু ভঙ্গ হবে।
তৃতীয়তঃ উটের গোশত ভক্ষণ করা। উটের গোসত রান্না করে হোক, কাঁচা হোক খেলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননাজাবের বিন সামুরা (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা কি ছাগলের গোশত খেয়ে ওযু
করব? তিনি বললেন, যদি ইচ্ছা হয়
তাহলেকরতে পার (না করলেও চলবে)।. বলা হল, আমরা উটের গোশত
খেয়ে কি ওযু করব? তিনি বললেন,“হ্যাঁ”।. নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ছগালের গোশতখেয়ে ওযু
করার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছাধীন রেখেছেন, তখন বুঝা যায় উটের
গোস্ত খেয়েওযুর ব্যাপারে মানুষের কোন ইচ্ছা স্বাধীনতা নেই। অবশ্যই ওযু করতে হবে।
অতএব উটের গোস্তকাঁচা হোক বা পাকানো হোক কোন পার্থক্য নেই, গোস্ত লাল বর্ণ হোক বা অন্য বর্ণ খেলেইওযু ভঙ্গ হবে। উটের নাড়ী-ভুঁড়ি,
কলিজা, হৃতপিন্ড, চর্বি, মোটকথা উটের যে কোন অংশ ভক্ষণকরলে ওযু
ভঙ্গ হবে।
ওযুর উপরে শায়খ সাইফুদ্দিন বেলাল এর ছোট্ট এই লেকচারটি খুবই
সুন্দর ও উপকারী।