শুক্রবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৫

অনেক বিপদগ্রস্থ বা দুঃখ কষ্টে আপতিত বান্দার কি করা উচিত?

প্রশ্নঃ অনেক বিপদগ্রস্থ বা দুঃখ কষ্টে আপতিত বান্দার কি করা উচিত?

উত্তরঃ সুখ-শান্তি আল্লাহর দান, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সুখে রাখেন যাকে ইচ্ছা কষ্টে রাখেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ এবং তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান।
সুরা আন-নাজমঃ ৪৩।

অবশ্য জীবনে সুখ-দুঃখ আমাদের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব, তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে করে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মাঝে আমলের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ? এবং তিনি পরাক্রমশালী, অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
সুরা আল-মুলকঃ ১-২।

এমনকি মানুষের জীবন, সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি, পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাস, এ সব কিছুই সেই পরীক্ষার অংশ। আল্লাহ এইগুলো কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করেন, কাউক না দিয়ে পরীক্ষা করেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।
সুরা আত-তাগাবুনঃ ১৫।

যেহেতু আমাদের সুখ-শান্তি আল্লাহর দান, তাই বিপদের সময় আমাদের আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তন করা উচিত এবং তাঁর কাছে বিপদ-আপদ বা দুঃখ-কষ্ট থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য উচিত।

১. ধৈর্যের মাঝে রয়েছে কেউ যদি বিপদের সময় নফল রোযা রাখে এবং রোযা রেখে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করে, তাহলে সেটা খুবই উত্তম। কারণ, রোযাদার বান্দার দোয়া আল্লাহ বেশি কবুল করেন।

২. দুয়ার মাঝে সবচাইতে বড় একটা দুয়া হচ্ছে দুয়ায়ে ইউনুস।
ক. বিপদ বা দুঃশ্চিন্তার জন্য এই দুয়াটা সবাই মুখস্থ করে নিনঃ
তিমি মাছের পেটে থাকা অবস্থায় ইউনুস (আঃ) এই দোয়া করেছিলেন এবং কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন।

لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظّالِمِينَ

উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লা-আনতা, সুবহা-নাকা ইন্নি কুনতু-মিনায-যোয়ালিমিন।
অর্থঃ "(হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।"
কুরানুল কারীমে এই ঘটনা ও দুয়াটি বর্ণিত হয়েছে সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত নাম্বার ৮৭ তে।

এই দুয়ার উপকারীতাঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি এই দুয়া পড়ে, তার দুয়া কবুল করা হবে। অন্য হাদীস অনুযায়ী, এই দুয়া পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দিবেন। সুনানে আত-তিরমিযী।

দুয়া কিভাবে পড়তে হবেঃ বিপদ আপদ বা দুঃশ্চিন্তার সময় এই দুয়া বেশি বেশি করে পড়তে হয়। যতবার ইচ্ছা ও যতবার সম্ভব হয় ততবার পড়বেন। এক লক্ষ পঁচিশ হাজার পড়ে যে খতম ইউনুস পড়ানো হয় হুজুর বা মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে টাকা দিয়ে ভাড়া করে, বা দুয়া কেনাবেচা করা হয় এইগুলো বেদাত এই রকম খতম করানোর কোনো দলীল নেই শরীয়তে। আপনার যতবার সম্ভব হয় ততবার পড়বেন এত এত বার পড়তে হবে, এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনি নিজের জন্য নিজে দুয়া করবেন - আল্লাহর কাছে সেটাই বেশি পছন্দনীয়। সর্বোত্তম হচ্ছে ফরয/নফল/সুন্নত যেকোনো নামাযের সিজদাতে এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অতুলনীয় রহমতের ছায়ার মধ্যে আশ্রয় দিন, আমীন।

খ. দুঃখ ও দুশ্চিন্তার সময় পড়ার দোআঃ
এই দুয়া সকাল সন্ধ্যায় একবার করে, যেকোন নামাযের দুয়া মাসুরা অর্থাৎ দুরুদ পড়ে সালাম ফেরানোর আগে এবং মুনাজাতে পড়তে পারেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

আল্লা-হুম্মা ইন্নি আঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালাইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩; সেখানে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোআটি বেশি বেশি করতেন। আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩; আরও দেখুন যা পৃষ্ঠায় ১৩৭ নং এ বর্ণিত হবে।

গ. এমন আরো দুয়া জানার জন্য আপনারা হিসনুল মুসলিম বই পড়ুন, সেখানে বিপদ-আপদ ও দুঃশ্চিন্তার সময় রাসুল সাঃ এর সুন্নতি বিভিন্ন দুয়া দেওয়া আছে, আরবী মুখস্থ করতে না পারলে অন্তত দেখে দেখ পড়ুন।

৩. ইবাদতের দিকে মনোযোগী ও যত্নবান হওয়া, শিরক, বেদাত, হারাম ও পাপাচার ছেড়ে এক আল্লাহমুখী হওয়া। আমরা যারা রিযিক / সময়ের অভাবে ভুগছি, তারা নিচের হাদীসটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারিঃ

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি নিজের অবসর সময় তৈরী কর ও ইবাদতে মন দাও, তাহলে আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র দূর দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাতকে ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দেব, এবং তোমার অভাব কখনোই দূর করব না।
জামে তিরমিযীঃ ২৬৫৪, সুনানে ইবনে মাজাঃ ৪১০৭।

এই পোস্টটা পড়তে ভুলবেন না, আল্লাহ আমাদের বিপদে কেনো ফেলেন?


https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1411735158./909010189131729/?type=1