গাশিয়াহ কি?
কুরানুল কারীমের ‘আমপারা’ বা ৩০ নাম্বার পারার ৮৮ নাম্বার সুরার নাম হচ্ছে
‘আল-গাশিয়াহ’, যার অর্থ হচ্ছে আচ্ছন্নকারী বা যা সবকিছুকে
ঢেকে দেয়। “গাশিয়াহ” হচ্ছে কেয়ামতের আরেক নাম, কারণ এটা সবার উপরে
আসবে, সবাইকে ঘিরে ফেলবে। কুরানুল কারীমে কেয়ামতকে অনেক নামেই উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর
মধ্যে গাশিয়াহ একটি।
সূচনাঃ
গাশিয়াহ সুরাটি শুরু হয়েছে
একটি প্রশ্ন দিয়ে, যা আল্লাহ তাআ’লা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে করেছিলেনঃ
سْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـنِ الرَّحِيمِ
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَـشِيَةِ
হাল আতাকা হা’দীসুল গাশিয়াহ?
১. আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী
(কেয়ামতের) সংবাদ পৌঁছেছে কি?
“একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
একজন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি শুনতে পান ঐ মহিলাটি এই আয়াত তেলাওয়াত
করছে...
আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী (কেয়ামতের)
সংবাদ পৌঁছেছে কি?
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন আল্লাহ তাআ’লার
করা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন...
نَعَمْ قَدْ جآءَنِىْ
“নাআ’ম ক্বাদ যা-আনি”
“হ্যা, আমার কাছে (কেয়ামতের সংবাদ) পৌঁছেছে”।
মুসনাদে ইবনে আবি হাতিম।
তাই আপনারাও কখনো এই আয়াত কাউকে
তেলাওয়াত করতে শুনলে তার জবাবে বলতে نَعَمْ قَدْ جآءَنِىْ পারেন।
এই প্রশ্ন করার পরে আল্লাহ
তাআ’লা নিজেই কিয়ামতের কিছু বর্ণনা তুলে ধরেছেন সুন্দর
ছোট এই সুরাটিতে।
এইভাবে আল্লাহ তাআ’লা কিছু সুরাতে প্রশ্ন করে পরে নিজেই উত্তর দিয়েছেন।
এইভাবে প্রথম প্রশ্ন করা হলে যারা শ্রোতা বা পাঠক থাকেন তারা কৌতুহলী হন, উত্তর জানার
জন্যে...
এই সুরাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় আলোচনা হয়েছে, আপনারা তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে পড়ে বিস্তারিত জেনে নেবেন ইন শা’ আল্লাহ।
***তাফসীর মারেফুল কুরআন (মুফতি
শফী), তাফহীমুল কুরআন (মাওলানা মওদুদী), তাফসীর ফি জিলালিল কুরআন (সাইয়্যিদ কুতুব)
– এই সমস্ত তাফসীর পড়বেন না। এইগুলোতে অনেক জায়গায়
বড় বড় ভুল থাকে যা পড়ার সময় জ্ঞানের অভাবে আপনি ধরতে পারবেন না। তাই না জেনে সেই সমস্ত
ভুল জিনিস বিশ্বাস করা শুরু করবেন। তাফসীর মারেফুল কুরআনে সুফীবাদীদের প্রশংসা করা
হয়েছে ও সূফীদের বাতিল আকীদা ঢুকিয়ে দেওয়া আছে, যে কারণে সৌদী আরব সরকার আলেমদের সুপারিশক্রমে
সেটা নিষিদ্ধ করে দেয়, যদিও জানা না থাকার কারণে প্রথমে তারাই এটা প্রকাশ করেছিলো।
আর মাওলানা মওদুদী ও সাইয়্যিদ
কুতুব দুইজনে কোনো আলেম ছিলেন না, হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে তাদের ভালো জ্ঞান ছিলোনা।
নিজে নিজে বিভিন্ন বই পুস্তক পড়ে যা ভালো মনে করতেন লিখতেন, প্রথমে যা লিখতেন ভুল হওয়াতে
নিজেরাই পরে সেটা বাদ দিতেন। তাদের লেখায় কিছু ভালো দিক আছে, কিন্তু আকীদাগত বড় রকমের
ভুল মিশ্রিত থাকায় ওলামারা এইগুলো থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দেন।
আলেম-ওলামারা এইগুলোর পরিবর্তে
