রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ পালন করা বিদাত

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বিদাতঃ

কারো জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ইত্যাদি উপলক্ষে বিশেষ দিবস বা বার্ষিকী উদযাপন করা একটি ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের বিজাতীয় সংকৃতি, আর মুসলমানদের জন্য অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুকরণ করা সম্পূর্ণ হারাম।

খ্রীস্টানরা ঈসা আঃ এর জন্ম উপলক্ষে ক্রিসমাস বা বড়দিন পালন করে। খ্রীস্টানদের দেখাদেখি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মৃত্যুর প্রায় ৪৫০ বছর পরে ইরাকের শিয়ারা মুসলমানদের মাঝে প্রথম রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কথিত জন্মদিন, ১২ই রবিউল আওয়াল উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী নামে বিদাতী একটা অনুষ্ঠান চালু করে। ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশের অল্প শিক্ষিত হুজুরেরা ইরাকের বিভ্রান্ত শিয়াদের দেখাদেখি ঈদে মিলাদুন্নবী নামের এই বিদাতী ঈদ পালন করা আমাদের দেশেও আমদানি করেছে।

মুসলমানদের ঈদ হচ্ছে ঈদুল ফিতুল এবং ঈদুল আযাহ। এর বাইরে ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কোন ঈদের কথা ক্বুরান হাদীসের কোথাও নেই, রাসুল সাঃ এই নামে কোন ঈদ আমাদেরকে পালন করতে বলেন নি, তাঁর সাহাবারাও করেন নি। এমনকি ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কোন শব্দ ক্বুরান হাদিসে নাই। আমি সেই সমস্ত লোকদেরকে বলছি, যারা শিয়াদের দেখাদেখি ঈদে মিলাদুন্নবী নামে নতুন ঈদ উদযাপন করার পক্ষপাতী, তারা ঈদে মিলাদুন্নবী কথাটা ক্বুরানের কোন একটি আয়াত থেকে অথবা রাসুল সাঃ এর একটি সহীহ হাদীস থেকে বের করে দেখান। আপনারা কেয়ামত পর্যন্ত ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কোন কিছু ক্বুরান হাদীস থেকে প্রমান করতে পারবনে না।

দলিল বিহীন, ম্যান মেইড (মানুষের বানানো) মনগড়া কোন ইবাদত আল্লাহ তাআলা কস্মিনকালেও কবুল করেন না। সুতরাং, ঈদে মিলাদুন্নবী নামের বিদাতী ঈদ পালন করা থেকে বিরত থাকুন। বিদাতী আমল আল্লাহ্‌ কবুল করেন না এনিয়ে কিছু হাদীসঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের মাঝে) নতুন আবিষ্কার করা বিষয়গুলো। আর প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় হচ্ছে বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে পথভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।
[সহীহ মুসলিমঃ ১৫৩৫, সুনানে আন-নাসায়ীঃ ১৫৬০, হাদীসের বাক্যগুলো নাসায়ী থেকে নেওয়া]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা, এর কোন অংশ নয়, তবে সেটা মারদুদু বা প্রত্যাখ্যাত হবে।
[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]

উল্লেখ্য, রাসুল সাঃ এর জন্ম ১২ই রবিউল আওয়ালে হয়েছিলো এই কথা ক্বুরান হাদীসের কোথাও উল্লেখ করা নেই এবং ঐতিহাসিকভাবে নিশ্চত জানা যায়না রাসুল সাঃ আসলে কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাসুল সাঃ এর জন্ম কোন তারিখে হয়েছিলো, এনিয়ে কয়েকটি তারিখ ও মতামত পাওয়া যায়। এর মাঝে, রাসুল সাঃ এর জন্ম ৯ই রবিউল আওয়াল হয়েছিলো, এই মতটাই ওলামাদের কাছে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী বলে গণ্য, বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা আর-রাহিখুল মাখতুম বইটা দেখতে পারেন।

সর্বশেষ, দলিল বিহীন কোন ইবাদত অর্থাৎ বিদাত করলে তার শাস্তিঃ
বিদআত করা সম্পূর্ণ হারাম। বিদআতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। বিদআত করলে ইবাদাত কবুল হয় না। বিদআতের শেষ পরিণাম জাহান্নাম। বিদআত করলে কিয়ামতের দিন যখন সূর্য মাথা অতি নিকটে থাকবে তখন সকলে তৃষ্ণায় পানি পান করতে চাইবে, আর তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার উম্মতকে হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করাবেন। কিন্তু আফসোস বিদআতিরা সেই দিন পানি পান করতে পারবে না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ
আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে , আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন : তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত । তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো : দূর হয়ে যা , দূর হয়ে যা।
[সহীহ মুসলিমঃ ৪২৪৩]

এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে? তাই মিলাদ খাওয়া আর মিলাদ পড়া ভাইয়েরা সাবধান। হাউজে কাউসারের মিষ্টি পানি থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে বিদাতী মিলাদের অনুষ্ঠান সহ যাবতীয় বিদাতী আকিদাহ ও আমল বর্জন করুন।

মিলাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা শায়খ মতিউর রহমান মাদানী হাফিজাহুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ এই লেকচারটা অবশ্যই দেখবেন


https://www.youtube.com/watch?v=28gMWYW3-kQ