শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০১৪

দুটি বেদাতঃ “ওমরী কাজা” ও “টাকা দিয়ে নামাযের কাফফারা”



দুটি বেদাতঃ ওমরী কাজাটাকা দিয়ে নামাযের কাফফারা দেওয়া
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা জীবনের কোনো এক সময় সাবালক/সাবালিকা হওয়ার পরেও বেনামাযী ছিলেন। আল্লাহ যখন এই কুফুরী থেকে তাদেরকে হেদায়েত করেন, নামায পড়ার মতো যথেষ্ঠ বুঝ দান করেন, শয়তান তখন তাদেরকে পুনরায় বেনামাযী বানানোর চেষ্টা করে। এই চেষ্টা বিভিন্ন সুরত আছে, যেমন ধর্মীয় ও অধর্মীয়। ধর্মের বাইরে বিভিন্নভাবে যেমন গান-বাজনা, খেলা-ধূলা, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে দেওয়া, নামায পড়তে যে ধৈর্য ধরতে হয়, বিভিন্ন ওসওয়াসা দিয়ে অধৈর্য করে দেওয়া এইগুলোচ্ছে অধর্মীয় উপায়ে শয়তানের মানুষকে বেনামাযী বানানোর চেষ্টা। আর ধর্মীয় উপায়ে হলো, মসজিদে গেলে মূর্খরা হাসি ঠাট্টা করবে, খাটো নজরে দেখবে, আর বেনামাযী যারা ওরা বলবে বড় হুজুর হয়েছো! মৌলবাদী, জংগি হয়েছো নাকি? ইত্যাদি উল্টা-পাল্টা কথা বলে মনে কষ্ট দিবে।
আরেকটা পদ্ধতি হচ্ছে নামাযকে কঠিন বোঝা বানিয়ে দেওয়া, আমাদের দেশের নামধারী মুফতিদের ভ্রান্ত ফতোয়া, উমরী কাজার সিস্টেম দিয়ে। উমরী কাজা হচ্ছে, সাবালক হওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে তার যে নামাযগুলো মিস হয়েছে, সেগুলো পড়তে বলা। আর এরজন্যে তারা একটা নিয়ম বানিয়েছে, প্রত্যেক ওয়াক্তের সাথে এক ওয়াক্ত অতিরিক্ত নামায পড়ার জন্য, অর্থাত যোহরে চার ওয়াক্ত ফরয পড়ে সে আরো চার রাকাত ফরয পড়বে অতীতের কাযা হিসেবে ৪ রাকাত ফরযের জায়গায় ৮ রাকাত ফরয বানিয়ে দিয়েছে, এভাবে সে যতবছর নামায কাযা করেছে তত বছর কন্টিনিউ করবে।
এইরকম ওমরী কাজা নামায কুরআন হাদীসের কোথাও বলা নাই।
হাদীস অনুযায়ী কোন নিয়মিত নামাযী ব্যক্তির এক ওয়াক্ত, দুই ওয়াক্ত এভাবে সর্বোচ্চ পাঁচ ওয়াক্ত নামায যদি অনিচ্ছায় ছুটে যায় তাহলে তার জন্যে কাযা নামায আদায় করার দলীল পাওয়া যায়। কিন্তু যে একেবারেই বেনামাযী ছিলো দিনের পর দিন ধরে, তার জন্যেওমরী কাজা নামায পড়ার কোন দলিল নেই। অর্থাৎ, অনিচ্ছাকৃতভাবে নামায ছুটে গেলে তার জন্যে কাজা পড়তে হয়, কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ছেড়ে দেয়, সে কুফুরী কাজ করে। তার জন্যে ওয়াজিব হচ্ছে কুফুরী কাজ থেকে আন্তরিক তোওবা করে নিয়মিত নামায আদায় করা। কিন্তু ওমরী কাজা নামাযতো দূরের কথা, এই শব্দটাই কুর হাদীসের কোথায় নাই
যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে নামায ছেড়ে দেয় তার মান থাকেনা (আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)। যার ইমান থাকেনা তার আবার নামায কি? অতএব, যে অতীতে এইরকম নামায ছেড়েছে, সে লজ্জিত হয়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তোওবা করবে, ভবিষ্যতে আর করবেনা এমন প্রতিজ্ঞা করবে, এটাই হচ্ছে তার নামায ছাড়ার জন্য করণীয় কাজ। আর ফরয নামাযের পাশাপাশি চেষ্টা করবেন, নিয়মিত নফল/সুন্নত নামায বেশি করে আদায় করার জন্য। কারণ, কিয়ামতের দিন যার ফরয নামাযে ত্রুটি না কম হবে, নফল নামাযগুলো দিয়ে তার ফরযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষের আমলসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম তাদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের মহান রব ফেরেশতাদের বান্দার নামায সম্পর্কে স্বয়ং জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও জিজ্ঞাসা করবেনঃ তোমরা দেখোতো, সে ফরয নামাযগুলো পূর্ণরূপে আদায় করেছে, নাকি তার মাঝে কোন ক্রটি আছে? অতঃপর বান্দার নামায পরিপূর্ণ হলে তা তদ্রুপই লেখা হবে। আর যদি তাতে কোন ক্রটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়, তবে তিনি (আল্লাহ) ফেরেশতাদেরকে বলবেনঃ দেখোতো ,আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি থাকে তবে তিনি বলবেনঃ তোমরা তার নফল নামায দ্বারা তার ফরয নামাযের ক্রটি দূর কর। অতঃপর এইরূপে সমস্ত ফরয আমলের ক্রটি নফল দ্বারা দূরীভূত করা হবে। [আবু দাউদঃ ৮৬৪, তিরমিযীঃ ৪১৩, ইবনে মাজাহঃ ১৪২৫, হাদীস সহীহ, ইমাম তিরমিযী, ইমাম হাকেম ও শায়খ আলবানী]
যে কারণে যারা আগে বেনামাযী ছিলো তারা উমরী কাজা পড়বেন নাঃ
() শরীয়তে দলীল ছাড়া কোনো আমল গ্রহনযোগ্য নয়। অনিচ্ছাকৃতভাবে সর্বোচ্চ ৫ ওয়াক্ত নামায কাজা পড়ার কথা হাদীসে আছে, সেটা দলীল সম্মত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায না পড়লে তার জন্যে কাযা নামায পড়ার কোনো দলীল নেই
() যে নামাযে পড়েনা তারতো ঈমানই নাই, তার আবার কিসের নামায? কাফেরের উপর আগে ঈমান আনা ফরয, ঈমান আনলে তার উপর নামায পড়া ফরয হয়।
() এজন্য সঠিক মত হচ্ছে, বেনামাযী তোওবা করবে, অতীতের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত মাফ চাইবে। আর নফল সুন্নত নামাযের পাবন্দী হবে।
() কিন্তু উমরী কাজা বা প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের সাথে অতীতের একদিনের নামায কাযা পড়ার সিস্টেম, দলীল বহির্ভুত একটা কাজ। এটা থেকে দূরে থাকাই কর্তব্য।
দ্বিতীয় বেদাত হচ্ছে, অনেকে মৃত্যুর পূর্বে এতো অসুস্থ থাকেন যে, নামায পড়া সম্ভব হয়না। হয়তোবা অজ্ঞান হয়ে থাকে বা শারিরীক অথবা মানসিক ক্ষমতা থাকেনা নামায পড়ার মতো। তখন হয়তোবা কয়েকদিন নামায কাজা হয়, তখন একশ্রেণীর মুফতি সাহেবরা নামায না পড়ার জন্য কাফফারা স্বরূপ টাকা দাবী করে বসে। অনেক সময় গরীব মানুষের কাছ অনেক বড় অংকের টাকা দাবী করে বসে।
এই ধরণের টাকা কাফফারা দেওয়ার সিস্টেম কুরআন হাদীসে কোথাও নেই।
জ্ঞান-বুদ্ধি না থাকার কারণে যার পক্ষে নামায পড়া সম্ভব হচ্ছেনা, তার উপরেতো নামাযই ফরয হয় না। তবে আত্মীয় স্বজনরা খেয়াল রাখবেন, রোগীদের যখন হুশ হবে, বা সম্ভব হবে তখন শুধু মাত্র ঐ ওয়াক্তের অন্তত ফরয নামাযটা যেনো পড়ে নেন, ওযু করা সম্ভব না হলে তায়াম্মুম করে, দাঁড়িয়ে না পারলে বসে, বসে না পারলে শুয়ে অথবা ইশারায় নামায পড়ার চেষ্টা করতে হবে আয় আমাদের রব্ব, আমাদের জন্য নামায কায়েম করা সহজ করে দিন এবং আমাদেরকে নামাযী সালেহীন অবস্থায় মৃত্যুদান করুন, আমীন।

বিঃদ্রঃ এই দুইটা বেদাতের পক্ষে যদি কেউ তর্ক করতে চান তাদের বলছিঃ ভাই আপনার যুক্তি তর্ক আপনার কাছেই রেখে দেন আমরা মুসলমান হিসেবে রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসারী। আপনি কুরআন ও হাদীসে থেকে ওমরী কাজা নামায পড়ার নিয়ম আর নামায না পড়লে টাকা দিয়ে কাফফারা দেওয়ার নিয়ম বের করে দেখান। যদি না পারেন তাহলে অহেতুক তর্ক করে আপনার ও আমা মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।