শুক্রবার, ৫ জুন, ২০১৫

“আজকের জুমুয়াহর খুতবাহ থেকে শিক্ষা” পর্ব- ১

আজকের জুমুয়াহর খুতবাহ থেকে শিক্ষা
- আনসারুস সুন্নাহ।
১৮ই শাবান, ১৪৩৬হিজরী; ৫ই জুন, ২০১৫ ইং।
________________________________
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মহিলা সাহাবীরা পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতে এবং জুমুয়াহ ও ঈদের সালাতের জামাআতে অংশগ্রহণ করতেন, যদিও ঘরই তাদের সালাতের জন্য উত্তম জায়গা। তবে স্পষ্ট সহীহ হাদীস, সাহাবীদের আমল এবং বিজ্ঞ আলেমদের ফতোয়া দ্বারা প্রমানিত যে, ফেতনার আশংকা না থাকলে নারীদের জন্যেও জায়েজ আছে মসজিদে সালাত আদায় করা।
একজন মহিলা সাহাবী একটা হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই জুমুয়াহর খুতবাতে সুরা ক্বাফ (২৮ নাম্বার পারার ৫০ নাম্বার সুরাটি) তেলাওয়াত করে শোনাতেন, আর সেই খুতবা শুনতে শুনতে তিনি সুরা ক্বাফ মুখস্থ করে ফেলেছিলেন! 
________________________________
উম্মু হিশাম বিনতু হারিসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু (অর্থাৎ হারিসাহর কন্যা ও হিশামের মা) তিনি এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে, আমি সুরা ক্বাফ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জবান থেকে মুখস্থ করেছি। তিনি সুরাটি প্রত্যেকটি জুমুয়াহর খুতবাতে মিম্বরে উঠে তেলাওয়াত করতেন।
[বুলুগুল মারামঃ ৪৫৩, সহীহ মুসলিমঃ ৮৭২, নাসায়ীঃ ৯৪৯, আবু দাউদঃ ১১০০, আহমাদঃ ২৬৯০৯]
________________________________
এই হাদীস থেকে জানা যায় যে,
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মহিলা সাহাবীরা জুমুয়াহর খুতবা শুনতে যেতেন।
২. আরো একটি বিষয় জানা গেলো যে, সুরা ক্বাফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সুরা। যে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে জুমুয়াহর খুতবাতে নিয়মিত এই সুরাটি তেলাওয়াত করে শোনাতেন। সুতরাং, বর্তমান যুগে আমাদের খতিব সাহেবদের জন্য মোস্তাহাব (অর্থাৎ উত্তম) হচ্ছে যে, জুমুয়াহর দিনের খুতবাতে মুসল্লিদেরকে সুরা ক্বাফ তেলাওয়াত করে শোনানো। আর যেই সমস্ত দেশের লোকেরা আরবী বোঝেন না, সেই সমস্ত দেশের সাধারণ লোকদের জন্য খুতবাতে আরবী তেলাওয়াতের পাশাপাশি নিজ নিজ ভাষায় আয়াতগুলোর অর্থটাও বুঝিয়ে দেওয়া।
________________________________
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে মসজিদে আসতে বাধা দিওনা যদিও তাদের জন্য ঘরই উত্তম জায়গা। [আবু দাউদ ৫৬৭, মুসনাদে আহমাদ হাদীস সহীহ]
________________________________
অথচ আমাদের দেশের খতিব সাহেবরা এই সুন্নতগুলো থেকে গাফেল হয়ে আছেন। আমাদের দেশের মহিলাদের জন্য দ্বীন শিখার সুযোগ অতি সামান্য। এমন হয়তো অনেক বোনদেরকে পাওয়া যাবে, এমনকি অনেক ভাইদেরকেও হয়তোবা পাওয়া যাবে, যারা জীবনে সুরা ক্বাফ পড়া অথবা শোনাতো দূরের কথা, ক্বুরান মাজীদের সুরা ক্বাফ নামে একটা সুরা আছে, এটাই হয়তোবা তারা জানেন নাহ!
 ________________________________
খুতবাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ না করে অনেক খতিব সাহেবরা মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনী দিয়ে অথবা জাল-জয়ীফ হাদীস দিয়ে মিথ্যা ফযীলতের বয়ান করেন। অথচ ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুসরণ করলেও আমাদের ভাই ও বোনেরা দ্বীন কি জিনিস সেটা জানতে ও মানতে পারতো।
________________________________
যাই হোক, আজকে আমি যে মসজিদে জুমুয়াহর সালাত পড়েছি সেখানকার ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে সুরা মুনাফিকুনের শেষের দিকের ৩টি আয়াত ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা আল-বুরুজের শেষের দিকের ৯টি আয়াত তেলাওয়াত করে শোনান। সেই আয়াতগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া আছে, এই জন্য অনেক ইমাম প্রায়ই মাগরিব, এশা ও ফজরের সালাতে এই আয়াতগুলো পাঠ করে থাকেন। আজকে আমি সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনদের জন্য সেই আয়াতগুলোর অর্থ আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আপনারা তাফসীর ইবেন কাসীর থেকে এই আয়াতগুলোর বিস্তারিত অর্থ ও ব্যাখ্যা জানবেন এবং এই আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন।
________________________________
সুরা মুনাফিকুন
উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
৯. হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। এ কারণে যারা আল্লাহর স্বরণ থেকে গাফেল হয়, তারাই তো হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত লোক।
১০. আর আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, মৃত্যু আসার আগেই তা থেকে তোমরা ব্যয় কর। অন্যথায়, (যে আমার রাস্তায় দান করবেনা) সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুটা সময় অবকাশ দেন। তাহলে আমি তোমার রাস্তায় দানসদকা করি এবং এর দ্বারা আমি নেককার লোকদের অন্তর্ভুক্ত হইয়ে যাব।
১১. প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। আর তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ খবর রাখেন।
________________________________
সুরা আল-বুরুজ
উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
১৪. আর তিনি হচ্ছেন ক্ষমাশীল, ভালোবাসায় পূর্ণ;
১৫. মহান আরশের মালিক।
১৬. তিনি যা ইচ্ছা করেন, তাই করেন।
১৭. (হে নবী!) আপনার কাছে কি সৈন্যবাহিনীর খবর এসে পোঁছেছে?
১৮. ফেরাউন এবং সামুদের সৈন্যবাহিনীর খবর?
১৯. বরং, যারা কাফের, তারা মিথ্যারোপ করায় রত আছে।
২০. আল্লাহ তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।
২১. আর এটা হচ্ছে মহান ক্বুরআ'ন,
২২. যা লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ আছে।
________________________________

আয় আল্লাহ! আপনি আমাদের সকলকে ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তোওফিক দান করুন, আমাদের ও আমাদের পরিবারের প্রত্যেককে উভয় জীবনেই সফলতা দান করুন, আমিন।