বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৪

মুহাম্মদ আল-আরিফী? সে কি কোন আলেম?


মুহাম্মদ আল-আরিফী? সে কি কোন আলেম?

জসীম উদ্দিন রাহমানী, আনোয়ার আল-আওলাকি, আল-কায়েদাহ ভক্ত অল্প-বয়ষ্ক কিছু ছেলেরা মুহাম্মাদ আল-আরিফীকে বড় জিহাদী(!) আলেম বলে প্রচার করছে। সে নাকি এতো বড় আলেম যে, তারা আরিফীর উপাধি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণভোমরা!?
আসল কে এই মুহাম্মদ আল-আরিফী? সে কি কোন আলেম?

উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদ।

+ আল্লামাহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাদী (হাফিঃ) বলেন, আমি মুহাম্মদ আল-আরিফী কে চিনি ও তার কথা শুনেছি। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে। সে একজন জাহেল (মূর্খ), সাহিবু হাওয়া (প্রবৃত্তির অনুসারী)।. তাঁর কথা শুনবেনা।

শায়খের ফতোয়া ও তার ইংরেজী অনুবাদ দেখুন
https://www.youtube.com/watch?v=hjr2A_NXrhs

++ শায়খ মুহাম্মদ বিন হাদী আরিফীকে কেনো মূর্খ ও প্রবৃত্তির অনুসারী বলেছেন
মুহাম্মদ আল-আরিফী নামে পরিচিত জনপ্রিয় একজন সউদী টিভি বক্তা যাকে অনেকে জিহাদী(!) আলেম মনে করে বিভ্রান্ত হচ্ছেন, সে রাসুল সাঃ এর একটি হাদীসকে অপব্যখ্যা করে নতুন একটি #বিদাত রচনা করেছেন। রাসুল সাঃ আমাদের আদেশ করেছেন, (মুসলিম) শাসক যদি তোমার উপর অত্যাচার করে, তোমার সম্পদ কেড়ে নেয় এবং তোমাকে চাবুক দিয়ে পেটায়, তবুও তার আনুগত্য করো। এটা হুযাইফা বিন ইয়ামান রাঃ থেকে বর্ণিত বিখ্যাত হাদীস, যা সহীহ আল-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।

কথিত এই জিহাদী আলেম আরিফী দাবী করেন, এই হাদীস যদি রাজা একজনের উপর যুলুম করে তাহলে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু কোনো শাসক যদি তার অধীনস্তদের অনেকের উপরে যুলুম-অত্যচার করে তাহলে ঐ শাসকের কথা শোনা যাবেনা, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ হবে।

এটা স্পষ্ট রাসুল সাঃ এর হাদীসের অপব্যখ্যা ও মনগড়া বিদাতী কথা যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের #আকিদাহ বিরোধী। সমস্ত আলেমরা একমত, শাসক যুলুম অত্যাচার করলেও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম ও জমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করার অন্তর্ভুক্ত, যা আসলে খারেজীদের কাজ।

শায়খুল ইসলাম ইমাম তাহাবী (রহঃ) লিখেছেন, আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা অত্যাচার করে। আমরা তাদের অভিশাপ দিব না এবং আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দোআ করব। [আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া]

এনিয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য এই পোস্ট দেখার অনুরোধ করছি
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1411864525./909241182441963/?type=1&source=42

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আরিফীকে অনেক আলেম সতর্ক করেন এবং উপদেশ দেন। সে আলেমদের উপদেশ ত নেয়ইনি বরং, শায়খ ফাওজানের কাছে সে মিথ্যা কথা বলে, এই অপব্যখ্যা নাকি সে ইমাম নববীর কাছ থেকে নিয়েছে! প্রথম কথা হচ্ছে দলিল বিহীন কোন কথা যত বড় আলেমই বলুক না কেনো সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তার উপরে এটা ইমাম নববী রহঃ বলেন নি। শায়খ ফাওজান ইমাম নববী রচিত সহীহ মুসলিমে শরাহ বা ব্যখ্যাগ্রন্থ সার্চ করে আরিফীর এইরকম বিভ্রান্তিকর কথা #বাতিল বলে প্রত্যাখ্যান করেন। আসলে ইমাম নববী এইরকম কথা বলেন নি।

+++ মুহাম্মাদ আল-আরিফীর কুফুরী বক্তব্য
আরিফী একটা কবিতা লিখে তার নাম দেয় সুরাতুল তুফফাহা(নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) বা আপেলের সুরা। ক্বুরানের মতো করে সুরা তুফফাহা নাম দিয়ে সেই কবিতাটাকে সে সুরা মারিয়ামের মতো গেয়ে তার শ্রোতাদেরকে শোনায়, যেইভাবে ক্বুরানুল কারীম তেলাওয়াত করা হয়। সে এই কাজটা করে এবং বলে আমি হাসানোর জন্য এই কথা বলেছি। আরিফী কর্তৃক এই জঘন্য কাজের ব্যপারে আল্লামাহ শায়খ সালেহ আল-ফাউযান (হাফিঃ) কে আরিফীন নাম উল্লেখ না করেই, ক্বুরান নিয়ে এমন হাসি-ঠাট্টা করার হুকুম জানতে চেয়ে ফতোয়া জিজ্ঞেস করা হয়।

