নারী শিক্ষার আসর
__________________________
নারীদের বিবাহের জন্যে ‘ওয়ালী’ বা অভিভাবক
ও তার শর্তাবলী, অভিভাবকের বাঁধা ও করণীয়ঃ
লিখেছেনঃ শায়খ
আব্দুল্লাহিল আল-কাফী।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন,
“(নারীদের জন্যে) ওয়ালী
বা অভিভাবক
ব্যতীত কোন বিবাহ নেই।”
সুনানে তিরমিযীঃ ১১০১, সুনানে আবু দাউদঃ ২০৮৫; শায়খ আলবানী (রহঃ) হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, “যে নারী নিজে নিজের
বিবাহ সম্পন্ন করবে তার বিবাহ, বাতিল, বাতিল বাতিল। অভিভাবকরা যদি ঐ নারীর বিবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে, তবে যার ওয়ালী নেই সুলতান বা শাসক
তার ওলী বা অভিভাবক হবে।”
মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযীঃ ১১০২, আবু দাউদঃ ২০৮৩, ইবনে মাজাহ, মিশকাতঃ ৩১৩১।
তাই কোন নারীর বিবাহের জন্য ‘ওয়ালী’ বা অভিভাবক আবশ্যক। অভিভাবক উপযুক্ত হওয়ার জন্য ৬টি শর্ত রয়েছেঃ
(১) ‘আকল’ বা বিবেক সম্পন্ন হওয়া (পাগল হলে হবে না)
(২) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া
(৩) স্বাধীন হওয়া
(৪) পুরুষ হওয়া (বিবাহের ক্ষেত্রে কোন নারী অন্য একজন নারীর অভিভাবক হতে পারবে
না)
(৫) অভিভাবক ও যার অভিভাবক হচ্ছে উভয়ে একই দ্বীনের
অনুসারী হওয়া। (কোন কাফের ব্যক্তি মুসলিম নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। কোন মুসলিম কোন কাফের নারীর অভিভাবক হবে না।)
(৬) অভিভাবক হওয়ার উপযুক্ত হওয়া। (অর্থাৎ বিবাহের
জন্য ‘কুফূ’ বা তার কন্যার জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন বা সমকক্ষ পাত্র নির্বাচন
করার জ্ঞান থাকা ও বিবাহের কল্যাণ-অকল্যাণের বিষয় সমূহ অনুধাবন জ্ঞান থাকা)।
অভিভাবক হওয়ার শর্তঃ
উপরের কোন একটি শর্ত না পাওয়া গেলে তখন ঐ ব্যক্তি
অভিভাবকত্ব হারাবে, তখন ঐ অভিভাবকত্ব পরবর্তী নিকটতম ব্যক্তির নিকট স্থানান্তরিত হবে।
যেমন বাবা (অযোগ্য বা মৃত হলে) দাদা ওয়ালী হবে, বাবা এবং দাদা না থাকলে তারপর নারীর ভাই, প্রাপ্তবয়ষ্ক ভাই না
থাকলে তার চাচা ওয়ালী হবে ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত
যদি কেউ না থাকে, তবে দেশের ‘মুসলিম শাসক’ বা তার প্রতিনিধি বা গভর্ণর ঐ নারীর অভিভাবক হিসেবে গণ্য হবে।
বিবাহের ক্ষেত্রে সমকক্ষতা বা যোগ্যতাঃ
কোন যুবক যদি দ্বীনদারী ও চরিত্রের দিক থেকে
পছন্দনীয় হয়, অর্থাৎ সে আল্লাহকে ভয় করে চলে ফরয ইবাদত সমূহ যথাযথ আদায় করে যাবতীয়
হারাম থেকে বেঁচে চলে এবং আচরণ ও চরিত্রের দিক থেকে উত্তম হয়, তবে সেই সর্বাধিক উপযুক্ত
পাত্র। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“তোমাদের নিকট যদি এমন পাত্র বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে যার
দ্বীনদারী ও চরিত্র তোমাদের নিকট পছন্দসই, তবে তার সাথে তোমাদের কন্যাদের বিবাহ দিয়ে
দাও। যদি তোমরা এরূপ না কর (দ্বীনদার ও চরিত্রবান পাত্রকে প্রত্যাখ্যান কর এবং তাদের
সাথে কন্যাদের বিবাহ না দাও) তবে এর কারণে পৃথিবীতে অনেক বড় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে।
(তিরমিযী)
যদিও দুনিয়াদারী বা অর্থ-সম্পদের বিষয়টিকেও কেউ
কেউ উপযুক্ত হওয়ার শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু তা যথার্থ নয়। কেননা আল্লাহ বলেছেন,
{وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [النور: 32]
“তোমাদের
মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে
যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি সম্পদহীন নিঃস্ব ও ফকীর হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে
তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” [সুরা নূরঃ ৩২]
