বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৪

সুরা কাহফ নাযিল হওয়ার শানে নুযূল


সুরা কাহফ নাযিল হওয়ার শানে নুযূল
- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও
_________________________
বিসমিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ।
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ।
আম্মা বাআদ।
_________________________
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কুরাইশরা নাযার ইবনে হারিস ও উকবাহ ইবনে মুঈত কে মদিনার ইয়াহুদী আলেমদের নিকট পাঠিয়ে দেয় এবং তাদেরকে বলে, তোমরা তাদের (ইয়াহুদীদের) কাছে গিয়ে তাদের সামনে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমস্ত অবস্থা বর্ণনা করবে। কারণ, তারাই প্রথম (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিলো। পুর্ববর্তী নবীগণ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সবচেয়ে বেশি। সুতরাং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তাদের মতামত কি তা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে।
এই দুইজন তখন মদিনার ইয়াহুদী আলেমদের সাথে স্বাক্ষাৎ করে এবং তাদের সামনে মুহাম্মাদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রচার করা কথা ও তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করে। ইয়াহুদীরা কুরাইশদেরকে বলে, দেখ! আমরা তোমাদেরকে একটি চূড়ান্ত মীমাংসা হয় এমন কথা বলছি। তোমরা মক্কায় ফিরে গিয়ে তাঁকে (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে) তিনটি প্রশ্ন করবে। যদি তিনি উত্তর দিতে পারেন, তাহলে তিনি যে সত্য নবী এতে কোন সন্দেহ নেই। আর যদি উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে তাঁর মিথ্যাবাদী হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকবে না। তখন তোমরা তাঁর ব্যাপারে যা ইচ্ছা করতে পারো।
(১) তোমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করবে, পুর্বযুগে যেই যুবকগণ বেড়িয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের ঘটনা বর্ণনা করুন। এটা তো একটা বিস্ময়কর ঘটনা!
(২) তারপর তাঁকে ঐ ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, যিনি সমস্ত পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি পূর্ব প্রান্ত হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে এসেছিলেন।
(৩) আর তাঁকে তোমরা রুহ (আত্মার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে।
যদি তিনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেন তোমরা তাঁকে নবী বলে স্বীকার করে তাঁর অনুসরণ করবে। আর যদি উত্তর দিতে না পারেন তাহলে জানবে যে, তিনি মিথ্যাবাদী। সুতরাং যা ইচ্ছা তাই করবে। এরা দুজন মক্কায় ফিরে গিয়ে কুরাইশদের বললো, চূড়ান্ত ফয়সালার কথা ইহুদী আলেমগণ বলে দিয়েছেন। সুতরাং, চল আমরা তাকে প্রশ্নগুলি করি। অতঃপর তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আগমন করে তাঁকে ওই তিনটি প্রশ্ন করলে তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা আগামী কাল এসো, আমি তোমাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিব। কিন্তু তিনি ইনশা আল্লাহ (যদি আল্লাহ চান) এই কথা বলতে ভুলে যান। এরপর পনের দিন অতিবাহিত হয়ে যায় কিন্তু তাঁর কাছে না কোন ওহী আসে, আর না আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁকে এ প্রশ্নগুলির জবাব জানিয়ে দেয়া হয়।
এর ফলে মক্কাবাসী সন্দেহ করতে থাকে এবং পরস্পর বলাবলি করা শুরু করে, দেখ! একদিনের ওয়াদা ছিল। অথচ আজ পনের দিন কেটে গেল, তবুও সে কোন জবাব দিতে পারল না! এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বিগুণ দুঃখে জর্জরিত হতে লাগলেন। এক তো কুরাইশদের জবাব দিতে না পারায় তাদের কথা শুনতে হচ্ছে, দ্বিতীয়ত ওহী আসা বন্ধ রয়েছে। এরপর জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং সুরা কাহফ অবতীর্ন হয়। এতেই ইনশাআল্লাহ না বলায় তাঁকে ধমকানো হয়, ঐ যুবকদের ঘটনা বর্ননা করা হয়, ঐ ভ্রমনকারীদের বর্ননা দেয়া হয় এবং রুহের ব্যাপারেও জবাব দেয়া হয়।
সুরা কাহাফ সম্পর্কে কতিপয় বিষয়াবলীঃ
(১) সুরা কাহফ এর প্রথম ১০ আয়াত যে মুখস্ত করবে তাকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা করা হবে। সহিহ মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ।
(২) জুমুয়াহর দিনে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মাগরিবের পর থেকে শুক্রবার মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মাঝে) সুরা কাহফ তেলাওয়াত করলে দুই জুমুয়াহর মধ্যবর্তী সময় বান্দার জন্য নূরান্বিত বা আলোকিত হয়ে থাকে। হাকিম, ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন, যদিও তাঁদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি।
(৩) সুরা নাযিল হওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষাঃ ইনশা আল্লাহ বলার গুরুত্ব!
উৎসঃ তাফসির ইবনে কাসির।
_________________________
৩টি প্রশ্নের উত্তরঃ
(১) আসহাবে কাহফ না গুহাবাসী যুবকদের ঘটনা। বিস্তারিত জানার জন্য সুরা কাহফ এর ৯-২৩ নাম্বার আয়াতের তর্জমা ও তাফসীর পড়ুন। আসহাবে কাহফ নিয়ে আমাদের পোস্টের লিংক -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1456706451028764:0
(২) যুল কারনাইন নামের একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর ঘটনা। বিস্তারিত জানার জন্য সুরা কাহফ এর ৮৩-৯৮ নাম্বার আয়াতের তর্জমা ও তাফসীর পড়ুন। যুল কারনাইন নিয়ে আমাদের পোস্টের লিংক -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/1523644661001609/?type=3
(৩) রুহ বা আত্মা সম্পর্কে মানুষকে আল্লাহ মানুষকে খুব অল্প জ্ঞান দান করেছেন, সুতরাং দুনিয়ার জীবনে এটা সম্পর্কে খুব কম জানা যাবে। এতোটুকুর উপরে ঈমান আনতে হবে - আত্মা আল্লাহর বিশেষ একটা সৃষ্টি, যা আল্লাহর আদেশের সাথে সম্পৃক্ত। যেইরকম অন্য আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। (হে নবী) আপনি তাদেরকে বলু! রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত একটি বিষয়। এ বিষয়ে তোমাদেরকে খুব অল্প জ্ঞান দান করা হয়েছে। সুরা বনী-ইসরাঈলঃ ৮৫
বিস্তারিত জানার জন্য সুরা বনী-ইসরাঈল এর ৮৫ নাম্বার আয়াতের তর্জমা ও তাফসীর পড়ুন।
_________________________
তাফসীর কোনটা পড়বেন?
=> আলেমদের কাছে সবচাইতে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ হচ্ছে তাফসীর ইবনে কাসীর যা বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। ইবনে কাসীর হচ্ছে বিস্তারিত ও দীর্ঘ একটি তাফসীর। কেউ যদি ক্বুরানের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যখ্যা জানতে চান, তাহলে "তাফসীর আহসানুল বায়ান" - এটা কিনতে পারেন। এছাড়া প্রাচীনকালের অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ হচ্ছে ইমাম ইবনে জারির আত-তাবারানি (রহঃ) এর তাফসীর, ইমাম বাগাভি (রহঃ) এর তাফসীর, ইমাম কুরতুবী (রহঃ) এর তাফসীর জগত বিখ্যাত।
_________________________
(সমাপ্ত)