***********************************************
“আহলুল হাদীস” বলতে কি শুধুই মুহাদ্দীসগণকেই
বুঝায়?
***********************************************
আহলুল হাদীস বলতে শুধু মুহাদ্দীসগনকেই বুঝায় না, বরং সর্বক্ষেত্রে যারা হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ) কে এককভাবে অনুসরনীয় ইমাম হিসেবে মানে, এবং নির্দিষ্ট কোন একজন সালাফের অন্ধ অনুসরণ (তাকলিদ) করে না
তাদেরকেও বুঝায়। আসুন সালাফদের কতিপয় উক্তি সম্পর্কে জানি যাতে প্রমাণিত হবে আহলুল
হাদীস বলতে শুধু মুহাদ্দীসগণকে বুঝায় না।
১. বহু উলামা যেমন ইমাম বুখারী (রহঃ) (আল-হুজ্জাহ ফী বয়ান আল-মুহাজ্জা, ১/২৪৬), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ)
(ফাত-উল-বারী ১৩/২৫০), এবং ইমাম আল-মাদীনি (রহঃ) (সুনান
তিরমিযী, হা: নং ২১৯২) বলেন, “নাযাত প্রাপ্ত দল হল আহলুল হাদীস।”
=> এখন আহলুল হাদীস বলতে যদি শুধুমাত্র মুহাদ্দীসগণকে বুঝানো
হয়, তাহলে কি শুধুমাত্র মুহাদ্দীসগণই জান্নাতে যাবে, আর সাধারণ
লোক জান্নাতে যেতে পারবে না?
২. আহলে সুন্নাহ এর ইমাম, আহমদ বিন হাম্বল
(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আমাদের নিকট, আহলুল হাদীস ঐ ব্যক্তি
যিনি হাদীসের উপর আমল করেন।” [মানাক্কিব আল-ইমাম আহমদ লি ইবনে জওযী, ২০৮
পৃ: সহীহ সনদ সহকারে]
৩. ইবনে তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আমরা আহলুল হাদীস বলতে তাদেরকেই
শুধু বুঝাইনা যারা হাদীস শুনেন, লিখেন এবং সেগুলো
বর্ণনা করেন, বরং আমরা আহলুল হাদীস বলতে যেকোন ব্যক্তিকেই
বুঝি যারা হাদীস যত্নসহকারে মুখস্থ করেন, অনুধাবন করেন এবং
তা অনুসরণ করেন - আভ্যন্তরিন ও বাহ্যিক উভয় দিক থেকে।” [মাজমুআ আল-ফাতাওয়া,
৪/৯৫]
=> ইবনে তাইমিয়াহ-র উক্ত ব্যাখ্যা প্রমান করে আহলুল হাদীস
বলতে দুই ধরণের লোক বুঝায় –
১. মুহাদ্দীসীন (হাদীসের আলেম) এবং
২. তাদের আওয়াম (যারা হাদিসে আলেম নন কিন্তু হাদিসের অনুসরণকারী)।
৪. হাফিয ইবনে হিব্বান (রহঃ) আহলুল হাদীস সম্পর্কে বলেন, “তারা হাদীসের উপর আমল করেন, হাদীসের পক্ষালম্বন করেন এবং এর বিরুদ্ধবাদীদের নিশ্চিহ্ন
করেন।” [সহীহ ইবনে হিব্বান, আল-ইহসান ৬১২৯]
৫. ইমাম আহমদ বিন সানান আল-ওয়াসিতি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “এ দুনিয়ার এমন কোন বিদায়াতীকে
দেখবেন না যে আহলুল হাদীসদের প্রতি শত্রুতা পোষন করেনা।” [মা’আরিফাতু উলুম আল-হাদীস, হাকীম, পৃঃ ৪, সনদ
সহীহ]
=> সকলেই জানে মুহাদ্দীসগণ ও তাদের আওয়ামদের প্রতি কি পরিমান
বিদ্বেষ বিদায়াতীরা পোষণ করে। একথা প্রমাণিত যে যারা বিদায়াতী কালচার পরিত্যাগ করে
কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মতে আমাল করেন, সেই আহলে হাদীসদের
প্রতি ব্রেলভী ও বেশির ভাগ দেওবন্দী পন্থিরা অত্যধিক ঘৃণার চোখে দেখেন।
৬. কুরআনের সূরাহ বানী ইসরাঈল এর ৭১ নং আয়াতের “যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করব” - অংশের ব্যাখ্যা করতে
গিয়ে ইবনে কাসির (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে,
“পূর্ব যুগীয় কোন কোন মনীষীর উক্তি
