কেয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর যা যা হবেঃ
১. জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে
২. জান্নাতীরা আল্লাহকে দেখতে পাবে
৩. জান্নাতীরা পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে
৪. নবী-রাসুল ও জান্নাতীরা ঈমানদার কিন্তু পাপের কারনে জাহান্নামে গেছে,
এমন লোকদের জন্য সুপারিশ করবেন
৫. অন্তরে অণু পরিমান ঈমান আছে, তাদেরকেও শাস্তি দেওয়ার পরে জান্নাতে প্রবেশ
করানো হবে
৬. আল্লাহ্ তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে কিছু লোকদেরকে হাতের অঞ্জলি দিয়ে জাহান্নাম
থেকে বের করে আনবেন. . .এরপরেও যারা জাহান্নামে বাকি থাকবে, তাদের মধ্য থেকে আর কেউ কোনদিন জাহান্নাম
থেকে বের হতে পারবেনা। তারা হচ্ছে যারা কাফের, বেঈমান, মুশরেক ও মুনাফেক অবস্থায়
মৃত্যবরণ করেছিলো। আল্লাহ্ আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচান, আমিন।
সহীহ হাদীসে বর্ণিত পুরো ঘটনাটা পড়ুনঃ
আবু
সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন
আমরা কি আমাদের রবকে দেখব?
তিনি
(রাসুলুল্লাহ সাঃ) বললেন, “তোমরা
কি সূর্য ও চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর যখন আসমান পরিষ্কার থাকে?”
আমরা
বললাম, নাহ!
তিনি
(রাসুলুল্লাহ সাঃ) বললেন, “নিশ্চয়
সেদিন তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করবে না, যেমন চাঁদ-সূর্য উভয়কে দেখায় সন্দেহ
কর না।”
অতঃপর
তিনি আরো বললেন, “একজন
ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, প্রত্যেক সম্প্রদায় যেন তার নিকট যায়, তারা যার ইবাদত করত। ক্রুসের
অনুসারীরা তাদের ক্রুসের সাথে যাবে; মূর্তিপূজকরা তাদের মূর্তির সাথে যাবে; এবং প্রত্যেক
মাবুদের ইবাদতকারীরা তাদের মাবুদের সাথে যাবে। অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার অথবা
বদকার লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে এবং কতক আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও খ্রীস্টান)।
অতঃপর
জাহান্নাম হাজির করা হবে যেন তা মরীচিকা!!
অতঃপর
ইহুদিদের বলা হবে, তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর ছেলে উযাইর এর ইবাদত
করতাম। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলেছ। আল্লাহর কোন স্ত্রী বা সন্তান নেই।
তোমরা এখন কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই আমাদেরকে পানি পান করানো হোক। তাদেরকে বলা হবে,
তোমরা পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে।
অতঃপর
খৃস্টানদের বলা হবে, তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর ছেলে ঈসার ইবাদত
করতাম। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলেছ। আল্লাহর কোন স্ত্রী বা সন্তান নেই। তাদেরকে
বলা হবে, তোমরা এখন কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই আমাদেরকে পানি পান করানো হোক। তাদেরকে
বলা হবে, পান কর। ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে।
অবশেষে
আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার ও বদকার বান্দারা অবশিষ্ট থাকবে। তাদেরকে বলা হবে, কে তোমাদেরকে
আটকে রেখেছে অথচ লোকেরা চলে গেছে? তারা বলবে: আমরা তাদেরকে (দুনিয়াতে) ত্যাগ করেছি,
আজ আমরা তার (আমাদের রবের) বেশী মুখাপেক্ষী, আমরা এক ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে শুনেছি,
প্রত্যেক কওম যেন তার সাথেই মিলিত হয়, যার তারা ইবাদত করত, তাই আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা
করছি। তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ তাদের নিকট আসবেন ভিন্ন সুরুতে, যে সুরতে প্রথমবার
(দুনিয়াতে পাঠানোর পূর্বে রুহের জগতে) তারা তাকে দেখেনি। তিনি বলবেন, আমি তোমাদের রব।
তারা বলবে, আপনি আমাদের রব? নবীগণ ব্যতীত তার সাথে কেউ কথা বলবে না। তিনি (আল্লাহ)
