আসুন একটি হাদীস পড়ি এবং হাদীস থেকে কিভাবে পিতা-মাতার
সেবা যত্ন করতে হবে, তাক্বওয়া, ইখলাস, ও নেক আমলকে ওসীলা বানিয়ে দুয়া করতে হয় সেটা
শিখিঃ
_______________________________
অধ্যায়ঃ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল কথা, কাজ ও নিয়তে
ইখলাস (বিশুদ্ধতা) ও একনিষ্ঠতা জরুরী।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে
আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, পুর্বেকার যুগে তিন ব্যক্তি কোথাও
যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বৃষ্টি এসে পড়ল। তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত গুহায় আশ্রয়
নিতে বাধ্য হলো কিন্তু তারা গুহায় প্রবেশ করার সাথে সাথে একটি পাথর খণ্ড গড়িয়ে এসে
গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা স্থির করল যে, তাদের নেক আমলকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর
কাছে দো’আ করলে এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি
পাওয়া যেতে পারে। তাদের একজন দো’আ করলঃ
হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অত্যন্ত বৃদ্ধ। আমি আমার পরিবার-পরিজনের আগেই তাদেরকে দুধ
পান করাতাম। একদিন আমায় জ্বালানী কাঠের সন্ধানে অনেক দূরে যেতে হলো। আমি যখন রাতে
বাড়ি ফিরে এলাম, তখন আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমি দুধ নিয়ে যথারীতি তাদের
কাছে গিয়ে দেখি, তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদেরকে জাগিয়ে তোলা আমি সমীচীন মনে করলাম
না। আবার তাদের খাওয়ার পূর্বেই পরিবারের লোকদের দুধ পান করানোও সঙ্গত মনে হলো না।
আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে রাতভর পিতা-মাতার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে ঘুম
থেকে জাগিয়ে তোলা আমি সঙ্গত মনে করলাম না। এদিকে বাচ্চারা আমার পায়ের কাছে বসে ক্ষুধায় কাঁদছিল। এই অবস্থায়
সকাল হয়ে গেল এবং তারা ঘুম থেকে জেগে উঠলেন।
আমি তাদরেকে দুধ পান করালাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে
থাকি, তাহলে আমার ওপর থেকে পাথরের এই বিপদ দূর করে দাও। এতে পাথর খণ্ড কিছুটা দূরে
সরে গেল বটে, কিন্তু গুহা থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারল না।
অপর ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল;
আমার কাছে তাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি সুন্দরী বলে মনে হতো। (এক বর্ণনা মতে) তার সাথে
আমার অসামান্য ভালোবাসা ছিল। পুরুষ নারীকে যতটা ভালবাসতে পারে, আমি ততটাই তাকে ভালবাসতাম।
আমি তার সঙ্গে কামনা চরিতার্থ করার আকাঙ্খা ব্যক্ত করলাম। কিন্তু সে এতে সম্মত হলো
না। অবশেষে এক দুর্ভিক্ষের বছরে সে দুর্বল হলে আমার নিকট এলো। আমি তাকে আমার সাথে নির্জনে
মিলনের শর্তে একশো বিশটি স্বর্ণমুদ্রা (দিনার) দিলাম। আমার প্রস্তাবে সে সম্মত হলো।
আমি তখন তাকে নিয়ন্ত্রণে নিলাম। অন্য বর্ণনা মতে আমি যখন তার দুই হাঁটুর মাঝখানে বসলাম,
তখন সে কম্পিত কন্ঠে বললঃ ‘ওহে! তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং
অবৈধভাবে আমার সতীত্ব নষ্ট করো না।’ আমি
তৎক্ষণাৎ মেয়েটিকে ছেড়ে চলে গেলাম। অথচ আমি মেয়েটিকে তীব্রভাবে ভালোবাসতাম। আমি
তাকে যে স্বর্ণ মুদ্রা দিয়েছিলাম তাও ফেলে এলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার
সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে এই বিপদ থেকে আমাদেরকে মুক্তি দান করো। এর ফলে পাথর
খণ্ডটি আরও কিছুটা সরে গেল। কিন্তু এতেও তারা বের হতে পারল না।
তৃতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন শ্রমিককে
কাজে লাগিয়েছিলাম। আমি তাদেরকে যথারীতি পারিশ্রমিক দিলাম। কিন্তু একজন শ্রমিক তার
পারিশ্রমিক কম ভেবে তা না নিয়েই চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিককে ব্যবসায়ে নিয়োগ করলাম।
এতে তার পারিশ্রমিকের অংক অনেক বেড়ে গেল। কিছুদিন পরে লোকটি ফিরে এলো। এসে আমায় সম্বোধন
করে বললঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার প্রাপ্য পারিশ্রমিকটা দিয়ে দাও। আমি বললামঃ সামনে যত উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও চাকর-বাকর
দেখছো, সবই তোমার পারিশ্রমিক। সে বললঃ হে আল্লাহর
বান্দা! তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করো না। আমি তাকে বললামঃ আমি তোমার সাথে মোটেই ঠাট্টা
করছি না। এরপর সে সব মালামাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই রেখে গেল না। হে আল্লাহ! আমি
যদি তোমার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজ করে থাকি, তাহলে আমাদের থেকে এ বিপদটা দূর করে দাও।
এরপর গুহার মুখ থেকে পাথর খণ্ডটি সরে গেল এবং তারা সকলেই বের হয়ে আপন গন্তব্যের দিকে
চলে গেল।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীনঃ হাদিস
নং- ১২।