“জান্নাতে নারীরাও হুর পাবে…”
ক্বুরান হাদীসের
অনুবাদ পড়ে ফতোয়া দেওয়া যায় নাহ!!
ফতোয়া দিতে পারেন
তারাই, যারা হচ্ছেন প্রকৃত ফকীহ বা মুজতাহিদ। ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জনের জন্য
তাকে সরাসরি বড় আলেমদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যায়ন করে, অনেক ইলম অর্জন করে নিতে
হয়। আর ইলম অর্জনের যদি শুরু বলেন, সেটা হচ্ছে আরবী ভাষা, গ্রামার বা ব্যকরণ ও এর ব্যবহার
সম্পর্কে দক্ষ হওয়া যাতে করে একজন ব্যক্তি ক্বুরানের আয়াত ও হাদিসগুলোর প্রকৃত অর্থ
সরাসরি মূল #আরবী থেকেই বুঝতে পারেন, কারো অনুবাদ বা ব্যখ্যার দ্বারস্থ না হতে হয় – তাহলেতো তিনি তার ব্যখ্যাটাকেই নকল করবেন,
তার নিজস্ব ফতোয়া হবেনা। কারো অনুবাদ বা ব্যখ্যা পড়ে ফতোয়া দেওয়া, এটা এক প্রকার কপি-পেস্ট।
এটা খারাপ কোন বিষয় না, সত্যি কথা বলতে যারা গায়ের-ফকীহ তাদের উচিত হচ্ছে বড় আলেমদের
ফতোয়াগুলোই কপি করা। তবে অন্যায় যেটা, কেউ কপি-পেস্ট করতে করতে এক সময় নিজেই মনগড়া
ফতোয়া দেওয়া শুরু করলেন, যদিও তার সেই যোগ্যতা নেই।
ফতোয়া দেওয়া খুব
জটিল ও কঠিন একটা কাজ। একটা আরবী শব্দের অনেক অর্থ থাকে, আবার সেইগুলোর ব্যবহার ভিন্ন,
তার উপর আয়াতের সঠিক তর্জমা ও তাফসীর, শানে নুযুল জানা, হাদীসের নাসেখ-মানসুখ জানা,
ফিকহের মূলনীতিমালা ও তার প্রয়োগ, সাহাবা ও পূর্ববর্তী আলেমরা কিভাবে বিষয়টাকে বুঝেছেন
বা দেখেছেন – এমন অনেক বিষয়
জানা ও বোঝার পরেই একজন আলেম বা প্রকৃত ফকীহ কোন একটা বিষয়ে ইসলামী হুকুম বা ‘ফতোয়া’ কি হবে সেটা নির্ণয় করতে পারেন।
যাই হোক, #বোহরা
নামের শীয়াদের চরমপন্থী কুফুরী একটা ফেরকার অনুসারী আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলীর করা ক্বুরানের
অনুবাদ পড়ে জনপ্রিয় একজন টিভি বক্তা ফতোয়া দিয়েছেন - “জান্নাতে নারীরাও নাকি হুর পাবে!?”
তার মতে, হুরের
কোন gender নেই, আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী ক্বুরানের #হুর শব্দের সঠিক অর্থ করেছেন – companion বা সংগী (অর্থাৎ, নারী অথবা উভয়ই)।
সুতরাং এই অনুবাদ
অনুযায়ী জান্নাতে নারীরাও সুন্দর পবিত্র ‘পুরুষ হুর’ পাবে!
____________________________
‘জান্নাতে নারীরা পুরুষ হুর পাবে’ - এটা সম্পূর্ণ বাজে একটা কথা। জান্নাতে
নারীদের জন্য তাদের দুনিয়ার জীবনের স্বামী থাকবেন, যাদের স্বামী জান্নাতে যাবেনা তাদের
সাথে অবিবাহিত জান্নাতী পুরুষদের বা যাদের স্ত্রীরা জান্নাতে যেতে পারেনি তাদের সাথে
বিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পুরুষদের জন্য দুনিয়ার স্ত্রী ছাড়াও যেমন জান্নাতের হুর থাকবে
নারীদের তেমনি ‘পুরুষ হুর’ নামের কোন কিছু থাকবেনা। দেখুন ক্বুরানের
আয়াত দ্বারাই এই জাহালতপূর্ণ অনুবাদ ও ফতোয়ার বিভ্রান্তি কতো স্পষ্টভাবে ভুল প্রমানিত
হয়ঃ
সুরা ওয়াক্বিয়ায়
আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন,
৩৫. আমি জান্নাতী
রমণীদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি।
৩৬. অতঃপর তাদেরকে
করেছি #চিরকুমারী।
৩৭. #কামিনী, সমবয়স্কা।
৩৮. ডান দিকের লোকদের
জন্যে।
=> ‘হুরদের’ এই বর্ণনা কি কখনো কোন পুরুষের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে!? বুদ্ধিমান
লোকদের জন্য চিন্তার খোরাক হিসেবেই প্রশ্নটা রেখে দিলাম।
সুরা আন-নাবায় আল্লাহ
তাআ’লা বলেছেন,
৩১. নিশ্চয়ই মুত্ত্বাকীদের
জন্যে রয়েছে সাফল্য।
৩২. উদ্যান, আঙ্গুর,
৩৩. সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা
তরুণীরা।
৩৩ নাম্বার আয়াত,
وَكَوَاعِبَ أَتْرَاباً এর অর্থ করা হয়েছে – “সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী”।
এখানে আরবীতে كَواعِبَ (ক্বাওয়ায়ি’বা) শব্দটির অর্থ হচ্ছে এমন নারী যার বক্ষ
হচ্ছে উঁচু ও স্ফীত, যা সাধারণত কুমারী নারীদেরই হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, এটা জান্নাতী
নারীদের বিশেষ একটা বৈশিষ্ট্যই হছে – তারা চিরকুমারী থাকবে, যা সুর ওয়াকিয়াতেও বলা হয়েছে। রেফারেন্স দেখুন সুরা ওয়াকিয়া
ও সুরা নাবার তাফসীর, তাফসীর ইবনে কাসীর।
(Kawa`ib) -
"This means round breasts. They meant by this that the breasts of these
girls will be fully rounded and not sagging, because they will be virgins,
equal in age."
See more at:
http://www.alim.org/library/quran/AlQuran-tafsir/TIK/78/31#sthash.pZLNhtpx.dpuf
আশা করি এই আয়াতগুলো
থেকে স্পষ্ট, জান্নাতের হুরদের কোন জেন্ডার আছে কি নেই, আর থাকলে সেটা কোন জেন্ডার!?
তারপরেও যারা আরো বিস্তারিত আলোচনা জানতে চান, তারা আল-ফকীহ, ইমাম ইবনে উসায়মিন রহঃ
এর ‘ফতওয়া আরকানুল ইসলাম’ বইয়ে হুরদের নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে দেখুন।
সর্বশেষঃ ২-৩ মাস
পূর্বে, কাছাকাছি একটা বিষয় নিয়ে পোস্ট দিলে একজন প্রবাসিনি আমাকে মেসেজে ইংরেজীতে
কিছু কথা বলেন, তার কথা থেকে মনে হলো - সে হাদীসের ব্যপারে সন্দেহের মাঝে আছে, তিনি
হাদীস মানতে রাজি নন। তিনি আরো তার অভিজ্ঞতা বললেন, কিভাবে তিনি এমেরিকান আলেম (আসলে
রাশেদ খলিফার উম্মত, আহলে ক্বুরান) এর কাছ থেকে হুরের সঠিক অর্থ পেয়েছেন যে, নারীদের
জন্যও ‘পুরুষ হুর’ থাকবে। যাইহোক, কিছু কথা বলে আমি তাকে উপদেশ
দিয়েছিলাম – সম্ভব হলে মুসলিম
কোন দেশে হিজরত করা ও মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য। বিদেশে ইয়াহুদী-খ্রীস্টানরা মুসলমানদের
ঈমান নষ্ট করার জন্য অনেক ভ্রান্ত দল ও মতবাদ তৈরী করে রেখেছে, তাদের বই-পত্র ছাপায়।
একজন সাধারণ মুসলমান যদি নূন্যতম জরুরী জ্ঞান না থাকে, বিভিন্ন-যুক্তি তর্কের ফাঁদে
পড়ে সেই সমস্ত ভ্রান্ত মতবাদকেই সঠিক মনে করে পরকাল নষ্ট করবে। সেইজন্য সম্মানিত দ্বীনি
ভাই ও বোনদের সকলের কাছে অনুরোধ, আপনারা দ্বীন শিক্ষা করুন। নিজেকে হেফাজত করুন, ইসলামের
খেদমতে আত্মনিয়োগ করুন।
প্রশ্নঃ
husband and wife 2jon e jodi jannati hoy tahole o ki purush ti hur biye korbe?
হ্যা করবে, এটা
আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য নিয়ামত। এটা নিয়ে স্ত্রীদের চিন্তিত বা মন খারাপ করার
কিছু নেই। জান্নাতে নারী বা পুরুষ যে যাই চাইবে তা-ই পাবে। তবে কেউ কখনো হারাম বা আল্লাহ
যা করবেন না, এমন কোন কিছু কখনো চাইবেনা। জান্নাতী নারী ও পুরুষদের অন্তর থেকে লোভ,
হিংসা বিদ্বেষ দূর করে দেওয়া হবে। দুনিয়ার জীবনে মতো জান্নাতে একজন অন্যজনের বিবির
প্রতি কামনা বা লোভ করবেনা, এক স্ত্রী স্বামীর অন্য স্ত্রী থাকা নিয়ে অভিযোগ করবেনা।
রাসুল সাঃ এর একাধিক বিবি ছিলো, তাঁরা জান্নাতে এটা নিয়ে কষ্ট পাবেনা বা এর পরিবর্তে
অন্য কোন কিছু চাইবেন না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস ঈমান আনে ও নেক কাজ করে, তাদের অভ্যর্থনার
জন্যে থাকবে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, তার পরিবর্তে অন্য কোন কিছু
চাইবে না।” [সুরা আল-কাহফঃ
১০৭-১০৮]
মোট কথা যে জান্নাতে
যাবে সে সর্ব রকম সুখ ও শান্তির মাঝে থাকবে, তার অন্তরে অণু পরিমান কষ্ট থাকবেনা। তাই
আমাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার থেকে, কিভাবে সেই নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে পা রাখতে
পারবো সেই চিন্তাই বেশী করা উচিত।