পাঠ্য
বইয়ে দুষ্ট ‘বই’
-
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ শরীফ।
১৬
লাইনের একটি কবিতা। নাম : ‘বই’।
ছাপা
হয়েছে পঞ্চম শ্রেণীর ‘আমার
বাংলা বই’ এর ৩৫ তম পৃষ্ঠায়। সেদিন দেখলাম এক স্নেহভাজনের
হাতে। কবিতার অর্থ সে বুঝতে চাচ্ছে। কবিতার বক্তব্য অনুযায়ী কোন ধরনের বই পড়তে হবে
আর কোন ধরনের বই বাদ দিতে হবে- সে জানতে চাচ্ছে। তখন কবিতার আকারে যা ছাপা হয়েছে,
তা দেখলাম। ‘পাঠ শিখি’ অংশে এর যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা-ও পড়লাম।
দেখলাম এ কবিতার লেখকের নাম এবং চমকে উঠলাম।
কিছু
কিছু বই পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং কিছু কিছু বই পড়তে মানা করা হয়েছে তাতে। নাম
বই হলেও কিছু বইয়ের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ওই ‘কবিতায়’। বলা হয়েছে-
যে-বই
তোমায় দেখায় ভয়
সেগুলো
কোনো বই-ই নয়
সে-বই
তুমি পড়বে না।
যে-বই
তোমায় অন্ধ করে
যে-বই
তোমায় বন্ধ করে
সে-বই
তুমি ধরবে না।
প্রশ্ন
হচ্ছে, এই ‘ভয় দেখানো’ আর ‘অন্ধ করা-বন্ধ করা’ বই আসলে কোন্ বইগুলো?
এর
অর্থ বোঝার জন্য ওই ‘কবিতার
লেখক’-এর নামটি আগে দেখা যেতে পারে। সে নামটি হচ্ছে,
হুমায়ুন আজাদ। ইসলাম ধর্ম বিরোধী লেখালেখির ‘কৃতিত্বের’ কারণে তার ভক্তরা তাকে বলে থাকে - ‘প্রথাবিরোধী লেখক’।
এদেশীয়
অন্য বহু নাস্তিকের মতো তিনিও ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগারের শুরুটা করতেন রাজাকার ও পাকিস্তান
প্রসঙ্গ দিয়ে। এরপরই সরাসরি আঘাত করতেন ইসলাম ধর্মকে। খোলাখুলি ও ন্যাক্কারজনক উপায়ে।
তার একটি বড় রচনা ‘আমার
অবিশ্বাস’। আরেকটি উস্কানিমূলক ও ইসলামবিদ্বেষী রচনা
: নারী। তাছাড়া তার অন্যান্য রচনা, গল্প-উপন্যাস, কলাম ও সাক্ষাৎকারেও তীব্র আর ঝাঁঝালো
ইসলাম-বিদ্বেষের বহু দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। সেই ব্যক্তিরই লেখায় ‘ভয় দেখানো’ আর ‘অন্ধ করা-বন্ধ করা’ বই মানে যে কোন্ ধরনের বই- এটা বুঝতে বাকি থাকার
কথা নয় কোনো সচেতন পাঠকের। অথচ পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্তারা সেটা বুঝেন না- এটা কি
কল্পনা করা যায়! তারপরও কোমলমতি বাচ্চাদের পড়ার জন্য, মুখস্থ করার জন্য এবং ভাবগ্রহণের
জন্য এমন একটি‘কবিতা’ কেন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- এটা
একটা বড় প্রশ্ন।
‘পাঠ
শিখি’ অংশে বলা হয়েছে- যেসব বই তোমাকে স্বার্থপর
করে, ঈর্ষাকাতর ও হিংসাজরজর করে তোলে সেসব বই তুমি পড়বে না। এখানে একটি বড় প্রশ্ন
সৃষ্টি হয়। ‘সেগুলো কোনো বই-ই নয়,’ ‘তুমি পড়বে না’,‘তুমি ধরবে না’ বলে হিংসাত্মক, আক্রমণাত্মক ও জেদী বাক্য যে
লেখায় ছাপা হয়- সেটা কি কোমলমতিদের মনকে খুব আলোকিত করে? খুব উদার করে? হিংসা, বর্জন
ও ঘৃণা-আশ্রয়ী এই ‘কবিতার’ চেয়েও সংকীর্ণ ও হিংসাদুষ্ট কোনো বই কি বাংলাভাষায়
লেখা হয়েছে? তাছাড়া আপাদমস্তক চিন্তায় ও লেখায় প্রথাবিরোধী (পড়ুন : ইসলাম-বিদ্বেষী)
এক লেখকের এ জাতীয় উস্কানিমূলক ‘কবিতা’ কি শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক করা খুব জরুরি
ছিল? তাকে যারা চেনেন তারা সবাই একমত যে, ‘ভয় দেখানো’ আর ‘অন্ধকরা-বন্ধকরা’দিয়ে তার উদ্দেশ্য ইসলামী বিশ্বাস ও বিধি-বিধান
সম্বলিত বই। এটা তো তার অন্যান্য লেখা থেকেও পরিষ্কার।
‘ভয়
দেখানো’ বলে তার উদ্দেশ্য হওয়ার কথা-জাহান্নামের ভয়
বা দোযখের ভয়ে গুনাহর কাজ পরিহার করা। আর ‘অন্ধ করা’ ও ‘বন্ধ করা’-র মর্ম তো পরিষ্কার। এদের মতো অবিশ্বাসীরা ধর্মবিশ্বাসকেই
বলে অন্ধ বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসে স্থির থাকার চেষ্টা করার মানেই মনকে বন্ধ করা।
আরেকটি
ব্যাপার হচ্ছে, বাচ্চাদের জন্য ‘কবিতা’ নামে কিছু ছাপানো হলে সেটা তো কোমল ও কাব্যময়
কিছুই হওয়া উচিত। অথচ ঘৃণা ও আক্রোশে (ধর্মবিদ্বেষী) রচিত কাব্যহীন কিছু ভোঁতা গদ্যের
ছত্রকেও এখানে কবিতা হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন : যে-বই তোমায় দেখায় ভয়
/ সেগুলো কোনো বই-ই নয় / সে-বই তুমি পড়বে না।
তিনটি
লাইন কি একসঙ্গে কোনো কবিতা হয়েছে? এতে কি কবিতার কোনো ভাব / ব্যঞ্জনা বা চরিত্র উপস্থিত?
কবিতার কোনো সাধারণ ছাত্রও দেখে-শুনে এ জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে দেখলে ভালো হয়।
একজন
‘প্রথিতযশা, কীর্তিমান’ ইসলাম-বিদ্বেষী ও আক্রোশ-প্রবণ পন্ডিত লেখকের
নামমাত্র কবিতার নাম : বই। বাচ্চাদের বইয়ে এ জাতীয় দুষ্ট ‘বই’ অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের আরেকবার
ভাবা উচিত বলে অভিভাবকরা মনে করেন।