বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

‘ইল্লাল্লাহ’ এর জিকির জায়েজ কিনা...

প্রশ্নঃ চরমোনাই পীর, আহমেদ শফী, আটরশি, মাইজভান্ডারী সহ বিভিন্ন দেওবন্দী ও বেরেলুভী পীর সাহেবরা ‘ইল্লাল্লাহ’ ‘ইল্লাল্লাহ’ জিকির করতে বলে এবং এর পক্ষে বিভিন্ন আজে-বাজে যুক্ত দেখায়। এই ভিডিওতে দেখুন অজ্ঞ মুরীদ যারা আরবী বুঝেনা তাদেরকে শয়তানি যুক্তি দেখিয়ে এই বেদাতী যিকিরের পক্ষে দালালি করছে -

https://www.facebook.com/video.php?v=734196253324764

প্রশ্ন হচ্ছে, এইরকম বানোয়াট জিকির করা যাবে কিনা? উত্তর দিয়েছেন শায়খ মুজাম্মেল আল-হক্কঃ

‘ইল্লাল্লাহ’ এর জিকির জায়েজ কিনা...
এলেমের দাবীদার এই আলেম সাহেবকে আলীমুল লিছান মনে হয়েছে। রাসুসঃ বলেন, শেষ জামানায় বিশেষ বিশেষ পদবী ও নামধারী এমন সব আলীমুল্লিসান আসবে যার আসলে মুনাফিক কিন্তু জবানে এমন এমন কথা বলবে মনে হবে যেন খুব জানে। অথচ তারা মুনাফেক। তিনি বলেন,
أخْوَفُ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي مُنَافِقٌ عَلِيمُ اللِّسَانِ يُجَادِلُ بِالْقُرْآنِ
আমার উম্মতের জন্যে আলীমুল্লিসানই সব চেয়ে বেশী ভয়ানক।
তিনি إلا الله কে জায়েজ করার জন্যে যে সব দলীল ও যুক্তি দিয়েছেন তা হলঃ
১) সুরা আলআসরের إلا الذين آمنوا وعملوا الصالحات । বলেছেন এতে নামাজ সহীহ হলে إلا الله ও সহীহ হবে। এমন কথা কি কথার জাওয়াব তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই খণ্ড আয়াতের অর্থ ‘হ্যাঁ, যারা ইমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে’- এ খণ্ড বাক্য এর আগের বাক্যের অংশ হল إن الإنسان لفي خسر । পুরা বাক্য হল إن الإنسان لفي خسر إلا الذين آمنوا । সকল মানুষই ক্ষতি গ্রস্থ তবে হ্যাঁ, যারা ইমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে। এখানে إلا الله জায়েজ করার কোন দলীন নেই।
২) সুরা আল ইমরানে وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ । এমন আয়াত শুদ্ধ হলে إلا الله ও শুদ্ধ। বলবো, এটা একটি পূর্ণ আয়াতের অংশ মাত্র। আর এই আয়াতে মুস্তাস্নার মুস্তাসনা মিনহু হল وَمَنْ । সুতারাং এই আয়াত দিয়ে যুক্তি দেওয়ার কোনই মুল্য নেই।
৩) সুরা বাকারার শুরুতে ১ম আয়াত الـــم জায়েজ হলে إلا الله ও জায়েজ। কেননা রাসুল বলেছেন যে কোরআনের একটি হরফ পড়বে সে ১০ টি নেকী পাবে। সুতারাং আলিফ, লা্‌ম, মীম পড়লে যদি নেকি হয় তাহলে إلا الله পরলেও নেকী হবে। বলবো তা গাজাখুরী কথা হল। الـــم একটি পূর্ণ বাক্য। এখানে এস্তেসনা ও মুস্তাসনা বলে কিছু নেই।
৪) কাউকে জিজ্ঞাস করা হল “মাথায় কি- টুপি ছাড়া” এটা যেমন ঠিক তেমনি إلا الله মানে আল্লাহ ছাড়া বলাও ঠিক। বলবো, আপনার মাথায় শয়তান ভর করেছে। কিসের সাথে কি নিয়ে আসেন? এমন কোন বাক্য আমরা কারো মুখে শুনিনি। হতে পারে কোন পাগল সমাজের কথোপকথনের ধারা। কিন্তু ভাষায় এর কোন স্থান নেই।
৫) বাচ্চায় বল্লো “ তোমাকে ছাড়া- তোমাকে ছাড়া”- মানে মা তোমাকে ছাড়া যাবনা। এমন বললে যেমন আমরা বুঝি ঠীক তেমনি إلا الله বল্লেও বুঝা যায়। বলবো, শিক্ষিত হয়ে থাকলে শিক্ষিত লোকের মত কথা বলুন। মা যদি বলে থাকে ‘ মামার বাড়ি যা’ তাহলে শিশু যদি বলে “তোমাকে ছাড়া”, তাহলে তাঁর বাক্য মায়ের বাক্যেরই পরিপুরক। এটা আলাদা কোন বাক্য নয়। আর যদি শিশু বিনা কারনে, আগে কিছু বলা ছাড়াই ঐ রকম বলে তাহলে মা বলবে, “তোকে কি ভুতে ধরেছে”?