বড় বড় আলেমদের লেখা সর্বজন স্বীকৃত তাফসীর, যেইগুলোতে ভুলের পরিমান খুব কম, আর যেই
ভুল আছে সেইগুলো খুবই ছোট-খাট, সেই সমস্ত তাফসীর পড়তে বলেন। ইমাম ইবনে কাসীরের লেখা
“তাফসীর ইবনে কাসীর” এদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একটি তাফসীর যা আমাদের
দেশে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।
“তাফসীর ইবনে কাসীর” এর ডাউনলোড লিংকঃ
http://www.quraneralo.com/tafsir
অথবা
http://www.shorolpoth.com/product/তাফসীর-ইবন-কাছির/
আপনারা গাশিয়াহ সুরার সুন্দর
এই তাফসীর লন্ডনের ইস্ট লন্ডন মসজিদের খতিব শায়খ আব্দুল ক্বাইয়্যুম এর কাছ থেকেও শুনে
নিতে পারেন।
http://www.youtube.com/watch?v=OzclBPmsHIc
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ঈদের নামায ও জুমুয়ার নামাযের প্রথম রাকাতে সুরা আ’লা ও ২য় রাকাতে সুরা গাশিয়াহ পড়তেন।
মুসলিম, আবু দাউদ।
আপনার এই সুরাগুলো মুখস্থ করে
নিতে পারেন, নামাযে পড়ার জন্য।
আমি গাশিয়াহ সুরার সরল বাংলা
তর্জমাটা দিয়ে দিচ্ছি। তর্জমা করেছেন মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। আর এই সুরার তাফসীর নিয়ে
আমাদের আগের লেখাটা অবশ্যই পড়বেন। লিংক –
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=717795961586487&set=a.130928300273259.14132.125167817515974&type=1&relevant_count=1
সুরা গাশিয়াহর সরল তর্জমাঃ
আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির
রাযীম। বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম।
( 1 ) আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের সংবাদ পৌঁছেছে
কি?
( 2 ) অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত,
( 3 ) আমল করে ক্লিষ্ট ও ক্লান্ত।
( 4 ) তারা জ্বলন্ত আগুনে (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে।
( 5 ) তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পানি পান করানো হবে।
( 6 ) কাটাযুক্ত ফল ছাড়া তাদের জন্যে কোনও খাদ্য থাকবেনা।
( 7 ) এটা তাদেরকে পুষ্টি দেবেনা এবং তাদের ক্ষুধাও নিবারণ
করবে না।
( 8 ) অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে সজীব,
( 9 ) তাদের কর্মের কারণে তারা সন্তুষ্ট হবে।
( 10 ) তারা থাকবে সুউচ্চ জান্নাতে।
( 11 ) সেখানে তারা শুনবে না কোন অসার কথাবার্তা।
( 12 ) সেখানে থাকবে প্রবাহিত ঝরণা।
( 13 ) সেখানে থাকবে উন্নত সুসজ্জিত আসন।
( 14 ) এবং সংরক্ষিত পানপাত্র
( 15 ) এবং সারি সারি গালিচা
( 16 ) এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট।
( 17 ) তারা কি উটের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে তা
সৃষ্টি করা হয়েছে?
( 18 ) এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে
উচ্চ করা হয়েছে?
( 19 ) এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে?
( 20 ) এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
( 21 ) অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা,
( 22 ) আপনি তাদের শাসক নন,
( 23 ) কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়,
( 24 ) আল্লাহ তাকে মহা শাস্তি দেবেন।
( 25 ) নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট,
( 26 ) অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব।