মাযহাব নিয়ে প্রশ্নের উত্তরঃ
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ এর কাছে একবার এক লোক এসে বললোঃ
“শায়খ আমি আমার অমুক মাযহাব চেঞ্জ করতে চাই। কারণ আমি দেখলাম আমার মাযহাবের অনেক ফতোয়াই আসলে সহীহ হাদীসের বিপরীত।”
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ তাকে বললেনঃ
“দেখুন আপনি যদি আপনার অমুক মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাবে যান তাতে কি ফায়দা? কারণ কিছুদিন পরে আপনি দেখবেন ঐ মাযহাবেও কম বেশি কিছু ভুল ফতোয়া আছে।
(এডমিনের নোটঃ কারণ, ৪টা মাযহাবেই আসলে কিছুনা কিছু ভুল ফতোয়া আছে, যা কুরান অথবা সহীহ হাদীসের বিপরীত। এই ভুল ফতোয়া আছে বলেইতো ৪টা ভাগ হয়েছে। সবাই যদি ১০০% ঠিক থাকতো, তাহলেতো আর কোন ভাগাভাগিই হতোনা, তাইনা?)
এইরকম নতুন মাযহাবে গিয়ে যখন ভুল দেখবেন, তখন বলবেন, আমি মাযহাব পরিবর্তন করবো। বা তখন আফসোস করে বলবেন, আগের মাযহাবইতো ভালো ছিলো! তাই আপনি মাযহাব পরিবর্তন না করে বরং এক কাজ করুন, আপনি যেই মাযহাবে আছেন সেই মাযহাবটাতেই থাকুন, কিন্তু সেটাকে ৩টি ভাগে ভাগ করুন।
১. প্রথম ভাগ হচ্ছে – আপনি যেই মাযহাবে আছেন সেই মাযহাবের যেই ফতোয়াগুলো কুরান ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত, দলীল-প্রমান অনুযায়ী যেই ফতোয়াগুলি সঠিক, আপনি সেইগুলো মেনে চলুন, সেইগুলোর উপর আমল করুন। এতেতো আপনি আসলে নবী মুহা’ম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অনুসরণ করছেন।
২. দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে, আপনার মাযহাবের যেই ফতোয়াগুলি কুরান ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ভুল, আপনার মাযহাবের যেই ফতোয়াগুলো হক্কপন্থী নির্ভরযোগ্য মুহাক্কিক ওলামারা ভুল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন, আপনি সেইগুলো ছেড়ে দিয়ে কুরান ও সুন্নাহকেই মেনে নেন। মাযহাবের ভুল ফতোয়া বা আমল ছেড়ে দিয়ে সুন্নতের উপর আমল করুন।
৩. আর যেই ব্যাপারে সরাসরি কুরান ও হাদীসের কোন প্রমান নেই, যেই ব্যপারে আসলে আমরা কোন না কোন ইমাম বা আলেমের কথা মানছি, অর্থাৎ ফকীহগণের “ইজতিহাদ” বা “কিয়াসের” অনুসরণ করছি, সেই ব্যপারে আসলে এই সবগুলো হচ্ছে আলেমদের অনুমান বা যুক্তি। কেউই চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত না, কারণ কুরান ও হাদীসে এই ব্যপারে সরাসরি কিছু আসেনাই। এইরকম ব্যাপারে আসলে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, ইমাম ও আলেমদের অনুসরণ করতে। সুতরাং, এই ব্যপারে আপনার কাছে যেটা সহজ যেটা মনে হয় সেটা করুন।
এখন এতো গেলো যার পক্ষে সম্ভব যাচাই বাছাই করা, আসলে কোনো ব্যপারে দলীল আছে কি নাই। এখন অনেকে আছে, যার পক্ষে আসলে কুরান ও হাদীসের দলীল যাচাই করা সম্ভব না। ধরুন কেউ আরবীই জানেনা, পড়তে জানেনা, আলেমদের কাছ থেকে শেখার কোনো সুযোগ নাই যে আসলে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল, বা ধরেন আমার দাদু যার বয়স ৭০ এর উপরে, তার পক্ষেতো কোনদিনই সম্ভব নাই – এইগুলো ঘেটে দেখা। তাহলে তারা কি করবেন?
সাধারণ মানুষ যারা কুরআন ও হাদীস থেকে গবেষণা করে কোনো মাসয়ালা-মাসায়েলের উত্তর বের করার যোগ্যতা রাখেন না তারা নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমকে জিজ্ঞাসা করে সেটার উত্তর জেনে নেবেন।
যেমনটা আল্লাহ তাআ’লা কুরানুল কারীমে উল্লেখ করেছেনঃ
“ফাস-আলু আহলায-যিকরি ইন কুনতুম লা তাআ'লামুন।”
অর্থঃ যদি তুমি জা জানো তাহলে যারা জ্ঞানী তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাস করে জেনে নাও।
সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭।
কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, যাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে তিনি একজন আ’লিম, বিদাতী বা মূর্খ কেউ না যে আ’লিমের বেশ ধরে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। আজকাল অনেক বের হয়েছে, বড় বড় টাইটেল আর ডিগ্রী দেখিয়ে বেড়ায়, কিন্তু মূলত তারা বিদাতপন্থী - তাই #সাবধান।
আপনারা ফেইসবুক থেকেও ইসলাম নিবেন না - এটা নির্ভরযোগ্য মাধ্যম না। অবশ্যই আপনারা শ্রেষ্ঠ আলেমদের বই-পুস্তক বা ওয়াজ লেকচারগুলো সংগ্রহ করবেন। সেখানে থেকে ইসলাম জানার ও শেখার চেষ্টা করবেন। ইসলাম শেখাটা দ্বীন, সাবধান! কোনো প্রতারককে আপনার দ্বীনকে ধ্বংস করার সুযোগ দিবেন না। কেয়ামতের দিন কেউ কারো উপকারে আসবেনা। সব সময় আল্লাহর কাছে দুয়া করবেন আল্লাহ যেনো হেদায়েতের উপরেই মৃত্যু দান করেন আর চেষ্টা করেন, যতটুকু বুঝেন তার থেকে কুরআন ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নতের উপরে আমল করার জন্য। আশা করা যায় আপনি ভ্রান্ত মতবাদ থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন ইন শা' আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলের প্রতিই রহমত করুন, আমিন।