শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০১৪

তাওহীদ কি? তাওহীদ কত প্রকার??




তাওহীদ কি?
তাওহীদ শব্দের আভিধানিক অর্থঃ
কোনো কিছুকে এক করা, একক ও অদ্বিতীয় সাব্যস্ত করা, একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা।
শরীয়তের পরিভাষায়ঃ
তাওহীদ শব্দের অর্থ হলো - আল্লাহ সুবহানাহু তাআলাকে তাঁর সুমহান জাত (সত্ত্বা), আসমা বা সর্বসুন্দর নাম ও সিফাতে (গুণরাজি ও বৈশিষ্টে), এবং তাঁর অধিকার, কর্ম ও কর্তৃত্বে এক, একক ও অদ্বিতীয় ষোষণা ও সাব্যস্ত করা, এবং এসব ক্ষেত্রে নিজের কথা, কাজ ও বিশ্বাসের দ্বারা আল্লাহর একত্বকে অক্ষুন্ন রাখা।

তাওহীদ কত প্রকার?
তাওহীদ ৩ প্রকারঃ
১. তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ,
২. তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ,
৩. তাওহীদুল আসমা ওয়াস-সিফাত।

১. তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহঃ
রুবুবিয়্যাহ বা প্রভুত্বের ক্ষেত্রে তাওহীদ...
আর তা হলোঃ নিজের কথা, কাজ ও বিশ্বাসের দ্বারা আল্লাহ্ তাআলাকে তাঁর যাবতীয় কর্ম ও কর্তৃত্বে এক ও অদ্বিতীয় তথা লা-শরীক (অংশীদারহীন) সাব্যস্ত করা। তাওহীদের এই পর্যায়ের মূলত যে কাজগুলো রব্ব বা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক হিসেবে একমাত্র আল্লাহ তাআ’লাই করে থাকেন, সেই কাজগুলোতে এক আল্লাহকেই বিশ্বাস করাকে বোঝায়। এর উদাহরণ হলো, রিযিকদাতা, সন্তানদাতা, ভাগ্যের ভালো-মন্দের মালিক, বিপদে উদ্ধার করার মালিক, পৃথিবীর নিয়ন্ত্রনকারী, এইরকম যেই কাজগুলো রব্ব হিসেবে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই করে থাকেন সেইগুলোতে আল্লাহকে এক ও একক সত্ত্বা হিসেবে বিশ্বাস করা, এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা।
সহজ করে বলা যেতে পারে, “তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ” হচ্ছে আল্লাহর কাজের ক্ষেত্রে (আরবীতে যাকে রুবুবিয়্যাহ বলা হয়) – সেইগুলোতে এক আল্লাহকেই বিশ্বাস করা, এবং এই কাজ অন্য কেউ করে বা তাঁর সাথে অন্য কেউ শরীক (অংশীদার) বা সাহায্যকারী আছে এই ধারণ বা বিশ্বাস অন্তরে না রাখা।

২. তাওহীদুল উলুহিয়্যাহঃ
ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহীদ...
অর্থাতঃ বান্দার ইবাদতে ইবাদতে আল্লাহ্ তাআলার তাওহীদকে অক্ষুন্ন রাখা। অন্য কথায়, ইবাদতে আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
যেমন নামায রোযা, হজ্জ, যাকাত শুধু মাত্র এক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা, পিতামাতা, পীরের বা অন্য যেকারো সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য না করা অথবা শুধুমাত্র দুনিয়াবি কোনো কিছু পাওয়ার জন্য (যেমন কেউ কুরআন শিক্ষা দিলো শুধু বেতন পাওয়ার লোভে, আল্লাহকে সন্তুষ্টির জন্যে নয়) বা অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করতে না চাওয়া। যেমন অনেকে বেনামাযি শ্বশুর বাড়িতে গেলে লোক দেখানো নামায পড়ে, নির্বাচন আসলে মন্ত্রী এমপিরা ভোট পাওয়ার জন্য বা সুনাম কুড়ানোর জন্য হজ্জ উমরা করে, টুপি পাঞ্জাবী বা হেজাব পর্দা করে ধার্মিক সাজার চেষ্টা করে। এই সবগুলো কাজ তাওহীদে উলুহিয়্যাহর দিক থেকে বড় শিরকের পর্যায়ে পড়ে। কারণ সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য ইবাদত করছে।
সহজ করে বলা যেতে পারে, “তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ” হচ্ছে বান্দার যেই কাজগুলো শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত (আরবীতে যাকে ইবাদত বলা হয়, যার জন্য ইবাদত করা হয় তাকে “ইলাহ” বলা হয়) – সেইগুলো এক আল্লাহর জন্যই করা, এর বিনিময়ে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিই কামনা করা এবং এই কাজগুলোর উদ্দেশ্যের মাঝে অন্য কারো সন্তুষ্টিকে শরীক (অংশীদার) না করা।

৩. তাওহীদুল আসমা ওয়াস-সিফাত
অর্থাত, আল্লাহ্ তাআলাকে তাঁর আসমা (সুন্দরতম সমূহ নাম) ও সিফাত (গুণাবলীতে) এক ও অদ্বিতীয় সাব্যস্ত করা, এই আসমা ও সিফাতগুলোতে কাউকে শরীক না করা।
অন্য কথায়, আল্লাহর সুমহান নাম ও গুণাবলীতে আল্লাহ্ তাআলার একত্ব অক্ষুন্ন রাখা।
সাব্যস্ত করার’’ অর্থ হলোঃ নিজের আক্বীদাহ-বিশ্বাসে, কথা-বার্তায় ও কাজে-কর্মে আল্লাহর একত্ববাদ প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করা।

যেমন আল্লাহ তাআআলার একটা সিফাত হচ্ছে তিনি আ’লেমুল গায়েব” –সুতরাং অন্য কেউ গায়েব জানে, এই আকীদা না রাখা।