প্রশ্নঃ
ফিদায়ী হামলা কি?
উত্তরঃ ২০০৪-৫ সালে বাংলাদেশের ‘জেএমবি’, ২০১৪ সালে
পাকিস্থানের একটি স্কুলে আক্রমনকারী ‘তেহেরিকে তালেবান’, ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশালে আক্রমনকারী আইসিসের মতো চরমপন্থী
দলের অনুসারী পথভ্রষ্ট লোকেরা আত্মঘাতী বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করার বর্বর
মিশনকে আদর করে ‘ফিদায়ী হামলা’ নাম দিয়েছে। এইভাবে নির্বিচারে নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যা
করে তারা মনে করে ইসলামের বড় খেদমত ‘জিহাদ’ করছে এবং এইভাবে নিজেদেরকে ধ্বংস করে তারা ‘শহীদ’ হয়ে জান্নাতের
হুর-পরীদের সাথে আনন্দ-ফূর্তি করার স্বপ্ন দেখে।
.
প্রশ্নঃ ফিদায়ী হামলা কি জায়েজ?
উত্তরঃ জিহাদের ময়দানে শত্রুদের
সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, আল্লাহর কালেমাকে উঁচু করার জন্য কোন
মুসলমান যদি নিহত হয়, তাহলে তিনি হচ্ছে শহীদ। আর শহীদের ৫টি
অনন্য মর্যাদা রয়েছে, তাঁর মধ্যে দুনিয়াতে হচ্ছে প্রথমটি
হচ্ছে, শহীদের রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তার সমস্ত গুনাহ
আল্লাহ্ তাআ’লা মাফ করে দেন। আর পরকালে সর্বোচ্চ
মর্যাদা, জান্নাতীদের মাঝে তাদেরকে অধিক পরিমানে হুর দেওয়া হবে। যাই হোক, এহচ্ছে যিনি প্রকৃত শহীদ তার প্রতিদান।
কিন্তু কাফেরদের মধ্যে যারা নিরীহ, অস্ত্র নিয়ে ইসলাম
এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেনা, এমন লোকদেরকে হত্যা
করা জায়েজ কিনা?
না, জায়েজ নয়। কাফেরদের মধ্য থেকে যারা
নারী, শিশু এবং প্রাপ্তবয়ষ্ক এমন পুরুষ যারা নিরস্ত্র এবং
মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেনা, তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ
নয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর কাছে একজন দূতকে পাঠান এবং বলেন, “শিশু
ও আসিফদেরকে হত্যা করোনা।” (আসিফ হচ্ছে নন
সিভিলিয়ান, অর্থাৎ কৃষক, সাধারণ কর্মী,
দাস, বৃদ্ধ, সাধারণ
মানুষ অথবা শত্রুপক্ষের এমন লোক যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করছেনা)
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী
রাহিমাহুল্লাহ ফাতহুল বারীতে আরো উল্লেখ করেছেন। ইবনে বাত্তাল বলেছেন, “কোন
অবস্থাতেই নারী ও শিশুদের হত্যা করা যাবেনা, এই ব্যপারে আলেমদের ইজমা (ঐক্যমত্য) রয়েছে।”
[ফাতহুল বারীঃ সহীহ
বুখারীর ৩০১২, ২৩৭০ নং হাদীসের ব্যখ্যা]
.
২০১৪ সালে পাকিস্থানের পেশোয়ারে
আর্মিদের পরিচালিত একটি ‘পাবলিক’ স্কুল, সেখানে আর্মির সন্তান ও
সাধারণ মানুষের সন্তান সবাই পড়তে যায়, অনেকটা আমাদের দেশের
ক্যান্টনমেন্ট বা ক্যাডেট কলেজের মতোই। আর পাকিস্থান আর্মি এবং সরকার উভয়ে হচ্ছে
জালেম বাহিনী, যারা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অন্যায়ভাবে অনেক
বাঙ্গালীদের হত্যা ও নির্যাতন করেছে, এখন পর্যন্ত তাদের
বিভিন্ন জাতির উপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। পাকিস্তান আর্মিতে যারা কাজ করে হতে
পারে তাদের কেউ মুর্তাদ, ইসলামের দুশমন আবার অনেকে ফাসেক
মুসলমান, অনেকে সত্যিকারের ধার্মিক মুসলমান। তাই তাদের
সন্তানরা সবাই কাফের, ঢালাউভাবে এই ফতোয়া দেওয়া যাবেনা। আর
পাকিস্থানের আর্মির ছেলে-মেয়েরা কাফের হোক মুসলমান হোক, তাদের
বাবারা আর্মিতে মুসলমানদেরকে হত্যা করছে, এই অজুহাতে তাদের
সন্তানদেরকে হত্যা করার অনুমতি ইসলাম দেয়না। পিতার অপরাধের শাস্তি পুত্রকে দেয়া
যাবেনা, ইসলামের মূল শিক্ষার মাঝে এটা পড়ে, যা কথিত অনেক মুজাহিদেরা বুঝতে চায়না।
সুতরাং, এই ধরণের জংগি,
সন্ত্রাসী আক্রমনকে তারা ফিদায়ী হামলা, শহীদী
হামলা... যতই সুন্দর নাম দেক না কেনো, ক্বুরান হাদীস অনুযায়ী
এইগুলোর কোন ভিত্তি নেই, বরং এরা মুসলমান নামে কলংক, এরা জিহাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মুসলমানদের দুর্নাম করছে। এইরকম সন্ত্রাসী
হামলা করতে গিয়ে যদি তারা নিহত হয়, তাহলে কস্মিনকালেও তারা
শহীদ নয়। বরং, তাদের মৃত্যু শয়তানের রাস্তায়।
.
