ক্রিসমাস বা বড়দিন
উপলক্ষে কিছু কথা
সৌর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ ২২শে ডিসেম্বর।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এই দিনটিতে বছরের সবচাইতে ছোট দিন এবং সবচাইতে বড় রাত হয়ে
থাকে। আল্লাহর অনেক নিদর্শনের মাঝে রয়েছে রাত দিনের আবর্তন এবং ঋতুর পরিবর্তনের
মাঝে। আল্লাহ সুবহানাহু তাআ'লা বলেন,
"নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং
রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে 'উলিল আলবাব' (বোধ সম্পন্ন লোকদের) জন্যে। ('উলিল আলবাব' হচ্ছে তারা), যারা
দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায়
আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে। আর (তারা
বলে) হে আমাদের পালনকর্তা! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই,
আমাদিগকে তুমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচাও।"
যাই হোক, সামনে আসছে ২৫শে ডিসেম্বর,
'নাসারাহ' বা খ্রীস্টানদের ক্রিসমাস বা বড়দিন
নামক সবচাইতে বড় শিরকি অনুষ্ঠান। খ্রীস্টানরা বিশ্বাস করে ‘ক্রিসমাস বা বড়দিনে আল্লাহর পুত্র ঈসা (আঃ)
জন্মগ্রহণ করেছেন’,
নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক!
খ্রীস্টানরা ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর সন্তান মনে
করে, একারণে
তারা কাফের বা অবিশ্বাসী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআ’লা বলেন,
“নিশ্চয় তারা কাফের যারা বলে, মসীহ ইবনে মরিয়ম (ঈসা আঃ) ই
হচ্ছেন আল্লাহ।”
[সুরাহ আল মায়েদাঃ ১৭]
“তারা (খ্রীস্টানরা) বলেঃ দয়াময় আল্লাহ
সন্তান গ্রহণ করেছেন। নিশ্চয় তোমরা তো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ। হয় তো এর কারণেই
এখনই নভোমন্ডল ফেটে পড়বে,
পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচুর্ণ হবে। এ
কারণে যে, তারা দয়াময় আল্লাহর জন্যে সন্তান সাব্যস্ত করে।
অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়। নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে কেউ নেই যে,
দয়াময় আল্লাহর কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবে না।” [সুরাহ মারইয়ামঃ ৮৮-৯৩]
এইরকম শিরকি আকিদা জড়িত থাকার কারণে
ক্রিসমাস বা বড়দিন ২৫শে ডিসেম্বর উপলক্ষে খ্রীস্টানদেরকে শুভেচ্ছা জানানো বা উইশ
করা, মেরী
ক্রিসমাস, হ্যাপি হ্যাপি...ইত্যাদি বলা বা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো,
তাদেরকে উপহার দেওয়া অথবা তাদের ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া
সম্পূর্ণ হারাম এবং কবীরাহ গুনাহ। সম্মানিত ওলামারা এই কাজগুলোকে মানুষ হত্যা করা,
চুরি করা, জিনা করার চাইতেও বড় গুনাহ বলে
ফতোয়া দিয়েছেন, কারণ এর সাথে ‘শিরকের’ পাপ জড়িত আর শিরক হত্যার
চাইতেও জঘন্য অপরাধ।
২০১৩ সালে ক্রিসমাস নিয়ে এমেরিকান একজন টিভি
বক্তা ইয়াসির ক্বাদী একটা মনগড়া ফতোয়া দিয়ে তার শ্রোতাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলো।
এমনকি নিজের অপব্যখ্যার পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে আলেমদের সম্পর্কে মিথ্যা কথা
বলেছিলো। আপনারা এরকম বিভ্রান্তিকর ফতোয়া থেকে সতর্ক থাকবেন। আমরা ইয়াসির ক্বাদী
এবং তার মতো টিভি,
ইউটিউব, ফেইসবুক বক্তাদেরকে অনুরোধ করবো,
আপনারা ইসলাম নিয়ে কথা বলার পূর্বে বিষয়টা ভালোভাবে জেনে বলার জন্য,
এবং বিভ্রান্তিকর অপব্যখ্যা দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য। [যারা