এটা বিবাহের বরকত।
জমহূর বা অধিকাংশ বিদ্বান পাত্র ‘কুফু’ বা উপযুক্ত হওয়ার জন্যে
চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তা হচ্ছে, ধর্ম, স্বাধীন, বংশ ও পেশা।
অর্থাৎ
(১) মুসলিম কন্যাকে কাফেরের
সাথে বা সৎকর্মশীলা কন্যাকে ফাসেকের সাথে বিবাহ দেওয়া যাবে না।
(২) স্বাধীন নারীকে কোন
ক্রিতদাসের সাথে বিবাহ দেওয়া যাবে না, ভাল বংশের কন্যা
নীচু বংশের লোকের সাথে বিবাহ দিবে না এবং কন্যার পরিবার ভাল পেশাদার হলে নিচু মানের
পেশাদার পাত্রকে (যেমন, নাপিত, ধোপা, মুচি ইত্যাদি) কন্যা দিবে না। কিন্তু ইমাম মালেক
শুধু ধর্ম ও চরিত্রের বিষয়টিকেই পাত্রের উপযুক্ততার বিশেষণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
মোল্লা আলী ক্বারী বলেছেন, “ধর্ম ও চরিত্র ব্যতীত পাত্রের যদি আর কোন উপযুক্ত বিশেষণ না থাকে
এবং কন্যা তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তবে বিবাহ বিশুদ্ধ কোন অসুবিধা নেই।” [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী শরহে জামে তিরমিযী, হা/১০০৪]
বিবাহে ওলী বা অভিভাবকের বাধাঃ
একজন উপযুক্ত যুবক যদি কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব
দেয় (অর্থাৎ সেই যুবক দ্বীনদারী ও চরিত্রের দিক থেকে পছন্দনীয় হয়), আর মেয়েও ঐ যুবককে
পছন্দ করে, আর শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত মেয়ের অভিভাবক ঐ বিবাহে বাধা প্রদান করে তবে
শরীয়তের পরিভাষায় এটাকে বলা হয়, العضل বা বিবাহে বাধা। (ইবনে কুদামা- মুগনী
৭/৩৬৮) এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلا تَعْضُلُوهُنَّ أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُمْ بِالْمَعْرُوفِ ذَلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَنْ كَانَ مِنْكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكُمْ أَزْكَى لَكُمْ وَأَطْهَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ
“আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে (রেজঈ) তালাক দিয়ে দাও এবং তারপর
তারাও নির্ধারিত ইদ্দত পূর্ণ করতে থাকে, (কিন্তু ফেরত না নেয়ার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে
যায়) তখন তাদেরকে পূর্ব স্বামীদের সাথে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী বিয়ে
করতে বাধা দান করো না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ
ও কেয়ামত দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা
ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” [সুরা বাকারাঃ ২৩২]
মা’কাল বিন ইয়াসার (রাঃ) এর
ভগ্নিকে তার স্বামী (রেজঈ) তালাক দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার আগে তাকে
ফেরত নেয়নি। ফলে বায়েন বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার স্বামী আবার নতুন বিবাহের
মাধ্যমে স্ত্রীকে (মা’কালের ভগ্নিকে) ফেরত নিতে চায় এবং ঐ মেয়েটিও তাতে রাজি হয়ে যায়। তখন মা’কাল রেগে গেলেন এবং
বেঁকে বসলেন ও তার সাথে বিবাহ দিতে অস্বীকার করলেন। তিনি বলেন, আমার ভগ্নিকে তোমার
সাথে বিবাহ দিলাম, তোমাকে সম্মানিত করলাম। তারপর তুমি
তাকে তালাক দিয়ে দিলে! আবার তুমি তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব নিয়ে হাযির হয়েছো? আল্লাহর
কসম! কখনই সে তোমার কাছে ফেরত যাবে না। তোমার সাথে
তার বিবাহ দিব না। মা’কাল বলেন, (দ্বীনদারী ও চরিত্রের দিক থেকে) লোকটির কোন সমস্যা ছিল না, আর আমার
ভগ্নিও তার কাছে ফেরত যেতে ইচ্ছুক ছিল। তখন আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন।
মা’কাল বলেন, এখন আমি এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করব হে আল্লাহর রাসূল!
