প্রশ্নঃ স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, স্মৃতিস্মম্ভ, মূর্তি-প্রতিকৃতি, নেতৃবৃন্দের
মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ, এক মিনিট নীরবতা পালন ইত্যাদি পালন করা কি জায়েজ?
উত্তরঃ নাজায়েজ।
(ক) পুস্পস্তবক অর্পণঃ
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত দীনে পুস্পস্তবক অর্পণের
কোন বিধান নেই। মৃতদের জন্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ খ্রিস্টান জাতির সংস্কৃতি। হিন্দু ধর্মেও
মূর্তিকে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শুধু পুস্পস্তবক অর্পণ নয় মিষ্টি, সন্দেশ, দুধ
কলার স্তবকও অর্পণ করা হয় দেবভোগ হিসেবে।
মূলত পুস্পস্তবক অর্পণ মূর্তিপূজার অংশ, এটি একটি ইবাদত যা মূর্তিকে দেয়া
হয়।কাজেই মুসলিমদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহনের কোন সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন ব্যক্তি সংস্কৃতিতে যে সম্প্রদায়ের
অনুসরণ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়”। [আবু দাউদ, সনদ উত্তম]
আমাদের দেশে যা করা হয় এতে মনে হয শহিদগণের ত্যাগ তীতিক্ষার প্রতি উপহাসের
শামিল। ইট, সিমেন্ট,রড দিয়ে কিছু একটা বানিয়ে সেখানে কিছু ফুল রেখে আসলে তা কি শহীদগণ
পেলেন নাকি ঐ ইট, সিমেন্ট, রডগুলোকেই দেয়া হল সেই ফুলের সওগাত?
কাদের থেকে শিখেছি এই পুস্পস্তবক অর্পণ?
শহীদ ও মৃত ব্যক্তিদের জন্যে অন্তরে বাস্তব দরদ থাকলে, তাদের ত্যাগ তীতিক্ষার
বিনময়ে কিছু দেওয়ার মনোবৃত্তি থাকলে সে পথটি খুঁজতে হবে, যে পথে কিছু করলে তারা পরকালে
উপকৃত হবেন। সে পথটি হল আল্লাহর অনুমোদিত পথ। শহীদ ও মৃতদের জন্যে দোয়া করুন তাদের
নিয়ত করে তাদের উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করুন, তাদের উদ্দেশ্যে, তাদের পক্ষ হয়ে জনকল্যাণমূলক
কাজ করেন তাহলে এর বিনিময়ে তারা শত কোটি পুষ্প অফুরন্ত নেয়ামত, ফুলে ফলে ভরা উদ্যানের
মালিক হতে পারেন আল্লাহর কাছে। আর এটাই হল তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
(খ) এক মিনিট নীরবতা পালনঃ এটা হারাম।
কায়েস ইবনু আবী হাযেম বলেন, “আবু বকর রাদিয়াল্লাহু
আনহু (হজের মওসুমে) যায়নাব নামক আহমাস গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলেন। তিনি দেখলেন,
সে কথা বলে না। তিনি বললেন, সে কথা বলে না কেন? লোকেরা বলল- তার হজটি এমন যাতে সে নীরবতা
পালন করছে। আবু বকর তাকে বললেন,তুমি কথা বল। তোমার এ নীরবতা পালন অবৈধ। এটি জাহেলিয়াতের
(শিরক ও অজ্ঞতা) যুগের কাজ। অতঃপর সে মহিলাটি কথা বলল। [বুখারী]
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্যে নীরবতা পালন কর”।
অপর এক হাদীসে হক ও সত্য থেকে নীরবতা পালনকারীকে বোবা শয়তান বলা হয়েছে। মৃতদের
জন্যে দুয়া করা একটি হক ও সত্য দ্বীনি বিধান। তা না করে যারা নীরব থাকে তারা উক্ত
হাদীস অনুযায়ী বোবা শয়তান।আল্লাহ তো বোবা হতে কাউকে নির্দেশ দেননি। তিনি তাকে উদ্দেশ্য
করে মুখ খুলে দু’আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মূলঃ তাওহীদ জিজ্ঞাসা জবাব (১)
কাজী মুহাম্মাদ ইবরাহীম
প্রধান মুহাদ্দিস, জামিয়া কাসেমিয়া নরসিংদী