রয়েছে যে, এতে আহলুল হাদীসদের খুবই বড় মর্যাদা রয়েছে।
কেননা, তাঁদের ইমাম হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)।”
=> আল্লাহু আকবার! এটা সুবিদিত যে মুহাদ্দীসগণ ও তাদের আওয়াম
এর মহান ইমাম হলেন হযরাত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
৭. হাফিয ইবনুল কাইয়ুম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর বিখ্যাত কাসিদা নু-নিয়াহ্ তে
বলেছেন, “ওহে তোমরা যারা (আহলুল হাদীসদের) ঘৃণা কর এবং আহলুল হাদীসদের গালিগালাজ কর, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর যে শয়তানের সাথে তোমাদের দুস্তি
হয়েছে।” [আল-কাফিয়া আশ-শাফিয়া পৃ: ১৯৯]
=> আপনি পৃথিবীর যেখানেই যান না কেন দেখতে পাবেন আহলুল
হাদীসদের প্রতি সবচেয়ে বেশি ঘৃনা ও বিদ্বেষ পোষণ করে বিদায়াতীরা।
৮. জালালুদ্দীন সুয়ুতি (রহঃ) সুরাহ বানী ইসরাঈল এর ৭১ নং আয়াতের তাফসীরে
উল্লেখ করেছেন যে "আহলুল হাদীসদের জন্য এর চেয়ে বড় শ্রেষ্ঠতার আর কিছু নাই
কারণ আল্লার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত আহলুল হাদীসদের আর
কোন ইমাম নেই।"
[তাদরীবুর রাওয়ি: ২/১২৬, নূ':২৭]
=> পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে সাধারণ আহলে হাদীসরাও মুহম্মদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সবচেয়ে বড় ইমাম মানে, এবং এটাই তাদের মানহাজ,
এটাই তাদের ঈমান।
৯. আবু মানসুর আব্দুল কাহিব বিন তাহির আল বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) শামের
সীমান্তবর্তী এলাকায় বাসকারী অধিবাসীগণ সম্পর্কে বলেন, “তাদের সকলেই মাযহাবের দিক দিয়ে
ছিলেন আহলুল হাদীস, আহলুস সুন্নাহর
অন্তর্ভূক্ত।” [উসূল আদ-দীন, পৃষ্ঠা ৩১৭]
=> এখন একথা বিশ্বাস করার কোন মানে নাই কোন এলাকার সকল
অধিবাসীগণই মুহাদ্দীস হবেন, সুতরাং খতীব বাগদাদী এখানে
সাধারণ লোকদেরকেই আহলুল হাদীস বুঝিয়েছেন যাদের ইমাম হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
১০. আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আহমাদ বিন আল-বিনা আল-মাদকিসি আল-বাশারী
(রাহিমাহুল্লাহ) তার সময়ের সিন্ধির অধিবাসী সম্পর্কে বলেন, “তাদের বেশিরভাগই ছিলেন আহলুল হাদীস”। [আহসান আল-তাক্বাসীম ফী মা’রিফাতুল আকালীম, পৃ: ৩৬৩]
=> উপরের আল-বাশারী (রহঃ) এর উক্তিও প্রমাণ করে যে, শুধুমাত্র
মুহাদ্দীসীনরাই আহলে হাদীস নয়, পূর্বযুগে সাধারণ জনগণও “আহলে হাদীস” হিসেবে পরিচিত হতেন।
শেষকথাঃ এরকম আরো বহু সালাফদের উক্তি উল্লেখ করা যাবে। আমার মনে হয় উপরে
উল্লিখিত ১০টি উক্তিই প্রমান হিসেবে যথেষ্ট যে মুহাদ্দীসগণ ছাড়াও সাধারণ লোকজন
যারা সহীহ হাদীসের উপর আমাল করেন তারাও আহলুল হাদীস হিসেবে পরিচিত হতেন।
এছাড়া দেওবন্দী বহু আলেমের কিতাবে “আহলুল হাদীস” বলতে সাধারণ লোকজনকে বুঝানো হয়েছে এমন বহু উদাহরণ
দেয়া যাবে। সে বিষয়ে লিখব একদিন।
[হাফিয যুবাইর আলী যাই (রাহিমাহুল্লাহ) এর লেখা অবলম্বনে]
Collected post
[দুঃখিত যেই ভাই এটা পোস্ট করেছিলেন তার নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছেনা, মনে থাকলে
এই পোস্টে কার্টেসী দেওয়া জরুরী ছিলো]