একথা বলে তিনি তার ভগ্নিকে পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ দিয়ে দেন।
ইমাম বুখারী বলেন, “যদিও এখানে বিবাহিতা নারীকে কেন্দ্র করে আয়াতটি নাযিল হয়েছে, কিন্তু
এখানে কুমারী নারীও শামিল। অর্থাৎ কুমারীর জন্যও একই হুকুম।”
হাদীছটি বুখারী শরীফে কয়েক স্থানে বর্ণিত হয়েছে
এবং আবু দাউদও বর্ণনা করেছেন। বিস্তারিত দেখুন সহীহ বুখারী- অধ্যায়ঃ বিবাহ, অনুচ্ছেদঃ
অভিভাবক ব্যতীত বিবাহ নেই।
* কি করলে অভিভাবক عاضل বা বাধাপ্রদাকারী হিসেবে
গণ্য হবে?
(১) অভিভাবকের অধীনস্থ
মেয়ে যদি নির্দিষ্টভাবে কোন যুবককে পছন্দ করে এবং পাত্রও উপযুক্ত হয়, তখন যদি অভিভাবক
তার সাথে বিবাহ দিতে (শরীয়ত সম্মত) কোন কারণ ছাড়াই বা দুর্বল যুক্তিতে (যেমন, লেখাপড়া
শেষ করা ইত্যাদি) অস্বীকার করে, তাহলে সে বাধাপ্রদানকারী হবে।
আল মাওসুয়া আল ফেকহিয়াঃ ৩৪/২৬৫।
(২) অভিভাবক যদি বিবাহের প্রস্তাবকারীদের উপর
অহেতুক কঠিন শর্ত আরোপ করে, যা শুনলেই তারা পলায়ন করবে এবং তা পূর্ণ করা অনেক সময় অসাধ্য
হয়ে যায়, তখন সে বাধাপ্রদানকারী গণ্য হবে।
ইবনে তাইমিয়া, কিতাবুল ইনসাফল ৮/৭৫।
শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রহঃ) বলেন, “প্রস্তাবকারীর উপর কঠোরতা আরোপ করা, অথবা
অপ্রয়োজনীয় অত্যধিক শর্তারোপ করা, অথবা উপযুক্ত পাত্রকে প্রত্যাখ্যান করা, অথবা অতিরিক্ত
মোহর চাওয়া। অভিভাবক যদি এরূপ করে তবে সে বাধাপ্রদানকারী হিসেবে গণ্য হবে এবং সে হবে ফাসেক। তখন তার অভিভাবকত্ব বাতিল হয়ে যাবে।”
কি কারণে অভিভাবকত্ব বাতিল হয়?
