শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

জুমুআ’হর দিনে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ

জুমুআহর দিনে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ
- আনসারুস সুন্নাহ
_______________________________
১. সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা
ক্বুরান মাজীদের সুরা কাহাফ (১৫-১৬ নাম্বার পারার ১৮ নাম্বার সুরা) তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব (উত্তম), এর ফযীলত হচ্ছে যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পড়বে পরবর্তী জুমুয়াহ পর্যন্ত তার দিনগুলো নূরান্বিত (আলোকিত) হয়ে থাকবে। পুরোটা সম্ভব না হলে অন্তত ১০, ২০ আয়াত, যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব পড়া উচিৎ। যারা পড়তে পারেন না, তারা তেলাওয়াত শিক্ষা করার পূর্বে বা যারা পড়তে পারেন তারাও সুরা কাহাফের তেলাওয়াত শুনতে পারেন। সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করার সময় হচ্ছে বৃহস্পতিবার মাগরিবের পর থেকে শুক্রবার মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মাঝে। একবারে পুরোটা পড়তে না পারলে ২-৩ বারে ভাগ করে পড়া যাবে।
_______________________________
সূরা কাহাফের ফজিলতঃ
ক. আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করবে তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাজতে রাখা হবে। [সহীহ মুসলিম]

খ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য এমন একটি নূর হবে, যা তার অবস্থানের জায়গা থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করে দিবে। আর যে ব্যক্তি উহার শেষ দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জীবদ্দশায় দাজ্জাল বের হলেও সে তার কোন ক্ষতি কর`তে পারবে না।
[সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং-২৬৫১]

গ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি জুমআর রাত্রিতে সূরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য স্বীয় অবস্থানের জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নূর হবে
[সহীহ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, হাদীছ নং- ৭৩৬]

ঘ. অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
যে ব্যক্তি জুমআর দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত আলোকময় হবে। [সহীহ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, হাদীছ নং- ৭৩৬]
_______________________________
২. দুরুদ পাঠ করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। [সুরা আহযাবঃ ৫৬]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমুয়াহর দিনে বেশি বেশি করে দুরুদ পড়তে বলেছেন। একবার দুরুদ পড়লে আল্লাহ তার প্রতি ১০ বার রহমত করেন। সর্বশ্রেষ্ঠ দুরুদ হচ্ছে দুরুদে ইব্রাহীম যা সালাতে পড়া হয়। শুধুমাত্র সহীহ হাদীসে বর্ণিত দুরুদগুলোই পড়বেন, প্রচলিত ওযীফা ও অন্যান্য বিদাতী বই থেকে বানোয়াট কোন দুরুদ পড়বেন না। বেদাতী দুরুদ কোনগুলো জানার জন্যে আমাদের এই পোস্ট দেখুন।
_______________________________
ওযীফা নামক বেদাতী কিতাবের ধোঁকা
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1442546691./1442257942473615/?type=1
_______________________________
ক. কোন মজলিসে কারো সামনে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম উচ্চারিত হলে, বা বই-পুস্তকে নবী সম্পর্কে কোন লেখা পড়লে প্রথমে একবার দুরুদ পড়া ওয়াজিব, না পড়লে গুনাহ হবে। এর পরে যতবার তাঁর নাম উচ্চারিত হবে ততবার দুরুদ পড়া মোস্তাহাব। এ সম্পর্কিত সহিহ হদিসঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক, যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আমার ওপর দুরূদ পাঠ করল না। [সুনানে তিরমিযী]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ সেই ব্যক্তি কৃপণ, যার কাছে আমার আলোচনা করা হলো, কিন্তু সে আমার ওপর দুরূদ পড়ল না। [সুনানে তিরমিযী]

***আরবী ভাষায় সালাত শব্দের অর্থ রহমত, দু, প্রশংসা বর্ণনা করা। আর সালাম শব্দের অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা। তাই রাসূলের প্রতি সালাত ও সালামের মর্ম হলো, রাসূলের জন্যে রহমত ও সালামাতের জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করা। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অর্থ তাঁর (রাসুলের) ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

খ. দুরুদ পড়ার ফজিলতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত করবেন।
[সহীহ মুসলিমঃ ৩৮৪, সুনানে তিরমিযীঃ ৩৬১৪, সুনানে নাসায়ীঃ ৬৭৮, সুনানে আবউ দাউদঃ ৫২৩, মুসনাদে আহমাদঃ ৬৫৩২]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ পড়বে।
[সুনানে তিরমিযীঃ ৪৮৪, হাদীসটি হাসান]

গ. জুমুআর দিন বেশি করে দুরুদ পড়ার উৎসাহ প্রদানঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং ঐদিন তোমরা আমার উপর বেশি করে দরূদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।
লোকেরা (সাহাবীরা) বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সেই ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?
তিনি বললেন, আল্লাহ নবী-রাসুলদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন। (বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে।)
[সুনানে আবু দাউদঃ ১০৪৭, সুনানে নাসায়ীঃ ১৩৭৪, সুনানে ইবনু মাজাহঃ ১৬৩৬, মুসনাদে আহমাদঃ ১৫৭২৯, সুনানে দারেমীঃ ১৫৭২, হাদীসটির সনদ সহীহ (বিশুদ্ধ)]
_______________________________
৩. দুয়া কবুলের সময়টাতে বেশি করে দুয়া করাঃ
জুমুয়ার দিন সংক্ষিপ্ত একটা সময় আছে ঐ সময়ে বান্দা যা চাইবে তাই দেওয়া হয়। কিছু আলেমের মতে সেই সময়টা হচ্ছে ইমাম খুতবার জন্য মিম্বরে বসা থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়টা, অন্য আলেমদের মতে সেটা আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। দুই দল আলেমই তাদের পক্ষে দলিল ও যুক্তি পেশ করেছেন, যাই হোক সর্বোত্তম হচ্ছে এই দুই সময়েই বেশি বেশি করে নিজের, পরিবারের ও সমস্ত মুসলমানদের জন্য দুয়া করা। তবে আসরের পরে দিনের শেষের দিকে, এই মতটা শোক্তিশালী যার পক্ষে সহীহ হাদীস রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমুআহর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, তখন কোন মুসলমান আল্লাহর নিকট যেই দুআ করে আল্লাহ তাই কবুল করেন। তোমরা সেই মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান কর।
[সুনানে নাসাঈ, সুনানে আবু দাউদঃ ১০৪৮, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী (রহঃ)]

বদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, আমরা আল্লাহর কিতাবে জুমুআহর দিনের এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে, সেই মুহূর্তে কোন মুমিন বান্দা সালাতরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার দিকে ইশারা করে বললেন, সেটা এক ঘণ্টার সামান্য সময় মাত্র। আমি বললাম, আপনি যথার্থই বলেছেন, এক ঘণ্টার সামান্য সময়ই। আমি বললাম, সেটি কোন মুহূর্ত? তিনি বলেন, সেটি হলো দিনের শেষ মুহূর্ত। আমি বললাম, তা সলাতের সময় নয়? তিনি বলেন, হাঁ। মুমিন বান্দা এক সলাত শেষ করে বসে বসে অন্য সলাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে সলাতের মধ্যেই থাকে।
[ইবনে মাজাহঃ ১১৩৯, মুসনাদে আহমাদঃ ২৩২৬৯, মিশকাতঃ ১৩৫৯, হাদীসটি হাসান সহীহ, শায়খ আলবানী (রহঃ)]

সুতরাং দুয়া কবুলের সময়টা পাওয়ার জন্য উত্তম হচ্ছে, আসরের সালাত আদায় করে জায়নামাযেই বসে থেকে মাগরিবের সালাতের জন্য অপেক্ষা করা এবং দুয়া করা, বিশেষ করে দিনের শেষের ঘন্টায় অধিক পরিমানে দুয়া করা।
_______________________________
আল্লাহ আমাদেরকে জুমুয়াহর দিনের হক্ক আদায় করার তোওফিক দান করুন, এবং আমাদের দুয়াগুলো কবুল করে নিন, আমিন।

_______________________________