বলবেন, তোমাদের ও তার মাঝে কোন নিদর্শন আছে যা তোমরা চিন? তারা (মানুষেরা) বলবে, পায়ের
গোছা। ফলে তিনি (আল্লাহ্) তাঁর পায়ের গোছা উন্মুক্ত করবেন। প্রত্যেক মুমিন তাঁকে সেজদা
করবে, তবে যে (রিয়াকারী অথবা মুনাফেক) লোক দেখানো কিংবা লোকদের শোনানোর জন্য সেজদা
করত সে অবশিষ্ট থাকবে। সে সেজদা করতে চাইবে কিন্তু তার পিঠ উল্টো সোজা খাড়া হয়ে যাবে।
অতঃপর পুলসিরাত আনা হবে এবং তা জাহান্নামের ওপর রাখা হবে। আমরা (সাহাবারা) বললাম, হে
আল্লাহর রাসূল, পুলসিরাত কি? তিনি বললেন, সেটা হচ্ছে পদস্খলনের স্থান, তার ওপর রয়েছে
ছো মারা হুক, পেরেক, বিশাল বড়শি যার রয়েছে বড় কাঁটা যেরূপ নজদ এলাকায় হয়, যা সা‘দান বলা হয়। তার ওপর দিয়ে মুমিনগণ চোখের পলক,
বিদ্যুৎ, বাতাস, শক্তিশালী ঘোড়া ও পায়দল চলার ন্যায় পার হবে, কেউ নিরাপদে নাজাত পাবে,
কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে নাজাত পাবে এবং কেউ জাহান্নামে নিক্ষেপ হবে, অবশেষে যখন তাদের সর্বশেষ
ব্যক্তি অতিক্রম করবে তখন তাকে টেনে হিছড়ে পার করা হবে। আর কোন সত্য বিষয়ে তোমরা আমার
নিকট এতটা পীড়াপীড়ি কর না, তোমাদের নিকট যা স্পষ্ট হয়েছে। মুমিনগণ সেদিন আল্লাহর নিকট
যতটা পীড়াপীড়ি করবে, যখন দেখবে যে তাদের ভাইদের মধ্যে শুধু তারাই নাজাত পেয়েছে, তারা
বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম
পালন করত এবং আমাদের সাথে আমল করত। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও যার অন্তরে তোমরা দিনার পরিমাণ
ঈমান দেখ তাকে বের করে আন। আল্লাহ তাদের আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন।
তারা তাদের নিকট আসবে, তাদের কেউ পা পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেছে, কেউ গোছার অর্ধেক পর্যন্ত,
তারা যাদেরকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেন, যাও, যার অন্তরে
তোমরা অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, তারা যাকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর
ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেন, যাও যার অন্তরে তোমরা যাররা (অণু) পরিমাণ ঈমান দেখ তাকেও
বের করে আন। ফলে তারা যাকে চিনবে বের করবে।”
আবু
সায়িদ (রাঃ, যেই সাহাবী হাদীসটি বর্ণনা করছিলেন তিনি) বললেন, যদি তোমরা আমাকে সত্য
জ্ঞান না কর, তাহলে এই আয়াত পড়,
“নিশ্চয়
আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলম করেন না। আর
যদি সেটি ভাল কাজ হয়, তিনি তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান প্রদান করেন”। [সুরা নিসাঃ ৪০]
অতঃপর
নবী, ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন। আল্লাহ বলবেন, আমার সুপারিশ বাকি রয়েছে, অতঃপর
তিনি নিজে জাহান্নামী লোকদের মধ্য থেকে এক মুষ্টি গ্রহণ করবেন। ফলে এমন লোকদেরকে বের
করবেন, যারা জ্বলে গিয়েছে, তাদেরকে জান্নাতের দরজার নিকট অবস্থিত নহরে নিক্ষেপ করা
হবে, যাকে বলা হয় আবে হায়াত বা সঞ্জীবনী পানি। ফলে তার দু’পাশে গজিয়ে উঠবে যেমন প্রবাহিত পানির উর্বর মাটিতে
শস্য গজিয়ে উঠে, যা তোমরা দেখেছ পাথর ও গাছের পাশে, তার থেকে যা সূর্যের দিকে তা সবুজ
এবং যা ছায়ার আড়ালে তা সাদা, অতঃপর তারা মুক্তোর ন্যায় বের হবে। অতঃপর তাদের গর্দানে
সীলমোহর দেয়া হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাতিরা তাদেরকে বলবে, তারা
হচ্ছে রহমান (দয়াময় আল্লাহর) নাজাতপ্রাপ্ত, তাদেরকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন
কোন আমলের বিনিময়ে নয়, যা তারা করেছে, বা কোন কল্যাণের বিনিময়ে নয় যা তারা অগ্রে প্রেরণ
করেছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের জন্য তোমরা যা দেখেছ তা এবং তার সাথে তার অনুরূপ।”
[সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম]