ইসলামে ছবি অঙ্কনের
হুকুম
- শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী হা’ফিজাহুল্লাহ
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ইসলামে কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা কঠোরভাবে
নিষিদ্ধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ছবি অঙ্কনকারীদের জন্য ভয়াবহ আযাবের
কথা বর্ণিত হয়েছে। কেননা তাতে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য করা হয়ে থাকে। সৃষ্টি করা এবং
হুকুম করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। সুতরাং আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিসমূহের কোন সৃষ্টির
সামঞ্জস্য করা জায়েয নেই। কেননা এতে আল্লাহর সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করা হয়। আবু হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে, যে ব্যক্তি
আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করতে চায়? তাদের শক্তি থাকলে তারা একটা অনু সৃষ্টি করুক অথবা
একটা দানা সৃষ্টি করুক কিংবা একটি যবের দানা সৃষ্টি করুক।
বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এরশাদ করেছেনঃ
“কিয়ামতের দিন সবচেয়ে শাস্তি হবে তাদেরই যারা আল্লাহ তাআলার
সৃষ্টির মতো ছবি বা চিত্র অঙ্কন করে”।
বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬ামকে বলতে শুনেছি, “প্রত্যেক চিত্র অঙ্কনকারীই জাহান্নামী। চিত্রকর
যতটি (প্রাণীর) চিত্র এঁকেছে তার প্রতেকটির বদলে একটি করে প্রাণ সৃষ্টি করা হবে। এর
মাধ্যমে তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে”।
বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে ‘মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে,
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন (প্রাণীর) চিত্র অঙ্কন করবে, কিয়ামতের
দিন তাকে ঐ চিত্রে আত্মা দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে আত্মা দিতে সক্ষম হবেনা”।
সহীহ মুসলিমে আবুল হাইয়াজ আল-আসাদী হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, আলী (রাঃ) একদা আমাকে বললেনঃ
‘আমি কি তোমাকে এমন কাজে পাঠাবোনা, যে কাজে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম আমাকে পাঠিয়েছিলেন?
সে কাজটি হচ্ছে, ‘তুমি কোন প্রাণীর ছবি
দেখলেই তা বিলুপ্ত না করে ছাড়বেনা। আর কোন উচু কবরকে মাটির সমান না করে ছাড়বেনা”।
আবুল হাইয়াজ আলআসাদীর নাম হচ্ছে হাইয়ান বিন হুসাইন। তিনি
আমীরুল মুমিনীন আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) থেকে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। উপরোক্ত হাদীছগুলো
দ্বারা প্রমাণিত হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কাজগুলোর প্রতিবাদ
করেছেন এবং তা মিটিয়ে ফেলার হুকুম দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা সূরা বাকারার ৫৯ নং আয়াতে
বলেনঃ “কিন্তু তাদেরকে যে কথা
বলা হয়েছিল, যালেমরা তাকে অন্য কথা দ্বারা বদল করে দিয়েছিল”। আর তারা বহু ছবি তৈরী করেছে এবং তা ব্যবহার
করছে। কবরের উপর প্রচুর (ঘর ও মসজিদ) নির্মাণ করেছে, সেগুলোকে চাকচিক্যময় করেছে এবং
সেগুলোকে মূর্তিতে পরিণত করেছে। এই কাজকে দ্বারা দ্বীন করেছে। অথচ এটি সর্বাধিক নিকৃষ্ট
কাজ এবং সর্বাধিক গুনাহএর কাজ। কেননা এতে রয়েছে মৃতদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও বাড়াবাড়ি
এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য বিভিন্ন প্রকার এবাদত পেশ করার ছড়াছড়ি। এথচ এটি হচ্ছে
বান্দার উপর একমাত্র আল্লাহ তাআলার অধিকার।
আল্লামা ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কবরের
ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সুন্নাত, কবরের বিষয়ে তাঁর আদেশ-নিষেধ
এবং এ বিষয়ে তাঁর সাহাবীগণ যেই নীতির উপর ছিলেন তা এবং বর্তমান যামানার অধিকাংশ মুসলিমের
অবস্থার মাঝে তুলনা করবে, সে সুস্পষ্টরূপে জানতে পারবে যে উভয় অবস্থা পরস্পর বিপরীত।
এই দু’টি অবস্থা কখনও একসাথে
চলতে এবং একত্রিত হতে পারেনা।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা যা শিখতে পাইঃ
১) ছবি তৈরীকারীদের ব্যাপারে খুব কঠোর ধমকি ও শাস্তি কথা
বর্ণিত হয়েছে।
২) ছবি বানানো থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করার কারণও বলে দেয়া
হয়েছে। এখানে কঠোরতা অবলম্বনের কারণ হচ্ছে, ছবি নির্মাণে আল্লাহর সাথে বেআদবী হয়। আল্লাহ
বাণী ঃ
‘তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে ব্যক্তি আমার সৃষ্টির
মতো সৃষ্টি করতে চায়?
৩) এখানে সৃষ্টি করার ব্যাপারে আল্লাহর কুদরত বা ক্ষমতার
প্রতি সতর্ক করা হয়েছে। অপরদিকে বান্দা যে এতে সম্পূর্ণ অক্ষম তা বলা হয়েছে। তাই আল্লাহ
তাআলা ছবি প্রস্তুতকারীদেরকে বলেছেন, ‘তোমাদের ক্ষমতা থাকলে তোমরা একটা অনু অথবা একটা দানা কিং একটি
যবের দানা তৈরী করে নিয়ে এসো’।
৪) সুস্পষ্ট করে ঘোষণা করা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন চিত্রকরদের
সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে।
৫) চিত্রকর যতটা প্রাণীর ছবি আকঁবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ
তাআলা তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য ততটা প্রাণ সৃষ্টি করবেন এবং এর দ্বারাই জাহান্নামে তাঁকে
শাস্তি দেয়া হবে।
৬) অঙ্কিত ছবিতে রূহ বা আত্মা দেয়ার জন্য চিত্রকরকে বাধ্য
করা হবে।
৭) প্রাণীর ছবি পাওয়া গেলেই তা ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া
হয়েছে।
বিনা প্রয়োজনে কোন ছবিই অঙ্কন করা জায়েয নয় বলে বিজ্ঞ আলেমগণ
মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ মিডিয়াকে ছবি দিতেন
না, আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন ও দিতেন না। ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ
ইবনে বাজ রাহিমাহুল্লাহর এব্যাপারে ছোট একটি বই রয়েছে। এতে তিনি সকল প্রকার ছবি উঠানোকেই
হারাম বলেছেন। তবে পাসপোর্ট, ইকামা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি প্রয়োজনে ছবি তোলার
কথা ভিন্ন। মনের তৃপ্তি ও শান্তনার জন্য আপন ছেলেমেয়েদের ছবি উঠানো, বিশেষ করে প্রবাসীদের
জন্য জায়েয বলে কেউ বলেছেন বলে জানা যাচ্ছে না। ফেসবুকে দ্বীনী ভাইয়েরা তাদের ছবি ব্যবহার
করছেন। বড় কোন আলেম এই কাজটিকে জায়েয বলেছেন, বলে আমি জানিনা। সৌদি আরবে বড় বড় আলেমদের
টিভি চ্যানেল রয়েছে। সেখানে শুধু আওয়াজ শুনা যায়, চলমান বা স্থায়ী কোন ছবিই সেখানে
দেখা যায়না।
এ ব্যপারে আল্লাহ ভাল জানেন।