সুরা বাক্বারার
শেষ দুই আয়াতের ফযীলত, আরবী, উচ্চারণ
ও বাংলা অর্থঃ
সুরা বাক্বারার
শেষ দুটি আয়াত (২৮৫+ ২৮৬, আমানার
রাসূলু...থেকে শেষ পর্যন্ত) তেলাওয়াত করার অনেক উপকারের কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত
হয়েছে। শেষ আয়াতে অত্যন্ত জরুরি কয়েকটি দুয়া রয়েছে। এসব দুয়া কবুল হওয়ার ওয়াদাও
করা হয়েছে।
প্রিয় নবীজী
(সাঃ) একদিন বললেন, “এই
মাত্র আকাশের একটি দরজা খোলা হয়েছে। এর আগে কখনও এ দরজাটি খোলা হয়নি, এ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করছেন। এর আগে
তিনি কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। এ ফেরেশতা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে সালাম করে বলেন,
সুসংবাদ গ্রহণ করুন আপাদমস্তক দুটি নূরের, যা
আপনার আগে কোন নবীকে দেয়া হয়নি
১. ফাতেহাতুন
কিতাব অর্থাৎ সুরা ফাতেহা এবং
২. সুরা বাকারার
শেষ দুই আয়াত।
উভয় আয়াতে দোয়া
আছে। আল্লাহর উসিলা করে, আপনি
এসব দোয়ার যে অংশই পাঠ করবেন আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই রহমত দান করবেন, (অর্থাত কবুল
করা হবে)।
সহীহ মুসলিম।
রাতের বেলা
ঘুমানোর পূর্বে সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করলে তাহাজ্জুদ নামাযের সমান
সওয়াব পাওয়ার আশা করা যেতে পারেঃ
রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাক্বারার শেষ দুই
আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ঠ হবে।”
বুখারি ৫০১০, মুসলিম ৮০৭।
বিখ্যাত হাদীসের
কিতাব, ‘রিয়াদুস সালেহীন’ এর লেখক ও সহীহ মুসলিমের
ভাষ্যকার, ইমাম আন-নববী (রহঃ) বলেন,
“এর অর্থ কেউ বলেছেন, কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ
নামাযের জন্য যথেষ্ঠ হবে। কেউ বলেছেন, শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ
হবে। কেউ বলেছেন, বালা-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। তবে সবগুলো অর্থ সঠিক
হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
শারহুন নববী আলা
সহিহ মুসলিমঃ ৬/৩৪০, হাদীস
৮০৭।
সহীহ বুখারীর
ভাষ্যকার, আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদীস,
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এই অভিমত সমর্থন করে বলেন, উপরের সবগুলো অর্থ নেওয়া সঠিক। আল্লাহ ভালো জানেন। প্রথম অর্থটি (তাহাজ্জুদের সমান সওয়াব পাওয়া
যাবে) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে একটি মারফু হাদীসে স্পষ্ট ঊল্লেখ আছে।
ফাতহুল বারীঃ
৮/৬৭৩, হাদীস নং- ৫০১০।
এ কারণেই আলী
(রাঃ) বলেন, “আমার মতে যার সামান্যও
বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে এ
দুটি আয়াত পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যাবে না”।
মানাকিবুস
সাহাবা, ইমাম নববী এটাকে সহীহ বলেছেন,
আল-আযকার।
হজরত আবু মাসউদ
(রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেন, “যে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করবে, তার জন্য এ দুটি আয়াত যথেষ্ট হবে; অর্থাৎ সারারাত সে জিন ও মানুষের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে এবং প্রতিটি
অপ্রিয় বিষয় থেকে তাকে হেফাজত করা হবে।
সহীহ বুখারি ও সহীহ
মুসলিম।
আ’উযু
বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
آمَنَ
الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ
بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ
مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ
الْمَصِيرُ
لَا
يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا
اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا
وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ
قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا
وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ
الْكَافِرِينَ
উচ্চারণঃ
২৮৫.
আমানুর-রাসুলু বিমা উংজিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন।
কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি, লা নুফার-রিকু বাইনা আহা’দিম-মির
রুসুলিহি। ওয়া ক্বালু সামি’না, ওয়া
আত্বা’না, গুফরা
নাকা, রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।
২৮৬. লা ইউ
কাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস-আ’হা। লাহা মা কাসাবাত
ওয়া আ’লাইহা মাক তাসাবাত। রব্বানা লা-তু আখজিনা-ইন্না সিনা- আও আখত্বা’না।
রাব্বানা ওয়ালা তাহ’মিল আ’লাইনা ইসরান কামা হা’মালতাহু
আ’লাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা। রব্বানা ওয়ালা তুহা’ম্মিলনা
মা-লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়াআ’ফু আ’ন্না, ওয়াগ ফিরলানা, ওয়ার হা’মনা।
আংতা মাওলানা, ফানছুরনা আ’লাল ক্বাওমিল কাফিরিন। (আমিন)।
অর্থঃ
২৮৫. রসূল
বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে
অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর
গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের
মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল
করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই
দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
২৮৬. আল্লাহ
কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে
আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন
দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ
করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও
না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর।
আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের
সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।
(আমিন)
মহান আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবাইকে পবিত্র কোরআন শরিফের এ বরকতময়
সম্মানিত আয়াত পাঠ এবং আমল করার তাওফিক দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের সব মুসিবত, বিপদ-আপদ, রোগ-শোক অতিক্রম
করে শান্তিময় ও সুখের জীবনলাভে ধন্য করুন। আমিন!
____________________________________________