বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

“ইলম ও আলেম”

ইলম ও আলেম
আজকাল মানুষ মনে করে, যারা টিভিতে লেকচার দেয় এরাই বুঝি বড় আলেম। অথবা কিছু ওয়াজ করতে পারলে বা মনগড়া লেখা লিখতে পারলেই, মানুষ তাকে বড় জ্ঞানী মনে করছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, মানুষ সত্যিকারের মুজতাহিদ আলেমদেরকে চেনে না। রেডিও ও টিভির তালেবুল ইলম, দ্বাইয়ী, লিখক ও বক্তাদেরকেই আলেম মনে করে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। যাইহোক, একই নামে বর্তমান যুগের কয়েজকন বড় আলেমের নাম নিচে দেওয়া হলোঃ-
. শায়খ সালেহ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওজান
২. শায়খ সালেহ বিন আব্দুল আজীজ আহলে-শায়খ
৩. শায়খ সালেহ আল-লুহাইধান
৪. শায়খ সালেহ আস-শুহাইমি

একটা কথা উল্লেখ করছি, একবার একজন লোক স্বপ্ন দেখলো তার ছেলে অনেক বড় আলেম হয়েছে। সে অনেক আশা নিয়ে তার ছেলের নাম রাখলো সালেহ যার অর্থাৎ নেককার। তিনি তার সেই ছেলেকে আলেম বানানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু আল্লাহর কি ইচ্ছা সেই ছেলে কোন আলেম হলোনা! যাই হোক, সেই ছেলে তার এক ছেলের নাম রেখেছিলো মুহাম্মাদ। এই মুহাম্মদকে তিনি পড়তে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন সৌদি আরবের সবচাইতে বড় আলেম ও মুফাসসির, আল্লামাহ আব্দুর রহমান ইবনে নাসির আস-সাদী রাহিমাহুল্লাহর মাদ্রাসায়। সেই ছেলে ইমাম আস-সাদীর কাছে পড়াশোনা করে ইলম অর্জন করলো এবং পরবর্তীতে অনেক বড় আলেম হয়েছিলেন, যাকে মানুষ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন (অর্থাৎ সালেহ এর ছেলে মুহাম্মদ) বা শায়খ ইবনে উসায়মিন নামে বেশী চেনে। এইভাবে, আল্লাহ তাআলা শায়খ ইবনে উসায়মিন এর দাদার স্বপ্ন তার নাতিকে দিয়ে সত্যি করেছিলেন। উল্লেখ্য, হাদিসে নাতি-নাতনীদেরকে সন্তান বলা হয়েছে, তারা আসলে সন্তানের মতোই।

আল্লাহর কাছে ইলম চাওয়ার ছোট্ট কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দুয়াঃ
আল্লাহ যখন কারো ভালো করতে চান তখন তাকে অনেক টাকা পয়সা, ভালো স্বামী বা স্ত্রী, দামী গাড়ি দেননা। যদিও আমরা এইগুলোকেই কল্যানের বিষয় মনে করি। পার্থিব সুখ স্বাচ্ছন্দ কখনো আল্লার নেয়ামত হতে পারে, কখনোবা আল্লাহর পরীক্ষা হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ যখন কারো কল্যান করতে চান, তখন তাকে ফিকহ বা দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।
আর সেই জ্ঞান চাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শেখানো সুন্দর ছোট্ট একটা দুয়া আছে, আপনারা মুখস্থ করে নিতে পারেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْماً نَافِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান নাফিআন, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়্যিবান ওয়া আমালাম মুতাক্বাববালান।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র জীবিকা ও গ্রহণযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।
ইবনে মাজাহ, হিসনুল মুসলিম পৃষ্ঠা ১১৩।
এই দুয়াটা আমার প্রিয় কারণ, এর সাথে আরো দুইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চাওয়া হয়েছে রিযকান ত্বাইয়্যিবান বা পবিত্র জীবিকা এর দ্বারা দুনিয়াবি চাহিদার পূরণের জন্যও দুয়া করা হলো আর, আমালান মুতাক্বাব্বালান বা এমন আমল যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়, পরকালের জন্য যা প্রয়োজন তাও প্রার্থনা করা হলো।
এতো গুরুত্বপূর্ণ তিনটা বিষয় একসাথে ছোট্ট একটা দুয়ার মধ্যে থাকায় আমাদের সবার শিখে নেওয়া উচিত।
এই দুয়া প্রত্যেকদিন ফযরের নামাযের পর একবার পড়া সুন্নত। এছাড়া সিজদাতে, সালাম ফিরানোর আগে সহ যেকোনো সময় করা যাবে। আরবীতে না পারলে বাংলাতেও করা যাবে, যতদিন না মুখস্থ হচ্ছে।
দুয়াটা পাওয়া যাবে হিসনুল মুসলিম বইয়ের ১১৩ নাম্বার পৃষ্ঠায়। দিনে রাতে যে কোনো সময় আমল করার জন্য এই বইয়ের সবগুলো দুয়াই সহীহ, আর দাম মাত্র ৫০ টাকা। ছোট্ট এই বইটা পকেটে রেখে দেওয়া যায়, রাস্তায়, জার্নিতে, বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় বা যে কোনো অবসব সময়ে বের করে দুয়াগুলো শিখে বা পড়ে সময়টা নষ্ট না করে কাজে লাগানোর জন্য।

ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন, দ্বীনের কথা প্রচার করার সুযোগকে কাজে লাগান।