সোমবার, ২৯ জুন, ২০১৫

“আহলুল হাদীস” এর সাথে দুশমনি??

প্রসংগঃ আহলে হাদীস
- আনসারুস সুন্নাহ
__________________________
(আমার সেই সমস্ত বান্দাদের জন্যে সুসংবাদ), যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর তারা মাঝে যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। আল্লাহ তাদেরকেই সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই হচ্ছে সত্যিকারের বুদ্ধিমান।
[সুরা আয-যুমারঃ ১৭-১৮]
__________________________
আহলুল হাদীস এর সাথে দুশমনি??
১. ইমাম আহমদ বিন সানান আল-ওয়াসিতি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, দুনিয়ায় এমন কোনো বিদআতী নেই যে, আহলে হাদীসদের প্রতি বিদ্বেষ রাখেনা।
 [মাআরিফাতু উলুম আল-হাদীস, ইমাম হাকীম, পৃঃ ৪, সনদ সহীহ]
২. আল-হাফিয, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ, মৃত্যুঃ ৭৫১ হিঃ) তাঁর বিখ্যাত কাসিদা নু-নিয়াহ্‌ তে বলেছেন, ওহে তোমরা যারা (আহলুল হাদীসদেরকে) ঘৃণা কর এবং আহলুল হাদীসদের গালি-গালাজ কর, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর যে শয়তানের সাথে তোমাদের দোস্তি হয়েছে।
[আল-কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃষ্ঠা-১৯৯]
৩. শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী (রাহিমাহুল্লাহ, মৃত্যুঃ ৫৬১ হিঃ) নাজী ফের্কা হিসাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বর্ণনা দেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিদআতীদের ক্রোধ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, বিদআতীদের লক্ষণ হচ্ছে আহলে হাদীসদের গালি দেওয়া এবং তাদেরকে বিভিন্ন খারাপ নামে সম্বোধন করা। এগুলি সুন্নাতপন্থীদের বিরুদ্ধে তাদের দলীয় বিদ্বেষ ও অন্তঃর্জ্বালার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্য কোন নাম নেই, একটি নাম ছাড়া। আর সেটি হচ্ছে আসহাবুল হাদীছ বা আহলে হাদীস।
[গুনিয়া-তুত্তালিবিনঃ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৯০] 
__________________________
আহলুল হাদীস কথাটি দিয়ে কি শুধুমাত্র মুহাদ্দিস বা হাদীসের আলেমদেরকেই বুঝায়??
১. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর অনেক ইমাম ও আলেম বলেন,
নাযাতপ্রাপ্ত একমাত্র দল হচ্ছে আহলুল হাদীস।
যেই সমস্ত ইমামরা এ ব্যপারে একমত হয়েছেন,
ক. ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ, আল-হুজ্জাহ ফী বয়ান আল-মুহাজ্জাঃ ১/২৪৬।
খ. ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ, ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজারঃ ১৩/২৫০।
গ. ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ এর উস্তাদ, ইমাম আলি ইবনে আল-মাদীনি রাহিমাহুল্লাহ ও একই কথা বলেছেন, দেখুন সুনানু আত-তিরমিযীঃ ২১৯২। 
নোটঃ এখন আহলুল হাদীস বলতে যদি শুধুমাত্র মুহাদ্দীসগণকে বুঝানো হয়, তাহলে কি শুধুমাত্র মুহাদ্দীসগণই জান্নাতে যাবে, আর সাধারণ লোক জান্নাতে যেতে পারবে না?
২. ইমাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, আহমদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমাদের নিকট, আহলুল হাদীস ঐ ব্যক্তি যিনি হাদীসের উপর আমল করেন।
[মানাক্কিব আল-ইমাম আহমদ লি ইবনে জওযী, ২০৮ পৃষ্ঠা, সহীহ সনদ সহকারে]
__________________________
হাদীস সহীহ সহীহ ও জয়ীফ সম্পর্কে আলেম না হলেও একজন আহলে হাদিসঃ
১. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) এর ছেলে আব্দুল্লাহ (যিনি ইমাম আহমদ এর অনেক ফতোয়া লিপিবদ্ধ করেছেন) তিনি বলেন,
আমি আমার পিতা আহমাদ বিন হাম্বালকে এক ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, যে তার দ্বীন সংক্রান্ত বিষয়- তালাক্ব ও অন্যান্য বিষয়ের ক্বসম এর ব্যাপারে সওয়াল করতে চায় যে ব্যাপারে সে কিনা ফেতনার সম্মুখীন হয়েছে। সেখানে আসহাবুল রায় এর একটি দল এবং"আসহাবুল হাদীস এর এমন একটি দল রয়েছে যারা হাদীস মুখস্ত করেনা এবং হাদীসের সনদ কোনটা দুর্বল আর কোনটা শক্তিশালী তা চেনেনা। এই দুই গ্রুপের উপস্থিতিতে সে কার কাছে ফতওয়া জিজ্ঞেস করবে? আহলুল রায়কে নাকি আহলুল হাদীস এর ওই দলকে, যদিও তাদের হাদীসের ব্যাপারে জ্ঞান কম? তিনি (ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল) বললেনঃ আসহাবুল হাদীস বা আহলে হাদীসকে, (যদিও ওই আহলে হাদীস হাদীস কম জানে তবুও তাদেরকেই) জিজ্ঞেস করবে, কেননা যঈফ হাদীস ও আবু হানীফাহর রায় (ফতোয়া) অপেক্ষা উত্তম।
কিতাবুস সুন্নাহ, আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড ১৮০ পৃষ্ঠা, আমার পিতা ও অন্য মাশায়েখদের কাছ থেকে আবূ হানীফাহর ব্যাপারে কী স্মরণ রেখেছি অধ্যায়।
নোটঃ ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর নিকট আহলে হাদীস কারা, এবং তাদের কি মর্যাদা সে ব্যপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
২. আবু মানসুর আব্দুল কাহিব বিন তাহির আল বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) শামের সীমান্তবর্তী এলাকায় বাসকারী অধিবাসীগণ সম্পর্কে বলেন, তাদের সকলেই মাযহাবের দিক দিয়ে ছিলেন আহলুল হাদীস, আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভূক্ত।
[উসূল আদ-দীন, পৃষ্ঠা ৩১৭]
নোটঃ এখন একথা বিশ্বাস করার কোন মানে নাই কোন এলাকার সকল অধিবাসীগণই মুহাদ্দীস হবেন, সুতরাং খতীব বাগদাদী এখানে সাধারণ লোকদেরকেই আহলুল হাদীস বুঝিয়েছেন যাদের ইমাম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
__________________________

[সমাপ্ত]  [সমাপ্ত]  [সমাপ্ত]