৬) যারা জীবন ভর আরব দেশে থেকেছেন তাঁদের কেউ শুনেন নি যে কেউ মুস্তাসনা মিনহু না বলে মুস্তাসনা দিয়ে কথা বলেছে। এই কালেমা যে আয়াতে এসেছে সেখানে আল্লাহ মুসতাস না ও মুস্তাস্না মিনহু মিলিয়ে বলেছেন এই ভাবেঃ 
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ- محمد/19
জেনে নাও, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই-( মুহাম্মাদ/ ১৯)। তিনি খণ্ড করে বলেন নি। সুতারাং এই বাক্য ভেঙ্গে বলা যাবেনা। ভাংলেই অর্থ বিকৃত হয়ে যাবে। বরং অর্থ হবে ‘আল্লাহ ছাড়া- আল্লাহ ছাড়া’। শুধু পাগলা ও জাহেল সুফি ছাড়া এমন কোন বাক্য কোন আরব ভুলেও বলবেনা। 
৭) এলমূল কেরাআত, এলমুননাহু, আলওয়াকফ অয়াল ইবতিদা এসব বিদ্যার কালা কানুন কোনভাবেই ভাঙ্গা বাক্য উচ্চারন জায়েজ করেনা। যে সব স্থানে ওয়াকফ বা থেমে যাওয়া বা খণ্ড করা জায়েজ করেনা তাঁর মধ্যে উল্লেখজোগ্য হলঃ
(ক) মুস্তাস না ও মুস্তাশ্না মিনহু
খ) শর্ত ও মাশ্রুত। 
গ) মুবতাদা ও খবর।
ঘ) সেলাহ ও মাউসুল।
কেরাতের আলেমগন এমন স্থানে ওয়াকফ করাকে ‘ওয়াকফ ফাহেশ’ বলেছেন। অনেকে এমন কেরাআত কারির পিছনে নাজাম না জায়েজ বলেছেন। সুতারাং মুস্তাস্না মিনহু উল্লেখ না করা জায়েজ হওয়ার কোনই পথ নেই। বিশেষ করে এমন বাক্যে যে বাক্য তাওহীদের মূল।
৮) “মাথায় কি- টুপি ছাড়া”- এমন অনেকে বলে। আমি বলবো, এমন কথা জ্ঞানের অচল। এর সঙ্গে উক্ত বিষয়ের লেশ মাত্র কোন সম্পর্ক নেই। এটা কোন জাহেল সমাজের ভাব আদান প্রদানের ভাষা হয়ে থাকলেও ভাষার জগতে এর কোনই স্বীকৃতি নেই।
৯) অন্যত্র তাঁদের থানবী সাহেব নাকি বলেছেন যে রাসুল সঃ কাবার ঘাস কাটতে মানা করলে সাহাবি বলেন, ‘ইল্লাল ইজখের’- মানে এজখের কাঁটা গাছটা কাটবো? রাসুল বললেন, ইল্লাল ইজখের’- হ্যাঁ, ইজখের কাঁটা গাছটা। এর মানে ইজখের কাটতে পারো। এখানে সঙ্খেপে বল্লেও যে বাক্যের উত্তরে বলেছেন সে বাক্যেই তাঁর মুস্তস্না মিনহু রয়েছে। কাজেই এখানেও إلا الله এর পক্ষে কোন দলীল নেই। 
১০) এই সাহেবের কথা গুলি গালাগালি আর অপবাদে ভরপুর। রাসুল সঃ বলেন, গালাগালি করা ফাসেকের আলামত। আরেক হাদিসে বলেন গালাগালি করা মুনাফেকের চরিত্র। তিনি অনর্গল সমালোচক কে গাধা, বোকা, বলদ, জাহেল ইত্যাদি বলেছেন। 
১১) সবচেয়ে বড় বিষয় হল, এটি তাওহীদের কালেমা। এখানে হেরফের করতে পারলেই শয়তানের ব্যবসা সফল। আর তাই তাঁদের কাছে পুরা বাক্য বলতে এতো অসুবিধা লাগে। রাসুল ও তাঁর সাহাবাগন কেউই শুধু ঐ কালেম দিয়ে-হাফ কালেম ত দূর- তসবীহ করেন নাই। অথচ তাঁদের এত কি জরুরী হল যে ঐ বাক্যের অর্ধেক দিয়েই জিকির করতে হবে? এমনটি ত শয়তানের ওহী আর অয়াসয়াসা বলেই মনে হয়। রাসুলের নিয়মিত তাসবীহ ও জিকিরের শব্দ ও বাক্য কি আমাদের কাছে পৌছেনাই?
এসব আলীমুল্লিসান থেকে উম্মতের সাবধানতা কামনা করি। তা না হলে আল্লাহর সাথে যে ব্যবসা তাতে পুরাই ভরাদুবি হবে। এমন জিকির মোটেও জায়েজ হবেনা- আল্লাহু আ’লাম।