আকিদার
ক্ষেত্রে দেওবন্দিগন ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর অনুসারী ননঃ
দেওবন্দীরা
ইমাম আবু হানীফার আকদায় বিশ্বাসী নয়, তারা সূফীবাদের বিশ্বাসী।
সূফীবাদ
ও তাসাউফ অনেক ভাগে বা ফিরকায় বিভক্ত, যাকে তারা বলে ‘তরীকা’; প্রধান চার তরীকা হচ্ছে- চিশতিয়া, ক্বাদরিয়া,
নাকশবান্দিয়া ও সোহরাওারদিয়া।
ভারতে
দেওবন্দী ও বেরেলভীগন এই সুফিবাদের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তারা এই চার তরীকার অনুসারী।
সপ্তদশ
শতাব্দি পর্যন্ত ভারতে হানাফী আলেমদের মধ্যে সূফীবাদের কোন সুস্পষ্ট ভাব পরিলক্ষিত
হয়নি। কিন্তু পারস্পরিক মতানৈক্য তাদের মাঝে ফাটল ধরায়, যার ফলশ্রুতিতে তারা দু’টি বিরোধী শিবিরে বিভক্ত হয়, যা পরিশেষে দেওবন্দী
ও বেরেলভী নামে পরিচিতি লাভ করে।
এই
দুই শিবিরে যখন বৈরিতা চরম রুপ ধারন করে, তখন বেরেলভীগন অতিরঞ্জিতভাবে দেওবন্দীগণকে
কাফির আখ্যা দেয়।
উভয়
দলই নিজেদেরকে হানাফী মাজহাবের অনুসারী বলে দাবী করে। আসলে তারা হানাফী ফিকাহ অনুসরন
করে। তারা সত্যিকার অর্থে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর দর্শন ও আকিদার প্রকৃত অনুসারী
নয়।
দেওবন্দি
আলেমদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্বান মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরি তার আল মুহান্নাদ আলাল
মুফান্নাদ গ্রন্থে বলেনঃ ''আমাদের জামা'আত শরীয়তের সকল বিধান-প্রবিধানে আল্লাহর ইচ্ছায়
ইমাম আবু হানিফার অনুসারী। আকিদার ক্ষেত্রে আমরা ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী ও ইমাম আবু
মানসুর মাতুরিদীর অনুসারী। তারই সাথে তরীকতে সুফিয়ার ক্ষেত্রে আমরা নকশবন্দিয়া, চিশতিয়া,
সোহরাওয়ারদিয়া ও মুজাদ্দেদিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখি'' আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ পৃষ্ঠা
নঃ ২২
======================
খলিল
আহমাদ সাহারানপুরি সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্যের পর দেওবন্দিরা যে আকিদার ক্ষেত্রে ইমাম
আবু হানিফার মাজহাব অনুসরণ করেন না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও নিম্নে আমরা
একটা উদাহরন পেশ করলাম।
তাবলিগ
জামা’তের মুল পাঠ্যসূচী ‘ফাজায়েলে আমল’-এর লেখক ও দেওবন্দি আলেম মাওলানা জাকারিয়া
সাহারানপুরি সাহেব বলেনঃ ‘’হে
আল্লাহ! আমার দু’আ
কবুল করো (অমুক) কুকুরের ওয়াসীলায়’’ মাশাইখ-ই-চিশত;
জাকারিয়া সাহারানপুরি; পৃষ্ঠা নঃ ৯৭
এভাবে
দু'আ করা সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফ রাহিমাহুল্লাহর আকিদাঃ
‘দুররুল
মুখতার’ (বিখ্যাত হানাফী ফিকাহ গ্রন্থ) উল্লেখ আছে ইমাম
আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ‘’একমাত্র
আল্লাহর ওয়াসীলা ব্যাতীত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা জায়েয নয়। সেই ধরনের দু’আ করা জায়েয, যা আল্লাহ কর্তৃক আদেশকৃত; যেমন
‘’আল্লাহর সুন্দরতম নামসমুহ রয়েছে, অতএব ঐ সকল
নামেই তাঁকে ডাকো’’ দুররুল
মুখতার ২/৬৩০
আল-কুদূরী
তার তার ফিকাহ শাস্ত্রের বিরাট গ্রন্থ ‘শরাহুল
খরখী’ এর ‘ঘৃণিত বস্তু’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেনঃ ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ
বলেছেনঃ ‘একমাত্র আল্লাহকে উদ্দেশ্য করেই আল্লাহর নিকট
দু’আ করা ছাড়া অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করা জায়েয
নয়। আমি তাকে ঘৃণা করি, যারা বলে, অমুক অমুকের খাতিরে, অথবা নাবী রাসুলদের খাতিরে,
অথবা পবিত্র (ক্বাবা) ঘরের খাতিরে, অথবা পবিত্র এলাকা (মুজদালিফার) খাতিরে’’
শরাহ
আকিদাহ আত-তাহাবীয়াহ; পৃষ্ঠা নঃ ২৩৭
আয-যোবাইদী
শরাহ ইহীয়াহ (২/২৮৫) গ্রন্থে বলেনঃ আবু হানীফা (রহঃ) এবং তাঁর দু’ই ছাত্র এক ব্যাক্তিকে ধিক্কার দিয়েছিলেন, যে
বলেছিলঃ ‘আমি তোমার নিকট চাই অমুক অমুকের ওয়াসীলায়,
অথবা পবিত্র ঘরের ওয়াসীলায় এবং পবিত্র এলাকার (মুজদালিফা) ওয়াসীলায়’; যেহেতু আল্লাহর উপর এদের কোনটিরই কোন কর্তৃত্ব
নেই।
একইভাবে,
আবু হানীফা (রহঃ) এবং তাঁর ছাত্র মুহাম্মাদ ইবন হাসান আশ-শায়বানী এক ব্যাক্তিকে ধিক্কার
দিয়েছিলেন, যে ব্যাক্তি প্রার্থনা করেছিলঃ ‘হে আল্লাহ! তোমার কুরসীর মহিমায় তোমার নিকট
প্রার্থনা করি’
আল-কুদুরী
আরও বলেছেনঃ ‘যেহেতু স্রষ্টার উপর সৃষ্টির কোন কর্তৃত্ব নেই,
সেহেতু সৃষ্টির মাধ্যমে কোন কিছু চাওয়া জায়েয নয়''
উপরক্ত
উদ্বৃতিগুলো থেকে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাচ্ছে, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এবং তাঁর শিস্যগন
এই ধরনের ওয়াসীলাকে ঘৃণা করতেন। অথচ দেওবন্দিগন আগ্রহভরে এগুলকে উৎসাহিত করেন!!!
দেওবন্দিগন
নিজেদেরকে হানাফী মাজহাবের অনুসারী বলে দাবী করেন, তারপরও তারা ওয়াসীলার ব্যাপারে
ইমামা আবু হানীফা (রহঃ)-এর শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করেন!!!
‘ফতোয়ায়ে
রাহিমিয়া’-এর গ্রন্থকার ও বিখ্যাত দেওবন্দি আলেম মুফতি
আব্দুর রহিম লাজপুরী, ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত ‘অমুক অমুকের খাতিরে, অথবা নাবী রাসুলদের খাতিরে,
অথবা পবিত্র (ক্বাবা) ঘরের খাতিরে, অথবা পবিত্র এলাকা (মুজদালিফার) খাতিরে যারা দু’আ করে আমি তাদেরকে ঘৃণা করি’ এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মুফতি আব্দুর
রহিম লাজপুরী বলেনঃ ‘অনেক
বিজ্ঞ ব্যাক্তি এভাবে দু’আ
করা নিষিদ্ধ মনে করেন’ এবং
‘কিছু জান্নাতি ব্যাক্তি এই ব্যাপারে ভিন্নমত
প্রকাশ করেছেন’ ফতোয়ায়ে রাহিমিয়া; মুফতি আব্দুর রহিম লাজপুরী;
খণ্ড ৩; পৃষ্ঠা নঃ ৫
হে
সম্মানিত আমাদের মুসলিম ভাই! ভাল করে লক্ষ্য করুন, দেওবন্দিগন ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-র
দোহাই দিয়ে তাঁর মাজহাব অনুসরনের দাবী করেন, অথচ তাঁর ফতওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেন,
কিন্তু তাঁর নাম উচ্চারন করতে সাহস পান না!!! তারা বলেন না যে ইমাম আবু হানিফা এই ধরনের
অসিলা প্রত্যাখ্যান করেছেন, তারা বলেন অনেক বিজ্ঞ লোক লোক প্রত্যাখ্যান করেছেন!!!
Collected
from Tablig Jamat + Chormonai er Postmortem FB Page