মুমিন
ও কাফের ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে নামায...
আমাদের
দেশের বেশিরভাগ মানুষ নামাযের বিষয়টাকে হালকা করে দেখে।
ছেলে/মেয়ে
পরীক্ষায় ফেইল করলে তারা কষ্ট পায়, সামান্য অসুস্থ হলে তারা কষ্ট পায় - কিন্তু
বছরের পর বছর ধরে ছেলে মেয়ে বেনামাযী হয়ে থাকে - কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এরা
দ্বীনকে ধ্বংস করেছে...
অথচ
কবরে প্রথম প্রশ্নই করা হবে দ্বীনের ব্যপারে।
আমি
সকলকেই সতর্ক করছি...
যে
নামায পড়েনা - কুরআন, হাদীস অনুযায়ী সে মুসলিম নয় – সে কাফের।
হয়তো
কথাটা শুনতে অনেকের কাছে Harsh/কঠোর মনে হতে পারে, কিন্তু
এটাই সত্যি।
পাকিস্থান
ভারত, বাংলাদেশের অজ্ঞ মুসলিম সমাজে কথাটা নতুন/কঠোর/Extreme ইত্যাদি
মনে হতে পারে। কিন্তু ইসলামের মূল মক্কা ও মদীনাতে বড় বড়
আলেমরাতো দূরের কথা, এমনকি সাধারণ মানুষেরাও একবাক্যে স্বীকার করে, বেনামাযি
মুসলিম হতে পারেনা।
মনে
রাখবেন...
আপনার
৩ বেলা খাবার খাওয়ার চেয়ে ৫ওয়াক্ত নামায পড়া আপনার জন্য বেশি জরুরী। আপনাকে
সৃষ্টিই করা হয়েছে একটা মাত্র উদ্দেশ্যে...
“আমি
মানুষ ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।”
সুরা
আয-যারিয়াত।
জাহান্নামের
শাস্তি কোনো কৌতুক বা হাসি ঠাট্টার বিষয় নাহ!!
***১৭
রাকাত ফরয নামায না পড়ার শাস্তিঃ
একবার
এক স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে কয়েকটি পাপের শাস্তি দেখানো হয়। উল্লেখ্য, নবী-রাসুলদের
সব স্বপ্ন ওহী, অর্থাত আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য স্বপ্নঃ
একদিন
সকালে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ "আজ রাতে আমার কাছে দুইজন আগন্তুক এসেছিল।
তারা আমাকে বললো, আমাদের সাথে চলুন। আমি তাদের সাথে গেলাম।
আমরা এমন এক লোকের কাছে পৌঁছলাম, যে চিত হয়ে শুয়ে ছিলো। অপর এক ব্যক্তি পাথর
নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে শুয়ে থাকা ব্যক্তির মাথায় আঘাত
করছে এবং থেঁতলে দিচ্ছে। যখন সে পাথর নিক্ষেপ করছে তা গড়িয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
লোকটি গিয়ে পাথরটি পুনরায় তুলে নিচ্ছে। এবং তা নিয়ে ফিরে আসার সাথে সাথেই
লোকটির মাথা পুনরায় পূর্বের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। সে আবার লোকটির কাছে ফিরে আসছে
এবং তাকে পূর্বের মতো শাস্তি দিচ্ছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আমি
আমার সংগী দুইজনকে জিজ্ঞাস করলামঃ সুবহা’ন-আল্লাহ!
এরা কারা? তারা পরবর্তীতে উত্তর দেন, সে
হচ্ছে এমন ব্যক্তি যারা কুরান মুখস্থ করে তা পরিত্যাগ করে এবং ফরয নামায না পড়েই
ঘুমিয়ে পড়ে”।
সহীহ
বুখারী, রিয়াদুস সালেহীনঃ ১৫৪৬।
নাউযুবিল্লাহি
মিন যালিক, হে আল্লাহ আমাদের অতীতের ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করো এবং ভবিষ্যতে
সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তোওফিক দান করো, আমীন।
নামায
ত্যাগকারী কাফের তার দলীল সমুহঃ ---
প্রথমতঃ
পবিত্র কুরআন হতে...
মহান
আল্লাহ তাআ’লা সুরা তাওবায় এরশাদ করেছেনঃ
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ
وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ
“অবশ্য
তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তাহলে
তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।” (সুরা আত-তাওবাঃ ১১)
এবং
সুরা মারিয়মে মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ
أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ ۖ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ
غَيًّا / إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ
وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ شَيْئًا
“অতঃপর
তাদের পরে এল কিছু অপদার্থ শ্রেণীর লোক। তারা নামাযকে ধ্বংস করল এবং কুপ্রবৃত্তির
অনুসারী হল। তারা অচিরেই তাদের পথভ্রষ্টতার ফল ভোগ করবে। কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা
তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎ আমল করেছে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন জুলুম করা হবে
না। (সুরা মারিযামঃ ৫৯-৬০)।
দ্বিতীয়
আয়াতে যা সুরা মারইয়ামে থেকে উল্লেখিত, তা নামাজ ত্যাগকারীর কুফরী এই ভাবে প্রমান
করে যে আল্লাহ পাক নামায বিনষ্টকারী ও মনের লালসা বাসনার অনুসরণ কারীদের সম্বন্ধে
বলেনঃ
إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ
অর্থাৎ “কিন্তু যারা তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে” – একথা থেকে বোঝা যায় যে, তারা নামাজ বিনষ্ট করার সময়কালে ও লালসা বাসনার অনুসরন কালে ঈমানদার ছিলনা। প্রথম আয়াত যা সুরা তাওবা থেকে উদ্ধৃত যা নামায ত্যাগ
কারীর কুফরী এইভাবে প্রকট করে যে মহান আল্লাহ মুশরেকদের ও আমাদের মাঝে শর্তারোপ
করেছেন।
১.
যেন তার শির্ক হতে তাওবা করে।
২.
যেন তারা নামায প্রতিষ্ঠিত করে।
৩. আর
যেন যাকাত প্রদান করে।
তত্পর
তারা যদি শির্ক হতে তাওবা করে কিন্তু নামায কায়েম না করে ও যাকাত প্রদান না করে
তবে তারা আমাদের ভাই নয়। আর যদি তারা নামায কায়েম করে কিন্তু যাকাত না দেয় তবুও
তারা আমাদের ভাই হতে পারে না। আর দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব তখনই পুরোপুরিভাবে লোপ পায়,
যখন মানুষ দ্বীন থেকে সম্পূর্নরূপে বহিস্কৃত হয়।
দ্বিতীয়তঃ
হাদীস হতে দলীল…
১.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
ان بين الرجل وبين الشرك و الكفر ترك
الصلاة
“নিশ্চয়
মানুষ ও শির্ক ও কুফুরীর মাঝে পার্থক্যকারী বিষয় হচ্ছে নামায ত্যাগ করা।”
হাদীসটি
ইমাম মুসলিম ঈমানের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
২. নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেনঃ
العهد الذى بيننا وبينهم الصلاة فمن
تركها فقد نفر
“আমাদের
ও তাদের (কাফের/মুশরিকদের) মাঝে প্রথম চুক্তি হচ্ছে নামায। অতএব, যে ব্যক্তি নামায
ত্যাগ করল সে কুফরী করল।”
হাদীসটি
ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী
ও ইবনে মাজাহ বর্ননা করেছেন।
***এখানে
কুফরীর অর্থ হলো, এমন কুফরী যা মানুষকে মিল্লাতে ইসলামী থেকে
বহিস্কার করে দেয়। কারন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযকে মু'মিন
ও কাফেরদের মাঝে পার্থক্যকারী বলে ঘোষনা করেছেন।
***একটি
সংশয় এর জবাব...।
অনেকে
বলে, কেউ নামায পড়তে অস্বীকার করলে কাফের হবে, অলসতা করে না পড়লে কাফের হবেনা...??
এই
কথার কোনো দলীল নেই...
কারণ
কুরান-হাদীসের যত জায়গায় বলা হয়েছে, নামায না পড়লে সে কাফের হয়ে যাবে সব জায়গায়
বলা “নামায তরক” করলে অর্থাৎ নামায ছেড়ে দিলে (ইচ্ছাকৃতভাবে/অলসতা করে)।
এইকথা
কোথাও বলা হয়নি যে যে নামায অলসতা করে পড়েনা, কিন্তু নামায পড়া ফরয স্বীকার করলেই
সে ঈমানদার হয়ে যাবে।
সুতরাং,
যে বলে নামায না পড়লে ফাসেক কিন্তু কাফের নয় – শুধুমাত্র তখনই কাফের হবে যখন সে
নামায পড়া ফরয এই কথাকে অস্বীকার করে – এটা আসলে তার নিজের মনগড়া ব্যখ্যা।
এই
হাদীস থেকে বিষয়টি আরো স্পষ্ট...
ইবনে
আবী হাতিম স্বীয় সুনান গ্রন্থে (একটি হাদীসের কিতাব) উবাদা বিন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন। তিনি
বলেন, রাসুল (সাঃ) আমাদিগকে উপদেশ দিয়েছেনঃ "সাবধান! তোমরা
আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করোনা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ কর না। কারণ, যে
ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায পরিত্যাগ করে, সে
ইসলাম থেকে বহিস্কার হয়ে যায়। "
নামায
ত্যাগকারী কাফের এই ব্যপারে সাহাবাদের মতামত...
ইমাম
ইবনুল কাইইয়যিম রাহিমাহুল্লাহ নিজ কিতাবে (আস সালাত) এ এইকথা উল্লেখ করেছেন যে,
"এটা
হচ্ছে ইমাম শাফেয়ীর দুটি মতের অন্যতম, এবং ইমাম তাহাভী স্বয়ং ইমাম শাফেয়ী হতে নকল
করেছেন। আর এই উক্তির ভিত্তিতেই অধিকাংশ সাহাবাগন একমত হয়েছেন এবং অনেকে এই
ব্যাপারে সাহাবাগণের ইজমা (ঐক্যমত) এর কথা উল্লেখ করেছেন, তাঁদের
(সাহাবাদের) সকলের মতে, <<<নামাজ ত্যাগকারী কাফের >>>।
বিশিষ্ট
তাবেয়ী আব্দুল্লাহ বিন সাকিক রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"নবী সাহাবাগণ নামায ব্যতীত অন্য কোন আমল ত্যাগ
করাকে কুফুরী বলে মনে করতেন না।
(অর্থাৎ, সাহাবীরা
শুধু নামায পরিত্যাগ করাকেই কুফুরী মনে করতেন। অন্য কোনো কিছু যেমন- যাকাত, পরিত্যাগ
করাকে কুফুরী বলে মনে করতেন না।)
তিরমিযী
ও আল হাকেম। বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী আল হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
প্রখ্যাত
ইমাম ইসহাক বিন রাহবিয়া বলেনঃ
নবী
হতে বিশুদ্ধ সুত্রে বর্ণিত হয়েছে যে নামায ত্যাগকারী কাফের। আর এটাই হচ্ছে
নবী এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত আলেমগণের মত
যে,
ইচ্ছাকৃতভাবে
নামায ত্যাগকারী কোন কারণ ব্যতীত নামায ওয়াক্ত অতিক্রম করে দিলে সে কাফের।
ইমাম
ইবনে হাযম উল্লেখ করেন যে, (নামায ত্যাগকারী কাফের) একথা উমর ফারুক, আব্দুর
রহমান ইবনে আউফ, মুয়ায বিন জবাল, আবু হুরায়রা প্রমূখ সাহাবাগণ হতে বর্ণিত
হয়েছে। অতঃপর বলেন আমরা উপরোক্ত সাহাবা কেরামগণের মধ্যে কোন মতবিরোধ পাইনি। (একথা
আল্লামা মুনযেরী স্বীয় কিতাব তারগীব ও তারহীবে নকল করেছেন)।
তিনি
আরও কতিপয় সাহাবাগনের নাম উল্লেখ করেন । যেমন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ,আব্দুল্লাহ
বিন আব্বাস,জাবির বিন আব্দুল্লাহ এবং আবু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)।
নামায
ত্যাগকারী কাফের এই ব্যপারে অতীত যুগের ইমামদের মতামত...
উপরোক্ত
সাহাবাগন ব্যতীত অন্য আলেমদেরদের মধ্যে হলেনঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক
বিন রাহওবিয়াহ, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, ইব্রাহীম
নাখয়ী, হাকাম বিন ওতায়রা, আইউব সুখশায়রা, যোহাইরা
বিন হারব প্রমূখ।
যদি
কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করে যে, সে সব দলীল সমূহের কি জবাব দেয়া যাবে? যা
সেই দলের লোকেরা পেশ করে থাকে যাদের মত এই যে, নামায
ত্যাগকারী কাফের নয় । তার উত্তরে আমরা বলব যে (তারা যেসব দলীল পেশ করে থাকে) তাতে
কোথাও একথা নেই যে নামায ত্যাগকারী কাফের হয় না, অথবা
সে মু'মিন হয়ে থাকবে অথবা সে জাহান্নামে যাবে না কিংবা সে জান্নাত লাভ
করবে ,অথবা অনুরূপ কিছু ।
আর
যে ব্যক্তি এসব দলিলসমূহ গভীর ভাবে চিন্তা ও গবেষণা করবে সে সমস্ত দলীল সমূহ কে
পাঁচ ধরনের পাবে, তন্মধ্যে কোন একটিও সে সব দলীল ও প্রমাণের
পরপন্থী নয় যা প্রমাণ করে যে নামায ত্যাগকারী হচ্ছে কাফের ।
আল্লামাহ,
শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিনের বই “নামায ত্যাগকারীর বিধান” থেকে সংক্ষেপিত।
মূল বইয়ের লিংক –