একজন নিরপরাধ মানুষকে কেউ যদি
হত্যা করে, সে মুসলমান হোক কিংবা কাফের তার অপরাধ হচ্ছে গোটা মানবজাতিকে হত্যা করার
সমান, এই কথা ক্বুরানে স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা উল্লেখে করেছেন, “যে কেউ কিসার (প্রাণের
বিনিময়ে প্রাণের আইনের জন্য) অথবা জমীনে ফাসাদ (অনর্থ সৃষ্টি করা) ছাড়া কাউকে
হত্যা করে, সে যেন সমস্ত মানুব জাতিকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে,
সে যেন সমস্ত মানবজাতির জীবন রক্ষা করে।” সুরা আল-মায়িদাহঃ ৩২।
আর এইরকম জায়গাগুলোতে অনেক
মুসলমান থাকে, একজন মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করাতো দূরের কথা সামান্য রক্তপাত করা
কতো ভয়ংকর দেখুন।
ইসলাম কায়েমের জন্য #জিহাদ নাম দিয়ে জেএমবি, তেহরিকে তালেবান
রাস্তায়, স্কুলে, বাসে, অফিস-আদালতে নির্বিচারে বোমা মেরে নিরস্ত্র নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে।
তাদের এই জিহাদে (শয়তানের রাস্তায়) যদি নিরপরাধ কোন মানুষ মারা যায়, তাহলে তারা মনে করে তাদের কোন পাপ হবেনা। আর আত্মঘাতী বোমা হামলা করে কেউ
মারা গেলে সে শহীদ হিসেবে জান্নাতে যাবে। জান্নাতের খেজুর ও হুরের লোভ দেখিয়ে তারা
২০-২৫ বছরের কিছু বোকা কিসিমের আবেগী ছেলেকে আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য ব্রেইন
ওয়াশ করে। এই সবই হচ্ছে জিহাদের #অপব্যখ্যা করে শয়তানের রাস্তায় যুদ্ধ! কোন মুসলমানকে হত্যা করাতো
দূরের কথা, মানুষের সামান্য রক্তপাত করার ফযীলতের বর্ণনা নিয়ে হাদীস দেখুনঃ
.
যে সকল সাহাবী খারিজীদের বুঝাতে
চেষ্টা করেন তাঁদের একজন জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ (মৃত্যু ৬০ হি.) একবার তিনি ‘র্কুরা’ বা সদাসর্বদা কুরআন
তিলাওয়াত ও চর্চায় লিপ্ত খারিজীদের কতিপয় নেতাকে ডেকে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কাঠিন্য বা
উগ্রতার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহও তার জন্য কাঠিন্য বা উগ্রতার পথ অবলম্বন করবেন।
কেউ যদি কোনো মানুষের হাতের তালুতে রাখার মত সামান্য রক্তও প্রবাহিত করে (যেন যে
মুরগী জবাই করছে), তবে সেই রক্ত তার ও জান্নাতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে (সে জান্নাত দেখতে
পাবে, কিন্তু সেই রক্ত তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দিবে না)
কাজেই যদি কেউ পারে এইরূপ রক্তপাত থেকে আত্মরক্ষা করতে, তবে
সে যেন আত্মরক্ষা করে।”
এ কথা শুনে উপস্থিত খারেজী লোকগুলি
খুব ক্রন্দন করতে লাগল। তখন জুনদুব (রাঃ) বলেন, এরা যদি সত্যবাদী হয় তবে এরা মুক্তি পেয়ে
যাবে।...কিন্তু পরে তারা আবার উগ্রতার পথে ফিরে যায়।
.
সর্বশেষ, আমাদের দেশের অনেক
কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ২০-২২ বছরের ছেলে-পিলে, যারা সারা
জীবন হারাম আর পাপের মাঝে ডুবে ছিলো, আজকে তারাই দুয়েক-মাস
সাইয়েদ কুতুব আর মওদুদীর অপব্যখ্যামূলক অপতাফসীর পড়ে আর আনোয়ার আওলাকি, জসীম উদ্দিনের মতো উগ্রপন্থী বক্তাদের মনগড়া ফতোয়াবাজির শিকার হয়ে ভয়ংকর
তাকফিরি বিষে আক্রান্ত হয়েছে। অকালপক্ক, জ্ঞানপাপী এই
লোকগুলো যেখানেই কোন সন্ত্রাসী আক্রমন করে, তাদের দলের
বিভ্রান্ত নেতা ও ইমামদের লেখা প্রচার করে সাধারণ মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করছে।
ইতিমধ্যে তারা জিহাদের নাম দিয়ে অনেককেই প্রতারিত করে খারেজীদের বিষাক্ত আকিদাহ
তাদের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে এবং জংগিবাদকেই জিহাদ বলে বিভ্রান্ত করেছে। এনিয়ে
নিচের কিছু পোস্ট দেখুন -
.
“যুদ্ধে নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা নিষেধ”
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/969698756396205?ref=notif¬if_t=like
.
জসীম উদ্দিন রাহমানী ভক্তদের জবাবঃ
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/890831644282917/?type=1&p=10
.
আনোয়ার আল-আওলাকির লেকচার শোনা
যাবে?
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1411864525./909241182441963/?type=1&source=42