বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও সভ্য লেবাসের কয়েকটি শর্ত:

ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও শালীন পোশাকের কয়েকটি শর্তঃ ১. মুসলিম মহিলা যে পোশাক ব্যবহার পড়বে তাতে যেন হিজাব-পর্দা রক্ষা হয়; অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তার সারা দেহকে আবৃত করে। সুতরাং, যে লেবাসে নারীর মাথা ও চুল, ঘাড়, বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ (যেমন, শাড়ি ও খাটো ব্লাউজে) এবং হাঁটু ও পা (যেমন স্কার্ট, ঘাগরা, ফ্রক, থ্রি-কোয়ার্টার চুজ পায়জাম ইত্যাদিতে) প্রকাশিত থাকে তা গায়ের মাহরাম (যেই পুরুষদের সাথে বিয়ে জায়েজে, তাদের সামনে) পরিধান করা হারাম। ২. নারীদের পোশাক যেন সৌন্দর্যমন্ডিত ও দৃষ্টি-আকর্ষণকারী না হয়। সুতরাং, এমব্রয়ডারি করা আকর্ষণীয়, চকচকে রঙিন বোরকা পরিধান করা জায়েজ নয়। ৩. পোশাক এমন পাতলা যেন না হয় যাতে ভিতরের চামড়ার রঙ নজরে আসে। অতএব কাফের ব্যভিচারী, পতিতা নারী (নায়িকা/গায়িকাদের) অনুকরণে পাতলা শাড়ি, উড়না প্রভৃতি কোন মুসলিম মহিলার ড্রেস হতে পারেনা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী; যাদেরকে আমি এখনো দেখিনি। (অর্থাৎ তারা ভবিষ্যতে মুসলমানদের মাঝে আসবে।) প্রথম শ্রেণীঃ (অত্যাচারীর দল) - যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্দারা তারা মানুষদেরকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণীঃ (ফাহেশা নারী) - তারা হচ্ছে সেই নারীদল; যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু কাপড়ে পড়েও বস্তুতঃ তারা উলঙ্গ থাকবে, যারা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পর পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট থাকবে। যাদের মস্তক (চুল খোপা বেঁধে) উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিটুকুও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।” ৪. এমন টাইটফিট বা আঁট-সাঁট যেন না হয়; যাতে দেহাঙ্গের উচ্চতা ও নীচতা এবং আকার ও আকৃতি কাপড়ের উপরে থেকেও বুঝা যায়। তাই এমন চুস্ত ও ফ্যাশনের লেবাস মুসলিম নারী পরিধান করতে পারে না, যাতে তার শরীরের ভাজ প্রকাশ পায়। ৫. এই লেবাস যেন পুরুষদের পোষাকের অনুরূপ না হয়। সুতরাং প্যান্ট, শার্ট, প্রভৃতি পুরুষদের মত পোশাক কোনো মুসলিম মহিলা ব্যবহার করতে পারে না। যেহেতু পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ থাকে, তাই কোনো নারীর জন্য পুরুষের বেশ ধারণ করা উচিত নয়। রাসূল সা. বলেছেন, “নারীদের বেশধারি পুরুষের উপর অভিশাপ এবং পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ”। ৬. তদ্রূপ তা যেন কাফের মহিলাদের অনুরূপ না হয়। অবশ্য ঢিলে ম্যাক্সি ও শেলোয়ার কামীস এবং তার উপর চাদর বা উড়না; যা মাথার কেশ, বক্ষস্থল ইত্যাদি আচ্ছাদিত করে তা মুসলিম নারীর লেবাস। কেবলমাত্র শেলোয়ার কামীস বা ম্যাক্সি অথবা তার উপর বক্ষে ও গ্রীবায় থাক বা ভাঁজ করা উড়নার লেবাস কাফের মহিলাদের। অনুরূপ শাড়ি যদি সর্বশরীরকে ঢেকে নেয় তবে মুসলিমদের; নচেৎ থাক করে বুকে চাপানো থাকলে তথা কেশদাম ও পেট-পিঠ প্রকাশ করে রাখলে তা কুফফার মহিলাদের লেবাস। আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন ব্যক্তি যেই জাতির অনুকরণ করবে, সে সেই জাতির দলভুক্ত বলে গণ্য হবে”। ৭. এই পোশাক যেন জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ তথা প্রসিদ্ধিজনক না হয়। ৮. লেবাস যেন সুগন্ধিত বা সুরভিত না হয়। রাসুলুল্লাহ সা বলেছেন, যে নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে লোকালয়ে যায়, সে ব্যভিচারিনী নারী। ৯. প্রকাশ যে, নারীদের সাবালিকা হওয়া মাত্রই এই শর্তের পোশাক পরা ওয়াজেব। ---আল্লামাহ, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ।