প্রশ্নঃ ডা. জাকির নায়েক কি কোন মুফতি বা মুহাদ্দিস? তিনি কি ফতোয়া দেওয়ার মতো
বড় কোন আলেম??
উত্তরঃ ডা. জাকির নায়েক একজন দ্বাইয়ী (যিনি মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত
দেন) এবং যুক্তি দিয়ে সুন্দরভাবে ইসলামের বাণী মানুষের মাঝে প্রচার করেন।
আলহামদুলিল্লাহ, তার
দাওয়াতের কারণে অনেক কাফের ও মুসলমান উপকৃত হয়েছে এবং ইসলাম সম্পর্কে সচেতন হয়েছে।
কিন্তু তিনি কোন মুফতি বা মুহাদ্দিস নন, ফতোয়া দেওয়ার মতো বড়
কোন ‘আলেম’ তিনি নন।
ফতোয়া দিতে পারেন তারাই,
যারা হচ্ছেন প্রকৃত ফকীহ, বা যারা ইজতেহাদ
করার মতো যোগ্যতা ও জ্ঞান রাখেন। ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জনের জন্য তাকে
সরাসরি বড় আলেমদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যায়ন করে, অনেক
ইলম অর্জন করে নিতে হয়। আর ইলম অর্জনের যদি শুরু বলেন, সেটা
হচ্ছে আরবী ভাষা, গ্রামার বা ব্যকরণ ও এর ব্যবহার সম্পর্কে
দক্ষ হওয়া যাতে করে একজন ব্যক্তি ক্বুরানের আয়াত ও হাদিসগুলোর প্রকৃত অর্থ ও
ব্যখ্যা সরাসরি মূল আরবী থেকেই বুঝতে পারেন, কারো অনুবাদ বা ব্যখ্যার
দ্বারস্থ না হতে হয়, নয়তো তিনি অন্যদের ব্যখ্যাটাকেই নকল
করবেন, সেটা তার নিজস্ব ফতোয়া হবেনা। কারো অনুবাদ বা ব্যখ্যা
পড়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, এটা এক প্রকার কপি-পেস্ট। এটা
খারাপ কোন বিষয় না, সত্যি কথা বলতে যারা মুফতি বা বড় আলেম নন,
তাদের উচিত হচ্ছে সত্যিকারে আলেমদের ফতোয়াগুলো জানা, বোঝা ও সেই অনুযায়ী উত্তর দেওয়া। তবে অন্যায় যেটা সেটা হচ্ছে, কেউ কপি-পেস্ট করতে করতে এক সময় নিজেই আন্দাজে বা মনগড়া ফতোয়া দেওয়া শুরু
করে দেওয়া, যদিও তার সেই যোগ্যতা নেই!
ফতোয়া দেওয়া খুব জটিল ও কঠিন একটা কাজ। একটা আরবী শব্দের অনেক অর্থ থাকে, আবার সেইগুলোর ব্যবহার
ভিন্ন, তার উপর আয়াতের সঠিক তর্জমা ও তাফসীর, শানে নুযুল জানা, হাদীসের শরাহ বা ব্যখ্যা, নাসেখ-মানসুখ জানা, ফিকহের মূল নীতিমালা ও তার
প্রয়োগ জানা, সাহাবা ও পূর্ববর্তী আলেমরা বিষয়টাকে কিভাবে
বুঝেছেন বা দেখেছেন, একই বিষয়ে কোন আলেমের কি ফতোয়া এবং
কোনটা সঠিক কোনটা ভুল, কেনো সঠিক এবং যেটা ভুল সেটা কেনো
ভুল. . .এমন অনেক বিষয় জানা ও বোঝার পরেই একজন আলেম বা প্রকৃত ফকীহ কোন একটা বিষয়ে
ইসলামী হুকুম বা ‘ফতোয়া’ কি হবে সেটা নির্ণয় করতে
পারেন।
যাই হোক, কেউ
যদি আরবী না জানে আর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রকৃত আলেমদের ফতোয়া না নিয়ে,
নিজে থেকে উত্তর দিতে গেলে কি মারাত্মক ভুল হতে পারে সেটা, নিচে আমি তার একটা উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
ডা. জাকির নায়েককে প্রশ্ন করা হয়েছিলোঃ জান্নাতে পুরুষেরা যদি হুর পায়, তাহলে নারীরা কি পাবে?
এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. জাকির নায়েক বলেন,
“জান্নাতে
নারীরাও হুর পাবে!?”