(১) অভিভাবক যদি সম্পূর্ণরূপে সালাত পরিত্যাগকারী
হয় তবে জমহূর বিদ্বানের মতে সে মুসলিম নয়। আর তখন সে মুসলিম নামাযী মেয়ের অভিভাবকত্ব
হারাবে।
(২) অভিভাবক যদি নিয়মিত সালাত আদায় না করে- কখনো
পড়ে কখনো ছাড়ে অথবা কখনো মদ্যপান করে, তবে সে জমহূর বিদ্বানের মতে সে ফাসেক মুসলিম।
আর ফাসেক মুসলিম মুমিন নারীর অভিভাবক হতে পারবে কি না সে সম্পর্কে ফিকাহবিদদের মাঝে
মতবিরোধ আছেঃ
শাফেঈ ও হাম্বলী মাযহাব মতে তার অভিভাবকত্ব সহীহ
নয়। হানাফী ফিকাহবীদদের মতে ফাসেক অভিভাবকত্ব সহীহ। মালেকী মাযহাবের প্রচলিত মতও এটাই।
তবে তাঁরা ফাসেকের অভিভাবকত্ব অপছন্দ করেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন,
“অভিভাবকের জন্য জায়েয নেই মেয়ের অপছন্দনীয় পাত্রের সাথে জোর করে
তার বিবাহ দেওয়া। আর ইমামদের ঐক্যমতে মেয়ের পছন্দনীয় পাত্রের
সাথে তার বিবাহে বাধা প্রদান করা যাবে না। মেয়েকে জোর করা ও বাধা দেয়া জাহেল ও জালেমদের
কাজ।”
মাজমু ফাতাওয়াঃ ৩২/৫২।
(৩) অভিভাবক উপযুক্ত হওয়ার জন্য যে ৬টি শর্ত
রয়েছে তার কোন একটি নষ্ট হলে, অভিভাবকত্ব হারাবে।
(৪) অভিভাবক যদি বাধা প্রদানকারী হয়, তবে সে
অভিভাবকত্ব হারাবে। এবং অভিভাবকত্ব তার পরের অভিভাবকদের নিকট স্থানান্তর হবে।
ফতোয়া লাজনা দায়েমা, স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডঃ ১/১৬৮।
এ অবস্থায় নারীর অভিভাবক কে হবে?
উল্লেখিত যে কোন কারণে যদি অভিভাবকত্ব হারায়,
তবে অভিভাবকত্ব পরবর্তী নিকটতম ব্যক্তির নিকট স্থানান্তরিত হবে। যেমন দাদা, তারপর ভাই,
তারপর চাচা ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত যদি কেউ না থাকে, তবে দেশের মুসলিম শাসক বা তার প্রতিনিধি
বা গভর্ণর বা মুসলিম কাজী ঐ নারীর অভিভাবক হিসেবে গন্য হবে। (দেখুন মুগনী ৭/৩৪৬)
হানাফী ফিকাহবিদগণ (রহঃ) বলেন, “কোন নারীকে যদি তার অভিভাবক বাধা দেয়, তবে সে তাদের বিরুদ্ধে সুলতানের
(শাসকের) কাছে অভিযোগ দায়ের করবে। যাতে করে তাকে যুলুম থেকে মুক্ত করে এবং উপযুক্ত
পাত্রের সাথে বিবাহ দিয়ে দেয়।”
হাশিয়া ইবনে আবেদীন ৩/৮২।
সৌদী আরবের সাবেক গ্রাণ্ড মুফতী শাইখ মুহাম্মাদ
বিন ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, “নারী যখন প্রাপ্ত বয়স্ক
হয়, আর তাকে বিবাহের জন্য দ্বীন ও চরিত্রের দিক থেকে পছন্দনীয় উপযুক্ত পাত্র প্রস্তাব
করে, আর তার মত পাত্রকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য অভিভাবক কোন দোষ খুঁজে না পায়, পাত্রও
নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করতে সক্ষম থাকে, তখন ঐ নারীর অভিভাবকের উপর আবশ্যক হচ্ছে পাত্রের
আবেদন গ্রহণ করা এবং তার সাথে তাদের মেয়ের বিবাহ দেয়া। সে যদি তা করতে অসম্মত হয়, তবে
পাত্রির পছন্দের বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করার ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে। তারপরও যদি
অসম্মতিতে স্থির থাকে,তবে তার অভিভাবকত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তখন অভিভাবকত্ব পরবর্তী নিকটাত্মীয়দের
প্রতি স্থানান্তরিত হয়ে যাবে।”
ফতোয়া শায়খ
মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীমঃ ১০/ ৯৭।
শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ
উসাইমীন (রহঃ) বলেন, “অভিভাবক যদি দ্বীন ও চরিত্রের দিক থেকে পছন্দনীয় উপযুক্ত পাত্রের
প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার সাথে বিবাহ দিতে অস্বীকার করে, তবে তার অভিভাবকত্ব
পরবর্তী অধিকতর নিকটাত্মীয়ের নিকট স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু তারাও যদি অস্বীকার
করে, তবে শরীয়ত সম্মত হাকেমের নিকট অভিভাবকত্ব স্থানান্তরিত হবে। তখন শরীয়ত সম্মত হাকেম
বা শাসক তার বিবাহ দিয়ে দিবে।”
ফতোয়া নূরুন আলাদ দারব, অধ্যায়ঃ ৩১৩।
ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন, “আলেমদের ইজমা (ঐক্যমত) আছে যে, সুলতান নারীর বিবাহ
দিয়ে দিবে যদি সে বিবাহ করতে চায় এবং (দ্বীন ও চরিত্রের দিক থেকে) উপযুক্ত পাত্র পছন্দ
করে থাকে; কিন্তু অভিভাবক তার বিবাহে বাধা প্রদান করে।” (আল
ইজমাঃ ১/৭৮)
বাধাপ্রাপ্ত নারীর করণীয় কি?
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ উছাইমীন (রহঃ) বলেন,
“অনেক অভিভাবক উপযুক্ত ও সমকক্ষ প্রস্তাবকারীদেরকে নানা অযুহাতে
প্রত্যাখ্যান করে; অথচ তার ব্যাপারে পাত্রীর সম্মতি আছে। এ অবস্থায় পাত্রী স্বভাবজাত
লাজুকতার কারণে পরিস্থতির স্বীকার হয়, যথাযথ প্রতিবাদ করতে পারে না। কাজী বা বিচারকের
কাছে তার অভিযোগ পেশ করতে লজ্জাবোধ করে। এটাই বাস্তব কথা। কিন্তু তার উপর আবশ্যক হচ্ছে,
লাভ-ক্ষতির তুলনা করবে। কোন পথে চললে তার ক্ষতি বেশী হবে? অভিভাবকের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ
করে তার কথা শুনে স্বামী ছাড়াই বসে থাকবে এবং বিবাহের বয়স পার করে দিবে। অথবা অভিভাবকের
কথা শুনে দ্বীনহীন চরিত্রহীন মানুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নিজের ভবিষ্যতকে অজানা
ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। অথবা কাজীর আশ্রয় নিয়ে তার কাছে গিয়ে শরীয়ত সম্মত অধিকার আদায়
করে নিবে।”
এখন কোন পদক্ষেপটি তার জন্যে উপযুক্ত?
নিঃসন্দেহে শেষের পদক্ষেপটাই তার জন্যে নিরাপদ।
সে বিচারকের নিকট উপস্থিত হবে এবং বিবাহ করিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করবে। কেননা এটা তার
অধিকার। তাছাড়া বিচারকের কাছে আবেদন করার প্রেক্ষিতে ঐ জালেমদেরকে প্রতিহত করার একটি
পথ উন্মুক্ত হবে, যারা তাদের অধিনস্থ মেয়েরদেরকে উপযুক্ত পাত্রের সাথে বিবাহ দিতে বাধা
দেয়। অর্থাৎ তার এই পদক্ষেপে তিন প্রকার কল্যাণ সাধিত হবেঃ
• নারীর নিজের কল্যাণ। (স্বামী ছাড়া জীবন অতিবাহিত করা থেকে
মুক্তি, অথবা খারাপ ও অপছন্দনীয় স্বামী থেকে মুক্তি)
• অন্যান্য নারীদের কল্যাণ। (কারণ তার অনুসরণ করে অন্য নারীরাও
নিজেদের শরীয়ত সম্মত অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে।)
• জালেম ও অপরিণামদর্শী অভিভাবকদের প্রতিহত করা। (যারা নিজের
অধিনস্থদেরকে খেয়াল-খুশীমত পরিচালনা করে।)
দ্রঃ ফতোয়া ইসলামীয়াঃ ৩/১৪৮।
কিন্তু কোন অভিভাবক ব্যতীত কখনই কোন বিবাহ বিশুদ্ধ
হবে না। যেমনটি পূর্বেই সহীহ হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে।