হিন্দুদের গান ও কবিতা ও নাটক, মুসলমানদের মাঝে শিরকের থাবা...
ভারতীয় একজন গীতিকার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন যা আজকাল নামধারী মুসলমান
সমাজ দেশপ্রেমের গান হিসেবে গাইছে ও শুনছে!
“ও আমার দেশের মাটি…
তোমার পরে’ ঠেকাই মাথা” (নাউযুবিল্লাহি মিন
যালিক)
রবি ঠাকুরের বাপ-দাদা ছিলো হিন্দু, তিনি নিজে হিন্দুধর্ম থেকে ব্রাহ্মধর্মে
কনভার্ট হন। নতুন ধর্মে গেলেও, ব্রাহ্মধর্মের অনেক কিছুই আসলে হিন্দুধর্ম বিশ্বাস দ্বারাই
প্রভাবিত ছিলো। কয়েক হাজার বছরের ‘শিরকের’ সংস্কৃতি নিশ্চয়ই ২০-৩০
বছরেই মুছে ফেলা যায়না। একারণেই নতুন কেউ ‘ইসলাম’ গ্রহণ করলে তাকে শিরকি
নাম পরিবর্তন করতে হয়, মুশরেকদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে পরিপূর্ণভাবে
আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়। এইজন্য দেখবেন, নতুন যারা ইসলাম কবুল করে ২-১ বছরের
মাঝেই তারা ২০-৩০ বছর ধরে জন্মগত মুসলিমদের থেকে দ্বীনের ব্যপারে অনেক এগিয়ে থাকে।
ফা লিল্লাহিল হা’মদ, এটাই হচ্ছে আল্লাহর দ্বীন ও মানুষের বানানো
কল্পিত ধর্মের মাঝে পার্থক্য।
যাই হোক যেই কথা বলছিলাম, হিন্দুরা গাছ, পাথর, মূর্তি, সাপ-বিচ্ছু, বাঁদর-হনুমান,
নারী-পুরুষের প্রজনন অংগ...এমন কোন কিছুই বাকি নেই, যার পূজা তারা করেনা। এর কারণ হচ্ছে,
তারা মনে করেঃ “মহাবিশ্বের সবকিছুর মাঝেই সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ আছেন, তাই
যা কিছুরই পূজা হোক না কেনো, তাতে আল্লাহর পূজা করা হয়, যাকে বলা হয় pantheism বা সর্বেশ্বরবাদ।”. এজন্য সর্বেশ্বরবাদীরা
সবকিছুরই, বিশেষ করে বড় নদী, বড় গাছ, আশ্চর্য কোন জিনিস দেখলেই সেইগুলোর পূজা করার
জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ক্বুরান হাদীসের আলোকে মুসলমানদের আকীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস
হচ্ছে, “আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা আরশে আযীমের উর্দ্বে
রয়েছেন, তিনি তাঁর সৃষ্ট জগতে বিরাজমান নন। অর্থাৎ খালিক (সৃষ্টিকর্তা) ও মাখলুক (সৃষ্টিজগত)
আলাদা। তবে তিনি আরশের উপরে থেকে সারা বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে তিনি তা জানেন, দেখেন,
শুনেন এবং সবকিছুর নিয়ন্ত্রন একমাত্র তিনিই করেন। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআ’লার জ্ঞান, ক্ষমতা ও
নিয়ন্ত্রন সব জায়গায় বিরাজমান, কিন্তু সত্ত্বাগতভাবে তিনি নিজে সব জায়গায় বিরাজমান
নন, তিনি রয়েছেন আরশের উপরে।”
এমনিভাবে মুশরেকরা মনে করে, ‘আমাদের দেশ’ আমাদের খাওয়ায় পরায়।
একারণে দুর্গা, কালীকে যেমন ভক্তি করে তারা “মা” ডাকে, তেমনি দেশকেও
তারা “মা” ডাকতে ভালোবাসে (দেশ
মা, দেশ মাতা, দেশ মাতৃকা), এবং দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁর প্রতি মাথা নত করতেও
তাদের কোন আপত্তি নেই। সেই চেতনা ও বিশ্বাস থেকেই রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, “তোমার পরে ঠেকাই মাথা”।
অথচ মুসলমানেরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত (রুকু, সেজদা) করেনা।
উল্লেখ করা যেতে পারে, হিন্দু দেশ ভারতের জাতীয় সংগীতের রচয়িতাও এই রবি ঠাকুর। সেটাতে
তিনি লিখেছিলেন,
“জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা”!