তার মতে, হুরের
কোন gender নেই, আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী
ক্বুরানের #হুর শব্দের সঠিক অর্থ করেছেন – companion বা সংগী (অর্থাৎ,
নারী অথবা উভয়ই)। সুতরাং এই অনুবাদ অনুযায়ী জান্নাতে নারীরাও সুন্দর
পবিত্র ‘পুরুষ হুর’ পাবে! সেই প্রশ্ন ও উত্তরে
লিংক -
https://www.youtube.com/watch?v=J1_4wzQi4eU
আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী হচ্ছে #বোহরা নামের শীয়াদের চরমপন্থী কুফুরী একটা ফেরকার
অনুসারী, যে
ক্বুরানের অনুবাদ করতে গিয়ে অনেক কুফুরী ও মারাত্মক অপব্যখ্যা লিখে রেখেছে,
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডা. জাকির নায়েক সেই ক্বুরানের অপতাফসীর পড়ে ফতোয়া
দিয়ে দিয়েছেন!
____________________________
‘জান্নাতে
নারীরা পুরুষ হুর পাবে’
- এটা সম্পূর্ণ বাজে একটা কথা। জান্নাতে নারীদের জন্য তাদের দুনিয়ার
জীবনের স্বামী থাকবেন, যাদের স্বামী জান্নাতে যাবেনা তাদের
সাথে অবিবাহিত জান্নাতী পুরুষদের বা যাদের স্ত্রীরা জান্নাতে যেতে পারেনি তাদের
সাথে বিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পুরুষদের জন্য দুনিয়ার স্ত্রী ছাড়াও যেমন জান্নাতের
হুর থাকবে নারীদের তেমনি ‘পুরুষ
হুর’ নামের কোন কিছু থাকবেনা।
দেখুন ক্বুরানের আয়াত দ্বারাই এই জাহালতপূর্ণ অনুবাদ ও ফতোয়ার বিভ্রান্তি কতো
স্পষ্টভাবে ভুল প্রমানিত হয়ঃ
সুরা ওয়াক্বিয়ায় আল্লাহ তাআ’লা
বলেছেন,
৩৫. আমি জান্নাতী রমণীদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি।
৩৬. অতঃপর তাদেরকে করেছি #চিরকুমারী।
৩৭. #কামিনী, সমবয়স্কা।
৩৮. ডান দিকের লোকদের জন্যে।
=> ‘হুরদের’ এই বর্ণনা কি কখনো কোন
পুরুষের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে!? বুদ্ধিমান লোকদের জন্য
চিন্তার খোরাক হিসেবেই প্রশ্নটা রেখে দিলাম।
সুরা আন-নাবায় আল্লাহ তাআ’লা
বলেছেন,
৩১. নিশ্চয়ই মুত্ত্বাকীদের জন্যে রয়েছে সাফল্য।
৩২. উদ্যান,
আঙ্গুর,
৩৩. সমবয়স্কা,
পূর্ণযৌবনা তরুণীরা।
৩৩ নাম্বার আয়াত,
وَكَوَاعِبَ أَتْرَاباً এর অর্থ করা হয়েছে – “সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী”।
এখানে আরবীতে كَواعِبَ (ক্বাওয়ায়ি’বা)
শব্দটির অর্থ হচ্ছে এমন নারী যার বক্ষ হচ্ছে উঁচু ও স্ফীত, যা সাধারণত কুমারী নারীদেরই
হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, এটা জান্নাতী নারীদের বিশেষ একটা
বৈশিষ্ট্যই হছে – তারা চিরকুমারী থাকবে, যা সুর ওয়াকিয়াতেও বলা হয়েছে।
রেফারেন্স দেখুন সুরা ওয়াকিয়া ও সুরা নাবার তাফসীর, তাফসীর
ইবনে কাসীর।
(Kawa`ib) - "This
means round breasts. They meant by this that the breasts of these girls will be
fully rounded and not sagging, because they will be virgins, equal in
age."
