বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০১৫

+ প্রসংগঃ শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, মূর্তি, ভাষ্কর্য বানানো?

+ প্রসংগঃ শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, মূর্তি, ভাষ্কর্য বানানো?
ধ্বংসপ্রাপ্ত আদ জাতির স্বভাব ছিলো উঁচু উঁচু স্তম্ভ নির্মান করা। তাদের কাছে হুদ আলাইহিস সালাতু আস-সালাম কে নবী করে পাঠানো হয়েছিলো। হুদ (আঃ) তার পথভ্রষ্ট জাতির লোকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তোমরা কী প্রতিটি উচ্চস্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করছো নিরর্থক। [সূরা শুআরাঃ ১২৮]

++ প্রশ্নঃ কোন বিবেকবান মুসলমান ইট পাথর দিয়ে বানানো শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, মূর্তি, ভাষ্কর্যে ফুল-চন্দন, শ্রদ্ধাঞ্জলি বা পুষ্পার্ঘ দিতে পারে?
উত্তরঃ আপনারাই বলুন কোন বিবেকবান মুসলমান শহীদ মিনারে ফুল-চন্দন দিতে পারে?
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামে বড় হই। গ্রামে আমাদের বাগানে অনেক ফুল ফুটতো. . .সেইজন্য মাঝে মাঝে হিন্দুরা আসতো ফুল নিতে। এই ফুল দিয়ে তারা মূর্তিকে দিয়ে পূজা করতো, তাদের ঠাকুর দেবতাদেরকে শ্রদ্ধা জানাতো। তখন ইসলাম সম্পর্কে এতো কিছু জানতাম না, সেইজন্য আমরা ফুল দিতে তাদেরকে মানা করতাম না। যাই হোক, আমার মনে হয়না কোন মুসলমান এই কথাকে অস্বীকার করতে পারবে যে, ইট-পাথর, মিনার, সৌধ বা স্তম্ভে ফুল দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি, শ্রদ্ধাঞ্জলি, পুষ্পার্ঘ দেওয়া. . .এই সংস্কৃতি হিন্দুদের কাছ থেকে এসেছে। হিন্দুরা মূর্তিকে ফুল দেয়. . .আর অজ্ঞ, নামধারী মুসলমান, মুনাফেক শ্রেণীর রাজনীতিবিদেরা অলি-আওলিয়ার নামে, শহীদের নামে, পাথর, সৌধ বা মিনারের নামে ফুল দেয়। এইসমস্ত বিভ্রান্ত লোক যারা পুরো বাঙালি মুসলমানদের উপর এইরকম জঘন্য শিরকি প্রথা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে রাসুল সাঃ এর একটি সহীহ হাদীস ও ক্বুরানের একটা আয়াত তুলে ধরতে চাই,

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
মান তাশাব্বাহা বি ক্বাওমিন ফা হুয়া মিনহুম অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি যেই জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য হবে।
সুতরাং যারা হিন্দুদের অনুকরণ করবে তারা হিন্দুদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, যারা ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের অনুকরণ করবে তারা ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য হবে।

মহান আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন আর তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেন। আর জালিম (মুশরিকদের) জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। [সূরা আল-মায়িদাহঃ ৭২]

+++ আমরা শুধু যুদ্ধে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাই...
দেশকে ভালোবাসা খারাপ কিছুনা...

১. শ্রদ্ধা জিনিসটা শুধু মন থেকে আসে, হিন্দুদের মতো গান বাজনা, ঢাক ঢোল পিটিয়ে, মাযারে, মূর্তির সামনে ফুল দিয়ে, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমির মতো করে জয়োতসব করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, মানুষের সময় ও শক্তি নষ্ট করে শ্রদ্ধা জানানোর দরকার আছে বলে মনে হয় না, ইসলাম এই সমস্ত বিজাতীয় সংস্কৃতি টোটাল হারাম করেছেI কত মানুষ না খেয়ে আছে,শীতের রাতে কষ্ট করে আর গণতন্ত্রবাদী বিভ্রান্ত লোকেরা কোটি কোটি টাকার ফুল কিনে দেশের সম্পদ ও টাকা নষ্ট করছে। এরা দেশের শত্রু।

২. "দেশপ্রেম ঈমানের অংগ" - এটা একটা জাল হাদীস, যা নাইন-টেনের বোর্ডের বইয়ে অর্ধ-শিক্ষিত হুজুরেরা লিখে রেখেছে। সবাই নিজের দেশকে ভালোবাসে, এটা খারাপ কিছুনা। তবে এটা নিয়ে জাতীয়াবাদী চিন্তাভাবনা, আমরা শ্রেষ্ঠ, আমরা আলাদা জাতি - এই ধরণের উগ্রপন্থী চিন্তাভাবনা ইসলামের শীক্ষা বিরোধী, যা হিটোলারের মতো লোকের জন্ম দিয়েছিলো। দেশকে ভালোবাসা জায়েজ, কিন্তু দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে হিন্দুয়ানি কৃষ্টি-কালচার বা অনৈসলামিক সভ্যতা চালানোর অপচেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।

[[ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ- এই কথাটিকে ইমাম ইবন জাওযি রহঃ, ইমাম আস-সাগানি রহঃ, ইমাম নাসির উদ্দিন আলবানি রহঃ জাল হাদিস বলে প্রমাণ করেছেন। ]]

এই হাদিসটি মুসলমানদের মিথ্যা আশা দেয় যে তারা দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা না করেও দেশ প্রেমের জন্য জান্নাতে যেতে পারবে। যেই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় নি এবং যেই দেশের সরকার ইসলামের নিয়ম অনুসারে দেশ পরিচালনা করে না, সেই দেশের জন্য প্রেম ঈমানের অঙ্গ হতে পারে না। ঈমানের একটি অত্যাবশ্যকীয় দাবি হচ্ছে আল্লাহ যেটা আমাদের জন্য ভালো বলেছেন সেটাকে মনে প্রাণে ভালো মানা এবং আল্লাহ আমাদের জন্য যেটাকে খারাপ বলেছেন, সেটাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করা।

এই ধরণের জাল হাদিস ব্যবহার করা হয় ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশের মুসলমানদের মধ্যে দেশের প্রতি অন্ধ ভালবাসা সৃষ্টি করার জন্য। কাফির সরকার দ্বারা পরিচালিত কাফির শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত একটি দেশের প্রতি প্রেম আর যাই হোক, অন্তত আল্লাহর প্রতি ঈমানের অঙ্গ নয়।


তবে এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে দেশের আইন মেনে চলা এবং দেশের উপকার করা মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, যতক্ষণ না সেটা ধর্মের বিরুদ্ধে না যাচ্ছে।