শায়খ ফাউজান বলেন, কেউ যদি কিছু শব্দ দিয়ে কবিতা বানিয়ে আল্লাহর কালামের মতো নকল করার চেষ্টা করে, এবং সুরা নাম দিয়ে ক্বুরানুল কারীম তেলাওয়াতের মতো করে আবৃত্তি করে শোনায়, তাহলে এটা ভয়ংকর একটা অপরাধ। এর কারণে সে কাফের হয়ে যাবে, যদিও সে এই কাজটা দ্বারা হাসি-ঠাট্টা করে থাকুক না কেনো। [কারণ মহান আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নিজে তাঁকে বা তাঁর আয়াতের সাথে যে হাসি-ঠাট্টা বা মজাক করবে, তাকে ঈমান আনার পরেও কাফের হয়ে গেছে বলে ঘোষণা করেছেন]
আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করো, তবে তারা বলবেঃ আমরাতো শুধু কথার কথাই বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। (হে নবী) আপনি বলুন! তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা কোন অযুহাত পেশ করোনা, কারণ তোমরা ঈমান আনার পরে পুনরায় কাফের হয়ে গেছ। [সুরা আত-তাওবাহঃ ৬৫-৬৬]
সুতরাং, যে ব্যক্তি ক্বুরান নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে, ক্বুরানের মতো করে কোন কবিতা লিখে মানুষকে ক্বুরান তেলাওয়াতের মতো করে পড়ে শোনায় এবং মানুষকে সুরা বলে প্রতারিত করে, এই কারণে সে মুর্তাদ হয়ে যাবে।

শায়খ উবায়েদ আল-জাবেরীও এর উপরে ফতোয়া দিয়েছেন। আরিফীর কুফুরী বক্তব্যের ভিডিও ও এর উপরে উক্ত দুইজন শায়খের ফতোয়া ও তার ইংরেজী অনুবাদ দেখুন
https://www.youtube.com/watch?v=DpEeB9vA7l4

++++ শায়খ ফাউজান নাম ধরে আরিফীক কাফের বলেন নি। তবে যে ব্যক্তি এই জঘন্য কাজটা করবে, সে কাফের হয়ে যাবে ফতোয়া দিয়েছেন।
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদাহ মতে, কেউ কোন কুফুরী কাজ করলে তাকে সরাসরি কাফের বলে ঘোষণা করা হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে। সতর্ক করে দেওয়ার পরেও কেউ যদি জেনে বুঝে কুফুরী কাজ করে, তাহলে সব দিক বিবেচনা করে ওলামারা ফতোয়া দেবেন সে কাফের হয়ে গেছে হয়নি। আমরা সাধারণ মানুষ কাউকে কাফের বা মুর্তাদ বলবোনা, তবে আমরা জানবো কোন কাজটা করলে মানুষ কাফের বা মুর্তাদ হয়ে যায় এবং সেই ব্যপারে মানুষকে সতর্ক করবো। মুসলমানদের মাঝে কোন ব্যক্তি কাফের বা মুর্তাদ হয়ে গেছে নাকি, সেটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব ওলামাদের।  

+++++ সর্বশেষ আরিফীর কাছ থেকে ইলম নেওয়া যাবে কিনা অথবা, তার কথা শোনা যাবে কিনা?
আরিফী সত্য-মিথ্যা বিভিন্ন কিসসা কাহিনী বলে মানুষকে মুগ্ধ করতে চায় যেমনটা আমাদের দেশে তাবলিগীরা করে থাকে, এছাড়া সে মনগড়া হাদীসের অপব্যখ্যা করে যা উপরে প্রমানসহ উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লামাহ শায়খ আহমাদ আন-নাজমী (রহঃ) কে মুহাম্মদ আল-আরিফীর ব্যপারে জিজ্ঞেস করা হলো তিনি বলেন, স্টোরি টেলার (গল্পবাজ) লোকদের কথা শোনা জায়েজ নয়। কিসসা-কাহিনী বলা লোকদের চারপাশে মানুষ জড়ো হয়, (এইভাবে সত্য-মিথ্যা) কাহিনী বলে বেড়ানো এটা ঠিক নয়। 

শায়খের ফতোয়া ও তার ইংরেজী অনুবাদ দেখুন
https://www.youtube.com/watch?v=pZsHqVYcRyo