See
more at:
http://www.alim.org/library/quran/AlQuran-tafsir/TIK/78/31#sthash.pZLNhtpx.dpuf
আশা করি এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট, জান্নাতের হুরদের কোন
জেন্ডার আছে কি নেই, আর থাকলে সেটা কোন জেন্ডার!? তারপরেও যারা আরো বিস্তারিত আলোচনা জানতে চান, তারা
আল-ফকীহ, ইমাম ইবনে উসায়মিন রহঃ এর ‘ফতওয়া আরকানুল ইসলাম’ বইয়ে হুরদের নিয়ে প্রশ্নের
উত্তরে দেখুন।
সর্বশেষঃ ২-৩ মাস পূর্বে,
কাছাকাছি একটা বিষয় নিয়ে পোস্ট দিলে একজন প্রবাসিনি আমাকে মেসেজে
ইংরেজীতে কিছু কথা বলেন, তার কথা থেকে মনে হলো - সে হাদীসের
ব্যপারে সন্দেহের মাঝে আছে, তিনি হাদীস মানতে রাজি নন। তিনি
আরো তার অভিজ্ঞতা বললেন, কিভাবে তিনি এমেরিকান আলেম (আসলে
রাশেদ খলিফার উম্মত, আহলে ক্বুরান) এর কাছ থেকে হুরের সঠিক
অর্থ পেয়েছেন যে, নারীদের জন্যও ‘পুরুষ হুর’ থাকবে। যাইহোক, কিছু কথা বলে আমি তাকে উপদেশ দিয়েছিলাম – সম্ভব হলে মুসলিম কোন দেশে
হিজরত করা ও মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য। বিদেশে ইয়াহুদী-খ্রীস্টানরা মুসলমানদের
ঈমান নষ্ট করার জন্য অনেক ভ্রান্ত দল ও মতবাদ তৈরী করে রেখেছে, তাদের বই-পত্র ছাপায়। একজন সাধারণ মুসলমান যদি নূন্যতম জরুরী জ্ঞান না
থাকে, বিভিন্ন-যুক্তি তর্কের ফাঁদে পড়ে সেই সমস্ত ভ্রান্ত মতবাদকেই
সঠিক মনে করে পরকাল নষ্ট করবে। সেইজন্য সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনদের সকলের কাছে
অনুরোধ, আপনারা দ্বীন শিক্ষা করুন। নিজেকে হেফাজত করুন,
ইসলামের খেদমতে আত্মনিয়োগ করুন।
প্রশ্নঃ husband
and wife 2jon e jodi jannati hoy tahole o ki purush ti hur
biye korbe?
হ্যা করবে,
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য নিয়ামত। এটা নিয়ে স্ত্রীদের
চিন্তিত বা মন খারাপ করার কিছু নেই। জান্নাতে নারী বা পুরুষ যে যাই চাইবে তা-ই
পাবে। তবে কেউ কখনো হারাম বা আল্লাহ যা করবেন না, এমন কোন
কিছু কখনো চাইবেনা। জান্নাতী নারী ও পুরুষদের অন্তর থেকে লোভ, হিংসা বিদ্বেষ দূর করে দেওয়া হবে। দুনিয়ার জীবনে মতো জান্নাতে একজন
অন্যজনের বিবির প্রতি কামনা বা লোভ করবেনা, এক স্ত্রী
স্বামীর অন্য স্ত্রী থাকা নিয়ে অভিযোগ করবেনা। রাসুল সাঃ এর একাধিক বিবি ছিলো,
তাঁরা জান্নাতে এটা নিয়ে কষ্ট পাবেনা বা এর পরিবর্তে অন্য কোন কিছু
চাইবেন না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস ঈমান আনে ও নেক কাজ
করে, তাদের
অভ্যর্থনার জন্যে থাকবে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, তার পরিবর্তে অন্য কোন কিছু চাইবে না।” [সুরা আল-কাহফঃ ১০৭-১০৮]
মোট কথা যে জান্নাতে যাবে সে সর্ব রকম সুখ ও শান্তির মাঝে থাকবে, তার অন্তরে অণু পরিমান কষ্ট
থাকবেনা। তাই আমাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার থেকে, কিভাবে
সেই নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে পা রাখতে পারবো সেই চিন্তাই বেশী করা উচিত।
সর্বশেষঃ ডা. জাকির নায়েকের অনেক ভালো কাজ আছে, আমরা দুয়া করি আল্লাহ্ তার
ভুলগুলো ক্ষমা করে নেক আমলগুলো কবুল করে নিন। কিন্তু আমরা তার ভুলগুলোর পক্ষ নিয়ে
অন্ধভাবে তর্ক করিনা। আমরা আলেম নন এমন কাউকে অতি প্রসংসা করতে করতে ‘আল্লামাহ’ বানিয়ে দেই না। ইসলাম হচ্ছে
মধ্যপন্থা, কারো প্রতি বিদ্বেষবশত আমরা যেমন তার ভালো কাজগুলোকে
অস্বীকার করিনা, আবার কারো প্রতি অন্ধ ভালোবাসার কারনে তার
ভুলগুলোও সব ঠিক, তিনি ভুল করতেই পারেন না, এমন চরমপন্থার শিকার হইনা। যিনি আলেম নন এমন কাউকে দুনিয়ার এক নাম্বার
আলেম বানিয়ে অন্যদের সাথে মিথ্যা তর্কেও লিপ্ত হইনা।