এনিয়ে বিস্তারিত জানতে চান তারা ইমাম মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রহঃ এর ফতোয়া
দেখুন, ফতোয়া আরকানুল ইসলামে]
‘জামায়াতে ইসলামী’ নামক একটি দল আমাদের দেশে
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েম করার কথা বলে। অথচ তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত আমির
মকবুল আহমাদ ২০১৪ সালের ২৪শে ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে খ্রীস্টানদেরকে বড়দিনের
শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “২৫শে
ডিসেম্বর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শুভ বড় দিন উপলক্ষে আমি তাদের আন্তরিকভাবে
শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং শান্তি ও কল্যাণ কামনা করছি।’
আমরা জামাতে ইসলামী দল এবং তাদের অনুসারী
ভাইদের প্রতি অনুরোধ করবো,
আপনার এইরকম গণতান্ত্রিক শিরকি রাজনীতির চাপে পড়ে অথবা বিধর্মীদেরকে
খুশি করার জন্য ফতোয়া চেঞ্জ করবেন না। বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে যে কোন ধরণের
সরকারী অথবা বেসরকারী বিবৃতি দেওয়া, অভিনন্দন জানানো গর্হিত
অপরাধ।
“ধর্ম যার যার উৎসব সবার” একথা যে বলে, সে কাফের মুশরেকদের শিরকি অনুষ্ঠান মুসলমানদের ভেতরে প্রবেশ করাতে চায়।
এইরকম পথভ্রষ্ট লোক ও তাদের ষড়যন্ত্র থেকে মুসলমান জাতিকে সতর্ক করতে হবে।
খ্রীস্টানদের শিরকি অনুষ্ঠান ক্রিসমাস ও
ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষে হাজার হাজার ইয়াহুদী-খ্রীস্টান ও ভ্রষ্ট মুসলমানেরা পাপের
মেলার স্থানগুলোতে গিয়ে জড়ো হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে এ উপলক্ষে
মদ, জুয়া,
জিনা-ব্যভিচার, ফাহেশা নারী ও পুরুষ এবং
গান-বাজনার উতসব শুরু হয়। মিশর, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি নামধারী
অনেক মুসলিম দেশ এইসমস্ত পাপের কাজগুলোকে ব্যবহার করে ‘পর্যটন শিল্প’ নাম দিয়ে হারাম আয়-উপার্জনে
নেমেছে।
২০০৪ সালে ক্রিসমাসের ঠিক পর দিনই ২৬শে
ডিসেম্বর রিখটার স্কেলে ৯.১ মাত্রার ভয়াবহ এক সামুদ্রিক ভূমিকম্প ‘সুনামি’ দিয়ে আল্লাহ তাআ’লা ইন্দোনেশিয়ার প্রায় দুই লক্ষ ত্রিশ
হাজারের বেশি মানুষকে চোখের পলকে ধ্বংস করে দিয়ে তার বান্দাদেরকে পুনরায় স্বরণ
করিয়ে দিয়েছিলেন,
“নিশ্চয় আপনার রব্বের পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন।” [সুরা আল-বুরুজ]
বড়ই দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, মুসলিম সমাজে বড় হয়েও
পাশ্চাত্য সংকৃতির অন্ধ গোলামী করাকে যারা নিজেদের ধ্যান-জ্ঞান বলে মনে করেন,
এমন একশ্রেণীর অজ্ঞ মুসলমানেরা আজকে বাংলাদেশে বসে খ্রীস্টানদের
শিরকি অনুষ্ঠানে শরীক হচ্ছে, সেইগুলো উদযাপন করছে। অথচ এরা
নিজেরাও জানেনা এই সমস্ত অনুষ্ঠানে শরীক হয়ে তারা তাদের ঈমানকে কিভাবে নষ্ট করছে।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও
খ্রীষ্টানদেরকে ‘আওলিয়া’ (ঘনিষ্ট বন্ধু বা সাহায্যকারী)
হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের আওলিয়া। তোমাদের মধ্যে যে
তাদেরকে আওলিয়া বানাবে, সে তাদেরই (ইয়াহুদী/খ্রীস্টানদের)
অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। আল্লাহ (এমন) জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সুরা আল-মাইয়ি’দাহঃ ৫১]
নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন
(লেবাসে-পোশাকে, চাল-চলনে
অনুকরণ) করবে সে তাদেরই দলভুক্ত।”
সুনানে আবু দাউদ, মিশকাতুল মাসাবীহঃ ৪৩৪৭।