অর্থাৎ বন্দনা করতে করতে তিনি ভারত সরকারকে (তৎকালীন বৃটিশ রাজাকে!) ভারতের
‘ভাগ্য বিধাতা’ বানিয়ে দিলেন, এবং
অত্যাচারী, খুনি রাজা যে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের উপরে নির্যাতনের স্টিম রুলার
চালিয়ে তাদের অধিকার হরণ করে রেখেছিলো, তার জয়ের জন্য স্তুতি গেয়েছেন। আশ্চর্য হওয়ার
কিছু নেই, ইয়াহুদী খ্রীস্টানদের কাছ থেকে সম্মান (নোবেল পুরষ্কার) পাওয়ার জন্য স্বজাতির
সাথে একটু গাদ্দারি করতেই হয় বৈকি, যার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে পাকিস্থানের অভিনেত্রী
মালালা!
আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ‘ভাগ্যবিধাতা’ মনে করা ডাহা শিরক,
যার কারনে একজন মানুষের ঈমান নষ্ট হয়ে সে মুশরেক হয়ে যাবে। একারণে ভারতীয় সমস্ত আলেম-ওলামারাই
ভারতের মুসলমানদের জাতীয় সংগীত গাওয়া হারাম ও শিরক বলে ফতোয়া দিয়েছেন, এবং মাদ্রাসাগুলোতে
এবং ইসলামিক স্কুলগুলোতে এই গান গাওয়া হয়না।
উল্লেখ্য, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ১৮৮২ সালে রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসের
একটি গান, যা নাকি আধুনিককালে একজন পথভ্রষ্ট মুসলমান (এ.আর. রহমান) সুর দিয়ে এর জনপ্রিয়তাকে
আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন,
“বন্দে মাতরম্”
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক এই গানের বঙ্গানুবাদঃ “বন্দনা করি মায়”!
শ্রী অরবিন্দ কর্তৃক ইংরেজি অনুবাদঃ “Mother, I bow to
thee”!
যারা বন্দনা অর্থ বুঝেন নাঃ আরবীতে আমরা যাকে “রুকু” (আল্লাহর সামনে নত
হওয়া) বলি ইংরেজীতে তাকে bow বলা হয়।
সর্বশেষ, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত...
“চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস...”
আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত অন্য কারো দিকে সম্পৃক্ত করা এবং তার প্রশংসা ও গুণকীর্তন
করা শিরক। আকাশ, বাতাস আল্লাহর সৃষ্টি ও নেয়ামত, এটা দেশের বলে দেশের প্রশংসা করা বা
দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আল্লাহর সাথে অকৃতজ্ঞতার কারণে কুফুরী। সব কিছুর মালিক
হচ্ছেন এক আল্লাহ। সুতরাং, প্রকৃতি বা দেশের নয়, বরং দেশকে যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই
আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে, তার প্রশংসা করতে হবে। যেমন আমরা সালাতের শুরুতে বা যেকোন
ভালো কাজের শুরুতে বলে থাকি,
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
উচ্চারণঃ আলহা’মদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
আল্লাহর নেয়ামতকে অন্য কারো দিকে সম্পৃক্ত করা কুফুরীঃ
যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর যুগে মানুষদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। তখন তিনি
বললেন, “তোমরা কি শুনতে পাওনি,
তোমাদের রব গত রাত্রে কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, আমি আমার বান্দাদের কোন নেয়ামত দান
করি। কিন্তু তাদের একদল ঐ নেয়ামতের অস্বীকারকারী হয়ে যায়। তারা বলে, অমুক অমুক নক্ষত্রের
প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। অতএব, যারা আমার উপর ঈমান আনল এবং আমার বৃষ্টি
বর্ষণ করার কারণে আমার প্রশংসা করল, তারাই আমার উপর ঈমান আনল। আর নক্ষত্রের মূল প্রভাবকে
অস্বীকার করল। আর যারা বলে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত
হয়েছে। তারাই আমাকে অস্বীকার করল এবং নক্ষত্রের মূল প্রভাবের উপর বিশ্বাস স্হাপন করল।”
সুনানে নাসাঈঃ ১৫২৮।
সুতরাং, দেশের জন্য আকাশ-বাতাস, প্রকৃতি সব কিছুর জন্য প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা
করতে হবে এইগুলো স্রষ্টা, এক আল্লাহর। দেশ বা প্রকৃতির মতো জড় পদার্থের, যার নিজেরই
ভালো-মন্দ করার কোন ক্ষমতা নেই – তার বন্দনা, প্রশংসা, তাকে ঝুঁকে কুর্নিশ
করা – এইসমস্ত হিন্দুয়ানি
ও প্রকৃতি পূজারীদের কার্যকলাপ থেকে মুসলমান সমাজকে বের হয়ে আসতে হবে।